গ্রীক ট্রাজেডির এক অন্যতম ব্যক্তিত্ব ইস্কাইলাসের নাট্যচর্চা প্রসঙ্গে ইস্কাইলাসের জন্ম, ইস্কাইলাস রচিত নাটক, ইস্কাইলাসের ট্রাজেডির মূল বিষয়, ইস্কাইলাসের রচনাগুলির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানব।
ট্রাজেডি রচয়িতা ইস্কাইলাসের নাট্যচর্চা সম্পর্কে আলোচনা
বিষয় | ইতিহাস |
বিশ্ববিদ্যালয় | বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় |
আর্টস | বি.এ. জেনারেল |
সেমিস্টার | দ্বিতীয় |
প্রশ্ন | ইস্কাইলাসের নাট্যচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো। |
প্রশ্নমান | ১০ |
গ্রীক ট্রাজেডির এক অন্যতম ব্যক্তিত্ব ইস্কাইলাস খ্রিস্ট পূর্ব ৫২৫ অব্দে এথেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। ইস্কাইলাস ছিলেন এথেন্সবাসী ইউফোরিয়মের পুত্র। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ৪৯০ খ্রিস্ট পূর্বে তিনি এবং তাঁর দুই ভাই ম্যারাথন যুদ্ধে যোগদান করেন। এথেন্সে হেলনিক সভ্যতার উৎকর্ষ বৃদ্ধির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ইস্কাইলাস। ম্যারাথনের যুদ্ধ ছাড়াও ৪৮০ এবং ৪৭৯ খ্রিস্ট পূর্বে তিনি আর্টিমিসিয়াম, সালামিস, প্লেটিয়া ইত্যাদি যুদ্ধে নিজেকে যুক্ত করেন। শেষ বয়সে তিনি এথেন্স ত্যাগ করে সিসিলি যান এবং ৪৫৬ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মতান্তরে ৪৫৮ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে সিসিলির গেলা নগরীতে তাঁর মৃত্যু হয়।
তিনি যে ৮০টি, মতান্তরে ৯০টি নাটক লেখেন তার মধ্যে ৭টি নাটক আমরা পূর্ণাঙ্গ রূপে পাই। সেগুলি হল ‘অ্যাগামেমনন’, ‘ইউমেনিডিস’ (তৃপ্তদেবীগণ), ‘পেরেসাই’ (পারসিকবৃন্দ), ‘প্রমিথিউস’, ‘হেপটা এপি থেবাস’, ‘সাপ্লিকেস’ (প্রার্থিনী) এবং ‘খোয়েফোরয়’ (তর্পণকারী)। দেবতা ও মানবের সম্পর্কের রহস্যময় লীলা বর্ণন ছিল তাঁর ট্রাজেডির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। নাট্যপদ্ধতি অনুসারে ইস্কাইলাসের নাটকগুলি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল – ‘Tetralogy’ এবং ‘Trilogy’।। তিনি চারটি একই ধরনের ঘটনা নিয়ে চারটি নাটকের মাধ্যমে একটি বৃহত্তর নাটক রচনা করতেন বলে এই নাটকগুলি ‘Tetralogy’ নামে পরিচিত ছিল। Tetralogy-র প্রথম তিনটি নাটক ট্রাজেডি এবং শেষেরটি প্রহসন। অন্যদিকে তিনি তিনটি নাটক নিয়ে যে একটি নাটক রচনা করতেন তাকে বলা হয় ‘Trilogy’। উদাহরণ স্বরূপ তাঁর ‘অরেস্টিয়া’ নামক ট্রিলজির তিনটি নাটকের কথা বলা যায়। সেগুলি হল ‘অ্যাগামেমনন’, ‘খোয়েফোরয়’ এবং ‘ইউমেনিডিস’।
ইস্কাইলাস রচিত বিখ্যাত ট্রিলজি ‘অরেস্ট্রিয়া’র নাটকগুলির মধ্যে গভীর মর্মবেদনা, নিষ্ঠুর আচরণ, ভাষার মাধুর্য, চরিত্রের শক্তি ও বর্ণময়তা প্রদর্শিত হয়েছে। তাঁর এই ‘অরেস্টিয়া’ ছিল গ্রীক ঐতিহাসিক নাটকের এক অন্যতম উদাহরণ। ঐতিহাসিক Simon Goldhill-এর ‘Reading Greek Tragedy’ থেকে জানা যায় যে গ্রীক সাহিত্যে অরেস্টিয়া ছিল সবচেয়ে জটিলতম সৃষ্টিগুলির অন্যতম। অপূর্ব গীতিধর্মিতা ও ঝংকারময়তা, ঘনসন্নিবদ্ধ কল্পনা এই নাটককে এক গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। তাঁর অন্য এক ঐতিহাসিক নাটক ‘দি পার্সিয়ান্স’-এ আধুনিক কালের মতো নাটকীয় চারিত্রিক বিকাশ বিশেষত জননী রানী চরিত্রের বিকাশ পরিলক্ষিত হয়।
ইস্কাইলাসের অন্যান্য রচনাগুলির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে তাঁর নাট্যশিল্পগত ধারণার বিবর্তন খানিকটা বুঝতে পারা যায়। তাঁর কোরাস প্রধান রচনা হল ‘দি সাপ্লায়ান্টস’, নিষ্ঠুর নিয়তির মতো পারিবারিক আভিশাপের কালো ছায়া কিভাবে মানবজীবনকে প্রভাবিত করে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হল ‘সেভেন এগেনস্ট থীবস’ নাটকটি। আবার ট্র্যাজিক নায়কের অতিমানবিক অভ্যুত্থান পরিলক্ষিত হয় তাঁর ‘প্রমিথিউস’ নাটকে। ইস্কাইলাসের বেশিরভাগ নাটকে প্রত্যক্ষভাবে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নেই। তবে ‘ইউমেনিদিস’ নাটকে প্রত্যক্ষভাবে এবং ‘সাপ্লায়ান্টস’ ও প্রমিথিউস নাটকে পরোক্ষভাবে রাজনীতির গন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর নাটকে গণতন্ত্রের সমর্থন রয়েছে। যদিও ‘প্রমিথিউস’ নাটকটির রচিয়তা ইস্কাইলাস না অন্য কেউ তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্য মতভেদ রয়েছে। তা সত্ত্বেও বলা যায় যে, ইংরেজ কবি মিলটন, বায়রন, শেলি প্রত্যেকেই কমবেশি এর দ্বারা আকৃষ্ট ছিলেন।
ইস্কাইলাসের নাট্যচরিত্রগুলি ছিল মহাকাব্যিক মহিমায় সমুজ্জ্বল। আগেই বলা হয়েছে যে তাঁর আমলে এথেন্স হেলেনিক সভ্যতার শীর্ষে উঠেছিল। ইস্কাইলাস মানুষে মানুষে সংগ্রাম এবং দেবতা-মানুষ সংগ্রামের বাস্তব নৈতিক ভিত্তিকে অপরের মনে সঞ্চার করতে নাট্যমঞ্চকে এক অন্যতম মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করেছে। গ্রীক নাট্যমঞ্চে তিনি যে বিবিধ পরিবর্তন সাধন করেন তা হল দ্বিতীয় অভিনেতার আমদানি, কোরাস প্রদর্শনের জন্য শ্রেণি বিভাগ, কোরাসের সদস্যসংখ্যা হ্রাস, লম্বা হাতওয়ালা ঝোলানো এবং কারুকার্যময় পোশাকের ব্যবহার, উঁচু হিলের কথুরনাস জুতো এবং উঁচু করে চূড়োর মত চুলের বিন্যাস (আঙ্কোস), মুখোশের ব্যবহার প্রভৃতি যেমন সাজপোশাকের আকর্ষণ বৃদ্ধি করে ঠিক তেমনি নাট্যগুণের সম্ভাবনাও অনেকাংশে বেড়েছিল। এই জন্য তিনি ‘গ্রীক নাটকের জন্মদাতা’ নামে পরিচিত হন। ঐতিহাসিক গিলবার্ট মারে ইস্কাইলাসকে ‘ট্রাজেডির স্রষ্টা’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
(FAQ) ইস্কাইলাসের নাট্যচর্চা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১. ইস্কাইলাস কে ছিলেন?
প্রাচীন গ্রিস-এর অন্যতম ট্রাজেডি নাট্যকার।
২. কোন বিখ্যাত যুদ্ধে ইস্কাইলাস অংশগ্রহণ করেছিলেন?
ম্যারাথনের যুদ্ধ।
৩. ইস্কাইলাসের উল্লেখযোগ্য নাটকগুলির নাম লেখ।
‘অ্যাগামেমনন’, ‘ইউমেনিডিস’ (তৃপ্তদেবীগণ), ‘পেরেসাই’ (পারসিকবৃন্দ), ‘প্রমিথিউস’, ‘হেপটা এপি থেবাস’, ‘সাপ্লিকেস’ (প্রার্থিনী) এবং ‘খোয়েফোরয়’ (তর্পণকারী)।
৪. ইস্কাইলাসকে ‘ট্রাজেডির স্রষ্টা’ বলে অভিহিত করেন কে?
গিলবার্ট।