উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ‘আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতাসমূহ’ থেকে চারটি নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার নাম লেখো। এই সভ্যতাগুলি নদীতীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল কেন তা আলোচনা করা হল।
নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা
প্রশ্ন:- চারটি নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার নাম লেখো। এই সভ্যতাগুলি নদীতীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল কেন?
চারটি নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা
চারটি নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা হল সিন্ধুনদের তীরে হরপ্পা সভ্যতা‘, নীলনদের তীরে ‘মিশরীয় সভ্যতা‘, টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে ‘সুমেরীয় সভ্যতা’, ইয়াংসি কিয়াং ও হোয়াংহো নদীর তীরে ‘চৈনিক সভ্যতা।
নদীমাতৃক সভ্যতা
আদিম মানুষ নানা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে সভ্যতার পথে এগিয়ে চলেছিল। তারা যে পশুপালক ও কৃষিজীবী হয়ে উঠেছিল সেটাও সম্ভব হয়েছিল পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার জোৱে। এই আদিম মানুষ খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ নাগাদ যে সভ্যতার সূচনা করেছিল তা ‘নদীমাতৃক সভ্যতা’ নামে পরিচিত। কারণ এই সময়কালের মধ্যে সভ্যতার কেন্দ্রগুলি সবই নদী উপত্যকায় গড়ে উঠেছিল।
নদীমাতৃক সভ্যতা বিকাশের কারণসমূহ
নদীর পাড়ে পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলি গড়ে উঠেছিল তা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। তার পিছনে বিভিন্ন কারণ ছিল –
ফসল উৎপাদনের সুবিধা
কৃষিকাজকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণের পর উর্বর কৃষিজমির জন্য নদী উপত্যকাই ছিল আদর্শ স্থান। বন্যার জলে নদী উপত্যকার পলি জমে স্বাভাবিক উর্বর ভূমি তৈরি করত। এই উর্বর জমিতে জলসেচ করা সহজ ফলে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
জ্বালানির প্রাচুর্য এবং ঘরবাড়ি নির্মাণের সুবিধা
আদিম মানুষ রান্নার জন্য গাছের ডাল, কাঠ প্রভৃতি জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করত। নদীর পাড়ে বড়ো বড়ো গাছগাছালির অভাবও ছিল না। যে কারণে নদী উপত্যকায় মানুষের বসতি এবং সেই সূত্র ধরে সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল।
পশুপালন
কৃষিকাজের সঙ্গে পশুপালন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কৃষিকাজের অবকাশে পশুপালন চলত। আবার পশুপালকরা নদীতীরে বসতি স্থাপন করেছিল পশুপালনের সুবিধা হবে বলে। কারণ, নদীতীরের সমতল ভূমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘাস, গাছগাছালি পাওয়া যেত। ফলে পশুখাদ্যের অভাব হত না।
পানীয় জলের সুবিধা
আদিম মানুষের কাছে পানীয় জলের একমাত্র উৎস ছিল নদীনালা বা হ্রদের জল। পানীয় জলের সুবিধার জন্যই মানুষ নদীতীরবর্তী অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে।
মৎসশিকার
মাংসের পর মানুষের অন্যতম প্রধান খাদ্য ছিল মাছ। আবার নদী ও হ্রদে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত, মাছ শিকারের সুবিধার জন্যই মানুষ নদীতীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে, যা ক্রমশই নগরকেন্দ্রিক সভ্যতায় পরিণত হয়।
অনুকূল আবহাওয়া
নদী বা বড়ো জলাশয়ের ধারে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক হয়। এখানে শীতের তীব্রতা যেমন অতিরিক্ত থাকে না, তেমনি খুব গরমও অনুভূত হয় না। এই অনুকূল পরিবেশের কারণে মানুষ নদীতীরবর্তী অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে।
যোগাযোগের সুবিধা
আদিম মানুষের কাছে স্থলপথে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া ও পণ্য পরিবহন খুবই কষ্টকর ছিল। সেই তুলনায় জলপথ ছিল সহজতর মাধ্যম। নদীপথে যেহেতু দ্রুত সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় তাই মানুষ নদীতীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে।
ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধা
নৌকা ছিল সে সময়ের প্রধান পরিবহন মাধ্যম। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ধীরে ধীরে শুরু হয় নদী পথের মাধ্যমে। ফলে নদী তীরবর্তী অঞ্চল গুলোতে ধীরে ধীরে বিপুল পরিমাণে নদী কেন্দ্রিক সভ্যতা গুলি গড়ে উঠতে শুরু করে।
অধিক নিরাপত্তা
মানুষ উপলব্ধি করেছিল যে জলভাগহীন বিস্তীর্ণ স্থলভাগে বসবাস করলে যখন তখন অন্য গোষ্ঠীর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু নদীর জলরাশি অতিক্রম করে সহসা এরূপ আক্রমণ সম্ভব নয়। তাই প্রাকৃতিক নিরাপত্তার কারণেও মানুষ নদীর তীরে বসবাস করত।
উপসংহার :- পরিশেষে বলা যায় একাধিক সুবিধার জন্য প্রাচীনকালের মানুষ নদীর তীরে বসবাস করত। মানুষের এই দলবদ্ধ হয়ে নদীতীরে বসবাস করার ফলে এই নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা গুলি গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে নগর পরিকল্পনা বা নগরায়নের সূচনা করে।
ভালো
ধন্যবাদ