দশম শ্রেণী (সপ্তম অধ্যায়): নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

দশম শ্রেণী (সপ্তম অধ্যায়): নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক দশম শ্রেণী (সপ্তম অধ্যায়): নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

সপ্তম অধ্যায় ২ নং

১. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন নারীর নাম লেখো।

উত্তর:- বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নারী ছিলেন সরলাদেবী চৌধুরানি, হেমাঙ্গিনী দাস, কুমুদিনী মিত্র, লীলাবতী মিত্র, কুমুদিনী বসু, সুবালা আচার্য, নির্মলা সরকার প্রমুখ।

২. স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন?

উত্তর:- স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন – বঙ্গভঙ্গের দিন ঘরে ঘরে অরন্ধন ও উপবাস পালন করেন। বিলিতি পণ্য বয়কট করেন। বিভিন্ন মিছিল-মিটিং-এ যোগ দেন। বিলিতি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং চালান প্রভৃতি।

৩. ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বয়কট আন্দোলনের সময় বাংলার নারীদের বিলিতি পণ্য বয়কটের কয়েকটি উদাহরণ দাও।

উত্তর:- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বয়কট আন্দোলনের সময় বাংলার বহু নারী বিলিতি কাপড় বর্জন করে বাংলার তাঁতের তৈরি মোটা সুতোর কাপড় ব্যবহার করতে শুরু করেন। বিলিতি কাঁচের চুড়ি ব্যবহার বন্ধ করেন। রান্নাঘরে বিলিতি লবণ ও চিনির ব্যবহার বন্ধ করেন। বিলিতি ওষুধপত্র ব্যবহার বন্ধ করেন। বহু ছাত্রছাত্রী সরকারি স্কুলকলেজ ত্যাগ করে।

৪. বিশ শতকের জাতীয় আন্দোলনগুলিতে সমাজের কোন কোন অংশের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল?

উত্তর:- বিশ শতকের জাতীয় আন্দোলনগুলিতে নারী, ছাত্র, কৃষক ও দলিত সম্প্রদায়ের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল।

৫. বিশ শতকে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ-বিরোধী প্রধান জাতীয় আন্দোলনগুলির নাম উল্লেখ করো।

উত্তর:- বিশ শতকে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ-বিরোধী প্রধান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলি ছিল বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন (১৯০৫-১১ খ্রি.), অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রি.), আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) এবং ভারত ছাড়ো বা আগস্ট আন্দোলন (১৯৪২ খ্রি.)।

৬. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের প্রধান কয়টি ধারা ছিল ও কী কী?

উত্তর:- বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের প্রধান তিনটি ধারা ছিল। যথা – বয়কট, স্বদেশি ও জাতীয় শিক্ষা।

৭. কে, কোন পত্রিকার মাধ্যমে সর্বপ্রথম বয়কট আন্দোলনের ডাক দেন?

উত্তর:- কৃষ্ণকুমার মিত্র তাঁর সম্পাদিত ‘সঞ্জীবনী’ পত্রিকায় সর্বপ্রথম বয়কট আন্দোলনের ডাক দেন।

৮. আইন অমান্য আন্দোলনে বাংলার নারীদের ভূমিকা কীরূপ ছিল?

উত্তর:- আইন অমান্য আন্দোলনে বাংলার শিক্ষিত নারীদের সঙ্গে কৃষক পরিবারের নারীরাও যোগ দেয়। মেদিনীপুরের ঘাটাল, কাঁথি, তমলুক প্রভৃতি স্থানের নারীরা লবণ আইন অমান্য করেন।

৯. ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দুজন মহিলার নাম লেখো।

উত্তর:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দুজন উল্লেখযোগ্য মহিলা ছিলেন সুচেতা কৃপালনী ও অরুণা আসফ আলি।

১০. ভগিনী সেনা কী?

উত্তর:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় মেদিনীপুর জেলায় গঠিত তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের অধীনে মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে ওঠে যা ভগিনী সেনা নামে পরিচিত।

১১. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তর:- বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা সমাজের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছিলেন। আন্দোলনে মুসলিম নারীদের অংশগ্রহণ বেশি ছিল না।

১২. আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা কী ধরনের কর্মসূচি নেন?

উত্তর:- আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা বিদেশি পণ্য বর্জন করে স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের আবেদন জানান। বিলিতি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং চালান। বিভিন্ন সভা ও শোভাযাত্রায় অংশ নেন। তিলক স্বরাজ তহবিলে নিজেদের অর্থ ও অলংকার দান করেন। প্রিন্স অব ওয়েলস-এর ভারত সফরের (১৯২১ খ্রি.) সময় বোম্বাইয়ে বিক্ষোভ দেখান প্রভৃতি।

১৩. আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী অন্তত দুজন নারীর নাম লেখো।

উত্তর:- আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী উল্লেখযোগ্য নারী হলেন বাসন্তী দেবী ও ঊর্মিলা দেবী।

১৪. মাতঙ্গিনী হাজরা কে ছিলেন? অথবা, মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন?

উত্তর:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় একজন গান্ধিবাদী নেত্রী ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। ৭৩ বছরের মাতঙ্গিনী হাজরা তমলুক থানা অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ‘গান্ধিবুড়ি’ নামে পরিচিত।

১৫. তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কী কী উদ্যোগ নিয়েছিল?

উত্তর:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে (১৭ ডিসেম্বর) তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয়। এই সরকার একটি পৃথক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলে। সতীশচন্দ্র সামন্ত ছিলেন এর সর্বাধিনায়ক। তাঁর অধীনে আইন-শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিচার, কৃষি, সমর ইত্যাদি বিভাগে পৃথক পৃথক সচিব নিয়োগ করা হয়। জনকল্যাণ, ত্রাণকার্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই সরকার যথেষ্ট কাজ করে।

১৬. বীণা দাস বিখ্যাত কেন?

উত্তর:- বীণা দাস ছিলেন ভারতের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লবী নেত্রী। তিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে (৬ ফেব্রুয়ারি) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতারত অবস্থায় গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। কিন্তু তাঁর গুলি লক্ষভ্রষ্ট হয়।

১৭. ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বাংলার দুজন নারীর নাম লেখো।

উত্তর:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বাংলার দুজন নারী হলেন নন্দিতা কৃপালনী এবং রানি চন্দ।

১৮. অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তর:- আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এই আন্দোলনে সমাজের সর্বস্তরের নারীরা শামিল হন। যৌনকর্মী এবং দেবদাসীরাও আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেন।

১৯. আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দুজন নারীর নাম লেখো।

উত্তর:- আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দুজন উল্লেখযোগ্য নারী ছিলেন কস্তুরবা গান্ধি ও কমলা নেহরু।

২০. ডান্ডি অভিযান কী?

উত্তর:- ব্রিটিশ সরকারের লবণ আইন ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে মহাত্মা গান্ধি তাঁর ৭৮ জন অনুগামী নিয়ে সমুদ্র তীরবর্তী ডান্ডি নামক স্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ২৪১ দিন ব্যাপী এই যাত্রা ডান্ডি অভিযান নামে পরিচিত।

২১. আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের অন্তত দুটি কর্মসূচি উল্লেখ করো।

উত্তর:- আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি হল তাঁরা লবণ আইন অমান্য করেন। তারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নেন।

২২. তেভাগা আন্দোলন কী?

উত্তর:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পরবর্তীকালে বাংলার দরিদ্র বর্গাদার চাষিরা জোতদারের কাছ থেকে উৎপন্ন ফসলের ২/৩ অংশ পাওয়ার দাবিতে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে যে আন্দোলন গড়ে তোলে তা তেভাগা আন্দোলন নামে পরিচিত।

২৩. তেভাগা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বাংলার দুজন মহিলার নাম লেখো।

উত্তর:- তেভাগা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বাংলার দুজন মহিলা হলেন জলপাইগুড়ির বুড়ি মা ও মেদিনীপুরের বিমলা মণ্ডল।

২৪. লীলা নাগ কে ছিলেন?

