দশম শ্রেণী (চতুর্থ অধ্যায়): সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদের সিলেবাস অনুসারে দশম শ্রেণী (চতুর্থ অধ্যায়): সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর দেওয়া হল।

দশম শ্রেণী (চতুর্থ অধ্যায়): সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

১. ভারতের জাতীয়তাবোধের চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এমন কয়েকটি সাহিত্যগ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর:- ভারতের জাতীয়তাবোধের চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এমন কয়েকটি সাহিত্যগ্রন্থ হল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত আনন্দমঠ’, স্বামী বিবেকানন্দ রচিত ‘বর্তমান ভারত’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘গোরা’।

২. ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের প্রধান দুটি চরিত্রের নাম লেখো।

উত্তর:- ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের প্রধান দুটি চরিত্র হল সত্যানন্দ ও মহেন্দ্র। ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের অন্যান্য কয়েকটি চরিত্র হল ভবানন্দ, জীবনানন্দ, কল্যাণী প্রমুখ।

৩. আনন্দমঠ উপন্যাস লেখার পিছনে বঙ্কিমচন্দ্রের একমাত্র ঐতিহাসিক উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর:- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক আনন্দমঠ (১৮৮২ খ্রি.) উপন্যাস রচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রসার ঘটানো। তিনি যুবসমাজকে শিক্ষা দেন যে, স্বদেশ হল ‘মা’।

৪. ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন? এটি কবে প্রকাশিত হয়?

উত্তর:- ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটি রচনা করেন স্বামী বিবেকানন্দ।

‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটি প্রথম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবন্ধাকারে এবং ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

৫. ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের চরিত্র সত্যানন্দ তিনটি দেবীমূর্তি মহেন্দ্রকে দেখিয়ে মূর্তির কী অর্থ ব্যাখ্যা করে?

উত্তর:- আনন্দমঠ উপন্যাসে বিদ্রোহের নেতা সত্যানন্দ জনৈক মহেন্দ্রকে পরপর তিনটি দেবীমূর্তি দেখায়। দেবী জগদ্ধাত্রীকে দেখিয়ে সে বলে যে, আমাদের মা একদা এরূপ ছিল। দেবী কালীকে দেখিয়ে বলে যে, বিদেশি শাসনে আমাদের মা আজ নগ্ন কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে গেছে। শেষে দেবী দুর্গাকে দেখিয়ে বলে যে, দেশমাতাকে মুক্ত করে এরূপ মায়ের প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৬. ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস কীভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল?

উত্তর:- ‘আনন্দমঠ’ (১৮৮২ খ্রি.) উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র পরাধীন ভারতমাতার দুর্দশার চিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে স্বৈরাচারী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে বিদ্রোহের আহ্বান জানান। ‘আনন্দমঠ’-এর সন্তানদলের একমাত্র লক্ষ্য ছিল বিদেশিদের হাত থেকে দেশমাতাকে মুক্ত করা। ‘আনন্দমঠ’ প্রকাশের পর শীঘ্রই ভারতের বিভিন্ন ভাষায় গ্রন্থটি অনূদিত হয়। ফলে ভারতের সর্বত্র জাতীয় চেতনার ঢেউ খেলে যায়।

৭. বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর:- বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘আনন্দমঠ’, ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘দুর্গেশনন্দিনী’, ‘দেবী চৌধুরানি’, ‘সীতারাম’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘কৃষ্ণচরিত’ প্রভৃতি।

৮. ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের সন্তানদলের লক্ষ্য কী ছিল?

উত্তর:- ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের সন্তানদলের লক্ষ্য ছিল বিদেশিদের হাত থেকে দেশমাতাকে মুক্ত করা। কারণ, তাদের কাছে এই ভারতমাতা স্বর্গের চেয়েও বড়ো। এই মায়ের মুক্তির জন্য তারা শক্তিশালী বিদ্রোহ বা যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত ছিল।

৯. স্বামী বিবেকানন্দ কীভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, ভারতীয় সমাজে শূদ্রের জাগরণ ঘটবেই?

উত্তর:- ভারতে বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণ পুরোহিত, পরে শক্তিশালী যোদ্ধা অর্থাৎ ক্ষত্রিয়রা এবং সবশেষে বৈশ্যরা সমাজে কীভাবে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে, তা স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থে দেখিয়েছেন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, চক্রাকার পথে বৈশ্যের পর এবার ভারতীয় সমাজে শূদ্রের জাগরণ ঘটতে এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য।

১০. বঙ্কিমচন্দ্রের ‘ভারতমাতা’ ও অবনীন্দ্রনাথের ‘ভারতমাতা র মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

উত্তর:- বঙ্কিমচন্দ্রের ‘ভারতমাতা’ ও অবনীন্দ্রনাথের ‘ভারতমাতা’র মধে প্রধান পার্থক্যগুলি ছিল বঙ্কিমচন্দ্রের ভারতমাতা দেশমাতৃকা। অবনীন্দ্রনাথের ভারতমাতা হলেন ঐতিহ্যশালী দেশীয় সংস্কৃতির একজন কল্পিত দেবী। বঙ্কিমচন্দ্রের বর্ণনায় ব্রিটিশ শাসনে ভারতমাতা হলেন দুর্দশাগ্রস্ত। আর অবনীন্দ্রনাথের আঁকা ভারতমাতা হলেন সম্পদে সমৃদ্ধ দেবী।

১১. ভারতের ধর্মীয় বিষয়ে গোরার কী উপলব্ধি হয়?

উত্তর:- ভারতবর্ষ ও ভারতীয়দের প্রতি ব্রিটিশের অবমাননাকর আচার-আচরণ লক্ষ্য করে গোরা উগ্র হিন্দুত্ববাদী আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে সে উপলব্ধি করে, ধর্মীয় পরিচয় একমাত্র বা সবচেয়ে বড়ো পরিচয় নয়।

১২. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অঙ্কিত ‘ভারতমাতা’ চিত্রটির বর্ণনা দাও।

উত্তর:- বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ‘ভারতমাতা’ (১৯০৫ খ্রি.) নামক চিত্রটি শিক্ষিত ও প্রগতিশীল ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। অবনীন্দ্রনাথ হিন্দুদের ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর অনুকরণে চতুর্ভুজা ‘ভারতমাতা’-র চিত্রটি অঙ্কন করেন। বৈষ্ণব সন্ন্যাসিনীর পোশাক পরিহিতা ‘ভারতমাতা’র চার হাতে রয়েছে বেদ, ধানের শীষ, জপের মালা ও শ্বেতবস্ত্র। এর দ্বারা অবনীন্দ্রনাথ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের যুগে ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশিয়ানা ও জাতীয়তাবাদী অনুভূতি জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।

১৩. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আঁকা ‘ভারতমাতা’-র হাতে থাকা দ্রব্যগুলির দ্বারা কীভাবে স্বদেশিয়ানা ও জাতীয়তাবাদী অনুভূতি প্রচারের চেষ্টা করেছেন?

উত্তর:- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আঁকা ‘ভারতমাতা’র চার হাতে বেদ, ধানের শিষ, জপের মালা, ও শ্বেতবস্ত্র দেখিয়েছেন। এগুলির দ্বারা তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের (১৯০৫ খ্রি.) যুগে ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশিয়ানা ও জাতীয়তাবাদী অনুভূতি জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।

১৪. ‘গোরা’ উপন্যাসের নায়ক গোরা পল্লিগ্রামের সমাজের কী ধরনের ত্রুটি লক্ষ করেছে?

উত্তর:- ‘গোরা’ উপন্যাসের নায়ক গোরা লক্ষ্য করেছে, পল্লিগ্রামের সমাজ প্রয়োজনে মানুষকে সাহায্য করে না। বিপদের সময় মানুষকে ভরসা দেয় না। এখানকার সামাজিক আচারবিচার মানুষের মধ্যে শুধু বিভাজন সৃষ্টি করে।

১৫. উনিশ শতকে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে ‘ভারতমাতা’ চিত্রটির কীরূপ ভূমিকা ছিল?

