নবম শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় হতে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর। নবম শ্রেণী (ষষ্ঠ অধ্যায়) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর থেকে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর। Class 9 History Chapter 6 Analytical (MARKS-4) Question Answer in Bengali.
নবম শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় হতে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর)
নবম শ্রেণী (ষষ্ঠ অধ্যায়) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর থেকে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর
শ্রেণী | নবম |
অধ্যায় | ষষ্ঠ অধ্যায় |
Question Type | বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর |
Marks | 4 |
১। রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর:- ভূমিকা :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইতালি, জার্মানি জাপানের মধ্যে ‘রোম- বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি’ নামে এক মৈত্রীজোট গড়ে ওঠে।
ঘনিষ্টতার উদ্যোগ
জার্মান শাসক হিটলারের শক্তিবৃদ্ধিতে আতঙ্কিত হয়ে ইতালির শাসক মুসোলিনি ফ্রান্সের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তোলেন। কিন্তু হিটলার উপলব্ধি করেন যে, জার্মানি ভবিষ্যতে অস্ট্রিয়া দখলের উদ্যোগ নিলে ইতালির সমর্থন তাঁর বিশেষ প্রয়োজন ।
আবিসিনিয়া আক্রমণে সমর্থন
মুসোলিনি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে আবিসিনিয়া আক্রমণ করলে হিটলার তাঁকে সমর্থন করেন। ফলে মুসোলিনি ও হিটলারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়।
রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি
মুসোলিনি ও হিটলারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেলে অক্টোবর, ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ইতালি ও জার্মানির মধ্যে মিত্রতা স্থাপিত হয়। এই মিত্রতা ‘রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি’ নামে পরিচিত।
কমিন্টার্ন-বিরোধী চুক্তি
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে জার্মানি ও জাপানের মধ্যে সাম্যবাদ-বিরোধী অ্যান্টি- কমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
উপসংহার :- ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ নভেম্বর জার্মানি ও জাপানের অ্যান্টি-কমিন্টার্ন জোটে ইতালি যোগ দিলে ‘রোম- বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি’ নামে মৈত্রীজোট গড়ে ওঠে।
২। টীকা লেখো : মিউনিখ চুক্তি।
ভূমিকা :- ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়া দখলের পর চেকোস্লোভাকিয়ার প্রতি হিটলারের কুনজর পড়ে। শিল্পসমৃদ্ধ ও সামরিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ চেকোস্লোভাকিয়া দখলে হিটলার তৎপর হয়ে উঠলে ইউরোপে যুদ্ধ-পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
আগ্রাসন
চেকোস্লোভাকিয়ায় অবস্থিত জার্মান জাতি- অধ্যুষিত সুদেতান অঞ্চলে হিটলারের প্ররোচনায় দাঙ্গা- হাঙ্গামা শুরু হয়। সুদেতান অঞ্চলে বসবাসকারী জার্মানদের স্বার্থ রক্ষার্থে হিটলার চেকোস্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন।
মিউনিখ চুক্তি
যুদ্ধ-প্রস্তুতির মধ্যেই হিটলারের মিত্র ইতালির শাসক মুসোলিনির মধ্যস্থতায় ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর মিউনিখ শহরে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা মিউনিখ চুক্তি নামে পরিচিত।
চুক্তির শর্ত
মিউনিখ চুক্তির দ্বারা স্থির হয় যে, সুদেতান অঞ্চল জার্মানিকে দিয়ে দেওয়া হবে এবং অবশিষ্ট চেকোস্লোভাকিয়ার সার্বভৌমত্ব হিটলার মেনে নেবেন।
উপসংহার :- মিউনিখ চুক্তির দ্বারা চেকোস্লোভাকিয়ার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড দখল করেও হিটলার সন্তুষ্ট ছিলেন না। চুক্তির ৬ মাসের মধ্যেই চুক্তি ভঙ্গ করে ১৯৩৯ খ্রি. ১৫ মার্চ হিটলার অবশিষ্ট চেকোশ্লোভাকিয়া দখল করেন।
৩। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইঙ্গ-ফরাসি তোষণনীতির বর্ণনা দাও।
ভূমিকা :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইতালির ফ্যাসিস্ট শাসক মুসোলিনি এবং জার্মানির নাৎসি শাসক হিটলার উগ্র সাম্রাজ্যবাদী নীতি নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রে আগ্রাসন চালান ৷
তোষণনীতি
মুসোলিনি এবং হিটলার একের পর এক বিভিন্ন রাষ্ট্রে আগ্রাসন চালালেও ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তা প্রতিরোধের কোনো চেষ্টা না করে যে নরম মনোভাব বা নিষ্ক্রিয় নীতি গ্রহণ করে তা তোষণনীতি নামে পরিচিত।
উদ্দেশ্য
এক্ষেত্রে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির উদ্দেশ্য ছিল রুশ সাম্যবাদের বিরুদ্ধে হিটলারের শক্তিকে ব্যবহার করা, বিশ্বে শান্তিরক্ষার প্রয়োজনে জার্মানি ও ইতালিকে ভার্সাই সন্ধির কিছু কিছু অন্যায় দূর করার সুযোগ দেওয়া প্রভৃতি।
আবিসিনিয়া দখল
ইতালি ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার আবিসিনিয়া দখল করলে জাতিসংঘ ইতালিকে ‘আক্রমণকারী’ বলে ঘোষণা করে তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করে। কিন্তু ইংল্যান্ড জাতিসংঘের এই নির্দেশ উপেক্ষা করে ইতালিকে নানাভাবে সাহায্যে করতে থাকে।
স্পেনের বিদ্রোহ
জার্মানির হিটলার ও ইতালির মুসোলিনি স্পেনের গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহী নেতা ফ্রাঙ্কোর সমর্থনে সামরিক সাহায্য পাঠালেও ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
অস্ট্রিয়া দখল
হিটলার ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়া আক্রমণ করলে ইংল্যান্ড হিটলারকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন করে। নিরুপায় ফ্রান্সও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে বিরত থাকে।
উপসংহার :- ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে মিউনিখ চুক্তির দ্বারা ইঙ্গ- ফরাসি শক্তি জার্মানির সঙ্গে চেকোস্লোভাকিয়ার সুদেতান অঞ্চলের সংযুক্তি মেনে নেন। ফলে হিটলারের আগ্ৰাসী মনোভাব বৃদ্ধি পায় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
৪। টীকা লেখো : রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি।
ভূমিকা :- নাৎসি শাসক হিটলার যেমন কমিউনিস্ট-বিরোধী ছিলেন তেমনি কমিউনিস্ট শাসক স্ট্যালিনও তীব্র নাৎসি-বিদ্বেষী ছিলেন। হিটলার ও স্ট্যালিনের মধ্যে বিরোধ থাকা সত্ত্বেও বিশেষ পরিস্থিতিতে উভয়ের মধ্যে মিত্রতা স্থাপিত হয় ৷
জার্মানির উদ্দেশ্য
পোল্যান্ড আক্রমণ করতে গিয়ে একই সঙ্গে পূর্ব সীমান্তে রাশিয়া এবং পশ্চিম সীমান্তে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে বলে হিটলার আপাতত রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের দ্বারা পূর্ব সীমান্তে যুদ্ধের সম্ভাবনা দূর করেন।
রাশিয়ার উদ্দেশ্য
সাম্যবাদ-বিরোধী ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির সঙ্গে জোট গঠনে ব্যর্থ হয়ে রাশিয়া নিজের নিরাপত্তার প্রয়োজনে জার্মানির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনে আগ্রহী হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেনট্রপের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ২৩ আগস্ট রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তির শর্তাবলি
রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির দ্বারা স্থির হয় যে, রাশিয়া ও জার্মানি শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদের মীমাংসা করবে। পরবর্তী ১০ বছর একে অপরকে আক্রমণ করবে না। তৃতীয় কোনো শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হলে কেউ তৃতীয় পক্ষকে সহায়তা করবে না। পোল্যান্ডকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেবে ।
উপসংহার :- রাশিয়ার সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি সত্ত্বেও হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চুক্তি ভঙ্গ করে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন রাশিয়া আক্রমণ করেন।
৫। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ভার্সাই সন্ধি কতটা দায়ী ছিল ?
ভূমিকা :- ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানির নাৎসি শাসক হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি ৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ভার্সাই সন্ধি যথেষ্ট দায়ী ছিল বলে মনে করা হয়।
প্রতিশোধ
মিত্রশক্তি জার্মানির প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণের মানসিকতা নিয়ে তাদের ওপর বলপূর্বক অপমানজনক ভার্সাই সন্ধি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে চাপিয়ে দেয়।
একতরফা চুক্তি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানিকে একতরফাভাবে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে ঘোষণা করা হয়, জার্মান প্রতিনিধিদের মত প্রকাশের কোনো সুযোগ না দিয়ে এবং তাদের ওপর বিমান আক্রমণের হুমকি দিয়ে সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য করা হয়।
শোষণ
ভার্সাই সন্ধির দ্বারা জার্মানির ওপর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপানো হয়, জার্মানির বিভিন্ন খনিজ সম্পদ ও বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল দখল করা হয়। জার্মানির বিভিন্ন ভূখণ্ড কেড়ে নেওয়া হয়।
সামরিক শক্তি হ্রাস
সন্ধির দ্বারা জার্মানির স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী ভেঙে দিয়ে জার্মানির সামরিক শক্তি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বেলজিয়ামের চেয়েও কমিয়ে দেওয়া হয়।
উপসংহার :- জার্মানবাসীর ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে হিটলার ভার্সাই সন্ধির শর্তাদি একে একে ভেঙে ফেলতে থাকেন এবং চেকোস্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড প্রভৃতি দেশের ভূখণ্ড দখলে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই তৎপরতা প্রতিরোধ করতে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি এগিয়ে এলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
৬। পার্ল হারবারের ঘটনাটি কী ?
ভূমিকা :- পার্ল হারবার হল প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপে অবস্থিত একটি বন্দর। এখানে আমেরিকা তার নৌঘাঁটি স্থাপন করেছিল।
সম্পর্কের তিক্ততা
ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সুযোগে এশীয় রাষ্ট্র জাপান মহাসাগরীয় অঞ্চল ও দূরপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে আগ্রাসী নীতি প্রয়োগ করে। আমেরিকা এই আগ্রাসনের বিরোধিতা করলে আমেরিকা ও জাপানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
আমেরিকার উদ্যোগ
জাপানের আগ্রাসী নীতির ফলে আমেরিকা জাপানের সঙ্গে পুরোনো বাণিজ্যিক চুক্তিটি বাতিল করে দেয়। জাপানে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য-সহ বেশ কয়েকটি পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। আমেরিকায় অবস্থিত জাপানি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। ফলে জাপান ক্ষুব্ধ হয়।
যুদ্ধের সম্ভাবনা
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে জাপান খনিজ তেলসমৃদ্ধ দক্ষিণ ইন্দোচিন করে নিলে জাপানের সঙ্গে আমেরিকা সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এরপর চিন ও ইন্দোচিন থেকে জাপানি সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। আমেরিকার এই দাবি জাপান প্রত্যাহার করলে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেয়।
পার্ল হারবারে আক্রমণ
জাপান ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর সকালে বিশাল নৌবহর ও ৩৩৫টি যুদ্ধবিমান নিয়ে ভাইস অ্যাডমিরাল নোগুচি-র নেতৃত্বে আমেরিকার নৌঘাঁটি পার্ল হারবারে বোমাবর্ষণ শুরু করে, মা পার্ল হারবারের ঘটনা নামে পরিচিত।
উপসংহার :- পার্ল হারবারের ঘটনার পরদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষতা নীতি ত্যাগ করে সক্রিয়ভাবে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়। ফলে প্রাচ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
৭। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য নাৎসি নেতা হিটলার কতটা দায়ী ছিলেন?
ভূমিকা :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য কে বা কারা প্রকৃত দায়ী ছিলেন তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মান শাসক হিটলারকে বিভিন্ন কারণে দায়ী করা হয়৷
আদর্শবাদ
হিটলার তাঁর আত্মজীবনী ‘মেইন ক্যাম্ফ’-এ যে উগ্র জাতিতত্ত্ব, সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ তুলে ধরেন তা বাস্তবায়িত করতে গিয়ে তিনি যুদ্ধ ডেকে আনেন।
রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি
প্রকৃতপক্ষে হিটলার বৃহত্তর যুদ্ধের পরিকল্পনা করেই পূর্ব সীমান্তে আপাতত যুদ্ধ না করার উদ্দেশ্যে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
পরিকল্পনা
হিটলার যথাযথ পরিকল্পনা করেই যুদ্ধের পথে অগ্রসর হন বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুক্তি দেন। অস্ট্রিয়া ও চেকোস্লোভাকিয়া দখল, পোল্যান্ড আক্রমণ প্রভৃতি ঘটনা হিটলারের পূর্ব পরিকল্পনারই প্রমাণ দেয় বলে তারা মনে করেন।
উপসংহার :- ঐতিহাসিক মরিস বমন্ট মনে করেন যে, হিটলার পরিকল্পনা করেই যুদ্ধে পথে অগ্রসর হন। ঐতিহাসিক ই এল উডওয়ার্ড বলেছেন যে, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হল হিটলারের যুদ্ধ।”
৮। ‘ডি-ডে’ বা ‘মুক্তি দিবস’ সম্পর্কে কী জান?
ভূমিকা :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পূর্ব রণাঙ্গনে রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যে তীব্র লড়াই চলার সময় সেখানে জার্মান আক্রমণের চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে রাশিয়া মিত্রশক্তির কাছে পশ্চিমদিকে জার্মানির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার দাবি জানায়।
দ্বিতীয় রণাঙ্গন
মার্কিন সেনাপতি আইজেনহাওয়ার-এর নেতৃত্বে উত্তর ফ্রান্সের নর্মান্ডি উপকূলে জার্মানির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলা হয় ৷
বিমান হানা
১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন ফরাসি উপকূলের জার্মান ঘাঁটিগুলিতে মিত্রপক্ষের অসংখ্য বোমারু বিমান থেকে প্রবল বোমাবর্ষণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়।
অপারেশন ওভারলর্ড
৬ জুন ভোরের মৃদু আলোতে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে চার হাজারেরও বেশি জাহাজে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার মিত্রসেনা নর্মান্ডি উপকূলে অবতরণ করে। তারা ৬০ মাইলব্যাপী দীর্ঘ এলাকায় ৫টি স্থানে অবতরণ করে। তাদের নিরাপত্তার জন্য ১১ হাজার বিমান প্রস্তুত থাকে। মিত্রবাহিনীর এই অভিযান ‘অপারেশন ওভারলর্ড’ নামে পরিচিত।
মুক্তি দিবস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৬ জুন দিনটি ‘ডি-ডে’ (‘D-Day’ or ‘Deliverance Day’) বা ‘মুক্তি দিবস’ নামে পরিচিত।
উপসংহার :- মুক্তি দিবসের আক্রমণের দ্বারা মিত্রবাহিনী জার্মানির কবল থেকে ফ্রান্সের বিভিন্ন ভূখণ্ড মুক্ত করতে থাকে। তারা ২৫ আগস্ট রাজধানী প্যারিস দখল করে।