উত্তর:- লীলা নাগ (রায়) ছিলেন দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা। আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় তিনি ৬ বছরের জন্য কারারুদ্ধ হন। তিনি সুভাষচন্দ্রের প্রেরণায় কংগ্রেসে যোগ দেন। সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস ছেড়ে ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন করলে লীলা নাগ তাঁতে যোগ দেন। তিনি ভারতীয় গণপরিষদে যোগ দিয়ে ভারতের সংবিধান রচনায় অংশ নেন।

২৫. দীপালি সংঘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর:- দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠার দুটি মুখ্য উদ্দেশ্য হল নারীশিক্ষার প্রসার সাধন এবং বিপ্লবী আন্দোলনের জন্য নারীদের প্রস্তুত করা।

২৬. চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় বিপ্লবীদের কী সাজা হয়?

উত্তর:- চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি এবং কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

২৭. লক্ষ্মী সায়গল কে ছিলেন?

উত্তর:- লক্ষ্মী সায়গল ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজে ঝাঁসির রানি ব্রিগেডের প্রধান নেত্রী। তিনি নিজের ডাক্তারি পেশা ছেড়ে দিয়ে দেশের মুক্তিসংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন।

২৮. ঝাঁসির রানি ব্রিগেড সম্পর্কে কী জান?

উত্তর:- আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনীর নাম ছিল ঝাঁসির রানি ব্রিগেড। এর প্রধান নেত্রী ছিলেন ক্যাপটেন লক্ষ্মী সায়গল। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে উঠে আসা ১৫০০ মহিলা এই বাহিনীতে যোগ দেন। অক্টোবর মাসে এই বাহিনীর সামরিক ট্রেনিং শুরু হয়। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সঙ্গে ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী অভিযান শুরু (১৯৪৪ খ্রি.) করে ক্যাপটেন লক্ষ্মী সায়গল ব্রিটিশ সেনার হাতে গ্রেফতার হন (১৯৪৫ খ্রি.)।

২৯. ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তর:- ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের দুটি বৈশিষ্ট্য হল ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের স্বদেশি আন্দোলনের সময় নারীদের আন্দোলন মূলত বাংলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তী আন্দোলনগুলিতে তা সর্বভারতীয় রূপ নেয়। কংগ্রেস পরিচালিত আন্দোলনগুলিতে মূলত উচ্চবিত্ত সমাজের নারীরা নেতৃত্ব দিতেন।

৩০. দীপালি সংঘের কার্যাবলি কীরূপ ছিল?

উত্তর:- দীপালি সংঘের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য নারীদের প্রস্তুত করা। এখানে লাঠিখেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্রচালনা শিক্ষা প্রভৃতির মাধ্যমে মেয়েদের সাহস ও শক্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

৩১. কে, কবে দীপালি শিল্প প্রদর্শনী চালু করেন? এর উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর:- লীলা নাগ (রায়) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে দীপালি শিল্প প্রদর্শনী চালু করেন।

দীপালি সংঘের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মেয়েদের হাতের কাজ, শিল্প ও অন্যান্য কারিগরি কাজের প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা।

৩২. দীপালি সংঘের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উদ্যোগ উল্লেখ করো।

উত্তর:- দীপালি সংঘের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হল দীপালি শিল্প প্রদর্শনী প্রতিষ্ঠা এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ১২টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।

৩৩. শিক্ষার প্রসারে দীপালি সংঘের অবদান কী ছিল?

উত্তর:- দীপালি সংঘ শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সংঘের উদ্যোগে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ১২টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দীপালি স্কুল, নারী শিক্ষামন্দির প্রভৃতি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩৪. প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কে ছিলেন?

উত্তর:- প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনের এক অন্যতম নেত্রী। তিনি সূর্য সেনের সঙ্গে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন (১৯৩০ খ্রি.), জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধ (১৯৩০ খ্রি.), প্রভৃতিতে অংশ নেন। তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের (১৯৩২ খ্রি.) ঘটনা ঘটে।

৩৫. প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কেন আত্মহত্যা করেন?

উত্তর:- প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে শান্তি চক্রবর্তী, কালীকিংকর দে সহ বিপ্লবীদের একটি সশস্ত্র দল ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন। পুলিশ পালটা আক্রমণ চালালে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে প্রীতিলতা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

৩৬. কল্পনা দত্ত কে ছিলেন?

উত্তর:- কল্পনা দত্ত ছিলেন ভারতের মুক্তিসংগ্রামের এক অন্যতম বিপ্লবী নেত্রী। তিনি গান-কটন তৈরির উদ্দেশ্যে কলকাতা থেকে বিস্ফোরক আনেন। আদালতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তিনি বিপ্লবীদের পালাতে সাহায্য করেন। ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেও ঘটনার এক সপ্তাহ আগে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান।

৩৭. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়?

উত্তর:- বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণগুলি ছিল সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা দেশের নেতৃবৃন্দ গড়ে তুলতে পারেননি। জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি থেকে পাস করা ছাত্রদের সরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ ছিল না।

৩৮. কবে, কোথায় ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়? এর সভাপতি ও সম্পাদক কারা ছিলেন?

উত্তর:- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে (নভেম্বর) কলকাতার রিপন কলেজের ছাত্র শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর নেতৃত্বে ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’র সভাপতি ছিলেন কৃষ্ণকুমার মিত্র এবং সম্পাদক ছিলেন শচীন্দ্র প্রসাদ বসু।

৩৯. কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা কী?

উত্তর:- বিপ্লবী ভগৎ সিং-এর নির্দেশে রামপ্রসাদ বিসমিল-সহ কয়েকজন বিপ্লবী উত্তর প্রদেশের কাকোরি রেল স্টেশনে ট্রেনে ডাকাতি করে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে মামলা শুরু হয় তা কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত।

৪০. কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কারা পুলিশ অফিসার সন্ডার্স-কে হত্যা করেন?

উত্তর:- সাইমন কমিশন-বিরোধী বিক্ষোভের সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে লালা লাজপৎ রায়ের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে বিপ্লবী ভগৎ সিং, রাজগুরু ও আজাদ পুলিশ অফিসার সন্ডার্স-কে (১৯২৮ খ্রি.) হত্যা করেন।

৪১. অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর:- সরকার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা রদ করার জন্য কার্লাইল সার্কুলার, লায়ন সার্কুলার প্রভৃতি জারি করে। এর প্রতিবাদী প্রচেষ্টারূপে শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর নেতৃত্বে অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

৪২. ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর:- ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা, বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের শামিল করা, শাস্তিপ্রাপ্ত বা সরকারি বিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত ছাত্রদের শিক্ষালাভের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।

৪৩. আইন অমান্য আন্দোলনের সময় বাংলার দুজন সক্রিয় চরমপন্থী বিপ্লবীর নাম লেখো।

উত্তর:- আইন অমান্য আন্দোলনের সময় বাংলার দুজন সক্রিয় চরমপন্থী বিপ্লবী হলেন সূর্য সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, বীণা দাস, বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত।

৪৪. কোন ঘটনার জন্য কারা, কবে ‘অপারেশন ফ্রিডম’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়?

উত্তর – বিভিন্ন জেলে বন্দি বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ দল ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ‘অপারেশন ফ্রিডম’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়।

৪৫. অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের উদ্যোগ কেমন ছিল?

উত্তর:- ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে সারা দেশের ছাত্রসমাজ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্জন, বিদেশি পণ্য বর্জন, বিদেশি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং প্রভৃতি কর্মসূচি গ্রহণ করে। কিছু ছাত্র সশস্ত্র বিপ্লবের পথ গ্রহণ করে।

৪৬. অসহযোগ আন্দোলনের সময় গড়ে-ওঠা কয়েকটি স্বদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম লেখো।

উত্তর:- অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে গড়ে-ওঠা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্বদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল কাশী বিদ্যাপীঠ, বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বিহার বিদ্যাপীঠ, গুজরাট বিদ্যাপীঠ, বারাণসী বিদ্যাপীঠ, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া প্রভৃতি।

৪৭. অসহযোগ আন্দোলনের সময় গড়ে-ওঠা স্বদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিতে পাঠদানকারী কয়েকজন শিক্ষকের নাম লেখো।

উত্তর:- অসহযোগ আন্দোলনের সময় গড়ে-ওঠা স্বদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিতে পাঠদানকারী কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন ড. জাকির হোসেন, ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ, লালা লাজপৎ রায়, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ।

৪৮. পাঞ্জাবের দুজন বিপ্লবীর নাম লেখো।

উত্তর:- পাঞ্জাবের দুজন উল্লেখযোগ্য বিপ্লবী ছিলেন শ্যামজি কৃষ্ণবর্মা এবং লালা হরদয়াল।

৪৯. কে, কোথায় গদর পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর:- বিপ্লবী লালা হরদয়াল ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে গদর পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।

৫০. রাসবিহারী বসু কে ছিলেন?

উত্তর:- রাসবিহারী বসু ছিলেন ভারতের বৈপ্লবিক মুক্তিসংগ্রামের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁর নির্দেশে বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাস বড়োলাট লর্ড হার্ডিঞ্জ-কে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেন। রাসবিহারী ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ- বিরোধী সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এই খবর ফাঁস হয়ে গেলে তিনি পি এন ঠাকুর ছদ্মনামে জাপানে পালিয়ে যান।

৫১. আইন অমান্য আন্দোলনের সময় কোন কোন রাজ্যে ছাত্র আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে?

উত্তর:- আইন অমান্য আন্দোলনের সময় বোম্বাই, গুজরাট, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম প্রভৃতি রাজ্যে ছাত্র আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে।

৫২. আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ছাত্র আন্দোলনের যে- কোনো দুটি ঘটনা উল্লেখ করো।

উত্তর:- আইন অমান্য আন্দোলনের সময় বহু স্থানে ছাত্ররা ধর্মঘট করে এবং সরকারি স্কুলকলেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ছাত্ররা বিলিতি পণ্য বর্জন করে এবং বিলিতি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং চালায়।

৫৩. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার দুটি উল্লেখযোগ্য বিপ্লবী গুপ্তসমিতির নাম লেখো।

উত্তর:- বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার দুটি উল্লেখযোগ্য বিপ্লবী গুপ্তসমিতি ছিল কলকাতা ও ঢাকার অনুশীলন সমিতি এবং কলকাতার যুগান্তর দল।

৫৪. ভারতের মুক্তিসংগ্রামের কোন আন্দোলনগুলিতে ছাত্রদের অতি সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়?

উত্তর:- ভারতের মুক্তিসংগ্রামের বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন (১৯০৫ খ্রি.), অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০ খ্রি.), আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০ খ্রি.), ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২ খ্রি.) প্রভৃতি জাতীয় আন্দোলনে এবং বিভিন্ন গুপ্ত বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অতি সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়।

৫৫. ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি আন্দোলনে ছাত্ররা কী ভূমিকা নেয়?

উত্তর:- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি আন্দোলনে ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। তারা ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে আসে, বিদেশি কাগজ-কলম বর্জন করে, বিদেশি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং চালায়, গ্রামগঞ্জে ঘুরে বিদেশি পণ্য বর্জন ও স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের প্রচার চালায়।

৫৬. ‘কার্লাইল সার্কুলার’ কী?

উত্তর:- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লে ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য বাংলা সরকারের মুখ্যসচিব কার্লাইল একটি দমনমূলক সার্কুলার বা ঘোষণা জারি করেন। এটি কার্লাইল সার্কুলার নামে পরিচিত। এই সার্কুলারের দ্বারা ছাত্রদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ, ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি প্রভৃতি নিষিদ্ধ হয়।

৫৭. ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকির প্রধান বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড উল্লেখ করো।

উত্তর:- অত্যাচারী বিচারপতি কিংসফোর্ড কলকাতা থেকে মুজফ্ফরপুর বদলি হয়ে গেলে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি মুজফ্ফরপুর যান। সেখানে কিংসফোর্ডকে বোমা মারতে গিয়ে ভুলবশত তিনি মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা মিস কেনেডিকে হত্যা করেন। ঘটনার পর প্রফুল্ল চাকি পুলিশের হাতে ধরা না দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে ক্ষুদিরাম ধরা পড়লে বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।

৫৮. বুড়িবালামের যুদ্ধ সম্পর্কে কী জান?

উত্তর:- বিপ্লবী বাঘাযতীন জার্মানি থেকে আনা অস্ত্র সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে উড়িষ্যার বালেশ্বরে যান। সেখানে বুড়িবালাম নদীর তীরে পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে আহত হন বাঘাযতীন। পরে তিনি মারা যান। এই লড়াই বুড়িবালামের যুদ্ধ নামে পরিচিত।

৫৯. স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের সময় দুটি দমনমূলক সার্কুলারের নাম লেখো।

উত্তর:- স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের (১৯০৫ খ্রি.) সময় ব্রিটিশ সরকার প্রবর্তিত দুটি দমনমূলক সার্কুলার হল কার্লাইল সার্কুলার, পেডলার সার্কুলার, লিয়ন সার্কুলার।

৬০. কোন পরিস্থিতিতে প্রথম জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন শুরু হয়?

উত্তর:- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন শুরু হলে ছাত্ররা সরকার নিয়ন্ত্রিত স্কুলকলেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ছাত্রদের জন্য স্বদেশি জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে থাকেন।

৬১. শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু কে ছিলেন?

উত্তর:- শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ছিলেন বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় কলকাতার রিপন কলেজের একজন ছাত্রনেতা। এই সময় সরকার ছাত্র আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ‘কার্লাইল সার্কুলার’ জারি করলে শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর নেতৃত্বে কলকাতায় ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’ (১৯০৫ খ্রি.) গড়ে ওঠে। সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে (১৯০৮ খ্রি.) কারারুদ্ধ করে।

৬২. কে, কবে ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ দল প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর:- দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের প্রেরণায় সুভাষচন্দ্র বসু ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল বা বি ভি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন।

৬৩. ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’-এর দুজন উল্লেখযোগ্য সদস্যের নাম লেখো।

উত্তর:- ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’-এর দুজন উল্লেখযোগ্য সদস্য ছিলেন সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী।

৬৪. রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়েছিল?

উত্তর:- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের হাতে বন্দি আজাদ হিন্দ বাহিনীর অন্যতম সেনাপতি রশিদ আলি বিচারে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। এই দণ্ডের প্রতিবাদে মুসলিম ছাত্র লিগ কলকাতায় ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি দিনটি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালনের কথা ঘোষণা করে।

৬৫. রশিদ আলির কারাদণ্ডের ঘোষণার কীরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়?

উত্তর:- রশিদ আলির কারাদণ্ডের ঘোষণার প্রতিবাদে বাংলা উত্তাল হয়ে ওঠে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ব্যাপক গণ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১১ ফেব্রুয়ারি মুসলিম ছাত্র লিগ কলকাতায় ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় এবং ১২ ফেব্রুয়ারি (১৯৪৬ খ্রি.) দিনটি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করে।

৬৬. কারা, কবে রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান করেন?

উত্তর:- বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান করেন।

৬৭. অলিন্দ যুদ্ধ কী?

উত্তর:- সশস্ত্র বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে কুখ্যাত কারা অধিকর্তা সিম্পসন-কে হত্যা করেন। এরপর বিশাল পুলিশ-বাহিনী তাদের ওপর পালটা আক্রমণ চালালে রাইটার্স বিল্ডিং-এর বারান্দায় উভয় পক্ষের তীব্র গুলির লড়াই চলে। এই ঘটনা ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

৬৮. অলিন্দ যুদ্ধের পর বিনয়-বাদল-দীনেশের কী পরিণতি হয়?

উত্তর:- অলিন্দ যুদ্ধের পর বাদল গুপ্ত পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। বিনয় ও দীনেশ গুলিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করে আহত হন। পরে বিনয় হাসপাতালে মারা যান এবং দীনেশ সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাঁর ফাঁসি হয়।

৬৯. চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে যুক্ত দুজন বিপ্লবীর নাম লেখো।

উত্তর:- মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে সংঘটিত চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত প্রমুখ বিপ্লবী যুক্ত ছিলেন।

৭০. চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় বিপ্লবীদের কী সাজা হয়?

উত্তর:- চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের বিচারে সূর্য সেনের ফাঁসি এবং গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল-সহ ১২ জনের জেল হয়।

৭১. বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স-এর দুজন শহিদ বিপ্লবী সদস্যের নাম লেখো।

উত্তর – বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স-এর দুজন শহিদ বিপ্লবী সদস্য হল বিনয় বসু এবং সুধীর গুপ্ত।

৭২. সূর্য সেন কে ছিলেন?

উত্তর:- সূর্য সেন ছিলেন ভারতের একজন বীর বিপ্লবী। ‘মাস্টারদা’ নামে পরিচিত সূর্য সেন ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিক আর্মি’ (১৯৩০ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নেতৃত্ব দেন। তাঁর নির্দেশে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার চট্টগ্রামে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন।

৭৩. বীণা দাস কে ছিলেন?

উত্তর:- বীণা দাস ছিলেন ভারতের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ বিপ্লবী নেত্রী। তিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে (৬ ফেব্রুয়ারি) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতারত অবস্থায় গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। কিন্তু তাঁর গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

৭৪. আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের বিচারের বিরুদ্ধে কীরূপ প্রতিবাদ দেখা দেয়?

উত্তর:- আজাদ হিন্দ বাহিনীর বন্দি সেনাদের বিচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১১ নভেম্বর আজাদ হিন্দ সপ্তাহ, ১২ নভেম্বর আজাদ হিন্দ দিবস এবং ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি রশিদ আলি দিবস পালিত হয়।

৭৫. রশিদ আলি কে ছিলেন?

উত্তর:- রশিদ আলি ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর অন্যতম সেনাপতি। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সেনার হাতে বন্দি হওয়ার পর বিচারে রশিদ আলিকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত (১৯৪৬ খ্রি.) করা হয়।

৭৬. পুনা চুক্তির (১৯৩২ খ্রি.) দ্বারা কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়?

উত্তর:- পুনা চুক্তির দ্বারা আম্বেদকর দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে যৌথ নির্বাচনের নীতি মেনে নেন, গান্ধিজি নির্বাচনে দলিতদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৭৮টি থেকে বাড়িয়ে ১৫১টি করার দাবি মেনে নেন।

৭৭. নমঃশূদ্র আন্দোলন সম্পর্কে কী জান?

উত্তর:- ব্রিটিশ শাসনকালে নমঃশূদ্র নামে বাংলার উল্লেখযোগ্য দলিত সম্প্রদায় তাদের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পশ্চাদ্গামিতার বিরুদ্ধে এক দীর্ঘ আন্দোলন গড়ে তোলে। এটি নমঃশূদ্র আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৮৭২ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই আন্দোলনের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায়।

৭৮. ব্রিটিশ আমলে বাংলার নমঃশূদ্রদের অবস্থা কেমন ছিল?

উত্তর:- ব্রিটিশ আমলে বাংলার নমঃশূদ্রদের অধিকাংশই ছিলেন খুব গরিব। অশিক্ষা, অচিকিৎসা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতার অভাব ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। ব্রিটিশ সরকার এবং জমিদারশ্রেণি নমঃশূদ্রদের ওপর তীব্র শোষণ-পীড়ন চালাত। উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের ঘৃণার চোখে দেখত এবং ‘চণ্ডাল’ বলত।

৭৯. ব্রিটিশ শাসনকালে গড়ে-ওঠা দুটি নমঃশূদ্র সংগঠনের নাম লেখো।

উত্তর:- ব্রিটিশ শাসনকালে গড়ে-ওঠা দুটি উল্লেখযোগ্য নমঃশূদ্র সংগঠন ছিল নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, উন্নয়নী সভা (১৯০২ খ্রি.), বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন (১৯১২ খ্রি.), নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি (১৯২৬ খ্রি.), বঙ্গীয় দলিত শ্রেণি সমিতি (১৯২৬ খ্রি.)।

৮০. ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে নমঃশূদ্ররা কী নামে পরিচিত ছিল? কবে, কোন ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা ‘নমঃশূদ্র’ হিসেবে পরিচিত হয়?

উত্তর:- ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে নমঃশূদ্ররা ‘চণ্ডাল’ নামে পরিচিত ছিল।

১৯১১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি রিপোর্টে ‘চণ্ডাল’ নামের পরিবর্তে তারা ‘নমঃশূদ্র’ নামে পরিচিত হয়।

৮১. ব্রিটিশ আমলে ভারতের দলিত সম্প্রদায় কীরূপ অমর্যাদার শিকার ছিল?

উত্তর:- ব্রিটিশ আমলে ভারতে দলিত সম্প্রদায়গুলি উচ্চবর্ণের শোষণ, অত্যাচার, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার ছিল। মন্দিরে প্রবেশ, পুকুর বা জলাধার ব্যবহার, বিদ্যালয়ে পড়াশোনা, সামাজিক মেলামেশা প্রভৃতি ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণের অর্থাৎ দলিত হিন্দু সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করে রাখা হত।

৮২. কোন পরিস্থিতিতে পুনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর:- ব্রিটিশ সরকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির দ্বারা দলিত হিন্দুদের পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেয়। এর প্রতিবাদে গান্ধিজি আমরণ অনশন শুরু করলে তাঁর প্রাণসংশয় দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে গান্ধিজির সঙ্গে আম্বেদকর পুনা চুক্তি স্বাক্ষর করে দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবি থেকে সরে এলে আপাতত সমস্যা মেটে।

৮৩. সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতিতে কী বলা হয়?

উত্তর:- সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির দ্বারা ভারতের মুসলিম, শিখ, ভারতীয় খ্রিস্টান, ইউরোপীয় প্রভৃতি বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়। হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু ও দলিত হিন্দু-এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

৮৪. পূর্ববঙ্গের নমঃশূদ্রদের পেশা কী ছিল?

উত্তর:- পূর্ববঙ্গের নমঃশূদ্রদের প্রধান পেশা ছিল কৃষিকাজ। এ ছাড়া তারা মাছ ধরা, তাঁত বোনা, অন্যের বাড়ি ও জমিতে দিনমজুরের কাজ প্রভৃতি করত।

৮৫. ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতার নাম লেখো।

উত্তর:- ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরচাঁদ ঠাকুর, রাজেন্দ্রলাল মণ্ডল, মুকুন্দবিহারী মল্লিক, বিরাটচন্দ্র মণ্ডল, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, প্রমথরঞ্জন ঠাকুর প্রমুখ।

৮৬. দলিত কাদের বলা হয়?

উত্তর:- হিন্দু বর্ণব্যবস্থায় জন্ম ও পেশাগত পরিচিতির বিচারে যেসব মানুষ সমাজের নিম্নস্তরে অবস্থান করে এবং বিভিন্ন সময়ে উচ্চবর্ণের দ্বারা সামাজিক বঞ্চনার শিকার হয়, তারা সাধারণভাবে দলিত নামে পরিচিত।

৮৭. ব্রিটিশদের আমলে দলিতদের সপক্ষে গড়ে-ওঠা দুটি আন্দোলনের নাম লেখো।

উত্তর:- দলিতদের সপক্ষে গড়ে-ওঠা দুটি আন্দোলন ছিল অকালি আন্দোলন এবং ভাইকম সত্যাগ্রহ।

৮৮. কবে, কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম নমঃশূদ্র আন্দোলন শুরু হয়?

উত্তর:- ১৮৭২-৭৩ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর-বাখরগঞ্জ অঞ্চলে প্রথম নমঃশূদ্র আন্দোলন শুরু হয়। এই সময় এই অঞ্চলের এক বিশিষ্ট নমঃশূদ্র নেতার মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উচ্চবর্ণের নিমন্ত্রিত হিন্দুরা আসতে অস্বীকার করলে নমঃশূদ্ররা সেই উচ্চবর্ণের সঙ্গে আর্থসামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। উচ্চবর্ণের কৃষিকাজ, ঘর ছাওয়া বা অন্যান্য কাজ করতে নমঃশূদ্ররা অস্বীকার করে।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment