দশম শ্রেণী (ষষ্ঠ অধ্যায়): কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন- বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
দশম শ্রেণী (ষষ্ঠ অধ্যায়): কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন- বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
ষষ্ঠ অধ্যায় ২ নং
১. অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিহারের কোন কোন অঞ্চলে কৃষকবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে?
উত্তর:- অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিহারের সীতামারি, দ্বারভাঙ্গা, ভাগলপুর, মুজফ্ফরপুর, পূর্ণিয়া, মুঙ্গের, মধুবনী প্রভৃতি অঞ্চলে কৃষকবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।
২. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজ আগ্রহী ছিল না কেন?
উত্তর:- বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজের অনাগ্রহের কারণগুলি হল জাতীয় কংগ্রেস এই আন্দোলনের দ্বারা কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বার্থপূরণের উদ্যোগ নেয় নি। আন্দোলনের নেতারা কৃষকদের জন্য সুনির্দিষ্ট কৃষিভিত্তিক কর্মসূচিও গ্রহণ করে নি।
৩. মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে এবং জাতীয় কংগ্রেসের পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনগুলি কী ছিল?
উত্তর:- মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে এবং জাতীয় কংগ্রেসের পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হয়েছিল তিনটি – অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রি.), আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২ খ্রি.)।
৪. আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ কী?
উত্তর:- ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের আমেদাবাদের বস্ত্র শ্রমিকরা ৫০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি জানালে মালিকশ্রেণি তাতে কর্ণপাত করেনি। ফলে গান্ধিজি এখানকার শ্রমিকদের নিয়ে অহিংস উপায়ে ধর্মঘট ও অনশন শুরু করেন। এটি আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।
৫. কংগ্রেস কবে কোন অধিবেশনে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব গ্রহণ করে?
উত্তর:- কংগ্রেস ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে কলকাতা অধিবেশনে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব নেয়।
৬. উত্তরপ্রদেশে কবে, কাদের উদ্যোগে কিষান সভা প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর:- উত্তরপ্রদেশে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে মদনমোহন মালব্যের সমর্থনে গৌরীশংকর মিশ্র ও ইন্দ্রনারায়ণ ত্রিবেদীর উদ্যোগে কিষান সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
৭. কৃষক আন্দোলনে বাবা রামচন্দ্রের কীরূপ ভূমিকা ছিল?
উত্তর:- অসহযোগ আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলনে বাবা রামচন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি যুক্তপ্রদেশে গঠিত কিষান সভার নেতৃত্বে কৃষকদের নিয়ে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁর নেতৃত্বে কিষান সভার আন্দোলন কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনের সাথে মিশে গিয়ে জোরালো হয়ে ওঠে।
৮. অসহযোগ আন্দোলনে মেদিনীপুরে কৃষকরা কীভাবে শামিল হয়?
উত্তর:- মেদিনীপুরে ক্ষুদ্র, মধ্যবিত্ত, জোতদার-সকলশ্রেণির কৃষক অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেয়। এখানকার তমলুক ও কাঁথি মহকুমার ইউনিয়ন বোর্ড চৌকিদারি কর বন্ধ করলে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে।
৯. অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশে কৃষক আন্দোলন কীরূপ আকার ধারণ করে?
উত্তর:- অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি, প্রতাপগড়, সুলতানপুর-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে কিষান সভার উদ্যোগে কৃষক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। বাবা রামচন্দ্রের গ্রেফতারের পর এই রাজ্যের হরদৈ, বরাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি জেলায় ‘একা’ নামে কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
১০. অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলার কোন কোন জেলায় কৃষক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে?
উত্তর:- অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলার মেদিনীপুর, পাবনা, বগুড়া, বীরভূম, রাজশাহি, রংপুর, কুমিল্লা, দিনাজপুর, বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলায় কৃষক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে।
১১. কৃষক আন্দোলনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর:- কৃষক আন্দোলনের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল অধিকাংশ কৃষক আন্দোলন ছিল বিক্ষিপ্ত এবং একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। কৃষক আন্দোলনগুলি কখনও জমিদার-মহাজন-বিরোধী ছিল; আবার কখনও ব্রিটিশ বিরোধী ছিল।
১২. অসহযোগ আন্দোলনের সময় কারা বারদৌলি অঞ্চলে গঠনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন? এখানে কী ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়?
