নবম শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় হতে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর

নবম শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় হতে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর। নবম শ্রেণী (পঞ্চম অধ্যায়) বিশ শতকে ইউরোপ থেকে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর। Class 9 History Chapter 5 Analytical (MARKS-4) Question Answer in Bengali.

Table of Contents

নবম শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় হতে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর (বিশ শতকে ইউরোপ)

নবম শ্রেণী (পঞ্চম অধ্যায়) বিশ শতকে ইউরোপ থেকে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর

শ্রেণী নবম
অধ্যায়পঞ্চম অধ্যায়
Question Typeবিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর
Marks4

১। এপ্রিল থিসিস সম্পর্কে কি জান?

উত্তর:- ভূমিকা :- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্যের পর প্রিন্স জর্জ লুভভ্-এর নেতৃত্বে রাশিয়ায় একটি অস্থায়ী বুর্জোয়া প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সরকার দেশের কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হলে দেশে প্রবল বিদ্রোহ শুরু হয়।

এপ্রিল থিসিস ঘোষণা

রাশিয়ার প্রজাতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিদ্রোহ শুরু হলে বলশেভিক নেতা ভি আই লেনিন সুইজারল্যান্ডের নির্বাসন থেকে রাশিয়ায় ফিরে আসেন। তিনি ১৬ এপ্রিল, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক দলের কর্মীদের সামনে তাঁর বিখ্যাত ‘এপ্রিল থিসিস’ নামে এক কার্য-বিবরণ তুলে ধরেন।

দাবি

লেনিন তাঁর এপ্রিল থিসিসের ঘোষণায় দাবি করেন যে, বলশেভিকদের বিপ্লবের ফলেই মার্চ মাসে জারতন্ত্রের পতন ঘটেছে। তাই রাশিয়ার শাসনক্ষমতা বলশেভিকদের হাতেই থাকা উচিত।

জনগণের হাতে ক্ষমতা

লেনিন বলেন যে, সাধারণ মানুষকে নিয়ে গঠিত সোভিয়েত গুলির হাতে দেশের যাবতীয় ক্ষমতা তুলে দিতে হবে, কারখানাগুলির দায়িত্ব শ্রমিকদের হাতে দিতে হবে এবং কৃষকদের হাতে জমি দিতে হবে।

কর্ম পরিকল্পনা

রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের পর তাঁদের কাজ হবে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত করে তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা, উৎপাদন, বণ্টন, ব্যাংক প্রভৃতির ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা, শিল্পের জাতীয়করণ করা প্রভৃতি।

উপসংহার :- লেনিন তাঁর এপ্রিল থিসিসে ঘোষণা করেন যে, “আমরা শ্রমিক, কৃষক ও সৈনিকের সোভিয়েত ছাড়া অন্য কোনো সরকার চাই না।”

২। বলশেভিক বা নভেম্বর বা রুশ বিপ্লবে (১৯১৭ খ্রি.) বলশেভিকদের সাফল্যের কারণ কী ছিল?

উত্তর:- ভূমিকা :- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে জারতন্ত্রের পতন হয় এবং প্রিন্স লুভভ্-এর নেতৃত্বে বুর্জোয়া প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর নভেম্বর মাসে সরকারের উচ্ছেদ ঘটিয়ে মার্কসবাদী বলশেভিক দল রাশিয়ার শাসনক্ষমতা দখল করে। বলশেভিকদের এই সাফল্যের বিভিন্ন কারণ ছিল।

সেনাদের বিদ্রোহ

রুশ বিপ্লবের আগে জারের সেনাদলের একাংশও বিদ্রোহীদের পক্ষে যোগ দিলে জারের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে।

সাধারণ মানুষের ক্ষোভ

জারতন্ত্রের পতনের পর রাশিয়ায় প্রথমে প্রিন্স লুভভ্ ও পরে কেরেনস্কির সরকারের আমলে খাদ্যাভাব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, যুদ্ধজনিত ব্যয়ভার ও অশান্তির ফলে দেশের কৃষক ও শ্রমিকদের ক্ষোভ চরমে ওঠে। বলশেভিক দল এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।

সুযোগ্য নেতৃত্ব

বলশেভিক নেতা লেনিন সুযোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে রাশিয়ার কৃষক, শ্রমিক, সৈনিক, বুদ্ধিজীবী প্রভৃতি সর্বস্তরের মানুষকে এই দলের ছত্রছায়ায় আনতে সক্ষম হন। তিনি কৃষকদের জন্য জমি, শ্রমিকদের জন্য রুটি এবং সৈনিকদের জন্য শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সকলের কাছে বলশেভিক দলকে জনপ্রিয় করে তোলেন।

আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি

ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধে এবং যুদ্ধের পর নিজেদের বিভিন্ন সমস্যায় ব্যস্ত থাকায় তারা রুশ বিপ্লবের সময় জার সরকারকে সাহায্য করার সুযোগ পায় নি।

উপসংহার :- রুশ বিপ্লবের সময় আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপান প্রভৃতি দেশ বিপ্লবের বিরুদ্ধে রুশ জারকে সহায়তার উদ্যোগ নিলেও সেই উদ্যোগ তেমন সক্রিয় ছিল না। ফলে বলশেভিকদের সুবিধা হয়।

৩। লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তর:- ভূমিকা :- বলশেভিক দল রাশিয়ার শাসনক্ষমতা দখল করার পর রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি লেনিন বিশুদ্ধ মার্কসবাদের পথ থেকে সরে এসে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে যে অর্থনৈতিক নীতি ঘোষণা করেন তা ‘নতুন অর্থনৈতিক নীতি’ (New Economic Policy বা NEP) নামে পরিচিত।

কৃষিক্ষেত্রে পদক্ষেপ

সরকার কৃষকদের উদ্‌বৃত্ত ফসল কেড়ে নেবে না। এই ফসলের জন্য সরকারি কর মিটিয়ে দিলে কৃষকরা তা বাজারে বিক্রি করতে পারবে। জমিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকলেও জমির মালিকানা থাকবে কৃষকদের হাতে। কৃষি-ব্যাংক গঠন, কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ প্রভৃতি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শিল্পক্ষেত্রে পদক্ষেপ

সরকার ছোটো ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বাতিল করে ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকার করে নেয়। বৃহৎ ও ভারী শিল্পগুলিতে সরকারি মালিকানা বজায় থাকে। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদান, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি প্রভৃতিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ

বৈদেশিক বাণিজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত মূলধন বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। ক্রেতাদের সমবায় সমিতি গঠনে উৎসাহিত করা হয়।

উপসংহার :- ঐতিহাসিক লিপসন বলেছেন যে, “উৎপাদনের ব্যাপক হ্রাস, কৃষক বিদ্রোহ, নৌবিদ্রোহ লেনিনকে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ‘নতুন অর্থনৈতিক নীতি’ গ্রহণে বাধ্য করে।”

৪। প্যারিসের শাস্তি সম্মেলন (১৯১৯ খ্রি.) সম্পর্কে কী

উত্তর:- ভূমিকা :- জার্মানি ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর আত্মসমর্পণ করার পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে। এরপর শান্তি চুক্তি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে বিশ্বের ৩২টি দেশ ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এক শান্তি সম্মেলনে মিলিত হয়।

চার প্রধান

৩২টি দেশ প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে যোগ দিলেও মূলত চারটি বৃহৎ শক্তির রাষ্ট্রপ্রধান এই সম্মেলনের নীতি-নির্ধারণ ও কার্য পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন, ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ, ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জর্জ ক্লেমাঁশু এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী ভিট্টোরিও অর্লান্ডো ‘প্রধান চারজন’ (Big Four) নামে পরিচিত।

উইলসনের আদর্শবাদ

মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন যুদ্ধ চলাকালীন তাঁর বিখ্যাত চোদ্দো দফা নীতি ঘোষণা করেন। এই নীতির ওপর ভিত্তি করে আমেরিকা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র প্রসারের উদ্দেশ্যে সম্মেলনে প্রয়াস চালায়।

পাঁচটি সন্ধি

প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে মোট পাঁচটি সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। মিত্রশক্তি ও জার্মানির মধ্যে (১৯১৯ খ্রি.) ভার্সাই সন্ধি, মিত্রশক্তি ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে (১৯১১ খ্রি.) সেন্ট জার্মেইন সন্ধি, মিত্রশক্তি ও বুলগেরিয়ার মধ্যে (১৯১৯ খ্রি.) নিউলির সন্ধি, মিত্রশক্তি ও তুরস্কের মধ্যে (১৯২০ খ্রি.) সেভরের সন্ধি এবং মিত্রশক্তি ও হাঙ্গেরির মধ্যে (১৯২০ খ্রি.) ট্রিয়ানন-এর সন্ধি।

উপসংহার :- শান্তি চুক্তি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও বিজয়ী রাষ্ট্রবর্গ পরাজিত রাষ্ট্রগুলিকে কোণঠাসা করে রাখার প্রয়াস চালায়।

৫। ভার্সাই সন্ধিকে ‘জবরদস্তিমূলক সন্ধি’ বলা হয় কেন?

অথবা, ভার্সাই সন্ধির সমালোচনা করো।

উত্তর:- ভূমিকা :- প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পরাজিত হলে তার ওপর মিত্রশক্তি ভার্সাই সন্ধি (১৯১৯ খ্রি.) চাপিয়ে দেয়।

প্রতিহিংসা

ভার্সাই সন্ধির শর্তাদি রচনাকালে মিত্রপক্ষ প্রতিহিংসার মনোভাব নিয়ে কাজ করে এবং যুক্তিহীনভাবে জার্মানির আপত্তিগুলি নাকচ করা হয়। জার্মানির ওপর বিমান আক্রমণের হুমকি দিয়ে জার্মান প্রতিনিধিদের সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য করা হয়।

অনুদারতা

যুদ্ধ সৃষ্টির জন্য একমাত্র জার্মানিই দায়ী ছিল না। অথচ এর জন্য একমাত্র জার্মানিকে দায়ী করে জার্মানির ওপর বিভিন্ন কঠোর শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। তাই জার্মানি প্রথম থেকেই এই অপমানজনক সন্ধি ভাঙতে তৎপর হয়ে ওঠে।

ন্যয়নীতি লঙ্ঘন

ন্যায়নীতি লঙ্ঘন করে জার্মানির ওপর চরম অবিচার করা হয়। মিত্রপক্ষের সামরিক শক্তি হ্রাস না করে শুধু জার্মানির সামরিক শক্তি হ্রাস করা হয়। জার্মানির উপনিবেশগুলি কেড়ে নেওয়া হয়।

বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক শর্ত

জার্মানির অর্থনীতি পঙ্গু করার উদ্দেশ্যে মিত্রশক্তি জার্মানির ওপর ৬৬০ কোটি পাউন্ড ক্ষতিপূরণ চাপায়।

উপসংহার :- এই সব বিভিন্ন কারণে জার্মান ঐতিহাসিকগণ ভার্সাই সন্ধিকে ‘একতরফা’, ‘জবরদস্তিমূলক সন্ধি’, ‘ম্যাকিয়াভেলির সন্ধি’ প্রভৃতি নামে অভিহিত করেছেন।

৬। ভাইমার প্রজাতন্ত্র সম্পর্কে কি জান?

উত্তর:- ভূমিকা :- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ‘সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা ফ্রেডরিখ ইবার্ট-এর নেতৃত্বে অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজধানী বার্লিনে গোলযোগের কারণে নিকটবর্তী ওয়েমার শহরে এই সরকারের কর্মকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এজন্য এটি ‘ভাইমার বা ওয়েমার প্রজাতন্ত্র’ নামে পরিচিত।

কার্যাবলী

জার্মানির শাসনক্ষমতা দখল করে ভাইমার প্রজাতন্ত্র বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করে। যেমন –

(ক) কমিউনিস্টদের দমন

যুদ্ধ-পরবর্তীকালে জার্মানিতে কমিউনিস্টরা যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের ধর্মঘট ও বিদ্রোহ শুরু হয়। প্রজাতান্ত্রিক সরকার এই বিদ্রোহ দমন করে।

(খ) জাতীয় পরিষদ গঠন

প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে ওয়েমার শহরে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসে।

(গ) প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান

প্রজাতান্ত্রিক সরকার সারা দেশের জন্য এক যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান চালু করে। সংবিধান অনুসারে ইবার্ট ভাইমার প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন। দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা চালু হয় ৷

উপসংহার :- অবশ্য এই প্রজাতন্ত্র দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। ঐতিহাসিক টমসন বলেছেন যে, “জার্মানির যুদ্ধ-পরবর্তী প্রতিকূল সামাজিক কাঠামোয় ভাইমার প্রজাতন্ত্রের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা খুবই মুশকিল ছিল।”

Leave a Comment