২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

রাণী দুর্গাবতীর কার্যাবলী আলোচনা কর

উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় ‘সমাজের ঘটনা প্রবাহ’ থেকে রাণী দুর্গাবতীর কার্যাবলী আলোচনা কর।

রাণী দুর্গাবতীর কার্যাবলী আলোচনা কর

প্রশ্ন:- রাণী দুর্গাবতীর কার্যাবলী আলোচনা কর।

ভূমিকা :- ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বসম্পন্ন নারীদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযােগ্য ছিলেন গন্ডােয়ানা অঞ্চলের গড়হা-কাটাঙ্গা রাজ্যের রাজা দলপত শাহর পত্নী রানি দুর্গাবতী। তিনি ছিলেন চান্দেল্ল বংশীয়রাজপুত অধিপতি কিরাত রাইয়ের কন্যা। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ, সফল প্রশাসক ও প্রজাহিতৈষী শাসিকা। তিনি গন্ডােয়ানার শাসক দলপত শাহকে বিবাহ করেন।

শাসনভার গ্রহণ

গন্ডােয়ানার রাজা দলপৎ শাহের মৃত্যুর পর তার নাবালক পুত্র বীরনারায়ণ সিংহাসনে বসলে তার অভিভাবক হিসেবে বিধবা রানি দুর্গাবতী গণ্ডােয়ানা শাসন করতে থাকেন (১৫৫০-১৫৬৪ খ্রি.)। রানি দুর্গাবতী দ্রুত রাজ্যের সব শ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা ও সমর্থন লাভ করেন।

দক্ষ নেতৃত্ব

দুর্গাবতী দ্রুত স্বামীর মৃত্যুশোক ভুলে রাজকার্যে মনোনিবেশ করেন। তিনি শীঘ্রই নিজের শাসন দক্ষতার প্রমাণ দেন।

আফগান আক্রমণ প্রতিরােধ

রানী দুর্গাবতীর রাজত্বের প্রথম দিকে আফগান নেতা বাজ বাহাদুর গণ্ডােয়ানা আক্রমণ করেন। কিন্তু দুর্গাবতী দক্ষতার সঙ্গে বাজ বাহাদুরের আক্রমণ প্রতিহত করেন। পরবর্তীকালেও বাজ বাহাদুর কয়েকবার গণ্ডােয়ানা আক্রমণ করে রানি দুর্গাবতীর বাহিনীর কাছে পরাজিত হন।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দক্ষতা

দুর্গাবতী প্রতিবার জয়লাভ করলেও যুদ্ধে বিপুল অর্থ ব্যায়ের ফলে গণ্ডােয়ানার রাজকোশ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে। দুর্গাবতী অভিযান চালিয়ে ক্ষুদ্র জমির মালিকদের কাছ থেকে বাড়তি রাজস্ব ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের নির্দেশ দেন। ফলে শীঘ্রই গন্ডােয়ানার রাজকোশ পূর্ণ হয়ে যায়।

আকবরের আক্রমণের মোকাবিলা

গন্ডােয়ানার বিপুল অর্থসম্পদ ও ঐশ্বর্য মােগল সম্রাট আকবরকে প্রলুব্ধ করে। এজন্য সম্রাট আকবর ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে সেনাপতি আসফ খাঁ-র নেতৃত্বে এক বিশাল বাহিনী গণ্ডােয়ানা অভিযানে পাঠান। যুদ্ধে দুর্গাবতীর পরাজয় হলেও তাঁর সংশয়াতীত স্বাধীনতাম্পৃহা, বীরত্ব ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল।

দুর্গাবতীর প্রতিরােধ

বিশাল মােগল বাহিনীর তুলনায় রানি দুর্গাবতীর সেনাবাহিনী ছিল নিতান্তই ক্ষুদ্র। তা সত্ত্বেও দুর্গাবতীর নেতৃত্বে এই বাহিনী অসীম সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে নররাই-এর যুদ্ধ (১৫৬৪ খ্রি.) প্রথমদিকে কয়েকবার মােগল বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করেন।

পরিণতি

যুদ্ধের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রানি দুর্গাবতী মােগল বাহিনীর তীরের আঘাতে দারুণভাবে আহত হন। শেষপর্যন্ত পরাজয় নিশ্চিত জেনে তিনি অপমানিত হয়ে বাঁচার চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় বলে গ্রহণ করে নিজের ছুরির আঘাতে আত্মহত্যা করেন। গণ্ডােয়ানার একাংশ মােগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং অপর অংশে দুর্গাবতীর বংশধর চন্দ্র শাহকে দেওয়া হয়। চন্দ্র শাহ মােগলদের হাতের পুতুল হয়ে শাসন পরিচালনা করতে থাকেন।

কৃতিত্ব

মধ্যযুগের ভারতের একজন শাসিকাহয়েওদুর্গাবতী যে অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন তা এক কথায় অতুলনীয়।দলপৎশাহের মৃত্যুর পর গন্ডোয়ানার চরম দুর্দিনে তিনি দেশের শাসন ক্ষমতা নিজ হাতে তুলে নেন। বিভিন্ন বহিরাগত আক্রমণের বিরুদ্ধেলড়াইয়ে তিনি সামরিক দক্ষতার পরিচয় দেন। মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টায় রানী দুর্গাবতী যে অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন এমন নজির ইতিহাসে খুব বেশি পাওয়া যায় না

উপসংহার :- রানি দুর্গাবতীর বিরুদ্ধে মােগল আক্রমণ ছিল মােগল বাহিনীর নগ্ন সাম্রাজ্যবাদ ও চূড়ান্ত অর্থলিপ্সার সুস্পষ্ট উদাহরণ। দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রবল শক্তিধর মােগল বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে লড়াই করেও রানি দুর্গাবতী যে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন তা ইতিহাসে অত্যন্ত দুর্লভ।

Leave a Comment