উত্তর:- অসহযোগ আন্দোলনের সময় গান্ধিবাদী সত্যাগ্রহী নেতা কল্যাণজি মেহতা ও দয়ালজি দেশাই বারদৌলি অঞ্চলে গঠনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
বারদৌলিতে হালি প্রথা, সুরাপান, পণপ্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে এখানকার কৃষকদের সচেতন করে তোলা হয়। গঠনমূলক কর্মসূচি হিসেবে বারদৌলি অঞ্চলে বিদ্যালয়, সত্যাগ্রহ শিবির বা আশ্রম প্রভৃতি গড়ে তোলা হয়।
১৩. কবে, কোথায় ‘একা আন্দোলন’ সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তর:- ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ভাগে যুক্তপ্রদেশের (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ) উত্তর-পশ্চিম অযোধ্যা, অর্থাৎ হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি জেলায় ‘একা আন্দোলন’ সংঘটিত হয়েছিল।
১৪. একা আন্দোলনের প্রধান কারণগুলি কী কী?
উত্তর:- একা আন্দোলনের প্রধান কারণগুলি ছিল কৃষকদের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ কর বৃদ্ধি, কর আদায়ে সীমাহীন অত্যাচার, প্রভুর জমি ও খামারে কৃষকদের বিনা বেতনে বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা প্রভৃতি।
১৫. অসহযোগ আন্দোলনের সময় জওহরলাল নেহরু কীভাবে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন?
উত্তর:- অসহযোগ আন্দোলনের সময় ‘একা আন্দোলনের’ নেতা বাবা রামচন্দ্র গ্রামের কৃষকদের দুর্দশা স্বচক্ষে দেখার অনুরোধ করে কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরুকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে গ্রামে আসার অনুরোধ জানান। এভাবে নেহরু কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।
১৬. কবে, কোন ঘটনার ফলে গান্ধিজি অহিংস অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন?
উত্তর:- ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে (৫ ফেব্রুয়ারি) উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা গ্রামে উত্তেজিত জনতা থানায় অগ্নি সংযোগ করে ২২ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মারে। আন্দোলনে হিংসার প্রবেশ ঘটায় গান্ধিজি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
১৭. ‘পতিদার’ ও ‘কুনবি’ কাদের বলা হত?
উত্তর:- পতিদার শব্দের অর্থ হল ‘একখণ্ড জমির মালিক’। পতিদাররা ছিল গুজরাটের একটি ধনী কৃষক সম্প্রদায়। এরা নিজেদের রামচন্দ্রের বংশধর বলে দাবি করত।
গুজরাটের সুরাট জেলার অন্তর্গত বারদৌলির সম্পন্ন ধনী কৃষকদের কুনবি বলা হত।
১৮. বারদৌলি সত্যাগ্রহ কী?
উত্তর:- গুজরাটের বারদৌলি তালুকের কৃষকদের ওপর রাজস্বের পরিমাণ যথেষ্ট বাড়িয়ে দেওয়া হলে কৃষকরা রাজস্ব প্রদান বন্ধ করে অহিংস উপায়ে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে। এটি বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।
১৯. চৌরিচৌরার ঘটনাটি কী?
উত্তর:- চৌরিচৌরা হল উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার একটি গ্রাম। এখানে অসহযোগ আন্দোলনের সময় ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি উত্তেজিত জনতা থানায় ২২ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মারে।
২০. একা আন্দোলন কী?
উত্তর:- কৃষকদের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ কর বৃদ্ধি, কর আদায়ে সীমাহীন অত্যাচার, প্রভুর জমি ও খামারে কৃষকদের বিনা বেতনে বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা প্রভৃতি কারণে যুক্তপ্রদেশের (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ) উত্তর-পশ্চিম অযোধ্যা, অর্থাৎ হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি জেলায় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের প্রথমভাগে যে আন্দোলন সংঘটিত হয় তা একা আন্দোলন নামে পরিচিত।
২১. বারদৌলি সত্যাগ্রহের কারণ কী ছিল? অথবা, বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন কেন শুরু হয়?
উত্তর:- ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভয়ানক বন্যায় গুজরাটের বারদৌলি তালুকে কৃষকদের ফসল নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সরকার সেখানকার কৃষকদের ওপর রাজস্বের হার ৩০ শতাংশ (পরে কমিয়ে ২২ শতাংশ) বাড়িয়ে দেয়। তাই কৃষকরা খাজনা বন্ধের দাবি তোলে। এ ছাড়া ভূমিরাজস্ব কমানোর দাবিতে বারদৌলির কৃষকরা সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে।
২২. হালি প্রথা কী? এই প্রথা কোথায় চালু ছিল? অথবা, হালি প্রথা কাকে বলে?
উত্তর:- গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে নিম্নবর্ণের ‘কালিপরাজ’ সম্প্রদায়ভুক্ত কৃষকরা উচ্চবর্ণের ‘উজলিপরাজ’ সম্প্রদায়ের মালিকদের জমিতে বংশানুক্রমে শ্রমিকের কাজ করত। উচ্চবর্ণের অধীনে নিম্নবর্ণের মানুষের বংশানুক্রমে এই কাজের প্রথাটি ‘হালি প্রথা’ নামে পরিচিত।
গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে হালি প্রথা চালু ছিল।
২৩. ‘একা’ আন্দোলন কাদের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল? কৃষকদের প্রধান শপথ কী ছিল?
উত্তর:- মাদারি পাশি ও বাবা গরিবদাস প্রমুখের নেতৃত্বে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ভাগে যুক্তপ্রদেশে একা আন্দোলন হয়েছিল। একা আন্দোলনে যোগদানকারী কৃষকরা শপথ গ্রহণ করে যে, তারা নথিভুক্ত করের বেশি অর্থ প্রদান করবে না। অপরাধীদের সাহায্য করবে না। বেগার শ্রম দেবে না। জমি থেকে উৎখাত করলেও তারা জমি ছেড়ে চলে যাবে না। তারা পঞ্চায়েতের যাবতীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলবে।
২৪. আইন অমান্য আন্দোলনের সময় কোন কোন প্রদেশে কৃষক আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে?
উত্তর:- আইন অমান্য আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশ, বিহার, বাংলা, গুজরাট, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব প্রভৃতি প্রদেশে কৃষক আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে।
২৫. আইন অমান্য আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনে কারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
উত্তর:- আইন অমান্য আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রফি আহমেদ কিদোয়াই, কালিকাপ্রসাদ কানুনগো, অঞ্জনি কুমার প্রমুখ।
২৬. বারদৌলির কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে নিযুক্ত দুজন সত্যাগ্রহী নেতার নাম লেখো।
উত্তর:- বারদৌলির কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে নিযুক্ত দুজন সত্যাগ্রহী নেতা ছিলেন কল্যাণজি মেহতা ও দয়ালজি দেশাই।
২৭. বারদৌলি সত্যাগ্রহ পরিচালনায় বল্লভভাই প্যাটেলের সহযোগী কয়েকজন নেতার নাম লেখো।
উত্তর:- বারদৌলি সত্যাগ্রহ পরিচালনায় বল্লভভাই প্যাটেলের সহযোগী কয়েকজন নেতা ছিলেন নরহরি পারিখ, রবিশংকর ব্যাস, মোহনলাল পান্ডে প্রমুখ।
২৮. বখস্ত আন্দোলন কোথায় এবং কী জন্য হয়েছিল?
উত্তর:- ‘বখস্ত’ আন্দোলন কারিয়ানন্দ শর্মার নেতৃত্বে ১৯৩৬-৩৮ খ্রিস্টাব্দে বিহারের বারহিয়া তাল, রিওরা, মাজিওয়ানা, আমওয়ারি প্রভৃতি অঞ্চলে হয়েছিল। জমিদারের হাতে কৃষকের বাধা পড়ে থাকা জমিকে ‘বখস্ত’ জমি বলা হয়। জমিদারের হাত থেকে এই জমি ফিরে পাওয়ার দাবিতে ‘বখস্ত’ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।
২৯. স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস-কে কী উদ্দেশ্যে ভারতে পাঠানো হয়?
উত্তর:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয় অর্থসম্পদ ও জনশক্তির সহায়তা ব্রিটেনের খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের অর্থসম্পদ ও জনশক্তি যুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ভারতে পাঠায়।
৩০. বারদৌলি সত্যাগ্রহে নেতৃত্বে দেন এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নারীর নাম লেখো।
উত্তর:- বারদৌলি সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নারী ছিলেন মিঠুবেন প্যাটেল, মণিবেন প্যাটেল, সারদা মেহতা, ভক্তি বাই প্রমুখ।
৩১. বারদৌলি সত্যাগ্রহের সমর্থনে কারা আইনসভা থেকে পদত্যাগ করেন?
উত্তর:- বারদৌলি সত্যাগ্রহের সমর্থনে বোম্বাই আইনসভার সদস্য কে এম মুনসি ও লালজি নারাণজি আইনসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
৩২. সর্বভারতীয় কিষান সভার প্রথম উল্লেখযোগ্য নেতা কারা ছিলেন?
উত্তর:- সর্বভারতীয় কিষান সভার প্রথম উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন রাম মনোহর লোহিয়া, জয়প্রকাশ নারায়ণ, ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ, বঙ্কিম মুখার্জি, মোহন সিং প্রমুখ।
৩৩. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কোন কোন প্রদেশে কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে?
উত্তর:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বিহার, উত্তরপ্রদেশ, বাংলা, গুজরাট, বোম্বাই, উড়িষ্যা, আসাম, মধ্যপ্রদেশ, মাদ্রাজ প্রভৃতি প্রদেশে কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
৩৪. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলার কৃষকবিদ্রোহ কীরূপ ছিল?
উত্তর – ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলার মেদিনীপুরের তমলুক মহকুমা, পটাশপুর থানা, খেজুরী থানা, দিনাজপুরের বালুরঘাট প্রভৃতি এলাকায় কৃষকরা জমিদারদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে।
৩৫. ‘তেভাগা’ নামকরণ কেন হয়?
উত্তর:- বাংলার বর্গাদার কৃষক বা ভাগচাষিরা ফ্লাউড কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জোতদারের কাছ থেকে উৎপন্ন ফসলের দুই-তৃতীয়াংশ অধিকারের দাবিতে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে এক বিরাট আন্দোলন গড়ে তোলে (১৯৪৬ খ্রি.)। উৎপন্ন ফসলের তিনভাগের দুইভাগ পাওয়ার দাবিতে এই আন্দোলন হয়েছিল বলে এর নাম হয় ‘তেভাগা’ আন্দোলন।
৩৬. ফজলুল হক কী নামে পরিচিত ছিলেন? তাঁর কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক কী ছিল?
উত্তর:- আবুল কাশেম ফজলুল হক ‘শের-ই-বঙ্গাল’ নামে পরিচিত ছিলেন।
বাংলার ‘কৃষক প্রজা পার্টি’র অন্যতম নেতা ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল ‘লাঙল’।
৩৭. স্বাধীনতা লাভের পূর্বে ২৬ জানুয়ারি দিনটির গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর:- স্বাধীনতা লাভের পূর্বে ২৬ জানুয়ারি দিনটির গুরুত্ব ছিল যে, জওহরলাল নেহরুর সভাপতিত্বে লাহোর কংগ্রেস অধিবেশনে (১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে) দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কংগ্রেস ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস পালন করবে, ভারত পূর্ণ স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হবে।
৩৮. মোপলা আন্দোলন কবে, কী উদ্দেশ্যে সংঘঠিত হয়েছিল?
উত্তর:- দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূল অঞ্চলে ১৮৭৩-১৯২১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মোপলা আন্দোলন হয়েছিল। মোপলা আন্দোলনের কারণ ছিল কৃষকদের উপর জমিদারদের অত্যাচার বন্ধ করা।
৩৯. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো।
উত্তর:- বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য শ্রমিক নেতা ছিলেন প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী, প্রেমতোষ বসু, অপূর্ব কুমার ঘোষ, অশ্বিনী কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
৪০. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার বাইরে কয়েকটি শ্রমিক ধর্মঘটের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর:- বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার বাইরে উল্লেখযোগ্য শ্রমিক ধর্মঘটগুলি হল তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনে বস্ত্র কারখানা, বোম্বাই-এ অস্ত্র কারখানা ও রেলওয়ে ওয়ার্কশপ, পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডির অস্ত্র কারখানা ও রেলওয়ে ওয়ার্কশপ প্রভৃতি স্থানের শ্রমিক ধর্মঘট।
৪১. কোন কোন শ্রমিক নেতা অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন?
উত্তর:- বি পি ওয়াদিয়া, এন এম জোশী, জোশেফ ব্যাপ্তিস্তা, প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী, ব্যোমকেশ চক্রবর্তী, সুরেন্দ্রনাথ হালদার প্রমুখ শ্রমিক নেতা অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
৪২. কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ কী কারণে কৃষক আন্দোলনকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সচেষ্ট ছিলেন?
উত্তর:- কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ কৃষক আন্দোলনকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সচেষ্ট ছিলেন কারণ, তারা চেয়েছিলেন কৃষক আন্দোলন যাতে হিংসাত্মক পথে না যায়, খাজনা বন্ধের আন্দোলনে দেশপ্রেমিক জমিদাররা অসন্তুষ্ট না হন।
৪৩. কবে, কীভাবে সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পাটি প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর:- ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির বিভিন্ন প্রাদেশিক শাখাগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৪৪. সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি-র কয়েকটি মুখপত্রের নাম লেখো।
উত্তর:- ‘সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’-র কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মুখপত্র ছিল ‘লাঙল’, ‘গণবাণী’, ‘শ্রমিক’, ‘সোশ্যালিস্ট’, ‘কীর্তি’, ‘লেবার-কিষান গেজেট’ প্রভৃতি।
৪৫. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী? অথবা, ‘মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা’ শুরু করা হয়েছিল কেন?
উত্তর:- ব্রিটিশ সরকার ভারতে বামপন্থী ও শ্রমিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মুজাফফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, পি সি যোশী-সহ মোট ৩৩ জন বামপন্থী শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করে এক মামলা শুরু করে। এটি মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। ১৯৩৩ সালে মামলার রায়ে বিভিন্ন বন্দির বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড হয়।
৪৬. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে বাংলার শ্রমিক-মজুরদের অংশগ্রহণের দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর:- বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে বাংলার শ্রমিক-মজুরদের অংশগ্রহণের কয়েকটি উদাহরণ হল ময়মনসিংহের মুচিরা বিদেশি জুতো সারাতে অস্বীকার করে। বরিশালের ওড়িয়া রাঁধুনিরা রান্নায় বিদেশি দ্রব্য ব্যবহার করতে অস্বীকার করে। কালীঘাটের ধোপারা বিলাতি কাপড় কাচতে অস্বীকার করে।
৪৭. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে বাংলার শ্রমিক ধর্মঘটে উৎসাহ দিয়েছিলেন এমন দুজন কংগ্রেস নেতার নাম লেখো।
উত্তর:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলায় শ্রমিক ধর্মঘটে উৎসাহ দিয়েছিলেন এমন উল্লেখযোগ্য কংগ্রেস নেতা হলেন বিপিনচন্দ্র পাল, চিত্তরঞ্জন দাশ, লিয়াকত হোসেন, শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী প্রমুখ।
৪৮. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার দুটি শ্রমিক ধর্মঘটের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর:- বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার উল্লেখযোগ্য শ্রমিক ধর্মঘটগুলি হল কলকাতার রেলওয়ে ও ট্রাম কোম্পানি, হাওড়ার বার্ন কোম্পানি, জামালপুর রেল ওয়ার্কশপ, বাউড়িয়া জুটমিল, বজবজের ক্লাইভ জুটমিল প্রভৃতির শ্রমিক ধর্মঘট।
৪৯. কাদের নিয়ে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করা হয়? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তদের কয়েকজনের নাম লেখো।
উত্তর:- ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে (২০ মার্চ) ৩৩ জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯ খ্রি.) শুরু করা হয়। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুজাফফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, মীরাজকর, পি সি জোশী, গঙ্গাধর অধিকারী, শিবনাথ ব্যানার্জি, ধরণী গোস্বামী প্রমুখ।
৫০. অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় দুটি শ্রমিক ধর্মঘটের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর:- অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় উল্লেখযোগ্য শ্রমিক ধর্মঘটগুলি হল কলকাতার ট্রাম কোম্পানি, বন্দর ও পাটকল, জামশেদপুরের টাটা ইস্পাত কারখানা, রানিগঞ্জের কয়লাখনি প্রভৃতিতে শ্রমিকদের ধর্মঘট।
৫১. নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? অথবা, নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর:- নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনে ভারতীয় সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ করা, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলা। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিদাওয়া আদায় করা প্রভৃতি।
৫২. কারা, কী উদ্দেশ্যে ‘ইনডিপেন্ডেন্স ফর ইন্ডিয়া লিগ’ গঠন করেন?
উত্তর:- সুভাষচন্দ্র বসু ও জওহরলাল নেহরু ‘ইনডিপেন্ডেন্স ফর ইন্ডিয়া লিগ’ গঠন করে। ‘ইনডিপেন্ডেন্স ফর ইন্ডিয়া লিগ’ গঠনের উদ্দেশ্য ছিল সমাজতান্ত্রিক উপায়ে ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোর সংস্কার করা।
৫৩. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত তিন ব্রিটিশ শ্রমিক নেতার নাম লেখো।
উত্তর:- মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত তিনজন ব্রিটিশ শ্রমিক নেতা হলেন বেঞ্জামিন ব্র্যাডলি, ফিলিপ স্প্র্যাট ও লেস্টার হ্যাচিনসন।
৫৪. শ্রমিক আন্দোলন পর্বে দুজন ব্রিটিশ কমিউনিস্টের নাম লেখো।
উত্তর:- শ্রমিক আন্দোলন পর্বে দুজন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট হলেন বেঞ্জামিন ব্র্যাডলি ও ফিলিপ স্প্র্যাট।
৫৫. কবে, কাদের উদ্যোগে লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর:- ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরে লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস নামে দলটি প্রতিষ্ঠিত হয় লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম, হেমন্ত কুমার সরকার, কুতুবউদ্দিন আহমদ, সামসুদ্দিন হুসেন প্রমুখ।
৫৬. কবে, কোথায় ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি অব বেঙ্গল প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর:- ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা কংগ্রেসের অভ্যন্তরে লেবার স্বরাজ পার্টি অব বেঙ্গল দল গঠিত হয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণনগরে আয়োজিত নিখিল বঙ্গ প্রজা সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এই দলের নতুন নামকরণ করেন ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট পার্টি অব বেঙ্গল।
৫৭. ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তর:- পুঁজিবাদ-বিরোধী ঐক্যবদ্ধ কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলা, পত্রপত্রিকা প্রকাশ ও প্রচারের মাধ্যমে দেশে সাম্যবাদের প্রসার ঘটানো, বামপন্থী দলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
৫৮. জুডিসিয়াল স্ক্যান্ডাল বলতে কী বোঝ?
উত্তর:- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ২০ মার্চ ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ৩৩ জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেফতার করে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করে। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে এই মামলার রায়ে বিভিন্ন নেতার দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড হয়। এই ঘটনাটি ইতিহাসে জুডিসিয়াল স্ক্যান্ডাল নামে পরিচিত।
৫৯. সরকার কবে রয়্যাল কমিশন নিয়োগ করে? এই কমিশন নিয়োগের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর:- ব্রিটিশ সরকার ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে রয়্যাল কমিশন নিয়োগ করে।
রয়্যাল কমিশন নিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল শ্রমিক কল্যাণমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৬০. কাদের নেতৃত্বে, কবে, কোথায় কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর:- জয়প্রকাশ নারায়ণ, অচ্যুত পট্টবর্ধন, ইউসুফ মেহের আলি, অশোক মেহতা, মিনু মাসানী প্রমুখের নেতৃত্বে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়।
৬১. ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল?
উত্তর:- ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল ভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন, কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি প্রভৃতি।
৬২. কবে, কাদের উদ্যোগে রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস গঠিত হয়?
উত্তর:- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট নেতা বি টি রণদিভে, সোমনাথ লাহিড়ী প্রমুখের নেতৃত্বে রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস গঠিত হয়।
৬৩. কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় (বা দ্বিতীয় বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলা) কোন কমিউনিস্ট নেতাদের জড়ানো হয়?
উত্তর:- কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় (১৯২৪ খ্রি.) মুজাফফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, শওকৎ ওসমানী, নলিনী গুপ্ত প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতাদের জড়ানো হয়।
৬৪. মানবেন্দ্রনাথ রায় কে ছিলেন?
উত্তর:- মানবেন্দ্রনাথ রায় ছিলেন ভারতের একজন বামপন্থী স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁর প্রকৃত নাম নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্দে ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’, ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ‘লিগ অব র্যাডিক্যাল কংগ্রেসমেন’, ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ‘র্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন।
৬৫. নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য (মানবেন্দ্রনাথ রায়) বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সময় যে ছদ্মনামগুলি গ্রহণ করেছিলেন তার যে-কোনো দুটি উল্লেখ করো।
উত্তর:- নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সময় মি. মার্টিন, মানবেন্দ্রনাথ রায়, হরি সিং, ড. মাহমুদ, মি. হোয়াইট, মি. ব্যানার্জি প্রভৃতি ছদ্মনাম গ্রহণ করেছিলেন।
৬৬. প্রথম কার নেতৃত্বে, কোথায়, কবে ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ প্রতিষ্ঠিত হয়? এই দল কবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে? অথবা, কে কত খ্রিস্টাব্দে ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ গড়ে তোলেন?
উত্তর:- মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নেতৃত্বে এবং অবনী মুখার্জি, মহম্মদ আলি, মহম্মদ সাফিক প্রমুখের সহযোগিতায় ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্দে প্রথম ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
মানবেন্দ্রনাথ রায় প্রতিষ্ঠিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ‘কমিউনিস্ট ইনটারন্যাশনাল’ বা ‘কমিনটার্ন’-এর স্বীকৃতি লাভ করে।
৬৭. ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে ‘দ্বিজ’ বলা হয় কেন?
উত্তর:- ‘দ্বিজ’ কথার অর্থ হল যার দু-বার জন্ম। মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নেতৃত্বে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্দে প্রথম ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে সিঙ্গারাভেল্লু চেটিয়ারের সভাপতিত্বে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কানপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দু-বার প্রতিষ্ঠার জন্য আক্ষরিক অর্থে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে ‘দ্বিজ’ বলা হয়।
৬৮. সারা ভারত কিষান কংগ্রেসের প্রধান দাবিগুলি কী ছিল?
উত্তর:- সারা ভারত কিষান কংগ্রেসের (১৯৩৬ খ্রি.) প্রধান দাবিগুলি ছিল জমিদারি ও বেগার প্রথার উচ্ছেদ, কৃষিঋণ মকুব, খাজনা হ্রাস প্রভৃতি।
৬৯. কে, কবে ফরোয়ার্ড ব্লক দল গঠন করেন? অথবা, কে, কোন বৎসর ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন?
উত্তর:- সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরে ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন।
৭০. কে, কবে ‘বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল’ প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর:- অমূল্যচন্দ্র অধিকারীর নেতৃত্বে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে (১৯ মে) রামগড়ে ‘বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী’ দল গঠন করা হয়
৭১. মানবেন্দ্রনাথ রায় প্রথম কবে, কোন মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারারুদ্ধ হন?
উত্তর:- মানবেন্দ্রনাথ রায় প্রথম ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে হাওড়া-শিবপুর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ৪ বছর কারাবাস করেন।
৭২. ‘ভ্যানগার্ড অব ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স’ পত্রিকা সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- ভারতের বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির বার্লিন থেকে ‘ভ্যানগার্ড অব ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এটি ডাকযোগে ভারতে পাঠানো হতে থাকে। সরকার এই পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে।
৭৩. মানবেন্দ্রনাথ রায় কী উদ্দেশ্যে কংগ্রেস দলে যোগ দেন?
উত্তর:- কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ভাবধারার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে মানবেন্দ্রনাথ রায় কংগ্রেস দলে যোগ দেন এবং কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ‘লিগ অব র্যাডিক্যাল কংগ্রেসমেন’ (১৯৩৭ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন।
৭৪. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কোন কোন স্থানে ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট হয়?
উত্তর:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় দিল্লি, বোম্বাই, আমেদাবাদ, লখনউ, কানপুর, নাগপুর, জামশেদপুর, মাদ্রাজ, ব্যাঙ্গালোর প্রভৃতি স্থানে ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট হয়।
৭৫. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা আলোচনা করো। অথবা, ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর:- কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করে কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিকে এই আন্দোলন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়।
৭৬. ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে কমিউনিস্ট পার্টি দূরে ছিল কেন?
উত্তর:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মানির হিটলার কমিউনিস্ট রাষ্ট্র সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ (১৯৪১ খ্রি.) করলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সোভিয়েত রাশিয়া ও তার মিত্র ব্রিটেনের পক্ষ নেয়। কংগ্রেস ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে সেই ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মনে করে যে, যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে ব্রিটেনকে বিব্রত না করাই উচিত। এজন্য কমিউনিস্ট পার্টি ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে দূরে সরে ছিল।
৭৭. ‘India in Transition’ গ্রন্থটি কার লেখা? এর পূর্বনাম কী ছিল?
উত্তর:- ‘India in Transition’ গ্রন্থটি মানবেন্দ্রনাথ রায়ের লেখা।
এই গ্রন্থটির পূর্বনাম ছিল ‘Vanguard of Indian Independence
৭৮. মানবেন্দ্রনাথ রায়ের লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর:- মানবেন্দ্রনাথ রায়ের লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘ইন্ডিয়া ইন ট্রানজিশন’, ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবক্ষয় ও পতন’, ‘ইসলামের ঐতিহাসিক ভূমিকা’, ‘বিজ্ঞান ও কুসংস্কার’, ‘নব মানবতাবাদ’, ‘একটি ইস্তেহার’ প্রভৃতি।
৭৯. কে, কেন ‘র্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ গঠন করেন?
উত্তর:- মানবেন্দ্রনাথ রায় ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে র্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠন করেন।
৮০. বিশ শতকে ভারতের যে-কোনো দুটি বামপন্থী দলের নাম লেখো।
উত্তর:- বিশ শতকে ভারতের বামপন্থী দলের নাম হল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল, বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল, র্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, কৃষক-প্রজা পার্টি, জাতীয় কৃষক পার্টি, জাস্টিস পার্টি প্রভৃতি।
৮১. ফরওয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠার পটভূমি কী?
উত্তর:- সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেস এবং ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরী কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হলে গান্ধিজি-সহ অন্যান্য কংগ্রেসি নেতারা সুভাষচন্দ্রের বিরোধিতা করে সদস্যপদ ত্যাগ করেন। এই প্রেক্ষাপটে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস সভাপতির পদ ত্যাগ করে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন।
আরোও পড়ুন
- দশম শ্রেণী (প্রথম অধ্যায়): ইতিহাসের ধারণা হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- দশম শ্রেণী (দ্বিতীয় অধ্যায়): সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- দশম শ্রেণী (তৃতীয় অধ্যায়): প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ-বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- দশম শ্রেণী (চতুর্থ অধ্যায়): সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা-বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- দশম শ্রেণী (পঞ্চম অধ্যায়): বিকল্প চিন্তা ও উদ্দোগ হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- দশম শ্রেণী (সপ্তম অধ্যায়): নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- দশম শ্রেণী (অষ্টম অধ্যায়): উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর