২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান

উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং উপনিবেশ সমূহ হতে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা করা হল।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা প্রসঙ্গে সুভাষ চন্দ্র বসুর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ, গান্ধিজির সঙ্গে সুভাষ চন্দ্র বসুর মতবিরােধ, সুভাষ চন্দ্র বসুর দেশত্যাগ, সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা, সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত অভিযান প্রভৃতি দিক তুলে ধরা হল।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান

প্রশ্ন:- ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা কর।

ভূমিকা :- ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে যাঁর নামটি এক বিশাল জ্যোতিষ্কের মতাে চিরদিন ভাস্বর হয়ে থাকবে তিনি হলেন সুভাষচন্দ্র বসু। দুঃসাধ্যের সাধক, দুর্গম পথের নির্ভীক এই যাত্রীকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আশীর্বাদ করে বলেছিলেন—”সুভাষচন্দ্র, বাঙালি কবি আমি, বাংলা দেশের হয়ে তােমাকে দেশনায়কের পদে বরণ করি।”

রাজনীতিতে অংশগ্রহণ 

ছাত্রজীবন থেকেই সুভাষচন্দ্র বসু ইংরেজ শাসনবিরােধী এক তীব্র মনােভাব পােষণ করতেন। তাই তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের লােভনীয় চাকরিকে প্রত্যাখ্যান করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অনুপ্রেরণায় তিনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। কংগ্রেসের মধ্যে যে বামপন্থী চিন্তাধারার অনুপ্রবেশ ঘটে তাতে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে তিনিও নেতৃত্ব দেন।

গান্ধিজির সঙ্গে মতবিরােধ

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা‌ কংগ্রেসে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। সুভাষচন্দ্রের সংগ্রামী দৃষ্টিভঙ্গি গান্ধিজি ও তাঁর অনুগামীদের ক্ষুদ্ধ করে। গান্ধিজি ত্রিপুরি কংগ্রেসে (১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ) সভাপতি হিসেবে পট্টভি সীতারামাইয়ার নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু সুভাষচন্দ্র পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন। এতে গান্ধিজি ও তার সমর্থকরা সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে কোনােরকম সহযােগিতা না করার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে বাধ্য হয়ে সুভাষচন্দ্র সভাপতির পদ ত্যাগ করেন। জাতীয় আন্দোলনকে গতিশীল ও সংগ্রামমুখী করে তুলতে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি নতুন দল গঠন করেন (২২ জুন, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ)। পরিণতি হিসেবে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হন।

সুভাষচন্দ্রের দেশত্যাগ

সরকার আতঙ্কিত হয়ে সুভাষচন্দ্র বসুকে ভারত রক্ষা আইনে গ্রেফতার করে (১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২ জুলাই)। পরে সুভাষচন্দ্রকে কলকাতার এলগিন রােডে তার নিজের ঘরে অন্তরিন রাখা হয় (১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ৫ ডিসেম্বর)।১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি ব্রিটিশের কড়া প্রহরা এড়িয়ে মহম্মদ জিয়াউদ্দিনের ছদ্মবেশে সুভাষচন্দ্র দেশত্যাগের জন্য বেরিয়ে পড়েন।

বিদেশের সাহায্যলাভের প্রচেষ্টা

i) রাশিয়ায়

সুভাষচন্দ্র জিয়াউদ্দিন ছদ্মনাম নিয়ে কাবুল থেকে বার্লিন যাওয়ার পথে মস্কোতে কিছুদিন অবস্থান করেন। মস্কোয় তিনি রুশ নেতাদের কাছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেন। কিন্তু রুশ রাষ্ট্রপ্রধান স্টালিনের কাছ থেকে কোনােরকম সহযােগিতার আশ্বাস পাননি।

 ii) জার্মানিতে

সুভাষচন্দ্র এরপর বিমানযােগে জার্মানির বার্লিনে এসে পৌঁছান (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মার্চ)। বার্লিনে তিনি গিরিজা মুখার্জি, এম.আর. ব্যাস ও এ. সি. এন. নাম্বিয়ার-সহ ২০ জন ভারতীয়কে নিয়ে গড়ে তােলেন ‘ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার’। পরবর্তী কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ইউরােপ ও উত্তর আফ্রিকায় ভারতীয় যুদ্ধবন্দিদের নিয়ে গঠন করেন ‘ইন্ডিয়ান লিজিয়ন’ বা ‘ফ্রি ইন্ডিয়া আর্মি’ (১৯৪২ খ্রি.)। সুভাষচন্দ্র হিটলারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেনট্রপ- এর সঙ্গে দেখা করেন ও ভারতীয় মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে এক পরিকল্পনা পেশ করেন। জার্মান সরকার সুভাষচন্দ্রের পরিকল্পনার অন্যান্য শর্তগুলি মেনে নিলেও ভারতের স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিষয়ে কোনাে প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি হয়নি।

iii) জাপানে

সুভাষচন্দ্র জাপানের প্রধানমন্ত্রী মার্শাল তােজোর আমন্ত্রণে জাপান যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুঃসাহসিক সাবমেরিন অভিযানে প্রায় কয়েক হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে জাপানের টোকিও-তে এসে পৌঁছান (১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুন)। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী তােজোর সঙ্গে দেখা করলে জাপানি পার্লামেন্ট ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সর্বতােভাবে সহায়তাদানের নীতি ঘােষণা করে। শুরু হয় সুভাষের স্বপ্নের অভিযান।

আই. এন. এ.-এর নেতৃত্ব গ্রহণ

ব্যাংকক শহরে এক সম্মেলনে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন) রাসবিহারীর সভাপতিত্বে গড়ে ওঠে ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ বা ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স লিগ। এরপর ক্যাপ্টেন মােহন সিং-এর সক্রিয় সহযােগিতায় ২৫ হাজার ভারতীয় সেনা (পরে বেড়ে হয় ৪০ হাজার) নিয়ে ভারতীয় জাতীয় বাহিনী (Indian National Army) বা আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠিত হয়। সুভাষচন্দ্র জাপানে এলে রাসবিহারি বসু সুভাষকে ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স লিগের দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বান জানান। সুভাষচন্দ্র সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় রাসবিহারী বসুর হাত থেকে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন (১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট)।

আই. এন. এ.-এর পুনর্গঠন

আজাদ হিন্দ বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর সুভাষচন্দ্র তাকে নতুন করে সাজিয়ে তােলেন। আজাদ হিন্দ বাহিনীকে তিনি গান্ধি ব্রিগেড, আজাদ ব্রিগেড, নেহরু ব্রিগেড প্রভৃতি ব্রিগেডে ভাগ করেন। বালক, বালিকাদের নিয়ে বাল সেনাদল এবং নারীদের নিয়ে ঝাঁসির রানি ব্রিগেড গঠিত হয়। প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও শেষপর্যন্ত অনুগামীদের অনুরোধে নেতাজি নিজের নামে সুভাষ ব্রিগেড গঠন করেন।

আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা

১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ অক্টোবর নেতাজি আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করার কথা ঘােষণা করেন। নেতাজি ঘােষণা করেন আজাদ হিন্দ সরকারের প্রধান লক্ষ্য হল ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসনের উৎখাত করা।

ভারত অভিযান

২৩ অক্টোবর ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে আজাদ হিন্দ সরকার ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করে। নেতাজি রেঙ্গুনে তাঁর প্রধান সামরিক দপ্তর গড়ে তােলেন ও শুরু করেন তার বহু কাঙ্ক্ষিত ভারত অভিযান। বীর আজাদ হিন্দ সেনারা তাইপিং থেকে যাত্রা শুরু করে পাহাড়, পর্বত নদী পার হয়ে প্রায় ৪০০ মাইল পথ পায়ে হেঁটে ভারত সীমান্তের দিকে পাড়ি দেন। কক্সবাজার থেকে ৫০ মাইল দুরে মৌডক নামক স্থানে ব্রিটিশ ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায় আজাদ হিন্দ সেনারা। ক্যাপ্টেন সুরজমলের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ সেনারা মৌডক জয় করে। অবশেষে কোহিমা পর্যন্ত এসে ভারতের মাটিতে তেরঙা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে (৬ এপ্রিল, ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ)।

আত্মসমর্পণ

অবশেষে জাপান মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে (আগস্ট, ১৯৪৫ খ্রি.)। এরপর জাপানিদের দ্বারা আজাদ হিন্দ বাহিনীর জন্য অস্ত্র ও খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আজাদ হিন্দ সেনারা অস্ত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

মূল্যায়ন :- সুভাষচন্দ্র ও তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম তাৎক্ষণিক বিচারে ভারতকে স্বাধীন করতে পারেনি সত্য, কিন্তু তার পরিকল্পনা, দেশপ্রেম, আদর্শ ও আত্মত্যাগ স্বাধীনতা অর্জনের পথকে যে প্রশস্ত ও সুগম করেছিল এ বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গান্ধিজি বলেছেন, “নেতাজির নাম আমাদের জাদু মুগ্ধ করে। তাঁর লক্ষ্য ছিল উচ্চ, কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। কে ব্যর্থ হয় নি ?”

(FAQ) ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?

কবে কোথায় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি আত্মপ্রকাশ করে ?

১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে ।

ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টারের মুখপত্রের নাম কী ?

আজাদ হিন্দ ।

সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেসের কোন কোন অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন ?

হরিপুরা অধিবেশন (১৯৩৮) ও ত্রিপুরি অধিবেশন (১৯৩৯) ।

Leave a Comment