দশম শ্রেণী (পঞ্চম অধ্যায়): বিকল্প চিন্তা ও উদ্দোগ হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
মাধ্যমিক দশম শ্রেণী (পঞ্চম অধ্যায়): বিকল্প চিন্তা ও উদ্দোগ হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. জাতীয় শিক্ষা বলতে কী বোঝ?
উত্তর:- লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা দ্বিখণ্ডিত করলে এর বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হয়। এই সময় ভারতে বিদেশি শিক্ষাব্যবস্থা বর্জন করে এর বিকল্প হিসেবে স্বদেশি শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয় তা জাতীয় শিক্ষা নামে পরিচিত।
২. ব্রিটিশ শাসনকালে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের নাম লেখো।
উত্তর:- ব্রিটিশ শাসনকালে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হল ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’, ‘কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’, ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’, ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’, ‘বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট’ প্রভৃতি।
৩. জাতীয় শিক্ষায় ডন সোসাইটির কী ভূমিকা ছিল?
উত্তর:- সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ডন সোসাইটি (১৯০২ খ্রিস্টাব্দ)-র কার্যাবলি ও এখান থেকে প্রকাশিত ‘ডন’ পত্রিকা জাতীয় শিক্ষার প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আদর্শবোধ, ধর্মবোধ, নীতিবোধ, জাতীয়তাবোধ, চরিত্রগঠন প্রভৃতির বিকাশে ডন সোসাইটি চেষ্টা চালায়। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে (৫ নভেম্বর) সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত বিরাট জনসভায় জাতীয় শিক্ষার পক্ষে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনের সঙ্গে মিশে গিয়ে জাতীয় শিক্ষাকে আরও সমৃদ্ধ করে।
৪. কে, কবে, কোথায় ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন? অথবা, IACS কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর:- বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাঁফো-র সহায়তায় বিখ্যাত চিকিৎসক ড. মহেন্দ্রলাল সরকার ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন।
৫. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ব্যর্থ হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করো। অথবা, জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ব্যর্থ হওয়ার দুটি কারণ লেখো।
উত্তর:- জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণগুলি ছিল সরকারি বাধার ফলে জাতীয় শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হয়। জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরি লাভের সুযোগ ছিল না। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি যথেষ্ট আর্থিক সংকটের শিকার হয়। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জাতীয় শিক্ষার চেয়ে বরং ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাকেই বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছিলেন।
৬. উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’-এর ভূমিকা কী ছিল? অথবা, বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে IACS-এর ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর:- উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’-এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। এখানে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের বিভিন্ন শাখায় নিয়মিত গবেষণা চলত। দেশ-বিদেশের বহু খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও গবেষক এখানে গবেষণা করেছেন ও বিজ্ঞান-বিষয়ক বহু বক্তৃতা প্রদান করেছেন। এখানকার গবেষণার কাজ প্রকাশের উদ্দেশ্যে ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স’ নামে নিজস্ব জার্নাল প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়।
৭. কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি কী?
উত্তর:- কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি হল বাংলার একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ ও বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট একসঙ্গে মিলে যায় এবং ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নাম হয় কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি।
৮. কে, কোথায় গবেষণা করে ‘রমন এফেক্ট’ আবিষ্কার করেন?
উত্তর:- বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স বা আই এ সি এস-এ গবেষণা করে রমন এফেক্ট আবিষ্কার করেন।
৯. ঔপনিবেশিক শিক্ষা কাঠামোর বিরুদ্ধে বাংলায় গড়ে- ওঠা দুটি উদ্যোগ উল্লেখ করো।
উত্তর:- ঔপনিবেশিক শিক্ষা কাঠামোর বিরুদ্ধে বাংলায় গড়ে ওঠা দুটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হল ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বদেশি শিক্ষার প্রসারের ব্যবস্থা করা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা।
১০. কারা, কবে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর:- আইনজীবী ও শিক্ষাদরদি স্যার তারকনাথ পালিত ও স্যার রাসবিহারী ঘোষ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
১১. রবীন্দ্রনাথের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য বা কাজ কী?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য বা কাজগুলি হল বিদ্যার উৎপাদন, বিদ্যা দান, মুক্ত-চিন্তার চর্চা এবং সত্যানুসন্ধানের মাধ্যমে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রভৃতি।
১২. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর নাম লেখো যারা পরবর্তীকালে অত্যন্ত খ্যাতি অর্জন করেন।
উত্তর:- সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী যাঁরা পরবর্তীকালে অত্যন্ত খ্যাতি অর্জন করেন।
১৩. কে, কবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন? এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কোন বিষয় পড়ানো হত?
