নবম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর। নবম শ্রেণী (দ্বিতীয় অধ্যায়) বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর। Class 9 History Chapter 2 Short Question Answers.
নবম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ)
নবম শ্রেণী (দ্বিতীয় অধ্যায়) বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
শ্রেণী | নবম |
অধ্যায় | দ্বিতীয় অধ্যায় |
Question Type | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর |
Marks | 2 |
নবম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১। ভঁদেমিয়ার ঘটনা কী? অথবা, ‘অক্টোবরের ঘটনা কী?
উত্তর:- ফরাসি বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) পরবর্তীকালে রাজতন্ত্রের সমর্থক উন্মত্ত জনতা ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ অক্টোবর ফরাসি জাতীয় সভা আক্রমণ করলে ফরাসি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নেপোলিয়ন অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেন এবং জাতীয় সভা রক্ষা করেন। এটি ‘ভঁদেমিয়ার ঘটনা’ বা ‘অক্টোবরের ঘটনা’ নামে পরিচিত।
২। ‘১৮ ব্রুমেয়ার ঘটনা’ কী?
উত্তর:- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ফ্রান্সের বিপ্লবী ক্যালেন্ডার অনুসারে ব্রুমেয়ার মাসের ১৮ তারিখে ডাইরেক্টরির শাসনের পতন ঘটিয়ে ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করেন। এই ক্ষমতা দখলের ঘটনা ‘১৮ ব্রুমেয়ার ঘটনা’ নামে পরিচিত।
৩। ‘সিজালপাইন প্রজাতন্ত্র’ কী?
উত্তর:- নেপোলিয়ন ইতালির লম্বার্ডি দখল করে সেখানে যে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন তা সিজালপাইন প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত। এটি ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে ‘ইতালীয় রাজ্য’ নামে পরিচিত হয়।
৪। ডাইরেক্টরির শাসনকালে ইতালিতে নেপোলিয়নের সাফল্য উল্লেখ করো।
উত্তর:- ডাইরেক্টরির শাসনকালে (১৭৯৫-‘৯৯ খ্রি.) নেপোলিয়ন ইতিলির সার্ডিনিয়াকে পরাজিত করে স্যাভয় ও নিস দখল করেন। ইতালির পার্মা, মডেনা ও নেপলসের শাসকরা নেপোলিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করে লম্বার্ডি, ভেনিস ও মিলান দখল করেন।
৫। কে, কোথায় ‘বাটাভিয়া’ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর:- ফরাসি সেনাপতি পেশেগ্ৰু হল্যান্ড দখল করে সেখানে ফ্রান্সের অধীনে এক তাঁবেদার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বাটাভিয়া প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত।
৬। ‘কনসুলেটের শাসন’ কী?
উত্তর:- ফরাসি সেনাপতি নেপোলিয়ন ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ডাইরেক্টরির শাসনের অবসান ঘটিয়ে (৯ নভেম্বর, ১৭৯৯ খ্রি.) ফ্রান্সে এক নতুন শাসনব্যবস্থা চালু করেন। এই ব্যবস্থায় নেপোলিয়ন-সহ মোট ৩ জন কনসালের হাতে ফ্রান্সের শাসনভার তুলে দেওয়া হয়। এটি ‘কনসুলেটের শাসন’ নামে পরিচিত।
৭। কনসুলেটের শাসনকালে ফ্রান্সের তিন জন কনসালের নাম লেখো।
উত্তর:- কনসুলেটের শাসনকালে ফ্রান্সের প্রথম কনসাল ছিলেন নেপোলিয়ন, যিনি ছিলেন দেশের চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। অন্য দুই কনসাল ছিলেন আবে সিয়েস ও রজার ডুকোস। তাঁরা ছিলেন প্রথম কনসালের সহকারী ও আজ্ঞাবাহী মাত্র।
৮। প্রথম কনসাল হিসেবে নেপোলিয়নের কী ক্ষমতা ছিল?
উত্তর:- প্রথম কনসাল হিসেবে নেপোলিয়ন অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তাঁর হাতে সামরিক ও অসামরিক কর্মচারী, মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত প্রমুখের নিয়োগ, আইন প্রণয়ন, যুদ্ধ ঘোষণা, শান্তি স্থাপন প্রভৃতি দায়িত্ব ছিল।
৯। নেপোলিয়ন কীভাবে প্রাদেশিক প্রশাসন বিভাজিত করেন?
উত্তর:- নেপোলিয়ন সমগ্র ফ্রান্সকে ৮৩টি ডিপার্টমেন্ট বা প্রদেশে এবং প্রদেশগুলিকে ৫৪৭টি ক্যান্টন বা জেলায় বিভক্ত করেন। প্রদেশ ও জেলার শাসনকর্তা ছিলেন যথাক্রমে ‘প্রিফেক্ট’ ও ‘সাব- প্রিফেক্ট’।
১০। নেপোলিয়ন কর্তৃক নিযুক্ত কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মচারীর নাম লেখো।
উত্তর:- নেপোলিয়ন কর্তৃক নিযুক্ত কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা ছিলেন বিদেশ দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত তালিরাঁ, অর্থ দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত গোদিন, পুলিশ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফুচে প্রমুখ।
১১। ‘কনকর্ডটি’ বা ধর্ম-মীমাংসা চুক্তি’ কী?
উত্তর:- ফরাসি বিপ্লবকালে ‘সিভিল কনস্টিটিউশন অব দ্য ক্লার্জি’ নামে এক দলিল দ্বারা ফরাসি গির্জার জাতীয়করণ করা হলে ফরাসি রাষ্ট্রের সঙ্গে পোপের বিরোধ বাধে। এই বিরোধের মীমাংসার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন পোপ সপ্তম পায়াস-এর সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেন তা ‘কনকর্ডাট’ বা ধর্ম-মীমাংসা চুক্তি নামে পরিচিত।
১২। ‘কনকর্ডাট’ বা ধর্ম-মীমাংসা চুক্তিতে কী বলা হয়?
উত্তর:- ‘কনকর্ডাট’ বা ধর্ম-মীমাংসা চুক্তিতে বলা হয় যে, ফরাসি গির্জা ও গির্জার সম্পত্তির জাতীয়করণ পোপকে মেনে নিতে হবে। ফরাসি সরকার রোমান ক্যাথোলিক ধর্মমত ও গির্জাকে স্বীকৃতি দেবে। যাজকরা সরকারের দ্বারা মনোনীত হবেন ও সরকার যাজকদের বেতন দেবে এবং পোপ তাঁদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবেন।
১৩। ‘কোড নেপোলিয়ন’ কী?’
উত্তর:- ফ্রান্সের শাসক নেপোলিয়ন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচলিত আইনগুলির পার্থক্য দূর করে এবং পরস্পর-বিরোধী আইনগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে এক নতুন আইনব্যবস্থা চালু করেন। এটি ‘কোড নেপোলিয়ন’ বা ‘নেপোলিয়নের আইনসংহিতা’ নামে পরিচিত।
১৪। কারা, কবে ‘কোড নেপোলিয়ন-এর’ আইনগুলি সংকলন করেন?
উত্তর:- চারজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে নিয়ে গঠিত একটি কমিশন ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফ্রান্সে নতুন আইনব্যবস্থার প্রবর্তন নিয়ে ৮৪টি অধিবেশনে মিলিত হয়। এই কমিশন চার বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ‘কোড নেপোলিয়ন-এর’ আইনগুলি সংকলন করে।
১৫। কোড নেপোলিয়ন-এর’ আইনগুলির শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর:- ‘কোড নেপোলিয়ন’-এ মোট ২২৮৭টি (মতান্তরে ২২৮১টি) বিধি ছিল। এই বিধিগুলি প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। যথা – দেওয়ানি আইন, ফৌজদারি আইন ও বাণিজ্যিক আইন।
১৬। ‘কোড নেপোলিয়ন’-এর প্রধান কয়েকটি ধারা বা বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর:- ‘কোড নেপোলিয়ন’-এর প্রধান কয়েকটি ধারা বা বৈশিষ্ট্য গুলি হল আইনের দৃষ্টিতে সমতা, সামন্ততান্ত্রিক অসাম্যের বিলোপ, সরকারি চাকরিতে যোগ্যতা অনুসারে নিয়োগ, ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি, সম্পত্তির অধিকারের স্বীকৃতি, ধর্মীয় সহিষ্কৃতা প্রভৃতি।
১৭। ‘কোড নেপোলিয়ন’-এর প্রধান কয়েকটি ত্রুটির উল্লেখ করো।
উত্তর:- কোড নেপোলিয়নের প্রধান কয়েকটি ত্রুটি ছিল সমাজে নারীদের মর্যাদা হ্রাস, স্ত্রীর ওপর স্বামীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, শ্রমিকের গুরুত্বহীনতা প্রভৃতি।
১৮। ‘কোড নেপোলিয়ন-এর’ গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর:- কোড নেপোলিয়নের বিভিন্ন গুরুত্ব ছিল, যেমন – আইনসংহিতার মূল নীতিগুলি তৎকালীন যুগের বিচারে অত্যন্ত আধুনিক ছিল। আইনগুলি পরবর্তীকালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আইনব্যবস্থায় স্থান পায়। ফিশারের মতে, এই আইনগুলি বিপ্লবের স্থায়ী বিজয়কে সুনিশ্চিত করে।
১৯। কাকে, কেন ‘দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান’ বলে অভিহিত করা হয়?
উত্তর:- ফরাসি শাসক নেপোলিয়ন ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ‘কোড নেপোলিয়ন’ নামে নতুন আইনসংহিতা প্রণয়ন করেন। সমকালীন যুগের চেয়ে প্রগতিশীল এই আইনব্যবস্থা ছিল নেপোলিয়নের সর্বাপেক্ষা গৌরবময় সংস্কার এবং সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কীর্তি। এই কৃতিত্বের জন্য নেপোলিয়নকে ‘দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান’ বলে অভিহিত করা হয়।
২০। ‘লিজিয়ন অব অনার’ কী?
উত্তর:- ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন রাজকর্মচারীদের উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে দক্ষ কর্মচারীদের একটি বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদানের উদ্যোগ নেন। এই সম্মান ‘লিজিয়ন অব অনার’ নামে খ্যাত।
২১। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মোট ক-টি শক্তিজোট গড়ে ওঠে ও কী কী?
উত্তর:- ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মোট চারটি শক্তিজোট গড়ে ওঠে – প্রথম শক্তিজোট (১৭৯৩ খ্রি.), দ্বিতীয় শক্তিজোট (১৭৯৯ খ্রি.), তৃতীয় শক্তিজোট (১৮০৪-১০৫ খ্রি.) ও চতুর্থ শক্তিজোট (১৮১৩ খ্রি.)।
২২। ফ্রান্স-বিরোধী প্রথম শক্তিজোট সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- ফ্রান্সের বিপ্লবী আইনসভা রাজা ষোড়শ লুই-এর প্রাণদণ্ড দিলে ইউরোপের রাজতন্ত্রগুলি এর বিরোধিতা করে। বিপ্লবী ফ্রান্সকে শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, স্পেন, পোর্তুগাল, সুইডেন প্রভৃতি দেশ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শক্তিজোট গড়ে তোলে।
২৩। ফ্রান্স-বিরোধী দ্বিতীয় শক্তিজোট সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- নেপোলিয়নের উগ্র সাম্রাজ্যবাদী নীতি ও বিভিন্ন সামরিক অভিযানের সফলতা ইউরোপীয় দেশগুলিকে আতঙ্কিত করে। এই পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পোর্তুগাল, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় শক্তিজোট গড়ে তোলে। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে এই জোট ভেঙে যায়।
২৪। ফ্রান্স-বিরোধী তৃতীয় শক্তিজোট সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- নেপোলিয়নের ধারাবাহিক সামরিক সাফল্য ও দ্রুত ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আতঙ্কিত হয়। ফলে ইংল্যান্ড, সুইডেন, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ তাঁর বিরুদ্ধে ১৮০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় শক্তিজোট গড়ে তোলে।
২৫। ফ্রান্স-বিরোধী চতুর্থ শক্তিজোট সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- আগ্রাসী নেপোলিয়নের ক্ষমতা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে রুশ জার প্রথম আলেকজান্ডারের উদ্যোগে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, রাশিয়া, সুইডেন প্রভৃতি দেশ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে চতুর্থ তথা শেষ শক্তিজোট গড়ে তোলে।
২৬। কোন ঘটনার পর কারা লুনভিলের সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য হন?
উত্তর:- ম্যারেঙ্গোর যুদ্ধ (১৮০০ খ্রি.) ও হোহেনলিন্ডেনের যুদ্ধে (১৮০০ খ্রি.) ফ্রান্সের কাছে পরাজিত হয়ে অস্ট্রিয়া ফ্রান্সের সঙ্গে লুনভিলের সন্ধি (১৮০১ খ্রি.) স্বাক্ষরে বাধ্য হয়।
২৭। কবে, কাদের মধ্যে অ্যামিয়েন্সের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়? এই সন্দ্বির প্রধান শর্ত কী ছিল?
