ভারতের জাতীয় জীবনে রাজপুত জাতির অবদান

উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় ‘সমাজের ঘটনা প্রবাহ’ থেকে ভারতের জাতীয় জীবনে রাজপুত জাতির অবদানের কথা উল্লেখ করা হল।

ভারতের জাতীয় জীবনে রাজপুত জাতির অবদান

প্রশ্ন:- ভারতের জাতীয় জীবনে রাজপুত জাতির অবদানের কথা উল্লেখ কর।

উত্তর:- ভূমিকা:- ভারতের ইতিহাসে ৭১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল ‘রাজপুত যুগ’ নামে পরিচিত। এই সময়ের মধ্যে উত্তর ভারতে বিভিন্ন রাজপুত রাজবংশের উত্থান ঘটে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গুজরাটের চালুক্য বংশ, আজমির ও দিল্লির চৌহান বংশ, কনৌজের গাহড়বাল বংশ, বুন্দেলখন্ডের চান্দেল্ল বংশ, মালবের পারমার বংশ প্রভৃতি।

দিল্লি ও আজমীরের চৌহান বংশ

চতুর্থ বিগ্রহরাজের আমলে আজমীরের চৌহান বংশ একটি শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হয়। তিনি দিল্লি, পূর্ব পাঞ্জাব, দক্ষিশ রাজপুতানা প্রভৃতি অঞ্চল জয় করে চৌহান আধিপত্যের প্রসার ঘটান। এই বংশের শেষ শাসক তৃতীয় পৃথ্বীরাজ কালিঞ্জর, আনহিলবার, রোহিলখণ্ড প্রভৃতি অঞ্চল জয় করেন। তিনি ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে গজনীর মহম্মদ ঘুরির আক্রমণ প্রতিহত করলেও ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে তাঁর কাছে পরাজিত হন।

গুজরাটের চালুক্য বংশ

ভারতে রাজপুত রাজবংশগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল গুজরাটের চালুক্য বংশ। এদের রাজধানী ছিল আনহিলবার। চালুক্যরা আজমীরের চৌহানদের সঙ্গে দীর্ঘ সংগ্রামে লিপ্ত থাকার ফলে তাদের শক্তি হ্রাস পায়। এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন জয়সিংহ।

কনৌজের গাহড়বাল বংশ

গাহড়বাল বংশীয় চন্দ্রদেব প্রতিহার বংশের পতন ঘটিয়ে কনৌজে গাহড়বাল বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা গোবিন্দচন্দ্র উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজ অধিকারে আনেন। গাহড়বাল বংশের শেষ রাজা জয়চন্দ্র গজনীর মহম্মদ ঘুরীর হাতে পরাজিত ও নিহত হন।

বুন্দেলখণ্ডের চান্দেল্ল বংশ

যশোবর্মন খ্রিস্টীয় নবম শতকে বুন্দেলখণ্ডের চান্দেল্ল বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দিল্লির চৌহান বংশীয় পৃথ্বীরাজকে পরাজিত করেন। এই বংশের উল্লেখযোগ্য শক্তিশালী রাজা ছিলেন পরমাদদেব এবং শেষ রাজা ছিলেন পেরামল। চান্দেল্ল বংশীয় রাজাদের আমলে নির্মিত খাজুরাহোর স্থাপত্য-সুষমামন্ডিত মন্দিরগুলি শিল্পরসিকদের মনে আজও বিস্ময় সৃষ্টি করে।

চেদী বংশ

খ্রিস্টীয় দশম শতকে গোদাবরী ও নর্মদা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে রাজা লক্ষ্মণ চেদী রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। অবশ্য পরবর্তীকালে পারমার নামে অপর একটি রাজপুত বংশ চেদীদের রাজ্য অধিকার করে নেয়।

মালবের পারমার বংশ

খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে প্রতিহার ও চেদী রাজ্যের ওপর পারমার বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন ডোজ। তিনি ছিলেন সুদক্ষ যোদ্ধা, সুশাসক ও সংস্কৃতির অনুরাগী।

কলচুরি ও সোলাঙ্কি বংশ

উপরিউক্ত রাজপুত শক্তিগুলি ছাড়াও মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের কলচুরি বংশ, রাজস্থানের কাথিয়াবাড়ের সোলাঙ্কি বংশ ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার:- রাজপুত যুগে বিভিন্ন রাজপুত রাজ্যও নিজেদের মধ্যে ও অন্য রাজ্যগুলির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে শক্তিক্ষয় করে। এই সুযোগে বহিরাগত তুর্কিরা উত্তর ভারত আক্রমণ করে এবং একে একে রাজপুত শক্তিগুলির অস্তিত্ব লুপ্ত হতে থাকে।

Leave a Comment