স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব

উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস অষ্টম অধ্যায়: অব-উপনিবেশীকরণ হতে স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা করা হল।

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কবে হয়, ভারতের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব

প্রশ্ন:- স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা কর। (২০১৭)

ভূমিকা :- ভারত স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল ভারতের নবগঠিত সরকার। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশে খাদ্য উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রভৃতি দিকে অর্থনৈতিক সংকট দেখা যায়। জাতীয় জীবনে এই সংকটপূর্ণ অবস্থায় ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ ভারতের আর্থিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। এই রকম একটি পদক্ষেপ হলো পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫১-৫৬)

স্বাধীনতা লাভের পর ভারত যে বহুমুখী অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল তা দূর করার উদ্দেশ্যে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্ৰহণ করা হয়।

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য

এই পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য গুলি হল ―

  • (i) খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
  • (ii) ভারতে প্রভূত কাঁচা মাল ও খনিজ সম্পদকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করা।
  • (iii) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দেশ ভাগের ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে যে ভারসাম্য হীনতা দেখা দিয়েছিল সেই অর্থনৈতিক ভারসাম্যকে ফিরিয়ে আনা।
  • (iv) মুদ্রা স্ফীতির চাপ হ্রাস করা।
  • (v) ব্যক্তির আয় ও সম্পদের মধ্যে অসমতা হ্রাস করা।

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব

এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব গুলি হল-

  • (i) এই পরিকল্পনা ছিল নবগঠিত ভারত সরকারের একটি সাহসী পদক্ষেপ। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মতো।
  • (ii) এই পরিকল্পনা দ্বারা ভারতীয় আয় বৃদ্ধি পায় ১১ শতাংশ। তবে এই প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দেশের প্রকৃত আয় বাড়ে ১৮ শতাংশ।
  • (iii) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিধ্বস্ত প্রায় ৪৩০ মাইল রেল লাইন পুনর্নির্মাণ করা হয়। তার সঙ্গে আরও ৩৮০ মাইল রেল লাইন সংযুক্ত হয়।
  • (iv) খাদ্যশস্যের উৎপাদন যেখানে ১৯৫১ – ৫২ খ্রিস্টাব্দে ছিল ৫২.২ মিলিয়ন টন তা ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে বেড়ে হয় ৬৫.৮ মিলিয়ন টন।

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব, দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, নেহেরু মহলানবিশ মডেল কি, নেহেরু মহলানবিশ মডেল, স্বাধীন ভারতের তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করো, নেহেরু মহলানবিশ মডেল কী


দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫৬ – ১৯৬১)

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় খাদ্য ও কাঁচামালের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পর পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু অর্থনীতির ক্ষেত্রে সামাজিক কল্যাণ সাধন এবং বে-সরকারি উদ্যোগ উভয়কেই সমান গুরুত্ব দিতে থাকেন।

নেহেরু – মহলানবিশ মডেল

নেহেরুর আদর্শকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের প্রখ্যাত পরিসংখ্যান বিদ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ ১৯৫৬ – ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার একটি রূপরেখা বা মডেল তৈরি করেন। কিছু পরিমাণ সংশোধনের পর তা প্রয়াগ করা হয়, যা নেহেরু মহলানবিশ মডেল নামে পরিচিত।

দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য

এই পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি হল –

  • (i) জনসাধারণের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে জাতীয় আয় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা।
  • (ii) ভারী শিল্প ও যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্পের উপর গুরুত্ব দিয়ে শিল্পায়নের গতি বৃদ্ধি করা।
  • (iii) কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
  • (iv) কুটির শিল্পের বিকাশ ঘটানো।

দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব

এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব গুলি হল ―

  • (i) জাতীয় আয় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
  • (ii) ভারতের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে বলা হয়ে থাকে শিল্প ও লেনদেন সংক্রান্ত পরিকল্পনা। এই সময়কালে ভারতে যন্ত্রপাতির বিভিন্ন অংশ এবং কৃষি যন্ত্রপাতির উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
  • (iii) এই পরিকল্পনায় খাদ্য শস্যের উৎপাদন ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
  • (iv) ভারী শিল্প গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে দুর্গাপুর, রাওকেল্লা ও ভিলাইয়েতে তিনটি ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলা হয়।

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬১-৬৬)

এই পরিকল্পনা মােটামুটিভাবে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অনুকরণে তৈরি হয়। তবে দ্বিতীয় পরিকল্পনায় কৃষির উন্নতি ব্যাহত হওয়ায় তৃতীয় পরিকল্পনায় কৃষিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য

এই পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য উদ্দেশ্য গুলি ছিল –

  • (i) বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা।
  • (ii) কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে কৃষকদের স্বনির্ভরতা বাড়ানো।
  • (iii) দেশের মানব সম্পদকে যথাযথ ব্যবহার করা ও জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি করা।
  • (iv) বৈষম্য দূর করে অর্থনৈতিক ক্ষমতার সুষম বণ্টন।
  • (v) ইস্পাত, রাসায়নিক দ্রব্য, শিল্প-যন্ত্রপাতি, শক্তি প্রভৃতির উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রশ্ন উত্তর, স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো, pancha barshiki porikolpona, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কি, ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা pdf, পঞ্চ ভারত বলতে কী বোঝো


তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব

এইপরিকল্পনার সময় বহুমুখী পরিকল্পনা গৃহীত হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর সুফল পাওয়া যায়নি। কেবলমাত্র যানবাহন, পণ্য লেনদেন ও সামাজিক পরিষেবা মূলক ক্ষেত্ৰ গুলিতে কিছু উন্নয়ন দেখা দিয়েছিল। অন্যদিকে কৃষি উৎপাদনের হার কমেছিল ১০ মেট্রিক টনের মতো। খাদ্য সামগ্রীর ও ভোগ্য সামগ্রীর দাম উচ্চহারে বৃদ্ধি পেয়েছিল, শিল্প উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল।

ব্যর্থতার কারণ

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে (১) ভারত চীন যুদ্ধ (১৯৬২), (২) ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৬৫-৬৬), (৩) ব্যাপক খরা (১৯৬৫) প্রভৃতি ঘটনা এই ব্যার্থতার জন্য বহুল অংশে দায়ী।

উপসংহার :- পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গুলি রূপায়ণ করতে গিয়ে প্রথম থেকেই ভারতকে বিদেশী সহায়তার মুখাপেক্ষী থাকতে হয়েছে। প্রতিটি পরিকল্পনার সময় বিদেশ থেকে ঋণ গ্ৰহণের ফলে ভারত বিপুল ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছে।


দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা pdf, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য, স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা কর, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কে করেন

মহলানবিশ মডেল কি, pancha barshiki parikalpana in bengali, স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো, দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা pdf, ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা pdf

Leave a Comment