উত্তর:- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বীরভূম জেলার বোলপুরের নিকটবর্তী শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাবিদ্যার বিভিন্ন বিষয়, অর্থশাস্ত্র, কৃষিতত্ত্ব, স্বাস্থ্যবিদ্যা, পল্লি উন্নয়ন-সহ সমস্ত ব্যাবহারিক বিজ্ঞান পড়ানো হত।
১৪. রাসবিহারী ঘোষ কে ছিলেন?
উত্তর:- স্যার রাসবিহারী ঘোষ ছিলেন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী ও শিক্ষাদরদি। তিনি স্বদেশি আন্দোলনের যুগে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে তারকনাথ পালিতের সঙ্গে যৌথভাবে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
১৫. বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের উন্নতির উদ্দেশ্যে গৃহীত কয়েকটি পদক্ষেপ উল্লেখ করো।
উত্তর:- বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের উন্নতির উদ্দেশ্যে যেসব যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তা হল বিদেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা শিক্ষকদের বিশ্বভারতীতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, দেশবিদেশের বহু মূল্যবান গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা গ্রন্থাগারে সংগ্রহ করা এবং বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদান।
১৬. বসু বিজ্ঞান মন্দিরে কোন কোন বিষয়ে গবেষণা হত?
উত্তর:- বসু বিজ্ঞান মন্দিরে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স, পরিবেশ বিজ্ঞান প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশ্বমানের গবেষণা হত।
১৭. রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীর শিক্ষানীতির দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীর শিক্ষানীতির দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল প্রকৃতি ও মানুষের সান্নিধ্যে শিক্ষাদান এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন।
১৮. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা প্রথম বই কোনটি? এটি কোথা থেকে প্রকাশিত হয়?
উত্তর:- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা প্রথম বই হল ‘ছেলেদের রামায়ণ’।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘ছেলেদের রামায়ণ’ বইটি যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয়।
১৯. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে প্রজাকল্যাণের ক্ষেত্রে কী ধরনের উদ্যোগ নেন?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে প্রজাকল্যাণে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেন। যেমন তিনি হিতৈষী তহবিল প্রতিষ্ঠা করে তহবিলের অর্থ গ্রামে রাস্তাঘাট নির্মাণ, মন্দির-মসজিদের সংস্কার, স্কুল-মাদ্রাসা স্থাপন, চাষিদের সহায়তা প্রভৃতি কাজে ব্যয় করেন, তাঁর উদ্যোগে শিলাইদহে মহর্ষি দাতব্য চিকিৎসালয় ও পতিসরে হাসপাতাল স্থাপিত হয়, তিনি কৃষকদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি প্রভৃতি উদ্দেশ্যে নানা উদ্যোগ নেন, সালিশি সভা গঠন করে গ্রামীণ বিরোধের মীমাংসার ব্যবস্থা করেন।
২০. কলকাতায় প্রথম মুদ্রিত বই কোটি?
উত্তর:- ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে জেমস অগাস্টাস হিকি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কলকাতার ছাপাখানায় ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে দুটি ইংরেজি ক্যালেন্ডার ছাপা হয়। এই ক্যালেন্ডার আংশিক বইয়ের আকারের হওয়ায় কেউ কেউ একে কলকাতায় মুদ্রিত প্রথম বই বলে মনে করেন।
২১. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন ‘গোলদীঘির গোলামখানা’ বলে ব্যঙ্গ করা হত?
উত্তর:- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় গোলদীঘির নিকটে অবস্থিত ছিল। এখানে পড়াশোনা করে প্রধানত ব্রিটিশদের অফিস-আদালতে কেরানি তৈরি হত। এজন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘গোলদীঘির গোলামখানা’ বলে ব্যঙ্গ করতেন।
২২. শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে বিপুল সংখ্যক বইপত্র ছাপার একটি পরিসংখ্যান দাও।
উত্তর:- শ্রীরামপুর ছাপাখানায় ১৮০১-৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অন্তত ৪০টি ভাষায় ২ লক্ষেরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
২৩. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী ধরনের উদ্যোগ নেন?
উত্তর:- কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে আদর্শ কৃষিক্ষেত্র স্থাপন করে সেখানে ট্র্যাক্টর, পাম্পসেট ও জৈব সার ব্যবহার চালু করেন। শিলাইদহে কৃষি খামার গড়ে তোলেন। পতিসরে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। উন্নত কৃষিবিদ্যা শেখার উদ্দেশ্যে নিজ পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বন্ধুপুত্র সন্তোষচন্দ্র মজুমদার ও জামাতা নগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলিকে বিদেশে পাঠান।
২৪. ঊনবিংশ শতকে বাংলায় ছাপাখানার প্রসারের একটি পরিসংখ্যান দাও।
উত্তর:- কলকাতায় ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কলকাতায় ১৭টি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৫-৮৬ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারতে ১০৯৪ টি ছাপাখানা ছিল। এর মধ্যে বাংলা প্রদেশে ছিল ২২৯টি ছাপাখানা।
২৫. বিশ্বভারতী কীভাবে গড়ে উঠেছিল? অথবা, কত খ্রিস্টাব্দে কে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উত্তর:- মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিভৃতে ধর্মচর্চা করার উদ্দেশ্যে ভুবনডাঙ্গায় ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ভুবনডাঙ্গার স্নিগ্ধতা, নিবিড়তা ও বিরাজমান শান্তি লক্ষ্য করে দেবেন্দ্রনাথ এর নামকরণ করেন ‘শান্তিনিকেতন’। তাঁর পুত্র রবীন্দ্রনাথ ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং একটি আদর্শ শিক্ষাদান ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে শান্তিনিকেতনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। সেই মতো তিনি ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
২৬. হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট’ সংবাদপত্রটির গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর:- ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে জেমস অগাস্টাস হিকি প্রকাশিত বেঙ্গল গেজেট পত্রিকাটির গুরত্ব হল এটি ছিল এশিয়া তথা ভারতের প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র। এই পত্রিকা থেকে সমকালীন বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানা যায়।
২৭. রবীন্দ্রনাথ কী উদ্দেশ্যে ‘শ্রীনিকেতন’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? অথবা, শ্রীনিকেতন কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ সমাজের সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো। এর মধ্যে ছিল গ্রামে কৃষির উন্নতিসাধন, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধ, সমবায় প্রথায় ধর্মগোলা স্থাপন, গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি করা প্রভৃতি। এই উদ্দেশ্যে শান্তিনিকেতনে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ‘পল্লিসংগঠন কেন্দ্র’ স্থাপিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করেন শ্রীনিকেতন।
২৮. জাতীয় শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে আর্থিক সহায়তা করেন এমন কয়েকজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করো।
উত্তর:- জাতীয় শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ৫ লক্ষ টাকা, সূর্যকান্ত আচার্যচৌধুরী ২.৫ লক্ষ টাকা এবং সুবোধচন্দ্র মল্লিক ১ লক্ষ টাকা দান করেন।
২৯. ব্রিটিশ শাসনকালে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম লেখো।
উত্তর:- ব্রিটিশ শাসনকালে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ছিল কলকাতার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৮৫৬ খ্রি.), কলকাতায় ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এডুকেশন’ (১৯০৪ খ্রি.), যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৯০৬ খ্রি.) প্রভৃতি।
৩০. বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজে শিক্ষাদানকারী কয়েকজন খ্যাতনামা শিক্ষকের নাম লেখো।
উত্তর:- বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজে শিক্ষাদানকারী কয়েকজন খ্যাতনামা শিক্ষক ছিলেন রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, বিনয়কুমার সরকার, হারানচন্দ্র চাকলাদার, সখারাম গণেশ দেউসকর, ধর্মানন্দ কোশাম্বী প্রমুখ।
৩১. ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ বা আই এ সি এস প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল?
উত্তর:- ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ বা আই এ সি এস প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নিয়মিত গবেষণা এবং বিজ্ঞান-বিষয়ক বক্তৃতার আয়োজন।
৩২. জাতীয় শিক্ষার গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর:- জাতীয় শিক্ষার প্রধান গুরুত্বগুলি ছিল এই শিক্ষা ব্রিটিশ সরকারের বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই শিক্ষা গ্রহণ করে পরবর্তীকালে একদল দেশপ্রেমিক তরুণের আত্মপ্রকাশ ঘটে। জাতীয় শিক্ষার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্বাধীন ভারতে শিক্ষাদান ও গবেষণার কাজে যথেষ্ট সাফল্য দেখায়।
৩৩. মহেন্দ্রলাল সরকার কে ছিলেন? অথবা, ড. মহেন্দ্রলাল সরকার কেন স্মরণীয়?
উত্তর:- ড. মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯০৪ খ্রি.) ছিলেন একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক। তিনি ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে (২৯ জুলাই) কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ বা আই এ সি এস প্রতিষ্ঠা করেন।
৩৪. শিশুশিক্ষা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ধারণা কী ছিল?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিশুমনকে বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি চাইতেন বিশ্বপ্রাণের স্পন্দন শিশুমনকে ছুঁয়ে যাক। নৈসর্গিক পরিবেশের মধ্যে শিশুদের বড়ো করে তোলাই তাঁর শিক্ষার লক্ষ্য ছিল।
৩৫. মেঘনাদ সাহা কোন বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন? এখানে কোন বিষয়ে মৌলিক গবেষণার কাজ চলত?
উত্তর:- মেঘনাদ সাহা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স-এ একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।
এই গবেষণা বিদ্যালয়ে এক্স রশ্মি, আলোকবিজ্ঞান, চুম্বকত্ব, রমন ক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়ে নানা মৌলিক গবেষণার কাজ চলত।
৩৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে শিক্ষা কী?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে ‘শিক্ষা হল, বাইরের প্রকৃতি ও অন্তপ্রকৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন’। এক কথায়, পরিপূর্ণ মানবসত্তাকে লালন করে দেহ, মন ও আত্মার সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে নিজেকে জাতির উপযোগী, দক্ষ ও কল্যাণকামী সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার নামই শিক্ষা।
৩৭. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে শিক্ষাদানকারী কয়েকজন খ্যাতনামা শিক্ষকের নাম লেখো।
উত্তর:- কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে শিক্ষাদানকারী কয়েকজন খ্যাতনামা শিক্ষক ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, শিশির কুমার মিত্র প্রমুখ।
৩৮. শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রাচীন ভারতের ‘তপোবন’ কেন্দ্রিক আশ্রমিক শিক্ষাধারা চালু করে নিভৃতে আধ্যাত্মিক সাধনা ও বিদ্যাচর্চা করা। প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীর নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলা।
৩৯. তারকনাথ পালিত কে ছিলেন?
উত্তর:- স্যার তারকনাথ পালিত ছিলেন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী ও শিক্ষাদরদি। তিনি স্বদেশি আন্দোলনের যুগে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে রাসবিহারী ঘোষের সঙ্গে যৌথভাবে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
৪০. বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানকারী কয়েকজন খ্যাতনামা বিদেশি শিক্ষকের নাম লেখো।
উত্তর:- বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানকারী কয়েকজন খ্যাতনামা বিদেশি শিক্ষক ছিলেন ইংরেজ যুবক কৃষিবিশেষজ্ঞ লেনার্ড এলমহার্স্ট, এনড্রুজ, পিয়ারসন, খ্যাতনামা ঐতিহাসিক সিলভা লেভি ও তাঁর স্ত্রী মাদাম লেভি। এ ছাড়া জার্মান ঐতিহাসিক উইন্টারনিৎস, তাঁর ছাত্র লেসনি, ব্রিটিশ শিল্পবিশারদ স্টেলা ক্লামরিশ, ইহুদি বহুভাষাবিদ স্লোমিথ ফ্লাউম প্রমুখ।
৪১. কে, কবে বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন? বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর:- খ্যাতনামা বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় বসু বিজ্ঞান মন্দির বা বোস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।
বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স, পরিবেশ বিজ্ঞান প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশ্বমানের গবেষণার ব্যবস্থা করা।
৪২. বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন খ্যাতনামা শিক্ষার্থীর নাম লেখো।
উত্তর:- বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন খ্যাতনামা শিক্ষার্থী ছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অস্কারবিজয়ী চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি প্রমুখ।
৪৩. ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুরে কী উদ্দেশ্যে টেকনিকাল কলেজ স্থাপিত হয়?
উত্তর:- স্বদেশি আন্দোলনের যুগে বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে যাদবপুরে টেকনিকাল কলেজ স্থাপিত হয়।
৪৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ভাবনা সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করতেন, প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানুষের জীবন ও অস্তিত্ব অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
৪৫. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কবে, কোথায় আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর:- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার শিবনারায়ণ দাস লেনে আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
৪৬. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর:- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘ছেলেদের রামায়ণ’, ‘ছেলেদের মহাভারত’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, পশুপাখি ও ভ্রমণকাহিনি নিয়ে ‘সেকালের কথা’, বাংলার লোককথা নিয়ে লেখা ‘টুনটুনির বই’ প্রভৃতি।
৪৭. কে, কবে ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটি প্রকাশ করেন? এটি কাদের জন্য প্রকাশিত হয়?
উত্তর:- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটি প্রকাশ করেন।
‘সন্দেশ’ পত্রিকাটি ছোটোদের জন্য প্রকাশিত হয়।
৪৮. উপেন্দ্রকিশোরের ছাপাখানার বিশেষ কৃতিত্ব কী ছিল? অথবা, ‘প্রসেস প্রিন্টিং’ সম্বন্ধে কী জান?
উত্তর:- উপেন্দ্রকিশোরের ছাপাখানার বিশেষ কৃতিত্ব ছিল প্রসেস প্রিন্টিং নামে এক ধরনের উন্নত মুদ্রণ কৌশল আবিষ্কার। তিনি তাঁর ইউ রায় অ্যান্ড সন্স নামে ছাপাখানায় নিরন্তর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে এই উন্নত মুদ্রণ কৌশলের উদ্ভাবন করেন।
৪৯. ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে বাংলার ছাপাখানাগুলিতে প্রথমদিকে কী ধরনের ছাপার কাজ হত?
উত্তর:- ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে বাংলার ছাপাখানাগুলিতে প্রথমদিকে সরকারি কাগজপত্র, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পাঠ্যবই, পঞ্জিকা, ভ্রমণকাহিনি, চিকিৎসাবিজ্ঞান-বিষয়ক বই, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, গানের বই, ব্যাকরণ, অভিধান, ইউরোপের ঘটনাবলি নিয়ে লেখা বই প্রভৃতি ছাপার কাজ হত।
৫০. ছাপাখানাগুলিতে স্কুলকলেজের নীতিশিক্ষা-বিষয়ক কোন কোন গ্রন্থ ছাপা হত?
উত্তর:- ছাপাখানাগুলিতে স্কুলকলেজের নীতিশিক্ষা-বিষয়ক ‘হিতোপদেশ’, ‘বত্রিশ সিংহাসন’, ‘তোতা ইতিহাস’, ‘বোধোদয়’, ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’, ‘নীতিকথা’ প্রভৃতি গ্রন্থ ছাপা হত।
৫১. ছাপাখানাগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোন কোন বিষয়ের পাঠ্যবই ছাপা হত?
উত্তর:- ছাপাখানাগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ভূগোল, ইতিহাস, সাহিত্য, গণিত, প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, কারিগরিবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, নীতিশিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ের পাঠ্যবই ছাপা হত।
৫২. প্রথম সচিত্র বাংলা বই কোনটি? এই বইয়ের চিত্রগুলি কে আঁকেন?
উত্তর:- প্রথম সচিত্র বইটি হল কলকাতার ফেরিস অ্যান্ড কোম্পানির ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল (১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে)।
মূলত বাঙালি চিত্রশিল্পীরা অন্নদামঙ্গল বইটির ছবিগুলি এঁকেছিলেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রামচাঁদ রায়।
৫৩. ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর সেগুলিতে কী ধরনের বইপত্র ছাপা হত?
উত্তর:- ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর সেগুলিতে বিভিন্ন অনুবাদ গ্রন্থ, পাঠ্যবই, শিশুশিক্ষা-বিষয়ক বই, সাহিত্য-বিষয়ক বইপত্র, কবিতার বই, নাটক, গানের বই, ভ্রমণকাহিনি, চিকিৎসাবিদ্যা বিষয়ক বইপত্র প্রভৃতি ছাপা হত।
৫৪. ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর সেগুলিতে বইপত্র ছাড়া কী ধরনের মুদ্রণের কাজ হত?
উত্তর:- ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর সেগুলিতে বিভিন্ন ধরনের বইপত্র ছাড়া মিলিটারি বিল, ভাতা প্রদানের ফর্ম, সামরিক বাহিনীর বিধিবিধান, সরকারি নির্দেশিকা প্রভৃতি মুদ্রণের কাজ হত।
৫৫. কে, কবে টেগোর অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠা করেন? এর উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে টেগোর অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠা করেন।
টেগোর অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে কৃষিজ পণ্য কিনে তা বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা।
৫৬. ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছাপা বইয়ের প্রকৃতি কীরূপ ছিল?
উত্তর:- উনিশ শতকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছাপা বইগুলির প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য ছিল বইগুলির মুদ্রণ ও সাজসজ্জা আকর্ষণীয় করার চেষ্টা হত। ছাত্রদের পাঠ্যপুস্তক এবং সহায়ক পুস্তক প্রচুর প্রকাশিত হত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাবসায়িক লাভই বই প্রকাশের অন্যতম লক্ষ্য হত।
৫৭. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কে ছিলেন?
উত্তর:- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন একজন খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক, চিত্রকর, সুরকার, প্রকাশক এবং বাংলায় ছাপাখানার অগ্রপথিক। তিনি কলকাতায় ইউ রায় অ্যান্ড সন্স নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে মুদ্রণশিল্পের উন্নতির বিষয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করেন।
৫৮. ভারত তথা এশিয়ার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র কোনটি? এটি কবে প্রথম প্রকাশিত হয়?
উত্তর:- ভারত তথা এশিয়ার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র হল হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট’ বা ‘হিকি’স গেজেট’।
হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট’ বা ‘হিকি’স গেজেট’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে।
৫৯. ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত কী ছিল?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেননি, আবার বর্জনও করেননি। তিনি দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের ঔপনিবেশিক শিক্ষার সমন্বয় ঘটাতে চেয়েছিলেন।
৬০. অনারেবল কোম্পানিজ প্রেসে কী ধরনের ছাপার কাজ হত?
উত্তর:- অনারেবল কোম্পানিজ প্রেসে বিভিন্ন সরকারি কাগজপত্র, বেসরকারি বইপত্র, এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকা ‘এশিয়াটিক রিসার্চেস’ প্রভৃতি ছাপা হত।
৬১. উইলিয়াম কেরি কে ছিলেন?
উত্তর:- উইলিয়াম কেরি ছিলেন শ্রীরামপুরের একজন খ্রিস্টান মিশনারি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে একটি আধুনিক ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা। শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। বাংলা ভাষার উন্নতির ক্ষেত্রেও তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে।
৬২. রামরাম বসু কে ছিলেন?
উত্তর:- রামরাম বসু ছিলেন শ্রীরামপুর মিশনের মিশনারি উইলিয়াম কেরির মুনশি। তিনি ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ গ্রন্থটি রচনা করেন।
৬৩. শিক্ষার প্রসারে শ্রীরামপুর ছাপাখানার অবদান কী?
উত্তর:- শিক্ষার প্রসারে শ্রীরামপুর ছাপাখানার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। এখানে সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান, সমাজসংস্কার প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে বইপত্র ছাপা হত। বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রসারে এই ছাপাখানার ভূমিকা ছিল অসীম।
৬৪. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য কোন কোন ছাপাখানা থেকে বইপত্র ছাপা হত?
উত্তর:- ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রীরামপুর ছাপাখানা, হিন্দুস্তানি প্রেস, পারসিয়ান প্রেস, সংস্কৃত প্রেস প্রভৃতি ছাপাখানা থেকে বইপত্র ছাপা হত।
৬৫. বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ প্রকাশিত হওয়ার আগে বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত শিশুশিক্ষা-বিষয়ক কয়েকটি বাংলা গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর:- বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ প্রকাশিত হওয়ার আগে বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত শিশুশিক্ষা-বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল শ্রীরামপুর মিশন প্রণীত ‘লিপিধারা’ (১৮১৫ খ্রি.), রাধাকান্ত দেব রচিত ‘বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থ’ (১৮২১ খ্রি.), স্কুল বুক সোসাইটি কর্তৃক দুই খণ্ডে প্রকাশিত ‘বর্ণমালা’ (সম্ভবত ১৮৫৩-৫৪ খ্রি.), ক্ষেত্রমোহন দত্ত কর্তৃক দুই খণ্ডে রচিত ‘শিশুসেবধি’ (১৮৫৪ খ্রি.) প্রভৃতি।
৬৬. মদনমোহন তর্কালঙ্কার কে ছিলেন?
উত্তর:- মদনমোহন তর্কালঙ্কার ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার অন্যতম পন্ডিত এবং নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যাপক মদনমোহন বাংলা ভাষার বিকাশ ও বাংলায় শিশুশিক্ষার প্রসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি শিশুদের শিক্ষার জন্য ‘শিশুশিক্ষা’ নামের বিখ্যাত গ্রন্থটি লেখেন।
৬৭. স্থানীয় স্কুল সম্বন্ধে আভাস’ কী?
উত্তর:- শ্রীরামপুর মিশনের মিশনারি জোশুয়া মার্শম্যান বাংলার গ্রামাঞ্চলে বাংলা ভাষায় গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এই পরিকল্পনা ‘স্থানীয় স্কুল সম্বন্ধে আভাস’ নামে পরিচিত।
৬৮. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ স্থাপনের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর:- জাতীয় শিক্ষা পরিষদ স্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল জাতীয় আদর্শ অনুসারে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও কারিগরিশিক্ষা দান করা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশসেবার মনোভাব জাগিয়ে তোলা, নৈতিক শিক্ষা দান করা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রভৃতি।
৬৯. শিক্ষার প্রসারে শ্রীরামপুর মিশনারিদের কী উদ্যোগ ছিল?
উত্তর:- শ্রীরামপুর মিশনারিরা শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশে ৬,৭০৩ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ১০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। এ ছাড়া নারীশিক্ষার জন্য বিদ্যালয়, উচ্চশিক্ষার জন্য শ্রীরামপুরে এশিয়ার প্রথম ডিগ্রি কলেজ (১৮১৮ খ্রি.) প্রভৃতিও তাঁদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়।
৭০. বাংলায় মুদ্রণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কোন কোন নতুন পেশার সৃষ্টি হয়?
উত্তর:- বাংলায় মুদ্রণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কাগজ উৎপাদন, কাগজ বিক্রি, বই ছাপানো, বই বাঁধাই, বই বিক্রি প্রভৃতি নতুন পেশার সৃষ্টি হয়।
৭১. ঢাকায় প্রথম কে, কবে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর:- ঢাকায় প্রথম আলেকজান্ডার বারবেখ ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
৭২. শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের অবদান কী?
উত্তর:- বাংলার শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে মদনমোহন তর্কালঙ্কার ‘শিশুশিক্ষা’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। ‘শিশুশিক্ষা’র প্রথম ভাগ ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে, দ্বিতীয় ভাগ ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে এবং পরবর্তীকালে তৃতীয় ভাগ ও ‘বোধোদয়’ শিরোনামে চতুর্থ ভাগ প্রকাশিত হয়। ‘শিশুশিক্ষা’ বাংলার শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
৭৩. বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হলে সেগুলি থেকে মুদ্রিত কয়েকটি জনপ্রিয় পাঠ্য বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর:- বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হলে সেগুলি থেকে বিভিন্ন বইপত্র প্রকাশিত হতে থাকে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গোবিন্দ প্রসাদ দাস রচিত ‘ব্যাকরণ সার’, প্রাণলাল চক্রবর্তী রচিত ‘অঙ্কবোধ’, কেদারেশ্বর চক্রবর্তী রচিত ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’, আনন্দকিশোর সেন রচিত ‘অর্থের সার্থকতা’, দীননাথ সেন রচিত ‘বাংলাদেশ ও আসামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ’, ‘ঢাকা জেলার ভূগোল’ এবং ‘সংক্ষেপে ঐতিহাসিক বিবরণ’ প্রভৃতি।
৭৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক গঠিত ‘হিতৈষী তহবিল’ কী?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব পেয়ে প্রজাকল্যাণের উদ্দেশ্যে ‘হিতৈষী তহবিল’ নামে একটি তহবিল গঠন করেন। প্রজাদের সদ্য বকেয়া খাজনার ওপর সামান্য হিতৈষীবৃত্তি ধার্য করে এবং জমিদারি থেকে তার সমপরিমাণ অর্থ ভরতুকি দিয়ে এই তহবিল গঠন করা হয়। গ্রামে রাস্তাঘাট নির্মাণ, মন্দির-মসজিদের সংস্কার, স্কুল-মাদ্রাসা স্থাপন, চাষিদের বিপদকালে সাহায্যদান প্রভৃতি উদ্দেশ্যে এই তহবিলের অর্থ ব্যয় করা হত।
৭৫. ‘জাইলোগ্রাফি’ পদ্ধতি কী?
উত্তর:- খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে চিনে কাঠ বা পাথরের ব্লকের দ্বারা মুদ্রণকৌশল আবিষ্কৃত হয়। ব্লকের দ্বারা এই মুদ্রণ পদ্ধতি ‘জাইলোগ্রাফি’ নামে পরিচিত।
৭৬. বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকারের ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর:- বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকারের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার ছাপাখানার হরফ নির্মাণের অন্যতম রূপকার। তিনি বাংলা ছাপাখানায় সচল ধাতু হরফের প্রচলন করেছিলেন।
৭৭. ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা বাংলায় শিক্ষার প্রসারে কী ধরনের সুবিধা করে দেয়?
উত্তর:- আধুনিক ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা বাংলায় শিক্ষার প্রসারে নানাভাবে সহায়তা করে। ছাপাখানায় মুদ্রিত বিপুল সংখ্যক বই অল্প সময়ে পাঠক ও শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যায়। ছাপাখানায় মুদ্রিত বইয়ের মূল্য হাতে লেখা বইয়ের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় দরিদ্র ও সাধারণ পড়ুয়ারা ছাপাখানার বইপত্র কিনতে সক্ষম হয়। ছাপাখানাগুলিতে বহু বাংলা বই মুদ্রিত হওয়ায় মাতৃভাষা বাংলায় শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়।
৭৮. শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত দুটি সংবাদপত্রের নাম লেখো।
উত্তর:- শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্র ছিল মাসিক ‘দিগদর্শন’ (১৮১৮ খ্রি.) এবং সাপ্তাহিক ‘সমাচার দর্পণ’ (১৮১৮ খ্রি.)।
৭৯. শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে কোন কোন ভাষায় বইপত্র প্রকাশিত হয়?
উত্তর:- শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে বাংলা, হিন্দি, অহমীয়া, উড়িয়া, মারাঠি, সংস্কৃত-সহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় বইপত্র প্রকাশিত হয়।
৮০. সুরেশচন্দ্র মজুমদার কে ছিলেন?
উত্তর:- সুরেশচন্দ্র মজুমদার ছিলেন আনন্দবাজার প্রকাশনা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি রাজশেখর বসুর পরামর্শে বাংলা অক্ষর নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করে ‘লাইনো টাইপ’ নামে এক উন্নত বাংলা অক্ষরের টাইপের নির্মাণ করেন।
৮১. লাইনো টাইপ কী?
উত্তর:- ‘লাইনো টাইপ’ হল সুরেশচন্দ্র মজুমদার কর্তৃক নির্মিত এক ধরনের উন্নত বাংলা অক্ষরের টাইপ। এই প্রকার টাইপে পুরো লাইন ধরে ছাপা হত এবং কোনো ধরনের পরিবর্তন করতে চাইলে পুরো লাইনটিকেই নতুন রূপে বানাতে হত।
৮২. ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে বাংলায় গণশিক্ষার পরিস্থিতি কীরূপ ছিল?
উত্তর:- ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে বাংলায় মুদ্রিত বই না থাকায় হাতে লেখা বই ছিল শিক্ষার মাধ্যম। এই বহুমূল্য বই সমাজের মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা কিনলেও তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে ছিল। এজন্য তখন বাংলায় গণশিক্ষার প্রসার ঘটেনি।
৮৩. বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্ব কী?
উত্তর:- বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই প্রকাশনীতে কম খরচে বেশি বই ছাপা হত। এই ছাপায় হ্যান্ডমেড পেপারের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। ফলে স্বদেশি কারিগরির মুনশিয়ানা ফুটে ওঠে। এ ছাড়া পুঁথি, পাঁচালি এবং অনুবাদ সাহিত্যের প্রকাশনার প্রসার ঘটে।
৮৪. শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে কোন ধরনের বইপত্র প্রকাশিত হয়?
উত্তর:- শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে ‘বাইবেল’, ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’, প্রাচীন ভারতীয় বিভিন্ন সাহিত্যের অনুবাদ, হিতোপদেশ, বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রভৃতি বইপত্র প্রকাশিত হয়।
৮৫. বাংলার ছাপাখানা বিকাশে শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের অবদান কী?
উত্তর:- বাংলার ছাপাখানার বিকাশে শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল, এখান থেকে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। প্রাচীন ভারতীয় বিভিন্ন সাহিত্যের অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন স্কুল পাঠ্যবই প্রকাশিত হয়। ‘দিগদর্শন’, ‘সমাচার দর্পণ’, ‘বেঙ্গল গেজেট’-সহ বিভিন্ন সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
৮৬. ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ গ্রন্থটি কবে, কোথা থেকে প্রকাশ করেন?
উত্তর:- রামরাম বসু ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ গ্রন্থটি ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে প্রকাশ করেন।
৮৭. আধুনিক ছাপাখানায় ব্যবহারের উপযোগী বাংলা অক্ষরের টাইপ নির্মাণে কাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে?
উত্তর:- আধুনিক ছাপাখানায় ব্যবহারের উপযোগী বাংলা অক্ষরের টাইপ প্রথম তৈরি করেন চার্লস উইলকিনস। পরবর্তীকালে তাঁর সহযোগী পঞ্চানন কর্মকার আরও উন্নত টাইপ তৈরি করেন। পরবর্তীকালে সুরেশচন্দ্র মজুমদার আরও উন্নত বাংলা টাইপ তৈরি করে বাংলা মুদ্রণব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে তোলেন।
৮৮. ভারতের সর্বপ্রথম কবে, কারা, কোথায় আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে?
উত্তর:- ভারতে সর্বপ্রথম ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে পোর্তুগিজরা গোয়ায় আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।
৮৯. কারা প্রথম মুদ্রণযন্ত্রের সাহায্যে বাংলা বই ছাপায়?
উত্তর:- পোর্তুগিজ মিশনারিরা সর্বপ্রথম পোতুগালের রাজধানী লিসবন থেকে রোমান হরফে বাংলা বই ছাপায় এবং তা বাংলায় নিয়ে আসে।
আরোও পড়ুন
- দশম শ্রেণী (প্রথম অধ্যায়): ইতিহাসের ধারণা হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- দশম শ্রেণী (দ্বিতীয় অধ্যায়): সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- দশম শ্রেণী (তৃতীয় অধ্যায়): প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ-বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- দশম শ্রেণী (চতুর্থ অধ্যায়): সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা-বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- দশম শ্রেণী (ষষ্ঠ অধ্যায়): কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন-বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- দশম শ্রেণী (সপ্তম অধ্যায়): নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- দশম শ্রেণী (অষ্টম অধ্যায়): উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর