উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় ‘রাষ্ট্রের প্রকৃতি এবং তার শাসন যন্ত্র’ থেকে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা আছে তা আলোচনা কর।
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা আছে তা আলোচনা কর
প্রশ্ন:- কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা আছে তা আলোচনা কর।
ভূমিকা :- প্রাচীন ভারতের মৌর্য সাম্রাজ্যের সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কৌটিল্য বা চাণক্য। তার রচিত অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা আছে।
(১) শাসকের নীতি
কৌটিল্য বলেছেন, রাজাকে কূটনীতি পরায়ণ হতে হবে এবং রাষ্ট্রে বা শাসনব্যবস্থায় রাজাই একমাত্র সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। রাজাই রাজ্য, রাজা দুর্বল হলে রাষ্ট্র দুর্বল হতে বাধ্য।
(২) রাজার কর্তব্য
‘অর্থশাস্ত্রে’ কৌটিল্য রাজাকে কঠোর পরিশ্রম করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেছেন রাজার অবাধ ক্ষমতা থাকলেও তিনি কখনোই স্বেচ্ছাচারী হবেন না।
(৩) নৈতিকতায় গুরুত্বহীনতা
কৌটিল্য রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য যে-কোনো পন্থা গ্রহণকেই সমর্থন করেন। তিনি বলেন যে, যুদ্ধই শান্তির একমাত্র পথ। রাষ্ট্রনীতিতে নৈতিকতার কোনো স্থান নেই বলে তিনি মনে করেন।
(৪) মণ্ডলতত্ত্ব
তাঁর মতে, সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী রাষ্ট্র হল স্বভাবজাত শত্রু এবং তার পরবর্তী রাষ্ট্র হল স্বভাবজাত মিত্র। এই দৃষ্টিতে রাষ্ট্রের শত্রু ও মিত্র নির্ধারণ করতে হবে। কৌটিল্যের এই তত্ত্বকে ‘মণ্ডলতত্ত্ব’ বলা হয়।
(৫) দুর্গতদের কল্যাণ
রাষ্ট্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষের সময় প্রজাদের ত্রাণ দেবে, কৃষকদের বীজ সরবরাহ করবে, মহামারি প্রতিরোধের উদ্যোগ নেবে, অসহায়, বৃদ্ধ ও বিধবাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেবে।
(৬) সর্বসাধারণের কল্যাণ
সর্বসাধারণের কল্যাণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়িত করবে, অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তি দিয়ে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করবে, সমাজ কল্যাণে মানুষকে উৎসাহিত করবে।
(৭) দুর্গ ও নগর নির্মাণ
বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরোধ ও দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রের কেন্দ্রস্থলে এবং চারিদিকে বিভিন্ন দুর্গ ও নগর নির্মাণের পরিকল্পনা করা রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে কৌটিল্য উল্লেখ করেছেন।
উপসংহার :- অর্থশাস্ত্র হল ধর্মনিরপেক্ষ, প্রশাসনিক তত্ত্ব। ধর্মনিরপেক্ষ প্রশাসন পরিচালনার শিক্ষা দেয় অর্থশাস্ত্র।