২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ👇

👉Chat on WhatsApp

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সিলেবাস (তৃতীয় অধ্যায়) ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতিঃ নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য হতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হল।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

প্রশ্ন:- ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। (২০১৬)

উত্তর:- ভূমিকা:- ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার, ও উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের অধিকার বা দেওয়ানীর অধিকার লাভ করেছিল। এই দেওয়ানী লাভ কোম্পানির রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের ভিত্তিকে মজবুত করেছিল। এরপর থেকেই কোম্পানি ভারতে প্রচলিত ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার ত্রুটি দূর করে একটি সুসংবদ্ধ রাজস্ব ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে উদ্দ্যোগী হয়েছিল।

পাঁচসালা বন্দোবস্ত

বড়লাট হয়ে ভারতে এসে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার পরীক্ষা – নিরীক্ষা শুরু করেন। এজন্য তার শাসনকালকে ভূমি রাজস্ব সংক্রান্ত পরীক্ষা – নিরীক্ষার যুগ বলে অভিহিত করা হয়। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বোর্ড অব রেভিনিউ ও ভ্রাম্যমাণ কমিটি গঠন করে জেলায় জেলায় গিয়ে নিলামের মাধ্যমে পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত চালু করেন। এটি পাঁচশালা বন্দোবস্ত বা ইজারাদারি ব্যবস্থা নামে পরিচিত। তবে ইজারাদাররা নানা ভাবে কৃষকদের অত্যাচার করতে থাকায় এই ব্যবস্থা ফলপ্রসূ হয়নি।

একসালা বন্দোবস্ত

১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস পাঁচশালা বন্দোবস্তের অবসান ঘটিয়ে জমিদারদের সঙ্গে এক বছরের চুক্তি করেন। এই ব্যবস্থা একসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থা মাত্র দুই বছর টিকে ছিল। এই ব্যবস্থা একবছরের জন্য থাকায় কৃষকরা উৎপাদনে উৎসাহ পেত না।

দশসালা বন্দোবস্ত

এরপর বড়লাট হয়ে আসেন লর্ড কর্ণওয়ালিস। তিনি ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে জন শোরের সুপারিশক্রমে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব প্রদানের বিনিময়ে জমিদারদের সঙ্গে দশ বছর মেয়াদী জমি বন্দোবস্ত করেন। বাংলা প্রেসিডেন্সিতে কার্যকর এই ব্যবস্থা দশসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত

লর্ড কর্ণওয়ালিস ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ মার্চ কোম্পানির ডিরেক্টর সভার অনুমোদনের ভিত্তিতে দশসালা বন্দোবস্তকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করেন। এই ব্যবস্থার দ্বারা সূর্যাস্ত আইনের মাধ্যমে জমির উপর জমিদারদের বংশানুক্রমিক অধিকার স্বীকৃত হয়।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুবিধা

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুবিধাগুলি হল

  • (i) সরকারের আয় নিশ্চিত হওয়ার ফলে কোম্পানির বাজেট প্রস্তুত করার সুবিধা হয়।
  • (ii) বংশানুক্রমিকভাবে জমির অধিকার পেয়ে জমিদাররা জমি ও প্রজাদের উন্নতির জন্য সচেষ্ট হয়।
  • (iii) কৃষির উন্নতি ঘটে এবং কৃষিযোগ্য জমির পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অসুবিধা

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অসুবিধাগুলি হল

  • (i) সূর্যাস্ত আইনের ফলে অনেক জমিদার তাদের জমিদারি হারায়।
  • (ii) পরবর্তীকালে জমির মূল্য বা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও কোম্পানির রাজস্ব বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা ছিল না।
  • (iii) এই ব্যবস্থায় কৃষকদের জমির ওপর কোনো স্বত্ব থাকত না।

রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত

১৮২০ খ্রিস্টাব্দে টমাস মনরো এবং আলেকজান্ডার রিডের উদ্দ্যোগে ভারতের দক্ষিণ ও দক্ষিণ – পশ্চিম অঞ্চলে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়। এই ব্যবস্থায় সরকারের সঙ্গে রায়ত বা কৃষকদের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এই ব্যবস্থার মেয়াদ ছিল ২০-৩০ বছরের। এই ব্যবস্থায় রাজস্বের হার ছিল খুব বেশি (৪৫ – ৫৫ % )। উৎপাদন না হলেও কৃষকরা রাজস্ব প্রদান করতে বাধ্য থাকত। ফলে তারা দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়েছিল।

মহলওয়ারি বন্দোবস্ত

১৮২২ খ্রিস্টাব্দে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু অঞ্চলে কয়েকটি গ্রাম নিয়ে এক একটি মহল তৈরি করে যে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা চালু করা হয় তা মহলওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থা প্রবর্তনে এলফিনস্টোন – এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই ব্যবস্থায় রাজস্বের হার খুব উঁচু হওয়ায় কৃষকরা অত্যাচারিত ও শোষিত হত। তাদের দুর্দশার কোনো পরিবর্তন হয় নি।

ভাইয়াচারি ব্যবস্থা

১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে এলফিনস্টোন এবং হল্ট ম্যাকেঞ্জি পাঞ্জাবে কৃষকদের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে রাজস্ব ধার্য করে গ্রামের নির্ধারিত একজন ব্যক্তির দ্বারা সংগ্ৰহের ব্যবস্থা করেছিল। এটি ভাইয়াচারি ব্যবস্থা নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থাতেও কৃষকরা নানা ভাবে শোষিত হত।

উপসংহার:- ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে প্রবর্তিত বিভিন্ন ধরনের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা কৃষকদের জীবনে চরম সর্বনাশ ডেকে আনে। বাংলা তথা ভারতের সমাজ ও অর্থনীতিতে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার গভীর প্রভাব পড়ে। এর দ্বারা ইংরেজরা অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ হলেও কৃষকদের অবস্থা ছিল সেই তিমিরেই। এমনকি এই ব্যবস্থায় চিরাচরিত ভারতীয় সমাজের বৈশিষ্ট্য গুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

Leave a Comment