অব-উপনিবেশীকরণ বলতে কী বোঝায় ? অব-উপনিবেশীকরণের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য

উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস অষ্টম অধ্যায়: অব-উপনিবেশীকরণ হতে অব-উপনিবেশীকরণ বলতে কী বোঝায় ? অব-উপনিবেশীকরণের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য আলোচনা করা হল।

অব-উপনিবেশীকরণ বলতে কী বোঝায় ? অব-উপনিবেশীকরণের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য

প্রশ্ন:- অব-উপনিবেশীকরণ বলতে কী বোঝায় ? অব-উপনিবেশীকরণের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য লেখ। (HS History Question Paper 2018)

ভূমিকা :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ -এর পর এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন উপনিবেশগুলি পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অধীনতা থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে তীব্র সংগ্রাম শুরু করে এবং অধিকাংশ উপনিবেশই স্বাধীনতা লাভে সক্ষম হয়।

অব-উপনিবেশীকরণ

Decolonisation বা অব-উপনিবেশীকরণ কথাটির অর্থ হল “ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান”। জার্মান বিশেষজ্ঞ মরিস জুলিয়াস বন ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম “Decolonisation” শব্দটি ব্যবহার করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় সাম্রাজ্যবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার প্রক্রিয়াকে অব-উপনিবেশীকরনণ বা বি-উপনিবেশীকরণ বলে। এককথায়, ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করাকেই অব-উপনিবেশীকরণ বলা হয়।

আবার অন্য একটি ধারণা অনুযায়ী সক্রিয় মুক্তি সংগ্রাম এবং গণ আন্দোলনের চাপে ঔপনিবেশিক ক্ষমতা ও প্রতিপত্ত অনেকটাই সংকুচিত হয়। অব-উপনিবেশীকরণ এই ক্ষেত্রেই অধিক প্রযোজ্য।

সামাজিক তাৎপর্য

অব-উপনিবেশীকরণের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক তাৎপর্য হল –

(i) বর্ণবৈষম্যবাদের বিরোধিতা

এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন উপনিবেশের কৃষ্ণাঙ্গ বাসিন্দারা উপনিবেশিক শাসনকালে শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা তীব্র বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছিল। কিন্তু অব-উপনিবেশীকরণের পর জাতিবৈরিতা ও বর্ণবৈষম্যবাদের গতি রুদ্ধ হয়।

(ii) অস্থির পরিস্থিতির উদ্ভব

ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করলেও বেশ কিছু উপনিবেশ সঠিক সুস্থ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়। ফলে সেই সব দেশে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

(iii) এলিট গোষ্ঠীর শক্তি বৃদ্ধি

অব-উপনিবেশীকরণের পর সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশের শাসন ক্ষমতা সেই দেশের শিক্ষিত ও ধনী এলিট গোষ্ঠীর হাতে চলে আসে। ফলে সেই সব দেশের শিক্ষিত ও ধনীদের সঙ্গে সাধারণ দরিদ্র মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্যের বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়।

রাজনৈতিক তাৎপর্য

অব-উপনিবেশীকরণের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক তাৎপর্য হল –

(i) তৃতীয় বিশ্বের উত্থান

অব-উপনিবেশীকরণের ফলে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলি “তৃতীয় বিশ্ব” নামে পরিচিত হয়। তৃতীয় বিশ্বের এই দেশগুলি পৃথিবী থেকে উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদ দূর করতে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করে।

(ii) সাম্রাজ্যবাদের গতি রোধ

অব-উপনিবেশীকরণের ফলে সাম্রাজ্যবাদী অধীনতা ছিন্ন করে অসংখ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে। ফলে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়।

(iii) রাজনীতির প্রসার

অব-উপনিবেশীকরণের ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতির দিগন্ত বহুদূর প্রসারিত হয়।

(iv) আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব

সদ্য স্বাধীন প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও স্বার্থের সংঘাত শুরু হয়। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংঘর্ষ শুরু হয়।

অর্থনৈতিক তাৎপর্য

অব-উপনিবেশীকরণের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক তাৎপর্য হল –

(i) অর্থনৈতিক দুর্বলতা

অব-উপনিবেশীকরণের ফলে উপনিবেশগুলি স্বাধীনতা লাভ করলেও তারা অর্থনৈতিক দিক থেকে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ স্বাধীনতা লাভের পূর্বে তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন উপনিবেশিক শক্তি দ্বারা শোষিত হচ্ছিল। ফলস্বরূপ এই সব দেশে বেকারত্ব, খাদ্যাভাব তীব্র আকার ধারণ করে।

(ii) নয়া উপনিবেশবাদ

সদ্য স্বাধীন দেশ গুলিতে ঔপনিবেশিক শক্তি সমূহ অর্থনৈতিক সহায়তা দানের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিপত্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে নয়া উপনিবেশবাদের পথ প্রশস্ত করে।

(iii) আঞ্চলিক সহযোগিতা

অব-উপনিবেশীকরণের পর সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলি সহযোগিতামূলক বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সামাজিক উন্নতির জন্য সচেষ্ট হয়। এরূপ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক সংগঠন হল আসিয়ান (ASEAN), সার্ক (SAARC) প্রভৃতি।

উপসংহার :- অব-উপনিবেশীকরণের পর পশ্চিমী শক্তি গুলি নতুন করে সরাসরি ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা না করলেও তারা বিভিন্ন পণ্যের বাজার দখল, অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান প্রভৃতির মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র গুলির অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়।

Leave a Comment