উত্তর:- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আঁকা ‘ভারতমাতা’র চার হাতে বেদ, ধানের শিষ, জপের মালা, ও শ্বেতবস্ত্র দেখিয়েছেন। এগুলির দ্বারা তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের (১৯০৫ খ্রি.) যুগে ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশিয়ানা ও জাতীয়তাবাদী অনুভূতি জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।

১৬. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চিত্রের নাম করো।

উত্তর:- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চিত্র হল ‘নির্বাসিত যক্ষ’, ‘বঙ্গমাতা’, ‘ভারতমাতা’, ‘সাজাহানের মৃত্যু’ প্রভৃতি।

১৭. গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘বাংলা ব্যঙ্গচিত্রের জনক’ বলা হয় কেন?

উত্তর:- উনিশ শতকের বাংলা তথা ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ব্যঙ্গচিত্রের মধ্য দিয়ে ঔপনিবেশিক সমাজ ও ব্রিটিশ শাসনের বর্বরতা, নিপীড়ন প্রভৃতি নেতিবাচক দিকগুলি তুলে ধরতেন। সে যুগে ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে এই ধারণা অন্য কোনো চিত্রকর এতটা সাফল্যের সঙ্গে তুলে ধরেন নি। তাই তাঁকে ‘বাংলা ব্যঙ্গচিত্রের জনক’ বলা হয়।

১৮. উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধকে ‘সভাসমিতির যুগ’ বলা হয় কেন? অথবা, সভাসমিতির যুগ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর:- উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার, জাতীয়তাবাদের উন্মেষ প্রভৃতির ফলে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এজন্য এই সময়কালকে সভাসমিতির যুগ’ বলা হয়। ড. অনিল শীল ঊনবিংশ শতককে ‘সভাসমিতির যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন।

১৯. ব্যঙ্গচিত্র কেন আঁকা হয়?

উত্তর:- পরাধীন ভারতে নানা কারণে ব্যঙ্গচিত্রগুলি আঁকা হত। যেমন – প্রচলিত সামাজিক কুপ্রথা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা এবং তৎকালীন রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ত্রুটিগুলি জনসমক্ষে তুলে ধরা।

২০. জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলার উল্লেখযোগ্য সভাসমিতি বা সংগঠনগুলির নাম লেখো।

উত্তর:- জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলার উল্লেখযোগ্য সভাসমিতি বা সংগঠনগুলি হল বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা (১৮৩৬ খ্রি.), জমিদার সভা (১৮৩৮ খ্রি.), হিন্দুমেলা (১৮৬৭ খ্রি.), ভারতসভা (১৮৭৬ খ্রি.) প্রভৃতি।

২১. গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিলেন?

উত্তর:- গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ‘জাতাসুর’ নামে একটি ব্যঙ্গচিত্রে ভারতীয় সমাজে প্রচলিত জাতপাত ও বর্ণবৈষম্য ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা ফুটে উঠেছে। চিত্রটিতে দেখা যায়, বিশালাকার এক জাঁতার ওপর বসে হোম ও পূজা-আহ্নিক করছেন মুণ্ডিতমস্তকবিশিষ্ট এক ব্রাহ্মণ। একটি হাস্যরত কঙ্কালের জাঁতাটিকে ঘোরানোর ফলে এর নীচে অসংখ্য নিম্নবর্ণের মানুষ নিষ্পেষিত হচ্ছে।

২২. গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা কয়েকটি ব্যঙ্গচিত্রের নাম উল্লেখ করো।

উত্তর:- গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যঙ্গচিত্র হল ‘খল ব্রাহ্মণ’, ‘জাতাসুর’, ‘পরভূতের কাকলি’, ‘বিদ্যার কারখানা’, ‘বাকযন্ত্র’ প্রভৃতি।

২৩. উনিশ শতকে ভারতে গড়ে-ওঠা সভাসমিতি বা রাজনৈতিক সংগঠনগুলির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তর:- উনিশ শতকে ভারতে গড়ে-ওঠা সভাসমিতিগুলির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল সর্বপ্রথম বাংলায় এই সংগঠনগুলির প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। বাংলার অনুকরণে পরে ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও সংগঠন গড়ে ওঠে। ভারতীয়দের স্বার্থরক্ষার জন্য ব্রিটিশদের কাছে দাবিদাওয়া জানানো এসব সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল। সাধারণত সমাজের শিক্ষিত ও উচ্চবিত্তরাই এসব সংগঠনের সদস্য ছিল। সাধারণ দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষদের মধ্যে সংগঠনগুলির বিশেষ প্রভাব পড়েনি।

২৪. গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা বিভিন্ন চিত্রে ব্যঙ্গ করা হয়েছে এমন কয়েকটি বিষয়ের উদাহরণ দাও। অথবা, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ব্যঙ্গচিত্রগুলিতে কীভাবে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছেন?

উত্তর:- গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা বিভিন্ন চিত্রে ব্যঙ্গ করা হয়েছে এমন কয়েকটি বিষয়ের উদাহরণ হল পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুরাগী বাঙালি বাবু, বাঙালি নারীর বাংলার শাড়ি এবং ইউরোপের জুতো পরে ইউরোপীয় পুরুষের সঙ্গে নৃত্য, স্বামীর মত্ততা এবং তার স্ত্রীর আচরণ, জনৈক ব্রাহ্মণ ধর্মের প্রতি অনুরাগের পরিবর্তে মাংস, মদ ও মহিলায় অনুরক্ত হওয়া প্রভৃতি।

২৫. বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার দুটি উল্লেখযোগ্য কার্যাবলি উল্লেখ করো।

উত্তর:- বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার দুটি উল্লেখযোগ্য কার্যাবলি হল ব্রিটিশ শাসকদের যেসব কার্যাবলির সঙ্গে ভারতীয়দের স্বার্থ জড়িত ছিল সেসব বিষয়ে এই সভায় আলোচনা চলত। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের এক আইনের দ্বারা নিষ্কর জমির ওপর কর আরোপ করা হলে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।

২৬. হিন্দুমেলার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম লেখো।

উত্তর:- হিন্দুমেলার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নবগোপাল মিত্র, রাজা কমলকৃষ্ণ বাহাদুর, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রমানাথ ঠাকুর, পিয়ারি চরণ সরকার, রাজনারায়ণ বসু, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কৃষ্টদাস পাল প্রমুখ।

২৭. ‘বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’ কবে এবং কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর:- ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল জর্জ টমসনের নেতৃত্বে ‘বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

‘বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’র উদ্দেশ্যের মধ্যে ছিল একজন সুনাগরিকের আদর্শ গুণাবলি ভারতীয় জনগণের মধ্যে গড়ে তোলা। ‘ন্যায্য অধিকার’ সম্পর্কে ভারতীয়দের সচেতন করে তোলা। ইংল্যান্ডের সার্বভৌম শাসকের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে ওইসব ‘ন্যায্য অধিকার’ আইনের দ্বারা এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে আদায় করা।

২৮. হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল?

উত্তর:- হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে হিন্দুধর্মের অতীত গৌরবগাথা ছড়িয়ে দেওয়া, দেশীয় ভাষা চর্চা করা, জাতীয় প্রতীকগুলিকে মর্যাদা দেওয়া প্রভৃতি।

২৯. হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করো। অথবা, হিন্দুমেলা কেন চৈত্রমেলা নামে পরিচিত হয়?

উত্তর:- রাজনারায়ণ বসু ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় ঐক্য সহায়ক সমিতি প্রতিষ্ঠা করে ভারতীয় ভাষা শিক্ষা, জাতীয় ভাবধারার প্রসার ও সংস্কৃত শিক্ষার আদর্শ প্রচার করেন। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং সহযোগিতা পেয়ে নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে চৈত্র সংক্রান্তির দিন হিন্দুমেলার প্রতিষ্ঠা করেন। এজন্য সংগঠনটি চৈত্রমেলা নামেও পরিচিত ছিল।

৩০. বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার সীমাবদ্ধতা কী ছিল?

উত্তর:- বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার সীমাবদ্ধতা হল এই সভা সারা দেশে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে প্রতিষ্ঠার কিছুকাল পরই বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার অস্তিত্ব লুপ্ত হয়।

৩১. হিন্দুমেলার ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের বার্ষিক সভা সম্পর্কে কী জান?

উত্তর:- হিন্দুমেলার ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের বার্ষিক সভায় সভাপতিত্ব করেন সেই সময়ের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব রাজনারায়ণ বসু। এই সভায় ১৪ বছর বয়স্ক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের লেখা ‘হিন্দুমেলার উপহার’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন।

৩২. জমিদার সভা ও ভারতসভার মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর:- উনিশ শতকে গড়ে ওঠা জমিদার সভা ও ভারতসভার মধ্যে দুটি মৌলিক পার্থক্য ছিল (ক) জমিদার সভা ছিল মূলত জমিদার ও ধনী ব্যবসায়ীদের সংগঠন। অন্যদিকে, ভারতসভা সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে গণসংগঠন গড়ে তুলেছিল। (খ) জমিদার সভার প্রধান লক্ষ্য ছিল বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জমিদারদের স্বার্থ রক্ষা করা। অন্যদিকে, ভারতসভার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয়দের সার্বিক কল্যাণসাধন ও স্বার্থরক্ষা।

৩৩. দেশাত্মবোধ ও জাতীয়তাবাদের বিকাশে হিন্দুমেলা কী ধরনের উদ্যোগ নেয়?

উত্তর:- দেশাত্মবোধ ও জাতীয়তাবাদের বিকাশে হিন্দুমেলা হিন্দুধর্মের অতীত গৌরবগাথা প্রচার, দেশীয় ভাষা চর্চা, জাতীয় প্রতীকগুলিকে মর্যাদা দান, দেশের জয়গান, দেশাত্মবোধক কবিতাচর্চা, দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠা, দেশীয় শরীরচর্চা প্রভৃতি কর্মসূচি গ্রহণ করে।

৩৪. দেশবাসীর মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে ভারতসভা কী কর্মসূচি গ্রহণ করে?

উত্তর:- দেশবাসীর মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে ভারতসভা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। যেমন – ভারতীয়দের জনমত গঠন করা, রাজনৈতিক স্বার্থে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করা, হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপন করা, স্বল্প শিক্ষিত ও সাধারণ ভারতীয়দের রাজনৈতিক গণ আন্দোলনে শামিল করা প্রভৃতি।

৩৫. কবে, কাদের উদ্যোগে ভারতসভা প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর:- ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতসভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতসভা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি প্রমুখ।

৩৬. সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কেন সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার বয়স বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করেন? অথবা, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের বয়স-সংক্রান্ত বিষয়ে ভারতসভার আন্দোলনের পরিচয় দাও।

উত্তর:- ব্রিটিশ সরকার ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের ঊর্ধ্বতম বয়স ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৯ বছর করে। ফলে ১৯ বছর বয়সে ভারতীয় ছাত্রের পক্ষে বিলেতে গিয়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সুরেন্দ্রনাথ ইংল্যান্ড ও ভারতে একইসঙ্গে এই পরীক্ষা গ্রহণ এবং পরীক্ষায় বসার ঊর্ধ্বতম বয়স বাড়িয়ে ২২ বছর করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন।

৩৭. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে ভারতসভার কী ভূমিকা ছিল?

উত্তর:- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলন শুরু হলে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভা এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। স্বদেশি দ্রব্যের ব্যবহার জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে ভারতসভা একটি জাতীয় ভাণ্ডার গড়ে তোলে।

৩৮. হিন্দুমেলার সীমাবদ্ধতাগুলি কী ছিল? অথবা, হিন্দুমেলা কেন জনপ্রিয়তা হারায়?

উত্তর:- হিন্দুমেলার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ছিল। যেমন – নতুন প্রজন্মের বাঙালি, শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণি এই সংস্থাকে সমর্থন করেনি। শিক্ষিত যুবকরা হিন্দুমেলার ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক চিন্তায় আকৃষ্ট হয়নি। হিন্দুমেলা দেশাত্মবোধের প্রচারে গুরুত্ব দিলেও রাজনৈতিক কর্মকাও পরিচালনায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি।

৩৯. ভারতসভা ভারতীয়দের স্বার্থে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে?

উত্তর:- ভারতসভা ভারতীয়দের স্বার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেমন – ভারতীয়দের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার ঊর্ধ্বতম বয়স ১৯ থেকে বাড়িয়ে ২২ বছর করা, লর্ড লিটনের ‘দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন’ ও ‘অস্ত্র আইন’ (১৮৭৮ খ্রি.) বাতিল, বিচারব্যবস্থায় বর্ণবৈষম্যের অবসানকল্পে ভারতসভা-র ইলবার্ট বিলকে সমর্থন, কৃষকদের ওপর শোষণের বিরুদ্ধে এবং দেশে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন-পরিষদ গঠনের দাবিতেও ভারতসভা আন্দোলন সংগঠিত করে।

৪০. ভারতসভা প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল?

উত্তর:- ভারতসভা প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল ভারতীয়দের সার্বিক কল্যাণসাধন ও স্বার্থরক্ষা। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ভারতীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার প্রসার ঘটানো। ভারতীয়দের দাবিদাওয়া আদায়ে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রভৃতি।

৪১. ‘দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন’ (১৮৭৮ খ্রি.)-এর বিরুদ্ধে ভারতসভার আন্দোলনের পরিচয় দাও।

উত্তর:- বড়োলাট লর্ড লিটন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ‘দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন’ প্রণয়ন করে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলির ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেন। এর বিরুদ্ধে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভা আন্দোলন সংগঠিত করে।

৪২. এনফিল্ড রাইফেলের টোটার ঘটনাটি কী? অথবা, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের (সিপাহি বিদ্রোহের) প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল?

উত্তর:- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশবাহিনীতে ‘এনফিল্ড রাইফেল’ নামে এক রাইফেলের প্রচলন হয়। এতে ব্যবহৃত টোটার খোলসটি দাঁত দিয়ে কেটে রাইফেলে ভরতে হত। সেনাবাহিনীতে গুজব ছড়ায় যে, খোলসটি গোরু ও শূকরের চর্বি দিয়ে তৈরি। ফলে হিন্দু ও মুসলিম সিপাহিরা ধর্মচ্যুত হওয়ার ভয়ে এই টোটা ব্যবহারে অসম্মত হয় এবং ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

৪৩. ‘ইলবার্ট বিল’ কী?

উত্তর:- লর্ড রিপনের (১৮৮০-৮৪ খ্রি.) আগে এদেশে কোনো ভারতীয় বিচারক কোনো ইংরেজের বিচার করার অধিকারী ছিল না। এই বর্ণবৈষম্য দূর করার উদ্দেশ্যে রিপনের পরামর্শে তাঁর আইন সচিব ইলবার্ট একটি বিল রচনা করেন। এতে ভারতীয় বিচারকরা শ্বেতাঙ্গ ইংরেজদের বিচার করার অধিকার পায়। এটি ‘ইলবার্ট বিল’ নামে পরিচিত।

৪৪. মঙ্গল পান্ডে কে ছিলেন?

উত্তর:- মঙ্গল পান্ডে ছিলেন ব্যারাকপুর সেনানিবাসের ৩৪ নং নেটিভ ইনফ্যান্ট্রির একজন সিপাহি। তিনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মার্চ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এর ফলে সরকার মঙ্গল পান্ডেকে গ্রেপ্তার করে। বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।

৪৫. উনিশ শতকে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের ভারতবাসীর ক্ষোভের কারণ কী ছিল?

উত্তর:- উনিশ শতকে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের ভারতবাসীর ক্ষোভের প্রধান কারণগুলি ছিল ভারতীয়দের ওপর তীব্র অর্থনৈতিক শোষণ, কৃষকদের চরম দুর্দশা, ভারতের শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংস, শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা ভারতীয় সমাজ-সভ্যতা ও ধর্মকে ঘৃণা করা প্রভৃতি।

৪৬. ‘অস্ত্র আইন’ (১৮৭৮ খ্রি.)-এর বিরুদ্ধে ভারতসভার আন্দোলনের পরিচয় দাও।

উত্তর:- বড়োলাট লর্ড লিটন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ‘দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন’ প্রণয়ন করে সরকারের অনুমতি ছাড়া ভারতীয়দের আগ্নেয়াস্ত্র রাখা নিষিদ্ধ করেন। এর বিরুদ্ধে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভা আন্দোলন গড়ে তোলে।

৪৭. ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর লোকেরা কেন এনফিল্ড রাইফেল-এর টোটা ব্যবহার করতে অস্বীকার করে?

উত্তর:- ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে গুজব ছড়ায় যে, এনফিল্ড রাইফেল-এর টোটার খোলসটি গোরু ও শূকরের চর্বি দিয়ে তৈরি। ফলে হিন্দু ও মুসলিম সিপাহিরা ধর্মচ্যুত হওয়ার ভয়ে এই টোটা ব্যবহারে অসম্মত হয়।

৪৮. ইলবার্ট বিলের সপক্ষে ভারতসভার আন্দোলন উল্লেখ করো।

উত্তর:- লর্ড রিপন ইলবার্ট বিলের মাধ্যমে ভারতের কৃষ্ণাঙ্গ বিচারকদের শ্বেতাঙ্গদের বিচার করার অধিকার দিলে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করে। ফলে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভা ইলবার্ট বিলের সমর্থনে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে।

৪৯. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কারা, কেন ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ বা সামরিক বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন?

উত্তর:- ইংরেজ ঐতিহাসিক স্যার জন লরেন্স, জন সিলি, চার্লস রেকস প্রমুখ ১৮৫৭-এর বিদ্রোহকে ‘সামরিক বিদ্রোহ’ এবং অক্ষয়কুমার দত্ত, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কিশোরীচাঁদ মিত্র, দাদাভাই নওরোজি প্রমুখ ভারতীয় একে ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, ১৮৫৭-এর বিদ্রোহে ভারতের সর্বস্তরের মানুষ এই বিদ্রোহে শামিল হয়নি। সৈনিক বা সিপাহিরা প্রথম এই বিদ্রোহ শুরু করে। এজন্য তাঁরা একে ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ বলে অভিহিত করেছেন।

৫০. ১৮৫৭-র বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির মনোভাব কী ছিল? অথবা, শিক্ষিত বাঙালি সমাজ কেন ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে সমর্থন করেনি? অথবা, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহে শিক্ষিত সমাজ দূরে ছিল কেন?

উত্তর:- শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি বড়ো অংশ ব্রিটিশ শাসনকে ভারতের পক্ষে কল্যাণকর বলে মনে করত। এজন্য তারা ১৮৫৭-র ব্রিটিশ-বিরোধী বিদ্রোহকে সমর্থন করেনি। কারণ, এই বিদ্রোহের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর পর কেউ ভারতে জাতীয় রাষ্ট্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে কি না এ বিষয়ে শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণি সন্দিহান ছিল।

৫১. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কারা, কেন ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বলে অভিহিত করেছেন?

উত্তর:- ঐতিহাসিক আউট্রাম, ডাফ, রবার্টসন, টোরি দলের নেতা ডিসরেলি, সমাজতন্ত্রবিদ কার্ল মার্কস প্রমুখ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বলে অভিহিত করেছেন। মুজাফফরনগর, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে সিপাহিদের সঙ্গে সংযোগ ছাড়াই অসামরিক লোকজন ও জমিদারশ্রেণি এই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এজন্য তাঁরা একে ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বলে অভিহিত করেছেন।

৫২. কীভাবে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের অবসান ঘটে?

উত্তর:- ব্রিটিশ সরকার তীব্র দমননীতির মাধ্যমে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের মেরুদন্ড ভেঙে দেয়। বহু বিদ্রোহী নেতাকে হত্যা করা হয়। ব্রিটিশবাহিনী ২২ সেপ্টেম্বর (১৮৫৭ খ্রি.) দিল্লি দখল করে। বাহাদুর শাহকে বন্দি করে রেঙ্গুনে নির্বাসন দেওয়া হয়। এরূপ তীব্র দমননীতির ফলে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি বিদ্রোহ থেমে যায়।

৫৩. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কারা, কেন ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বলে অভিহিত করেছেন?

উত্তর:- বিপ্লবী বিনায়ক দামোদর সাভারকার ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বলে অভিহিত করেছেন। অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক সুশোভন সরকার প্রমুখও এই অভিমতকে সমর্থন করেছেন। তাঁদের মতে, ভারতবাসী জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়। এজন্য তাঁরা একে ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বলে মনে করেন।

৫৪. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কারা, কেন ‘গণবিদ্রোহ’ বলে অভিহিত করেছেন?

উত্তর:- ব্রিটিশ ঐতিহাসিক নর্টন, ম্যালেসন, বল, জন কে প্রমুখ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ‘গণবিদ্রোহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, এই বিদ্রোহ ভারতের এক সীমাবদ্ধ অঞ্চলে বা শুধু সিপাহিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। দিল্লি, অযোধ্যা, লখনউ, কানপুর, বেরিলী, ঝাঁসি, বিহার-সহ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ এই বিদ্রোহে অংশ নেয়। এজন্য তাঁরা একে ‘গণবিদ্রোহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

৫৫. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের ফলাফল বা গুরুত্বগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর:- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রধান ফলাফল বা গুরুত্বগুলি ছিল বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ‘ভারত শাসন আইন’ (১৮৫৮ খ্রি.) পাস করে। ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে। মহারানি ভিক্টোরিয়া নিজের হাতে ভারতের শাসনভার তুলে নেন।

৫৬. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কারা, কেন ‘সামন্ততন্ত্র- বিরোধী কৃষক অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছেন?

উত্তর:- সুপ্রকাশ রায়, প্রমোদ সেনগুপ্ত প্রমুখ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ‘সামন্ততন্ত্র-বিরোধী কৃষক অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছেন। ১৮৫৭- এর বিদ্রোহে সারা দেশে কৃষকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ লক্ষ্য করে তাঁরা এরূপ মন্তব্য করেছেন।

৫৭. মহারানির ঘোষণাপত্র কী?

উত্তর:- ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেন। তিনি ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর এক ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় নতুন নীতি ও আদর্শের কথা প্রকাশ করেন। এটি ‘মহারানির ঘোষণাপত্র’ নামে পরিচিত।

৫৮. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহারানির ঘোষণাপত্রে দেশীয় রাজাদের প্রতি কী কী ঘোষণা করা হয়েছিল?

উত্তর:- মহারানির ঘোষণাপত্রে দেশীয় রাজাদের বলা হয় যে, স্বত্ববিলোপ নীতি বাতিল করা হবে। দেশীয় রাজাদের দত্তক গ্রহণের অধিকার দেওয়া হবে। ব্রিটিশরা ভারতে আর সাম্রাজ্য বিস্তার করবে না। দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সন্ধিগুলি সরকার মেনে চলবে।

৫৯. কে ভাইসরয় উপাধি লাভ করেন?

উত্তর:- ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে মহারানি ভিক্টোরিয়া নিজের হাতে ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। রানির প্রতিনিধি হিসেবে গভর্নর-জেনারেল ভারতের শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পান। তাঁর উপাধি হয় ভাইসরয়।

৬০. মহারানি ভিক্টোরিয়া কর্তৃক নিজ হাতে ভারতের শাসনভার গ্রহণ সম্পর্কে কী জান?

উত্তর:- ‘ভারত শাসন আইন’ (১৮৫৮ খ্রি.)-এর দ্বারা মহারানি ভিক্টোরিয়া নিজের হাতে ভারতের শাসনভার তুলে নেন। রানির প্রতিনিধি হিসেবে গভর্নর-জেনারেল ভারতের শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পান। গভর্নর-জেনারেলের উপাধি হয় ভাইসরয়। ভারতের প্রথম ভাইসরয় নিযুক্ত হন লর্ড ক্যানিং।

৬১. ‘মহারানির ঘোষণাপত্র’-এর (১৮৫৮) মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর:- ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ‘মহারানির ঘোষণাপত্র’-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটানো এবং ভারতীয়দের নিজ শাসনাধীনে এনে তাদের বিভিন্ন সুযোগসুবিধা দান। তবে এই সবই ছিল রাজনৈতিক চমক মাত্র। এর ফলে ভারতীয়রা প্রকৃতভাবে লাভবান হয়নি।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment