নবম শ্রেণীর ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় হতে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর। নবম শ্রেণী (সপ্তম অধ্যায়) জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ থেকে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর। Class 9 History Chapter 7 Analytical (MARKS-4) Question Answer in Bengali.
নবম শ্রেণীর ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় হতে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর (জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ)
নবম শ্রেণী (সপ্তম অধ্যায়) জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ থেকে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর
শ্রেণী | নবম |
অধ্যায় | সপ্তম অধ্যায় |
Question Type | বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর |
Marks | 1 |
নবম শ্রেণীর ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় থেকে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর
১। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের কী ভূমিকা ছিল?
উত্তর:- ভূমিকা :- যুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা থেকে পৃথিবী ও মানব- জাতিকে রক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ‘জাতিসংঘ’ বা ‘লিগ অব নেশন্স’ নামে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
চোদ্দো দফা শর্ত
১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসে এক ভাষণে রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন তাঁর বিখ্যাত ‘চোদ্দো দফা শর্ত’ ঘোষণা করেন। এর ১৪ নম্বর শর্তে তিনি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন।
খসড়া সংবিধান রচনা
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে উড্রো উইলসনের সভাপতিত্বে গঠিত ১৯ জন সদস্যের একটি কমিটি জাতিসংঘের খসড়া সংবিধান রচনা করে।
প্রতিষ্ঠা
শেষপর্যন্ত ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি জাতিসংঘের প্রথম অধিবেশন বসে।
উপসংহার :- জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্ৰহণ করেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন। সেদিক থেকে তাঁকে ‘জাতিসংঘের জনক’ বলে অভিহিত করা যেতেই পারে।
২। ‘লিগ কভেনান্ট’ বা ‘লিগের গঠনতন্ত্র’ বা ‘লিগের চুক্তিপত্র’ সম্পর্কে কী জান ?
উত্তর:- ভূমিকা :- মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে ‘জাতিসংঘ’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পেশ করেন। তাঁর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এই শান্তি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি উইলসনের সভাপতিত্বে ১৯ জন সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়।
সংবিধান রচনা
উইলসনের গঠিত এই কমিটি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘের খসড়া সংবিধান রচনা করে। এই খসড়া সংবিধান লিগ কভেনান্ট বা লিগের গঠনতন্ত্র বা লিগের চুক্তিপত্র নামে পরিচিত।
সংবিধান গৃহীত
লিগের চুক্তিপত্রে জাপান সকল জাতির সমানাধিকার রক্ষার দাবি জানায়। কিন্তু ইংল্যান্ড এই দাবির বিরুদ্ধে আপত্তি জানালে তা সম্ভব হয় নি। কিছু সংশোধনের পর প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে লিগের চুক্তিপত্রটি ২৮ এপ্রিল, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে গৃহীত হয়।
অন্তর্ভুক্তি
লিগের চুক্তিপত্রটি ভাসাই সন্ধির প্রথম খণ্ডে স্থান পায়। এই চুক্তিপত্রের ওপর ভিত্তি করেই ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হয়৷
উপসংহার :- লিগের চুক্তিপত্রে ২৬টি অনুচ্ছেদ বা ধারা ছিল। এই ধারাগুলিতে জাতিসংঘের উদ্দেশ্য, নিয়মাবলি প্রভৃতি বিশদে আলোচনা করা হয়েছে।
৩। জাতিসংঘের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল?
উত্তর:- ভূমিকা :- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়ানক ধ্বংসলীলার পর আতঙ্কিত রাষ্ট্রনেতাবর্গ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা করেন। ২৬টি অনুচ্ছেদ-বিশিষ্ট জাতিসংঘের চুক্তিপত্রে জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও গঠনতন্ত্র সম্পর্কে বিশদে উল্লেখ রয়েছে।
শান্তি প্রতিষ্ঠা
জাতিসংঘ পারস্পরিক আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান এবং যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করবে।
ন্যায় ও সততা
জাতিসংঘ ন্যায় ও সততার ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করবে।
স্বীকৃতি
জাতিসংঘ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন, চুক্তি বা সন্ধির শর্তাদি, বিধিনিষেধ প্রভৃতিকে স্বীকৃতি দেবে এবং সেগুলি যথার্থভাবে মেনে চলতে হবে।
বলপ্রয়োগ
কোনো রাষ্ট্র অন্যায়ভাবে অন্য কোনো রাষ্ট্রকে আক্রমণ করলে জাতিপুঞ্জ আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা, এমনকি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে।
উপসংহার :- বিশ্বের অবহেলিত জাতি, নারী, শিশু, শ্রমিক প্রমুখের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি, স্বার্থরক্ষা, সেবাদান প্রভৃতির মাধ্যমে তাদের কল্যাণ সাধন করা ছিল জাতিসংঘের অন্যতম লক্ষ্য।
৪। জাতিসংঘের সংগঠন সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বশান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ কয়েকটি সংস্থা দপ্তরের মাধ্যমে তার কাজকর্ম পরিচালনা করত।
সাধারণ সভা
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দপ্তর হল সদস্য-রাষ্ট্রগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সাধারণ সভা। প্রতিটি সদস্য-রাষ্ট্র সাধারণ সভায় তিনজন করে প্রতিনিধি পাঠাতে পারত, তবে তাদের ভোট ছিল মাত্র একটি। বছরে কমপক্ষে একবার সাধারণ সভার অধিবেশন বসত।
লিগ পরিষদ
প্রথমে ৫ জন স্থায়ী ও ৪ জন অস্থায়ী সদস্য নিয়ে জাতিসংঘের লিগ পরিষদ গঠিত হয়। জাতিসংঘের কার্য পরিচালনার প্রধান দায়িত্ব ছিল লিগ পরিষদের হাতে।
সচিবালয়
সাধারণ সভা ও লিগ পরিষদের সিদ্ধান্তগুলি বাস্তবায়িত করার জন্য জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বা মহাসচিবের অধীনে একটি সচিবালয় ছিল।
আন্তর্জাতিক বিচারালয়
নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে জাতিসংঘের একটি আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে আন্তর্জাতিক বিরোধের মীমাংসা, আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির ব্যাখ্যা প্রভৃতি কাজ হত।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা
জাতিসংঘে একটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা (ILO) গঠিত হয়। এর কাজ ছিল বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের শোষণ বন্ধ করা এবং তাদের অবস্থার উন্নয়ন করা।
উপসংহার :- জাতিসংঘের সাধারণ সভায় আন্তর্জাতিক বিরোধ, বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, সংখ্যালঘু সমস্যা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হত।
৫। জাতিসংঘের সাধারণ সভার পরিচয় দাও।
উত্তর:- জাতিসংঘ পরিচালনার উদ্দেশ্যে কয়েকটি দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই দপ্তরগুলি জাতিসংঘের উদ্দেশ্যগুলি বাস্তবায়িত চেষ্টা চালাত। জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তরগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল সাধারণ সভা।
গঠন
‘লিগ কভেনান্ট’ বা লিগের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরকারী দেশগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ সভা গঠিত হয়। এই সভায় প্রতিটি সদস্য-রাষ্ট্র তিনজন করে প্রতিনিধি পাঠাতে পারত। কিন্তু তাদের ভোট ছিল একটি।
অধিবেশন
প্রতি বছর অন্তত একবার সাধারণ সভার অধিবেশন বসতে। জরুরি পরিস্থিতিতে সাধারণ সভার বিশেষ জরুরি অধিবেশন বসত। সভার আলোচনার বিষয়বস্তু স্থির করতেন জাতিসংঘের সাধারণ সম্পাদক।
ক্ষমতা
জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তরগুলির মধ্যে সাধারণ সভা ছিল সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। সাধারণ সভা বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক বিরোধ প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা ও বিষয়গুলি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করত। জাতিসংঘের বার্ষিক বাজেট পাশ করত।
উপসংহার :- সাধারণ সভার মোট সদস্যের ২/৩ অংশের সমর্থনে নতুন রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য হতে পারত।
৬। জাতিসংঘের ব্যর্থতার প্রধান কারণগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর:- ভূমিকা :- জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন কাজে সাফল্য পেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জাতিসংঘ তার উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। অবশেষে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাতিসংঘের অস্তিত্ব কার্যত লুপ্ত হয়।
আন্তরিকতার অভাব
প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতিসংঘকে শক্তিশালী করে তোলার আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। বিশ্বের সামান্য সংখ্যক রাষ্ট্রই জাতিসংঘের সদস্য হয়।
বৃহৎ শক্তিগুলির ভূমিকা
প্রথমে আমেরিকা সদস্যপদ গ্রহণ করে নি এবং জার্মানি ও রাশিয়াকে সদস্যপদ দেওয়া হয় নি। আবার পরবর্তীকালে জার্মানি, জাপান ও ইতালি সদস্যপদ ত্যাগ করে। এই সবের ফলে জাতিসংঘ দুর্বল হয়ে পড়ে।
অনৈক্য
জাতিসংঘের সদস্য-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অনৈক্য ও পারস্পরিক বিরোধের ফলে জাতিসংঘ বহু ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করতে ব্যর্থ হয়।
সাংগঠনিক দুর্বলতা
অধিকাংশ বিষয়ে জাতিসংঘের লিগ পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সকল সদস্য-রাষ্ট্রের সম্মতির প্রয়োজন হত। কিন্তু সদস্য-রাষ্ট্রগুলি নিজেদের স্বার্থে পরিষদের বেশিরভাগ সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাত।
সামরিক শক্তির অভাব
নিজের কোনো সেনাদল না থাকায় জাতিসংঘ তার সদস্য-রাষ্ট্রগুলির শক্তির ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হত।
উপসংহার :- সর্বোপরি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ইতালি, জার্মানি, জাপান-সহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রে একনায়ক শাসকের উত্থান ঘটে। তাদের আগ্রাসন প্রতিহত করতে জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়।
৭। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠার পটভূমি উল্লেখ করো।
উত্তর:- ভূমিকা:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৩৯ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং জাতিসংঘের অস্তিত্ব কার্যত লুপ্ত হয়। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা রাষ্ট্রসংঘ বা ইউনাইটেড নেশন্স অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।
লন্ডন ঘোষণাপত্র
ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশ ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে মিলিত হয়ে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয়। এটি ‘লন্ডন ঘোষণাপত্র’ নামে পরিচিত।
আটলান্টিক সনদ
রুজভেল্ট ও চার্চিল ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট গোপন আলোচনার পর যুদ্ধ-পরবর্তীকালে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন। এটি ‘আটলান্টিক সনদ’ নামে পরিচিত।
ওয়াশিংটন সম্মেলন
আমেরিকা, সোভিয়েত রাশিয়া, চিন-সহ মোট ২৬টি দেশ ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ওয়াশিংটন সম্মেলনে মিলিত হয়ে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ঘোষণাপত্র’ বা ‘রাষ্ট্রসংঘের ঘোষণাপত্র’-এ স্বাক্ষর করে।
ইয়াল্টা সম্মেলন
রুজভেল্ট, চার্চিল ও স্ট্যালিনের উদ্যোগে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ইয়াল্টা সম্মেলনে স্থির হয় যে জাতিপুঞ্জের সনদের খসড়া চূড়ান্ত করার উদ্দেশ্যে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে এক সম্মেলন বসবে।
সানফ্রান্সিসকো সম্মেলন
বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধি ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ এপ্রিল-২৬ জুন সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনে মিলিত হয়ে জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য, নীতি প্রভৃতি সবিস্তারে আলোচনা করেন।
উপসংহার :- সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনের শেষে ৫১টি দেশ জাতিপুঞ্জের সনদে স্বাক্ষর করে। সনদটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২৪ অক্টোবর থেকে কার্যকর করা হয়। এই দিনটিতে জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয়।
৮। ‘আটলান্টিক সনদ’ সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- ভূমিকা:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয় সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ‘আটলান্টিক সনদ’। এটি ছিল মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল কর্তৃক এক ঘোষণাপত্র বিশেষ ৷
গোপন বৈঠক
মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট আটলান্টিক মহাসাগরে ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’ নামে এক যুদ্ধজাহাজে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন। এটি ‘আটলান্টিক সনদ’ নামে পরিচিত।
প্রসার
‘আটলান্টিক সনদ’ ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই সোভিয়েত রাশিয়া, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, যুগোশ্লাভিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া প্রভৃতি ১৫টি রাষ্ট্র এই সনদে স্বাক্ষর করে।
বিষয়বস্তু
‘আটলান্টিক সনদ’-এর মূল বিষয়বস্তু ছিল যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ।
উপসংহার :- ‘আটলান্টিক সনদ’-এ ৮টি নীতির উল্লেখ করা হয়। এগুলির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নির্দিষ্ট পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি স্থাপন করা।
৯। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর:- বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য ও নীতিগুলি নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করে। জাতিপুঞ্জের সনদের ১নং ধারায় এর চারটি উদ্দেশ্যের উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বশান্তি
বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে বিশ্ব থেকে যুদ্ধের সম্ভাবনা দূর করতে হবে।
আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার
প্রতিটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সমানাধিকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি সমস্যাগুলির সমাধান করতে হবে।
সমন্বয়সাধন
উক্ত উদ্দেশ্যগুলি বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশ যেসব উদ্যোগ নেবে জাতিপুঞ্জের পক্ষ থেকে সেই উদ্যোগের সমন্বয়সাধন করা হবে।
উপসংহার :- জাতিপুঞ্জের সনদের মুখবন্ধ এবং প্রথম ও দ্বিতীয় ধারায় উদ্দেশ্যগুলি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
১০। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রধান সাফল্যগুলি কী ছিল?
উত্তর:- ভূমিকা:- জাতিসংঘ ব্যর্থ হলেও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে সাফল্য পেয়েছে।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা
জাতিপুঞ্জের ‘মানবিক অধিকার সংক্রান্ত বিশ্ব ঘোষণাপত্র’ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ঔপনিবেশিক মুক্তি
জাতিপুঞ্জের ভিতরে ও বাইরে ক্রমাগত উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনের ফলে বিশ্বের বহু জাতি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের অধীনে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিপুঞ্জের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি-বিষয়ক সংস্থা প্রভৃতি বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
বিরোধের মীমাংসা
জাতিপুঞ্জের সক্রিয় উদ্যোগের ফলে ইরান থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার, ইন্দোনেশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা, প্যালেস্টাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠা, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধের মীমাংসা, মিশরে শান্তি প্রতিষ্ঠা, ভারত-পাকিস্তান বিরোধের মীমাংসা প্রভৃতি আন্তর্জাতিক বিরোধের মীমাংসা সম্ভব হয়েছে।
উপসংহার :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত তার বিভিন্ন কাজে সাফল্য সত্ত্বেও ব্যর্থতার পরিমানও মোটেই কম নয়।
১১। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতাগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর:- ভূমিকা:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ। বিভিন্ন সাফল্য সত্ত্বেও তার ব্যর্থতার পরিমাণও মোটেই কম নয়।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা
শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভিয়েতনামে মার্কিন বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে, ভিয়েতনামে চিনের আক্রমণ প্রতিহত করতে, ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধ করতে, আমেরিকার নেতৃত্বে ইরাক আক্রমণ প্রতিহত করতে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ব্যর্থ হয়েছে। প্যালেস্টাইন, সুয়েজ, কাশ্মীর, মধ্যপ্রাচ্য প্রভৃতি সমস্যার সমাধানেও জাতিপুঞ্জের অবদান বিশেষ নেই।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা
জাতিপুঞ্জ মানবাধিকার রক্ষাতেও খুব একটা সাফল্য পায় নি। দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ রোডেশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ওপর সেখানকার সংখ্যালঘু সরকারের বর্বর অত্যাচার জাতিপুঞ্জ রোধ করতে পারে নি।
পরাধীনতা
জাতিপুঞ্জ উদ্যোগ নিলেও এখনও বিশ্বের বহু জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী রয়েছে।
উপসংহার:- জাতিপুঞ্জ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, বিমান ছিনতাই, পণবন্দি, ঠান্ডা লড়াই প্রভৃতি নির্মূল করতেও ব্যর্থ হয়েছে।