নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর। নবম শ্রেণী (প্রথম অধ্যায়) ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর। Class 9 History Chapter 1 Short Question Answers.
নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক)
নবম শ্রেণী (প্রথম অধ্যায়) ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
শ্রেণী | নবম |
অধ্যায় | প্রথম অধ্যায় |
Question Type | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর |
Marks | 2 |
নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১। ফ্রান্সে ‘অঁসিয়া রেজিম’ বা পুরাতনতন্ত্র বা ‘Old Regime’ বলতে কী বোঝ?
উত্তর:- ফরাসি বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) আগে ফ্রান্স তথা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এই ব্যবস্থা ‘অঁসিয়া রেজিম’ বা পুরাতনতন্ত্র বা ‘Old Regime’ নামে পরিচিত।
২। ‘এস্টেট’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর:- বিপ্লবের আগে ফরাসি সমাজব্যবস্থায় তিনটি পৃথক সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল। এক-একটি সম্প্রদায়কে ‘এস্টেট’ বলা হত।
৩। বিপ্লবের আগে ফরাসি সমাজে ক-টি সামাজিক স্তর ছিল ও কী কী?
উত্তর:- বিপ্লবের আগে ফরাসি সমাজে মূলত তিনটি সামাজিক স্তর ছিল। যথা – প্রথম শ্রেণি : যাজক সম্প্রদায় এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। দ্বিতীয় শ্রেণি : অভিজাত সম্প্রদায় এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। তৃতীয় শ্রেণি : মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, সর্বহারা ভবঘুরে প্রভৃতি এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
৪। ‘কনট্রাক্ট অব পোইসি’ কী?
উত্তর:- বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) আগে ফ্রান্সে যাজক সম্প্রদায়ের অধীনস্থ গির্জার কাছে দেশের ১/৫ অংশ কৃষিজমি ছিল। এই জমির জন্য যাজকরা রাজাকে কোনো বাধ্যতামূলক কর দিত না। তবে ‘কনট্রাক্ট অব পোইসি’ নামে একটি চুক্তি অনুসারে যাজকরা রাজাকে স্বেচ্ছাকর দিত।
৫। ‘থার্ড এস্টেট’ কী?
উত্তর:- ফরাসি বিপ্লবের আগে শ্রেণিবিভক্ত ফরাসি সমাজব্যবস্থায় যে তিনটি শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল থার্ড এস্টেট বা তৃতীয় সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল সব ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ধনী বুর্জোয়া, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিক, সাঁকুলোৎ বা চালচুলোহীন ভবঘুরে প্রভৃতি।
৬। ফরাসি বুর্জোয়া শ্রেণি সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- ফ্রান্সের বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থার তৃতীয় শ্রেণির অন্যতম অংশ ছিল মধ্যবিত্ত বা বুর্জোয়া শ্রেণি। বুর্জোয়ারা ছিল বিপ্লবের অগ্রদূত। বুর্জোয়ারা তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। ধনী ব্যবসায়ী, ব্যাংক মালিক, শিল্পপতি প্রমুখ ছিল উচ্চ বুর্জোয়া; শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী প্রমুখ ছিল মধ্য বুর্জোয়া এবং সাধারণ দোকানদার, কৃষক, শ্রমিক, কারিগর প্রমুখ ছিল নিম্ন বুর্জোয়া।
৭। ফরাসি সমাজে অধিকারপ্রাপ্ত ও অধিকারহীন সম্প্রদায় কারা ছিল? তাদের জনসংখ্যার হার কেমন ছিল?
উত্তর:- ফরাসি সমাজে অধিকারপ্রাপ্ত সম্প্রদায় ছিল যাজক অর্থাৎ, প্রথম সম্প্রদায় এবং অভিজাত অর্থাৎ, দ্বিতীয় সম্প্রদায়। যাজক ও অভিজাতদের জনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ০.৫ শতাংশ ও ১.৫ শতাংশ।
তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া, ধনী ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ব্যাংক মালিক, কৃষক, শ্রমিক, সর্বহারা অর্থাৎ, সাঁকুলোৎ প্রমুখ ছিল অধিকারহীন শ্রেণি। এই সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৯৮ শতাংশ।
৮। ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সে প্রচলিত প্রধান কয়েকটি করের নাম লেখো।
উত্তর:- ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সে প্রচলিত প্রধান কয়েকটি কর হল টাইলে বা ভূমিকর, ক্যাপিটেশন বা উৎপাদন কর, ভিটিংয়েমে বা আয়কর, গ্যাবেলা বা লবণ কর, টাইদ বা ধর্মকর, করভি বা শ্রমকর (প্রভুর কাজে বাধ্যতামূলক বেগার শ্রমদান) প্রভৃতি।
৯। ফরাসি কৃষকরা কী কী কর প্রদানে বাধ্য হত?
উত্তর:- ফরাসি কৃষকরা রাষ্ট্র, সামন্তপ্রভু ও গির্জাকে টাইলে বা ভূমিকর, ক্যাপিটেশন বা উৎপাদন কর, ভিটিংয়েমে বা আয়কর, গ্যাবেলা বা লবণ কর, টাইদ বা ধর্মকর প্রভৃতি কর প্রদানে বাধ্য হত। এ ছাড়া করভি, এইদস, তেরাজ প্রভতি করও আদায় করা হত।
১০। ‘টাইদ’ কী?
উত্তর:- টাইদ ছিল ধর্মকর। ফরাসি গির্জা দেশের তৃতীয় শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে এই কর আদায় করত। গির্জার যাজকরা এই কর ভোগ করে অত্যন্ত বিলাসিতায় দিন কাটাত।
১১। ‘করভি’ কী?
উত্তর:- বিপ্লবের আগে ফরাসি কৃষকরা প্রভুর বিভিন্ন কাজে বিনা বেতনে বেগার শ্রম দিতে বাধ্য হত। এই শ্রমকর ‘করভি’ নামে পরিচিত।
১২। ফরাসি সমাজে অভিজাতরা কী ধরনের সুযোগসুবিধা ভোগ করত?
উত্তর:- ফরাসি সমাজে অভিজাতরা বিভিন্ন সুযোগসুবিধা ভোগ করত। দেশের ১/৩ অংশ কৃষিজমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তারা সরকারকে কোনো নিয়মিত কর দিত না। বিচারবিভাগ, প্রশাসন ও অন্যান্য সরকারি চাকরিতে এই সম্প্রদায়ের একচেটিয়া দখলদারি ছিল।
১৩। ফরাসি বুর্জোয়া শ্রেণি ক-টি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল ও কী কী?
উত্তর:- বিপ্লবের আগে ফরাসি বুর্জোয়া সম্প্রদায় তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যথা – (ক) ধনী ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ব্যাংক মালিক প্রমুখকে নিয়ে গঠিত উচ্চ বুর্জোয়া। (খ) আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক প্রভৃতিকে নিয়ে গঠিত মধ্য বুর্জোয়া। (গ) দোকানদার, কারিগর, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতিকে নিয়ে গঠিত নিম্ন বুর্জোয়া।
১৪। বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কয়েকটি উদাহরণ দাও।
উত্তর:- বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কয়েকটি উদাহরণ হল জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতির ওপর চাপ, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্যশস্যের মূল্য অন্তত ৬০-৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি, শস্যহানির ফলে খাদ্যাভাব প্রভৃতি।
১৫। বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে কারা ‘প্যাট্রিশিয়ান’ এবং কারা ‘প্লেবিয়ান’ নামে পরিচিত ছিল?
উত্তর:- ফরাসি বিপ্লবের আগে ফরাসি সমাজের অভিজাতরা ‘প্যাট্রিশিয়ান’ এবং তৃতীয় শ্রেণির মানুষ ‘প্লেবিয়ান’ নামে পরিচিত ছিল।
১৬। কারা ‘প্যাট্রিয়াটিক পার্টি’ গঠন করেন?
উত্তর:- মিরাবো, লাফায়েৎ, আবে সিইয়েস প্রমুখ উদারপন্থী অভিজাতরা তৃতীয় সম্প্রদায়ে যোগ দিয়ে ‘প্যাট্রিয়াটিক পার্টি’ গঠন করেন।
১৭। বিপ্লবের আগে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ফরাসি দার্শনিকের নাম লেখো।
উত্তর:- বিপ্লবের আগে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ফরাসি দার্শনিক ছিলেন মন্তেস্কু (১৬৮৯-১৭৫৫ খ্রি.), ভলতেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮ খ্রি.), জ্যঁ জ্যাক রুশো (১৭১২-১৭৭৮ খ্রি.) প্রভৃতি।
১৮। মন্তেস্কু কে ছিলেন?
উত্তর:- মন্তেস্কু ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালের একজন বিখ্যাত দার্শনিক। তিনি ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক এবং রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতার ধারণার বিরোধী।
১৯। মন্তেস্কুর লেখা দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর:- মন্তেস্কুর লেখা দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘দ্য স্পিরিট অব লজ’ এবং ‘দ্য পার্সিয়ান লেটার্স’।
২০। ভলতেয়ার কে ছিলেন? তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম কী?
উত্তর:- ভলতেয়ার ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালের একজন বিখ্যাত দার্শনিক। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল ফ্রাঁসোয়া মারি আরুয়ে।
ভলতেয়ারের লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের হল ‘কাঁদিদ’ ও ‘দার্শনিকের অভিধান’ (‘ফিলোজফিকাল ডিকশনারি)।
২১। রুশো কে ছিলেন? তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম কী?
রুশো ছিলেন অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সের সর্বাধিক জনপ্রিয় দার্শনিক।
রুশোর লেখা সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ হল ‘সোশ্যাল কনট্রাক্ট’ বা ‘সামাজিক চুক্তি’। এটি বিপ্লবের বাইবেল নামে পরিচিত।
২২। ‘সামাজিক চুক্তি’ গ্রন্থে রুশোর মূল বক্তব্য কী ছিল?
উত্তর:- ‘সামাজিক চুক্তি’ গ্রন্থের মূল বক্তব্য হল প্রতিটি মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু জন্মের পর সমাজ তাকে শৃঙ্খলিত করে। এক সময় ‘জনগণের ইচ্ছা’ (‘General Will’) অনুসারে এক চুক্তির মাধ্যমে রাজার হাতে শাসনক্ষমতা প্রদান করা হয়। তাই ঈশ্বর নয়, জনগণই হল রাষ্ট্রের সার্বভৌম শক্তির মূল উৎস। জনগণ ইচ্ছা করলে রাজাকে পদচ্যুত করতে পারবে।
২৩। ডেনিস দিদেরো ও ডি’ এলেমবার্ট সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- ডেনিস দিদেরো ও ডি’ এলেমবার্ট ছিলেন দুজন ফরাসি দার্শনিক। ফরাসি বিপ্লবের আগে তাঁদের প্রচেষ্টায় ৩৫টি খণ্ডে ‘বিশ্বকোশ’-এর সংকলন প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থগুলিতে প্রাক-বিপ্লবী যুগের ফ্রান্সের সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, দার্শনিকদের রচনা প্রভৃতি স্থান লাভ করে।
২৪। কারা ‘ফিজিওক্র্যাট’ নামে পরিচিত?
উত্তর:- বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) আগে ফ্রান্সে মার্কেন্টাইল মতবাদের বিরোধী এবং অ্যাডাম স্মিথের অনুগামী একশ্রেণির অর্থনীতিবিদদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই অর্থনীতিবিদগণ শিল্প-বাণিজ্যে সংরক্ষণ নীতি ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বিরোধিতা করেন এবং অবাধ বাণিজ্য ও বেসরকারি শিল্প স্থাপনের দাবি জানান। এরাই ফিজিওক্র্যাট নামে পরিচিত।
২৫। ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকার সপক্ষে ও বিপক্ষে মতদানকারী কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।
উত্তর:- ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকার সপক্ষে মত দিয়েছেন টেইন, রুস্তান, রাইকার, সেতোব্রিয়াঁ, মাদেলা, জোরেস, মাতিয়ে, লাব্রুজ, মর্নে প্রমুখ ঐতিহাসিক।
অন্যদিকে, ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন নি লেফেভর, মনিয়র, মর্স স্টিফেন্স, ম্যালে দ্য পান প্রমুখ ঐতিহাসিক।
২৬। ‘লেতর দ্য ক্যাশে’ কী?
উত্তর:- ‘লেতর দ্য ক্যাশে’ হল বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে প্রচলিত একধরনের রাজকীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এই পরোয়ানার মাধ্যমে যে-কোনো ব্যক্তিকে বন্দি করে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন জেলে আটকে রাখা যেত।
২৭। ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রাজা ও রানি কে ছিলেন? তাঁরা কোন রাজবংশের অন্তর্গত ছিলেন?
উত্তর:- ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রাজা ও রানি ছিলেন যথাক্রমে ষোড়শ লুই এবং মেরি আঁতোয়ানেত।
ষোড়শ লুই ও মেরি আঁতোয়ানেত বুরবোঁ রাজবংশের অন্তর্গত ছিলেন।
২৮। মেরি আঁতোয়ানেত কে ছিলেন?
উত্তর:- মেরি আঁতোয়ানেত ছিলেন ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই-এর পত্নী। ষোড়শ লুই তাঁর দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত ছিলেন। আঁতোয়ানেত ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতালোভী। তিনি ফ্রান্সের বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত সম্প্রদায়কে সমর্থন করে অধিকারহীন সম্প্রদায়ের ওপর শোষণ বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করেন।
২৯। দ্বিতীয় লিওপোল্ড কে ছিলেন?
উত্তর:- দ্বিতীয় লিওপোল্ড ছিলেন অস্ট্রিয়ার শাসক এবং ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই-এর পত্নী মেরি আঁতোয়ানেতের ভাই। বিপ্লবের সময়ে ফ্রান্সের রাজপরিবার জনরোষে প্রবল আতঙ্কে দিন কাটালে ফ্রান্সের রাজতন্ত্রীরা দ্বিতীয় লিওপোল্ডের কাছে সাহায্য প্রার্থন্য করেন। লিওপোল্ড সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ফরাসি রাজপরিবারকে সহায়তা করার উদ্যোগ নেন।
৩০। ‘গণ্যমান্যদের পরিষদ’ বা ‘কাউন্সিল অব নোটেবলস’ কী? রাজা কী উদ্দেশ্যে এই পরিষদ গঠন করেন?
উত্তর:- ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই বিপ্লবের আগে অভিজাতদের মধ্য থেকে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পরিষদ গঠন করেন। এটি ‘গণ্যমান্যদের পরিষদ’ নামে পরিচিত।
গণ্যমান্যদের পরিষদের মাধ্যমে রাজা নতুন কর প্রস্তাবের পক্ষে অভিজাতদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন।
৩১। ‘ইনটেনডেন্ট’ কাদের বলা হত?
উত্তর:- বিপ্লবের আগে একশ্রেণির কর্মচারী ফ্রান্সের প্রদেশগুলির প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কাজকর্ম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত। এই কর্মচারীরা ‘ইনটেনডেন্ট’ নামে পরিচিত ছিল। এরা ছিল অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত।
৩২। ‘কেহিয়ার্স’ কী?
উত্তর:- ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই জাতীয় সভার অধিবেশন ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে সকল শ্রেণির প্রজাদের কাছ থেকে জাতীয় সভা সম্পর্কে তাদের মতামত ও অভিযোগ জানাতে বলেন। জনগণের এই অভিযোগের তালিকাকে ‘কেহিয়ার্স’ বলা হত।
৩৩। ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের পার্লামেন্টের সঙ্গে ফরাসি রাজার দ্বন্দ্বের কারণ কী?
উত্তর:- প্যারিসের পার্লামেন্টের কিছু সদস্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করলে ক্ষুদ্ধ রাজা নিজের ভাই ডিউক অব অর্লিয়েন্স-সহ পার্লামেন্টের দুজন সদস্যকে নির্বাসিত করেন। এরপর রাজার বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট কয়েকটি আইন পাশ করলে রাজা সবকটি প্রাদেশিক পার্লামেন্ট মুলতুবি করেন। এর বিরুদ্ধে অভিজাতরা বিদ্রোহ শুরু করে।
৩৪। বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের জাতীয় সভায় ভোটাধিকার কেমন ছিল?
উত্তর:- বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে জাতীয় সভা ও স্টেটস জেনারেলের নির্বাচিত ১২১৪ জন সদস্যের মধ্যে যাজকদের ৩০৮ জন, অভিজাতদের ২৮৫ জন এবং তৃতীয় শ্রেণির ৬২১ জন সদস্য ছিল। কিন্তু প্রতিটি সম্প্রদায়ের ১টি করে মোট ৩টি ভোট দেওয়ার নিয়ম ছিল।
৩৫। অভিজাত বিদ্রোহ কী?
উত্তর:- অর্থনৈতিক সংকট দূর করার উদ্দেশ্যে ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে দেশের সমস্ত প্রাদেশিক পার্লামেন্ট মুলতুবি করেন এবং সকল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কর আদায়ের উদ্যোগ নেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুবিধাভোগী অভিজাত শ্রেণি রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক মাতিয়ে ও জর্জ রুডে ‘অভিজাত বিদ্রোহ’ এবং লেফেভর ‘অভিজাত বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছেন।
৩৬। বুর্জোয়া বিপ্লব কী?
উত্তর:- ফরাসি তৃতীয় সম্প্রদায়ের জাতীয় সভার সকল সদস্যের একটি কক্ষে বসা এবং মাথাপিছু ভোটের দাবি রাজা নাকচ করলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। ফলে তৃতীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা ‘টেনিস কোর্টের শপথ’ (২০ জুন, ১৭৮৯ খ্রি.)-এর মাধ্যমে নিজেদের উদ্যোগে ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনার উদ্যোগ নেয়। এই সময় যাজকদের ১৩৯ জন এবং অভিজাতদের ৪৭ জন সদস্য তৃতীয় সম্প্রদায়ে যোগ দেয়। শেষপর্যন্ত ভীত রাজা ২৭ জুন তিন সম্প্রদায়ের সদস্যদের একত্রে অধিবেশনে বসা এবং মাথাপিছু ভোটের দাবি মেনে নেন। এই ঘটনা ‘বুর্জোয়া বিপ্লব’ নামে পরিচিত।
৩৭। ‘টেনিস কোর্টের শপথ’ কী?
উত্তর:- ফরাসি জাতীয় সভার তৃতীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন আইনসভায় প্রবেশ করতে গিয়ে দেখেন যে, সভাকক্ষ বন্ধ রয়েছে। এরপর ক্ষুব্ধ সদস্যরা মিরাবো ও আবে সিয়েসের নেতৃত্বে নিকটবর্তী টেনিস খেলার মাঠে জড়ো হয়ে শপথ গ্রহণ করেন যে, ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনা না করা পর্যন্ত তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবেন। এই ঘটনা ‘টেনিস কোর্টের শপথ’ নামে পরিচিত।
৩৮। টেনিস কোর্টের শপথের পর যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়ের কতজন সদস্য তৃতীয় সম্প্রদায়ে যোগ দেয়?
উত্তর:- টেনিস কোর্টের শপথের পর যাজক সম্প্রদায়ের ১৩৯ জন (কোবানের মতে ১৭০ জন) এবং অভিজাত সম্প্রদায়ের ৪৭ জন (কোবানের মতে ৫০ জন) সদস্য তৃতীয় সম্প্রদায়ে যোগ দেয়।
৩৯। জাতীয় সভায় বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের প্রধান দাবি কী ছিল?
উত্তর:- জাতীয় সভায় বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের প্রধান দাবি ছিল তিনটি সম্প্রদায়ের একত্রে অধিবেশনে বসা এবং প্রতিটি সম্প্রদায়কে মাথাপিছু ভোটাধিকার প্রদান।
৪০। বাস্তিল দুর্গ সম্পর্কে কী জান? অথবা, ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি স্বৈরশাসনের প্রতীক। এখানে বিনা বিচারে প্রচুর মানুষকে বন্দি করে রাখা হত। প্যারিসের উত্তেজিত জনতা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে এবং কারারক্ষীদের হত্যা করে এই কুখ্যাত দুর্গ দখল করে নেয়।
৪১। কীভাবে বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটে?
উত্তর:- জাতীয় সভার বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের চাপে ফরাসি রাজা তিন সম্প্রদায়ের একত্রে অধিবেশনে বসা এবং মাথাপিছু ভোটের দাবি মেনে নিলে প্যারিসের জনতা অত্যন্ত উল্লসিত হয়। এরপর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই উত্তেজিত জনতা রক্ষীদের হত্যা করে কুখ্যাত বাস্তিল দুর্গ দখল করে নেয়।।
৪২। বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব কী?
উত্তর:- বাস্তিল দুর্গের পতনের প্রধান গুরুত্ব হল এই দুর্গ থেকে নিরপরাধ বন্দিরা মুক্তি পায়। রাজার স্বৈরশাসনের প্রতীক ধ্বংস হয়। বাস্তিলের পতনের মাধ্যমে বিপ্লবের জয়যাত্রা সূচিত হয়।
৪৩। ‘প্যারি কমিউন’ কী?
উত্তর:- বাস্তিল দুর্গের পতনের (১৪ জুলাই, ১৭৮৯ খ্রি.) পর বিপ্লবী জনতা প্যারিস শহরের পৌরশাসন পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করে। এটি প্যারি কমিউন নামে পরিচিত।
৪৪। পৌর বিপ্লব কী?
উত্তর:- বাস্তিল দুর্গের পতনের পর বুর্জোয়ারা প্যারিসের দখল নিয়ে প্যারি কমিউন গঠন করে এখানকার পৌরশাসন পরিচালনা করতে থাকে। ফলে নতুন ‘কমিউন’ বা পৌরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ঘটনা ‘পৌর বিপ্লব’ নামে পবিচিত।
৪৫। ‘মহাতঙ্ক’ কী?
উত্তর:- বাস্তিল দুর্গের পতনের (১৪ জুলাই, ১৭৮৯ খ্রি.) পর ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলে বিপ্লবের ব্যাপক প্রসার ঘটে। এই সময় গ্রামাঞ্চলে গুজব রটে যায় যে, অভিজাতদের ভাড়াটে গুন্ডা ও সেনাবাহিনী গ্রামের কৃষকদের শায়েস্তা করতে এগিয়ে আসছে। এই গুজবের ফলে গ্রামাঞ্চলে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যা ‘মহাতঙ্ক’ নামে পরিচিত।
৪৬। ঐতিহাসিক রাইকার কোন্ ঘটনাকে ‘রাজতন্ত্রের শবযাত্রা’ বলে অভিহিত করেছেন?
উত্তর:- ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৫ অক্টোবর একদল মহিলা খাদ্যের দাবিতে ভার্সাই নগরীতে উপস্থিত হয়ে রাজপরিবারকে প্যারিসে আসতে বাধ্য করে। এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক রাইকার ‘রাজতন্ত্রের শবযাত্রা’ বলে অভিহিত করেছেন।
৪৭। ফরাসি জাতীয় সভায় (১৭৮৯ খ্রি.) কাদের, কতজন প্রতিনিধি ছিল?
উত্তর:- ফরাসি জাতীয় সভায় মোট ১২১৪ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিল। এর মধ্যে যাজকদের ৩০৮ জন, অভিজাতদের ২৮৫ জন এবং তৃতীয় সম্প্রদায়ের ৬২১ জন প্রতিনিধি ছিল।
৪৮। সংবিধান রচনার আগে ফরাসি সংবিধান সভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের উল্লেখ করো।
উত্তর:- সংবিধান রচনার আগে ফরাসি সংবিধান সভা দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে – (ক) ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট এক ঘোষণার মাধ্যমে সংবিধান সভা ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্র এবং এর যাবতীয় উপস্বত্ব বিলোপ করে। (খ) ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করে মানুষের বিভিন্ন স্বাধীনতা, সম্পত্তি ভোগ ও দখলের অধিকার, আইনের চোখে সাম্য প্রভৃতি প্রদান করে।
৪৯। ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারপত্র’ রচনায় কীসের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়?
উত্তর:- ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারপত্র’ রচনায় ইংল্যান্ডের ‘বিল অব রাইট্স’ এবং আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
৫০। ফরাসি সংবিধান সভার কয়েকজন সদস্যের নাম লেখো যাদের সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
উত্তর:- ফরাসি সংবিধান সভার সদস্য মুনিয়ের, বারনাভ, লাফায়েৎ, মিরাবো, তাঁলিরা প্রমুখ সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৫১। ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা’য় কী বলা হয়?
উত্তর:- ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা’য় বলা হয় স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। আইনের চোখে সকল মানুষ সমান। জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস। বাকস্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তি ভোগ ও দখল প্রভৃতি মানুষের সর্বজনীন অধিকার।
৫২। ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণার গুরুত্ব কী?
উত্তর:- ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণার বিভিন্ন গুরুত্ব ছিল। এই ঘোষণাপত্রের দ্বারা ফ্রান্সের পুরাতনতন্ত্র ধ্বংসের চেষ্টা করা হয় এবং উদারতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও মানবাধিকার রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৫৩। ফরাসি সংবিধান সভার দুটি শাসনতান্ত্রিক সংস্কার উল্লেখ করো। অথবা, সংবিধান সভা কীভাবে ভোটাধিকার প্রদান করে?
উত্তর:- ফরাসি সংবিধান সভার উল্লেখযোগ্য শাসনতান্ত্রিক সংস্কার হল সংবিধান সভা সম্পত্তির পরিমাণের ভিত্তিতে জনগণকে ‘সক্রিয়’ ও ‘নিষ্ক্রিয়’ এই দুইভাগে বিভক্ত করে এবং ‘সক্রিয়’ নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রদান করে।
৫৪। ফরাসি সংবিধান সভার একটি অর্থনৈতিক সংস্কার উল্লেখ করো।
উত্তর:- ফরাসি সংবিধান সভার একটি অর্থনৈতিক সংস্কার হল, এই সভা গির্জার ভূসম্পত্তি বাতিল করে এবং তা আমানতের ভিত্তিতে ‘অ্যাসাইনেট’ নামে কাগজের নোট চালু করে।
৫৫। ফরাসি সংবিধান সভার একটি ধর্মীয় সংস্কার উল্লেখ করো।
উত্তর:- ফরাসি সংবিধান সভার একটি ধর্মীয় সংস্কার হল এই সভা ‘সিভিল কনস্টিটিউশন অব দ্য ক্লার্জি’ বা ‘ধর্মযাজকদের সংবিধান’ নামে এক দলিল দ্বারা গির্জার ওপর থেকে পোপের আধিপত্য লুপ্ত করে এবং গির্জাকে রাষ্ট্রের একটি দপ্তরে পরিণত করে।
৫৬। ‘অ্যাসাইনেট’ কী?
উত্তর:- অ্যাসাইনেট হল ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সংবিধান সভা কর্তৃক প্রবর্তিত একধরনের কাগজের নোট। ফ্রান্সে প্রবল অর্থসংকট দেখা দিলে সংবিধান সভা গির্জার বাজেয়াপ্ত করা ভূসম্পত্তি আমানত রেখে তার ভিত্তিতে এই নোট চালু করে।
৫৭। ‘সিভিল কনস্টিটিউশন অব দ্য ক্লার্জি’ কী?
উত্তর:- ফরাসি সংবিধান সভা ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে ‘সিভিল কনস্টিটিউশন অব দ্য ক্লার্জি’ বা ‘ধর্মযাজকদের সংবিধান’ নামে এক আইন পাশ করে। এর দ্বারা গির্জার ওপর পোপের যাবতীয় কর্তৃত্বের অবসান ঘটানো হয়। গির্জাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। যাজকদের নিয়োগ ও পদচ্যুতি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সরকার যাজকদের বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করে।
৫৮। ‘সাসপেনসিভ ভিটো’ কী?
উত্তর:- ফরাসি সংবিধান সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে আইনসভা কর্তৃক প্রবর্তিত কোনো আইন রাজা সম্পূর্ণ বাতিল করতে না পারলেও তিনি তা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে পারতেন। রাজার এই ক্ষমতা ‘সাসপেনসিভ ভিটো’ নামে পরিচিত।
৫৯। পাদুয়ার ঘোষণা’ কী?
উত্তর:- অস্ট্রিয়ার সম্রাট লিওপোল্ড পাদুয়া নামক স্থান থেকে ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে (৬ জুলাই) এক ঘোষণা জারি করেন। এতে তিনি ফরাসি রাজতন্ত্রের সপক্ষে ইউরোপীয় রাজন্যবর্গকে সশস্ত্র হস্তক্ষেপের আবেদন জানান। এই ঘোষণা ‘পাদুয়ার ঘোষণা’ নামে পরিচিত।
৬০। ‘পিলনিৎজের ঘোষণা’ কী?
উত্তর:- অস্ট্রিয়ার রাজা লিওপোল্ড এবং প্রাশিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডরিখ উইলিয়াম ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ আগস্ট পিলনিজ নামক স্থান থেকে যৌথভাবে এক ঘোষণাপত্রের দ্বারা ফরাসি রাজতন্ত্রের সপক্ষে ইউরোপের রাজন্যবর্গকে সশস্ত্র হস্তক্ষেপের আহবান জানান। এটি ‘পিলনিৎজের ঘোষণা’ নামে পরিচিত।
৬১। ‘ব্রান্সউইক ঘোষণা’ কী?
উত্তর:- ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে প্রাশিয়ার সেনাপ্রধান ব্রান্সউইক এক ঘোষণার মাধ্যমে ফরাসিদের সতর্ক করে দেন যে, ফরাসি রাজপরিবারের কোনো ক্ষতি হলে তিনি প্যারিস শহর ধ্বংস করে দেবেন। এটি ‘ব্রান্সউইক ঘোষণা’ নামে পরিচিত।
৬২। ‘সন্দেহের আইন’ কী?
উত্তর:- ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনকালে এক বিশেষ আইনের দ্বারা বিপ্লব-বিরোধী সন্দেহে যে-কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা যেত এবং বিপ্লবী আদালতে তাদের বিচার হত। এই বিশেষ আইন ‘সন্দেহের আইন’ নামে পরিচিত।
৬৩। ফরাসি রাজার পলায়নের চেষ্টা সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন সপরিবারে ছদ্মবেশে টুইলারিস রাজপ্রাসাদ ছেড়ে গোপনে অস্ট্রিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাঁরা সীমান্তের কাছে ভেরোন্নে গ্রামে জনতার হাতে ধরা পড়লে চরম লাঞ্ছনা সহকারে তাঁদের প্যারিসে ফিরিয়ে আনা হয়।
৬৪। ফ্রান্সের নতুন আইনসভায় (১৭৯১ খ্রি.) কোন কোন রাজনৈতিক দল ছিল?
উত্তর:- ৭৪৫ জন সদস্যবিশিষ্ট ফ্রান্সের নতুন আইনসভায় প্রধানত চারটি রাজনৈতিক দল ছিল। যথা – দক্ষিণপন্থী শাসনতান্ত্রিক দল, বামপন্থী জিরন্ডিস্ট দল, চরম বামপন্থী জ্যাকোবিন দল এবং মধ্যপন্থী নিরপেক্ষ দল।
৬৫। কে, কোন ঘটনাকে ‘দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছেন?
উত্তর:- জ্যাকোবিন দলের নেতৃত্বে উত্তেজিত জনতা ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্ট রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে রাজার দেহরক্ষীদের হত্যা করে। আতঙ্কিত রাজা ও রানি নিকটবর্তী আইনসভায় আশ্রয় নিলে জনতা আইনসভা ঘিরে ফেলে। জনতার দাবিতে রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাঁকে টেম্পল দুর্গে বন্দি করা হয়। এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক লেফেভর ‘দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছেন।
৬৬। সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড কী?
উত্তর:- ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের সমর্থক বহু মানুষ কারাগারে বন্দি ছিল। ফ্রান্সের রাজতন্ত্র-বিরোধী উত্তেজিত জনতা কারাকক্ষে ঢুকে রাজভক্ত সন্দেহে হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে (২-৫ সেপ্টেম্বর, ১৭৯২ খ্রি.)। এই ঘটনা ‘সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত।
৬৭। কারা, কবে ফ্রান্সে প্রথম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে?
উত্তর:- ফ্রান্সের জাতীয় মহাসভা বা ন্যাশনাল কনভেনশন ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে (২২ সেপ্টেম্বর) ফরাসি রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটিয়ে ফ্রান্সে প্রথম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।
৬৮। জ্যাকোবিন কারা? এই দলের কয়েকজন নেতার নাম লেখো।
উত্তর:- ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে যে উগ্র বামপন্থী দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল এবং ফ্রান্সের সংকটকালে দেশে সন্ত্রাসের শাসন যারা চালু করেছিল তারা জ্যাকোবিন নামে পরিচিত।
জ্যাকোবিন দলের অন্যতম নেতা ছিলেন রোবসপিয়ার, হিবার্ট, দাঁতো প্রমুখ।
৬৯। কোন দলের নেতৃত্বে কোন সময় পর্যন্ত ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন চলে?
উত্তর:- উগ্র বামপন্থী জ্যাকোবিন দলের নেতৃত্বে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন থেকে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই পর্যন্ত সন্ত্রাসের শাসন চলে।
৭০। সন্ত্রাসের শাসন শুরু হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর:- ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন শুরু হওয়ার দুটি কারণ ছিল। যথা – (ক) দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবিপ্লবী শক্তি বিপ্লবকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছিল। (খ) বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তি ফ্রান্স আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল।
৭১। সন্ত্রাসের শাসনের অঙ্গগুলির নাম লেখো।
উত্তর:- সন্ত্রাসের শাসনের প্রধান অঙ্গগুলি হল জন-নিরাপত্তা সমিতি, সাধারণ নিরাপত্তা সমিতি, সন্দেহের আইন, বিপ্লবী আদালত ও বিপ্লবের বধ্যভূমি অর্থাৎ গিলোটিন।
৭২। জন-নিরাপত্তা সমিতি কী? এর দায়িত্ব কী ছিল?
উত্তর:- জাতীয় মহাসভার শাসনকালে (১৭৯২-৯৫ খ্রি.) ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন নামে যে আপৎকালীন শাসন চালু হয় তার একটি অন্যতম অঙ্গ ছিল জন-নিরাপত্তা সমিতি।
ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ গোলযোগ ও বৈদেশিক আক্রমণের সম্ভাবনা দূর করে বৈপ্লবিক আদর্শ রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে জন-নিরাপত্তা সমিতি গঠিত হয়।
৭৩। গিলোটিন কী?
উত্তর:- গিলোটিন হল একটি যন্ত্রবিশেষ। এর আবিষ্কর্তা হলেন ফরাসি ডাক্তার গিলোটিন। এই যন্ত্রের সাহায্যে ফ্রান্সে সন্ত্রাসের রাজত্বকালে বহু মানুষের শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়।
৭৪। ‘থার্মিডোরীয় প্রতিক্রিয়া’ কী?
উত্তর:- রোবসপিয়ার সন্ত্রাসের শাসনের দ্বারা ফ্রান্সে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালান। এতে আতঙ্কিত হয়ে জ্যাকোবিন দল ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ এপ্রিল রোবসপিয়ার ও তাঁর অনুগামীদের বন্দি করে পরদিন তাঁদের গিলোটিনে হত্যা করে। এই ঘটনা ‘থার্মিডোরীয় প্রতিক্রিয়া’ নামে পরিচিত।
৭৫। লাল সন্ত্রাস কী?
উত্তর:- ফ্রান্সে ১৩ এপ্রিল থেকে ২৭ জুলাই (১৭৯৪ খ্রি.) পর্যন্ত রোবসপিয়ারের একক নেতৃত্বে ভয়াবহ সন্ত্রাস চলে। এই সময় সন্ত্রাসের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেও রোবসপিয়ার নিজের ইচ্ছা জোর করে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে হত্যা করেন। এই ঘটনা ‘লাল সন্ত্রাস’ নামে পরিচিত।
৭৬। শ্বেত সন্ত্রাস কী?
উত্তর:- ফ্রান্সের বেকার, ভবঘুরে প্রমুখ রোবসপিয়ারের নেতৃত্বে ভয়াবহ ‘লাল সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে জ্যাকোবিনদের হত্যা করতে শুরু করে। এই ঘটনা ‘শ্বেত সন্ত্রাস’ নামে পরিচিত।
৭৭। সন্ত্রাসের শাসনকালে ফ্রান্সের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উল্লেখ করো।
উত্তর:- সন্ত্রাসের শাসনকালে ফ্রান্সের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ছিল দ্রব্যের সর্বোচ্চ মূল্য এবং সর্বনিম্ন মজুরির হার বেঁধে দেওয়া এবং অবৈতনিক ও সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা।
৭৮। ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনের দুটি গুরুত্ব উল্লেখ করো।
উত্তর:- ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনের দুটি প্রধান গুরুত্ব হল এই শাসনের ফলে ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ প্রতিবিপ্লব দমিত হয় এবং ফ্রান্স সাফল্যের সঙ্গে বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করতে সফল হয়।
৭৯। রোবসপিয়ার কে ছিলেন?
উত্তর:- রোবসপিয়ার ছিলেন ফ্রান্সের উগ্র বামপন্থী জ্যাকোবিন দলের অন্যতম নেতা এবং সন্ত্রাসের শাসনের প্রধান পরিচালক। তাঁর নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষ সন্ত্রাসের বলি হত। তিনি নিজ ঘনিষ্ঠ হিবার্ট এবং দাঁতোঁকেও সন্ত্রাসের দ্বারা হত্যা করেন। শেষপর্যন্ত উদারপন্থীরা তাঁকে হত্যা করলে সন্ত্রাসের শাসনের অবসান ঘটে।
৮০। ডাইরেক্টরির শাসন কী?
উত্তর:- ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের সংবিধান অনুসারে ফ্রান্সের শাসনভার ৫ জন ‘ডাইরেক্টর’ বা ব্যক্তির একটি কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই শাসন ‘ডাইরেক্টরির শাসন’ (১৭৯৫-১৭৯৯ খ্রি.) নামে পরিচিত। এই শাসনব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত। ডাইরেক্টরদের শাসনকালে ফ্রান্সের শাসনব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর (Class 9 History Forashi Biplober Koyekti Dik Question and Answer)
নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় MCQ প্রশ্ন উত্তর (সঠিক বিকল্প নির্বাচন)
- নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় হতে MCQ প্রশ্ন উত্তর
- নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় হতে সঠিক বিকল্প বক্তব্য নির্বাচন
নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় SAQ প্রশ্ন উত্তর (অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর)
নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় ভুল বা ঠিক নির্ধারণ প্রশ্ন উত্তর
নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় স্তম্ভ মেলাও প্রশ্ন উত্তর
নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় শূন্যস্থান পূরণ প্রশ্ন উত্তর
নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় হতে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর
নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর
- ফরাসি বিপ্লবের অর্থনৈতিক কারণগুলি আলোচনা করো।
- ফরাসি বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) ফলাফল বা প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।
- সন্ত্রাসের শাসনের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো। বিপ্লবের সময়ে ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনের মূল্যায়ন করো। অথবা, সন্ত্রাসের শাসনের গুরুত্ব কী ছিল? সন্ত্রাসের রাজত্বকে কি সমর্থন করা যায়?
- বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণি ও সামাজিক বৈষম্য সম্পর্কে আলোচনা কর।
- ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকা বা অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
- ফরাসি বিপ্লবের জন্য দার্শনিকদের ভূমিকার মূল্যায়ন করো। অথবা, ফরাসি দার্শনিকদের ভূমিকার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও।
- ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণগুলি আলোচনা করো।
- ফরাসি সংবিধান সভার (১৭৮৯ খ্রি.) কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
- ফ্রান্সের নতুন আইনসভার (১৭৯১-১৭৯২ খ্রি.) পরিচয় দাও।
- ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন চালু হওয়ার কারণ কী ছিল? সন্ত্রাসের শাসনের সংগঠন সম্পর্কে আলোচনা করো।
- ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন পরিচালনা সম্পর্কে আলোচনা করো। সন্ত্রাসের শাসনের বিভিন্ন কৃতিত্ব বা সাফল্যগুলি উল্লেখ করো।