উত্তর:- ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি শাসক নেপোলিয়ন ও ইংল্যান্ডের মধ্যে অ্যামিয়েন্সের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
অ্যামিয়েন্সের সন্ধির শর্ত ছিল মিশর, নেপলস ও পোপের রাজ্য থেকে নেপোলিয়নকে ফরাসি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। সিংহল ও ত্রিনিদাদ ছাড়া ফ্রান্সের কাছ থেকে দখল করা অন্য সব স্থান ইংল্যান্ডকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
২৮। কবে, কাদের মধ্যে ফ্রিডল্যান্ডের যুদ্ধ হয়? এই যুদ্ধের পর কোন সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর:- ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে ফ্রিডল্যান্ডের যুদ্ধ স্বাক্ষরিত হয়।
ফ্রিডল্যান্ডের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাশিয়া টিলসিটের সন্ধি (১৮০৭ খ্রি.) স্বাক্ষরে বাধ্য হয়।
২৯। নেপোলিয়ন জার্মানির পুনর্গঠনে কী উদ্যোগ নেন?
উত্তর:- নেপোলিয়ন জার্মানির ৩০০টি রাজ্যকে ভেঙে ৩৯টি রাজ্য গড়ে তোলেন। এই রাজ্যগুলি নিয়ে তিনটি রাজ্যমন্ডলী গড়ে তোলা হয় – কনফেডারেশন অব দ্য রাইন, কিংডম অব ওয়েস্টফ্যালিয়া এবং গ্র্যান্ড ডাচি অব ওয়ারশ।
৩০। কনফেডারেশন অব দ্য বাইন’ কী? এর প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর:- ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন জার্মানির উটেমবার্গ, বেডেন, হেসবার্গ প্রভৃতি ছোটো ছোটো রাজ্য দখল করে এদের নিয়ে কনফেডারেশন বা রাষ্ট্র-সমবায় গঠন করেন। এটি ‘কনফেডারেশন অব দ্য রাইন’ নামে পরিচিত।
‘কনফেডারেশন অব দ্য রাইন’-এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন।
৩১। ‘কিংডম অব ওয়েস্টফ্যালিয়া’ সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- নেপোলিয়ন এলবা নদীর পশ্চিম তীরবর্তী হ্যানোভার, স্যাক্সনি প্রভৃতি জার্মান রাজ্যগুলি দখল করে সেগুলিকে নিয়ে একটি রাষ্ট্র-সমবায় গড়ে তোলেন যা ‘কিংডম অব ওয়েস্টফ্যালিয়া’ নামে পরিচিত। নেপোলিয়নের ছোটো ভাই জেরোম বোনাপার্ট এখানকার রাজা হন।
৩২। ‘গ্র্যান্ড ডাচি অব ওয়ারশ’ সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- নেপোলিয়ন প্রাশিয়ার অধীনস্থ পোল্যান্ড এবং রাশিয়ার কিছু অংশ নিয়ে একটি রাষ্ট্র-সমবায় গড়ে তোলেন যা ‘গ্র্যান্ড ডাচি অব ওয়ারশ’ নামে পরিচিত। স্যাক্সনির রাজা এখানকার শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পান।
৩৩। মহাদেশীয় ব্যবস্থা কী?
উত্তর:- ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বার্লিন, মিলান, ওয়ারশ, ফঁতেনব্লু প্রভৃতি ডিক্রির মাধ্যমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করে বলেন যে, ইংল্যান্ডের কোনো জাহাজ ইউরোপের কোনো বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং ইউরোপের কোনো রাষ্ট্র ইংল্যান্ড থেকে পণ্য আমদানি করতে পারবে না। এই নীতি ‘মহাদেশীয় ব্যবস্থা’ বা ‘মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা’ বা ‘কন্টিনেন্টাল সিস্টেম’ নামে পরিচিত।
৩৪। নেপোলিয়ন কী উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাদেশীয় অবরোধ ঘোষণা করেন?
উত্তর:- নেপোলিয়ন প্রধানত দুটি উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাদেশীয় অবরোধ ঘোষণা করেন। যথা – মহাদেশীয় ভূখণ্ডে শিল্পোন্নত ইংল্যান্ডের পণ্য বিক্রি করে দিয়ে ইংল্যান্ডের অর্থনীতি পঙ্গু করা এবং ইউরোপে ব্রিটিশ পণ্যের অনুপস্থিতির সুযোগে ফ্রান্সে দ্রুত শিল্পায়ন ঘটিয়ে ব্রিটিশ পণ্যের শূন্যস্থান দখল করা।
৩৫। ‘বোনাপার্টিস্ট কোলবার্টিজম’ কাকে বলে?
উত্তর:- ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ভেবেছিলেন যে, মহাদেশীয় অবরোধের মাধ্যমে ইউরোপের দেশগুলিতে ব্রিটিশ পণ্য আমদানি বন্ধ হলে সেই সব দেশে ফরাসি পণ্যের চাহিদা ও বিক্রি দ্রুত বাড়বে। ফলে ফ্রান্সে দ্রুত শিল্পায়ন ঘটবে। এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক কোবান ‘বোনাপার্টিস্ট কোলবার্টিজম’ বলেছেন।
৩৬। বার্লিন ডিক্রি কী? অথবা, বার্লিন ডিক্রিতে কী বলা হয়?
উত্তর:- ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে (১১ নভেম্বর) বার্লিনে এক হুকুমনামা বা ঘোষণা জারি করে বলেন যে, ইংল্যান্ড বা তার উপনিবেশগুলির কোনো জাহাজ ফ্রান্স এবং ফ্রান্সের মিত্র বা নিরপেক্ষ কোনো দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই সব দেশে কোনো ব্রিটিশ পণ্য ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই সব দেশে কোনো জাহাজে করে ব্রিটিশ পণ্য ঢুকলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। এই ঘোষণা বার্লিন ডিক্রি নামে পরিচিত।
৩৭। অর্ডার্স-ইন-কাউন্সিল কী?
উত্তর:- ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বার্লিন ডিক্রির (১৮০৬ খ্রি.) দ্বারা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাদেশীয় অবরোধ ঘোষণা করলে ইংল্যান্ডও ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও তার মিত্র দেশগুলির বিরুদ্ধে পালটা অবরোধ ঘোষণা করে, যা ‘অর্ডার্স-ইন-কাউন্সিল’ নামে পরিচিত।
৩৮। অর্ডার্স-ইন-কাউন্সিলে কী বলা হয়?
উত্তর:- ইংল্যান্ড কর্তৃক ঘোষিত ‘অর্ডার্স-ইন-কাউন্সিল-এর’ ঘোষণায় বলা হয় যে, ফ্রান্স ও তার মিত্র দেশগুলির বন্দরে অন্য কোনো দেশের জাহাজ ঢুকতে পারবে না। ঢুকলে সেই জাহাজ ও তার মালপত্র বাজেয়াপ্ত করা হবে। কোনো নিরপেক্ষ দেশ ফ্রান্স ও তার মিত্র কোনো দেশের বন্দরে একান্তই জাহাজ পাঠাতে চাইলে সেই জাহাজকে যথার্থ ফি দিয়ে ইংল্যান্ডের কাছ থেকে লাইসেন্স বা আগাম অনুমতি নিতে হবে।
৩৯। মিলান ডিক্রি কী?
উত্তর:- ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে মিলান শহর থেকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করে বলেন যে, কোনো নিরপেক্ষ বা মিত্র দেশ অবরুদ্ধ বন্দরে জাহাজ পাঠালে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। কোনো নিরপেক্ষ দেশের জাহাজ ইংল্যান্ডে প্রবেশ করলে তা শত্রুদেশের জাহাজ বলে গণ্য হবে। এই ঘোষণা মিলান ডিক্রি নামে পরিচিত।
৪০। মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ব্যর্থ হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর:- মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ব্যর্থ হওয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল – (ক) ফ্রান্সের পর্যাপ্ত শক্তিশালী নৌবাহিনী না থাকায় নেপোলিয়ন ইউরোপের সুদীর্ঘ উপকূল অঞ্চলের পণ্য চলাচলের ওপর নজরদারি চালাতে পারে নি। (খ) ইউরোপের বাজারে ইংল্যান্ডের উন্নত শিল্পজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা ছিল, যা পূরণ করার ক্ষমতা ফ্রান্সের নিম্নমানের পণ্যের ছিল না।
৪১। মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা কার্যকর করতে গিয়ে নেপোলিয়ন রোম ও হল্যান্ডে কী পদক্ষেপ নেন?
উত্তর:- নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা কার্যকর করতে গিয়ে রোম ও হল্যান্ডের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। রোমের পোপ নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ মানতে অস্বীকার করেন। ফলে নেপোলিয়ন পোপকে বন্দি করেন। হল্যান্ডের শাসক লুই (নেপোলিয়নের ভাই) মহাদেশীয় অবরোধ মানতে অস্বীকার করলে নেপোলিয়ন তাঁকে সিংহাসনচ্যুত করে হল্যান্ড দখল করেন।
৪২। ফঁতেনব্লু-এর গোপন সন্ধি (১৮০৭ খ্রি.) সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- পোর্তুগাল মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করলে নেপোলিয়ন স্পেনের সঙ্গে ফঁতেনব্লু-এর গোপন সন্ধি (১৮০৭ খ্রি.) স্বাক্ষর করেন। এই সন্ধির দ্বারা স্থির হয় যে, ফ্রান্স ও স্পেনের যৌথ বাহিনী পোর্তুগাল আক্রমণ করবে। যুদ্ধে জয়লাভের পর পোর্তুগাল ও তার উপনিবেশগুলি ফ্রান্স ও স্পেন ভাগ করে নেবে।
৪৩। নেপোলিয়ন কর্তৃক পোর্তুগাল অভিযান সম্পর্কে কী | জান?
উত্তর:- পোর্তুগাল মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করলে নেপোলিয়ন পোর্তুগাল অভিযানের উদ্যোগ নেন। ফঁতেনব্লু-এর গোপন চুক্তি (১৮০৭ খ্রি.) অনুসারে সেনাপতি মার্শাল জুনো-এর নেতৃত্বে ফ্রান্স ও স্পেনের যৌথবাহিনী পোর্তুগাল আক্রমণ ও দখল করে। সেখানে মহাদেশীয় ব্যবস্থা চালু হয়।
৪৪। নেপোলিয়নের স্পেন দখলের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
উত্তর:- নেপোলিয়ন স্পেন দখল করে সেখানকার সিংহাসনে নিজের ভাই জোসেফ বোনাপার্টকে বসিয়ে দিলে স্পেনবাসী তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র মুক্তিসংগ্রাম শুরু করে। স্পেনের গেরিলা বাহিনী, ‘জুন্টা’ নামক বিদ্রোহী প্রতিরোধ সমিতি ও জাতীয়তাবাদী সাধারণ মানুষ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মরণ-পণ সংগ্রাম শুরু করলে নেপোলিয়নের বাহিনী পরাজিত হয়। জোসেফ সিংহাসন ছাড়তে বাধ্য হন।
৪৫। ‘স্পেনীয় ক্ষত’ কী?
উত্তর:- ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন স্পেন দখল করে সেখানকার সিংহাসনে নিজের ভাই জোসেফকে বসিয়ে দিলে স্পেনবাসী নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তীব্র মুক্তিসংগ্রাম শুরু করে। স্পেনের যুদ্ধে নেপোলিয়নের বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় ঘটে এবং জোসেফ স্পেন থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হন। স্পেনে নেপোলিয়নের এই সামরিক ব্যর্থতা ‘স্পেনীয় ক্ষত’ নামে পরিচিত।
৪৬। উপদ্বীপের যুদ্ধ সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে পোর্তুগাল ও স্পেন যে যুদ্ধ শুরু করে তা উপদ্বীপের যুদ্ধ (১৮০৮-‘১৪ খ্রি.) নামে পরিচিত। উপদ্বীপের যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাপতি আর্থার ওয়েলেসলি বা ডিউক অব ওয়েলিংটন পোর্তুগাল ও স্পেনের পক্ষে যোগ দেয়। যুদ্ধে ফরাসি বাহিনীর পরাজয় ঘটে এবং নেপোলিয়ন কর্তৃক মনোনীত স্পেনের শাসক জোসেফ স্পেন ছাড়তে বাধ্য হন।
৪৭। উপদ্বীপের যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি যুদ্ধের নাম করো।
উত্তর:- উপদ্বীপের যুদ্ধের (১৮০৮-‘১৪ খ্রি.) সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হল ভিমেরো-এর যুদ্ধ (১৮০৮ খ্রি.), করুন্নার যুদ্ধ (১৮০৮ খ্রি.), ট্যালাভেরার যুদ্ধ (১৮০৯ খ্রি.), ওয়াগ্রামের যুদ্ধ (১৮০৯ খ্রি.), টোরেস ভেড্রাস- এর যুদ্ধ (১৮০৯ খ্রি.), স্যালামাঙ্কার যুদ্ধ (১৮১২ খ্রি.), ভিত্তোরিয়ার যুদ্ধ (১৮১৩ খ্রি.) প্রভৃতি।
৪৮। স্পেনের যুদ্ধে ফরাসিদের ব্যর্থতার দুটি কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর:- স্পেনের যুদ্ধে ফরাসিদের ব্যর্থতার দুটি প্রধান কারণ হল – (ক) পাহাড়-পর্বত ও জলাভূমি-বেষ্টিত স্পেনের ভৌগোলিক পরিবেশে যুদ্ধের সময় ফরাসি বাহিনীর খুবই অসুবিধা হয়। (খ) স্পেনের গেরিলা বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে ফরাসি বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
৪৯। নেপোলিয়ন কর্তৃক রাশিয়া আক্রমণ সম্পর্কে কী
উত্তর:- রাশিয়া মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করলে নেপোলিয়ন ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে (২৪ জুন) ৬ লক্ষ সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে রাশিয়া অভিযান করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি রাশিয়ার যুদ্ধে পরাজিত হন এবং তাঁর বিখ্যাত সেনাদল ‘গ্রাঁদ আর্মি’ বিধ্বস্ত হয়।
৫০। রাশিয়া কর্তৃক ফরাসি বাহিনীর বিরুদ্ধে গৃহীত ‘পোড়ামাটি নীতি’ কী?
উত্তর:- ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া আক্রমণ করলে রাশিয়া সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে ক্রমাগত পিছু হটতে থাকে। ফরাসি বাহিনী রাশিয়ায় যাতে সমস্যায় পড়ে সে উদ্দেশ্যে পিছু হটার সময় রুশ বাহিনী নিজেদের রাস্তাঘাট ও সেতু ধ্বংস করে, খাদ্যশস্য, শস্যক্ষেত্র, শহর, জনপদ প্রভৃতি আগুনে পুড়িয়ে, পানীয় জলে বিষ মিশিয়ে দিয়ে যায়। রুশ বাহিনীর এই পদক্ষেপ ‘পোড়ামাটি নীতি’ নামে পরিচিত।
৫১। রাশিয়া অভিযানে নেপোলিয়নের পরাজয়ের দুটি কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর:- রাশিয়া অভিযানে নেপোলিয়নের পরাজয়ের প্রধান দুটি কারণ হল – (ক) রাশিয়ার তীব্র শীত ও তুষারপাতে রুশ বাহিনীর বিশেষ অসুবিধা না হলেও ফরাসি বাহিনী বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। (খ) রুশ গেরিলা বাহিনী যুদ্ধে নিজেদের পরিচিত ভূখণ্ডে ফরাসি বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি করে।
৫২। রাশিয়া অভিযানে নেপোলিয়নের ব্যর্থতার দুটি তাৎপর্য উল্লেখ করো।
উত্তর:- রাশিয়া অভিযানে নেপোলিয়নের ব্যর্থতার দুটি প্রধান তাৎপর্য হল – (ক) নেপোলিয়ন যে অপরাজেয় নন তা ইউরোপের দেশগুলির কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। (খ) রাশিয়া অভিযানে তার ব্যর্থতায় অনুপ্রাণিত হয়ে ফরাসি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন জাতি নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে।
৫৩। ‘গ্রাঁদ আর্মি’ কী? কবে, কোথায় এটি ধ্বংস হয়?
উত্তর:- ‘গ্রাঁদ আর্মি’ ছিল নেপোলিয়নের অত্যন্ত শক্তিশালী সেনাদল।
নেপোলিয়ন তাঁর ‘গ্রাঁদ আর্মি’ নিয়ে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া অভিযান করলে সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাদ্যাভাব, মারণ রোগ, রুশ গেরিলা সেনাদের আক্রমণ প্রভৃতি কারণে এই বাহিনীর বৃহদাংশ ধ্বংস হয়।
৫৪। কোন যুদ্ধকে ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ’ বলা হয় এবং কেন?
উত্তর:- চতুর্থ শক্তিজোটের বিভিন্ন সদস্য-রাষ্ট্র ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির লাইপজিগের যুদ্ধে নেপোলিয়নকে পরাজিত করে। এটি লাইপজিগের বা জাতিসমূহের যুদ্ধ নামে পরিচিত। ইউরোপের প্রায় ১৩টি রাষ্ট্র লাইপজিগের যুদ্ধে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অংশ নেয়। এজন্য এই যুদ্ধকে ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ’ বলা হয়।
৫৫। লাইপজিগ বা জাতিসমূহের যুদ্ধে কার পরাজয় ঘটে? এই পরাজয়ের ফল কী হয়েছিল?
উত্তর:- লাইপজিগ বা জাতিসমূহের যুদ্ধে (১৮১৩ খ্রি.) নেপোলিয়নের পরাজয় ঘটে। এই পরাজয়ের ফলে ফরাসি সাম্রাজ্য ভেঙে যায়, হল্যান্ড স্বাধীনতা পায় এবং অস্ট্রিয়া তার হারানো রাজ্য ফিরে পায়।
৫৬। প্যারিসের প্রথম সন্ধি সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি প্রতিনিধি এবং চতুর্থ শক্তিজোটের বিজয়ী দেশগুলির মধ্যে প্যারিসের প্রথম সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধির দ্বারা বুরবোঁ বংশীয় ষোড়শ লুই-এর ভাই অষ্টাদশ লুই ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন। [2] ফ্রান্সকে বিপ্লবের আগের রাজনৈতিক সীমানা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
৫৭। ‘শতদিবসের রাজত্ব’ সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে ফ্রান্সে গোলযোগের পরিস্থিতিতে নেপোলিয়ন এলবা দ্বীপের নির্বাসন থেকে পালিয়ে ফ্রান্সে ফিরে আসেন (মার্চ, ১৮১৫ খ্রি.)। সাধারণ মানুষ তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানালে রাজা অষ্টাদশ লুই সিংহাসন ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর তিনি ২০ মার্চ থেকে ২৯ জুন (১৮১৫ খ্রি.) পর্যন্ত মোট ১০০ দিন রাজত্ব করেন। এই ঘটনা ‘শতদিবসের রাজত্ব’ নামে পরিচিত।
৫৮। কবে, কাদের মধ্যে ওয়াটারলু-এর যুদ্ধ সংঘটিত হয়? এই যুদ্ধের পরিণতি কী হয়েছিল?
উত্তর:- ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন এবং ইংল্যান্ড ও প্রাশিয়ার যৌথ বাহিনীর মধ্যে ওয়াটারলু-এর যুদ্ধ হয়।
উত্তর:- ওয়াটারলু-এর যুদ্ধে নেপোলিয়ন ইংরেজ সেনাপতি ডিউক অব ওয়েলিংটন ও প্রাশীয় সেনাপতি ব্লুকারের কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ (১৫ জুলাই, ১৮১৫ খ্রি.) করেন। তাঁকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
৫৯। নেপোলিয়নকে ‘বিপ্লবের সন্তান’ বলা হয় কেন?
উত্তর:- নেপোলিয়নকে ‘বিপ্লবের সন্তান’ বলা হয়, কারণ, ফরাসি বিপ্লবের উদারনীতি নেপোলিয়নকে ফ্রান্সের ক্ষমতা দখলে সহায়তা করেছিল। ফরাসি বিপ্লব-প্রসূত সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শ নেপোলিয়ন তাঁর শাসনকালে কার্যকর করেছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের মূল আদর্শগুলি তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেন।
৬০। নেপোলিয়নকে ‘বিপ্লবের ধ্বংসকারী’ বলা হয় কেন?
উত্তর:- নেপোলিয়নকে বিপ্লবের ধ্বংসকারী বলা হয়, কারণ, বিপ্লবের স্বাধীনতার আদর্শ তিনি ধ্বংস করেন। বিপ্লব ফ্রান্সে যে রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছিল তিনি ফ্রান্সে সেই রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
৬১। প্যারিসের দ্বিতীয় সন্ধি সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- নেপোলিয়নের চূড়ান্ত পতনের পর বিজয়ী মিত্রশক্তি ফ্রান্সের ওপর প্যারিসের দ্বিতীয় সন্ধি (নভেম্বর, ১৮১৫ খ্রি.) চাপিয়ে দেয়। এই সন্ধিতে বলা হয় যে, ফ্রান্সকে বিপ্লবের পূর্ববর্তী সীমানা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ফ্রান্সে মিত্রপক্ষের সেনাদল মোতায়েন থাকবে। ফ্রান্সকে ৭০০ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।