২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

পেরিক্লিসের গণতন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা

এথেন্সের শাসক পেরিক্লিসের গণতন্ত্র প্রসঙ্গে সম্পর্কে এথেন্সের রাষ্ট্রনায়ক পেরিক্লিস, গণতন্ত্রের একান্ত পৃষ্ঠপোষক পেরিক্লিস, গণতন্ত্রের বিকাশ, এথেনীয় সাম্রাজ্যবাদ ও এথেনীয় গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য, পৃথিবীর প্রাচীনতম গণতন্ত্র ও খাঁটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে অসমর্থ সম্পর্কে জানব।

গ্রিক নগররাষ্ট্র এথেন্সের রাষ্ট্রনায়ক পেরিক্লিসের গণতন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা

বিষয়ইতিহাস
বিশ্ববিদ্যালয়বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়
আর্টসবি.এ. জেনারেল
সেমিস্টারদ্বিতীয়
প্রশ্নপেরিক্লিসের গণতন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা করো।
প্রশ্নমান১০
পেরিক্লিসের গণতন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা করো।

এথেন্স তথা গ্রিস-এর রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে যে সব মহান ব্যক্তির আর্বিভাব ঘটেছিল পেরিক্লিস ছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। খ্রিস্ট পূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে পেরিক্লিস এথেন্সের রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে নিজেকে উপস্থাপিত করেছিলেন। অভিজাত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ও সংকীর্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন এথেন্সের সেনাপতি কাইমন বিদেশের যুদ্ধ ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করে নিজ প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে ব্যস্ত সেই সুযোগে উদার গণতন্ত্রের একান্ত পৃষ্ঠপোষক একজন-জননেতার আবির্ভাবের পটভূমিকা তৈরী হচ্ছিল। আর সেই মহান জননেতা হলেন পেরিক্লিস। তিনি ছিলেন মিতবাক, সমাজ জীবনে লাজুক প্রকৃতির, সরকারী কর্তব্য পালনে একনিষ্ঠ এবং নিরঙ্কুশ ক্ষমতা লাভের পরও প্রশংসনীয়ভাবে সরল ও বাস্তববাদী। বাগ্মী হিসেবে তিনি ছিলেন খুবই আর্কষণীয়। সুষ্ঠু চিন্তাধারা ও স্পষ্ট প্রকাশভঙ্গীর সাহায্যে পেরিক্লিস বাগ্মিতাকে একটি শিল্পে পরিণত করেন।

পেলোপনেসীয় যুদ্ধের পূর্বে এথেন্সে কতখানি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল তা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এথেনীয় গণতন্ত্রের পূর্ণতার অনেকটা সম্ভব হয়েছিল সোলনের সময় থেকে পেরিক্লিসের সময়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায় যে পেরিক্লিস যে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন তা আদৌ গণতন্ত্র ছিল কিনা? 

গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হল রাজনৈতিক গণতন্ত্রের সঙ্গে সমাজ সংগঠনেও গণতন্ত্রের বিকাশ। কিন্তু এইরূপ চিত্রের কোনো নজির ছিল না। এখানে রাজনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কিন্তু সমাজ সংগঠনে গণতন্ত্র ছিল সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। পেরিক্লিসের গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল এথেন্সে তৃতীয় শ্রেণীর মানুষদের জন্য আর্কনপদ উন্মুক্ত করে দেওয়া। কিন্তু যারা থিটিস বলে পরিচিত চতুর্থ শ্রেণীর নাগরিক ছিলেন তাদেরকে সমগ্র অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। এদিক থেকে বিচার করলে এই ব্যবস্থা ছিল চরম অগণতান্ত্রিক।

লটারীর মাধ্যমে সরকারী কর্মচারীদের নিযুক্ত করার পদ্ধতি পেরিক্লিস আরও সম্প্রসারিত করেন এবং প্রত্যেক কর্মচারীকে বেতন দেওয়ার রীতি প্রবর্তন করেন। বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে লটারী ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হলে দরিদ্রদের পক্ষেও ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিযুক্ত হওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্বাচন ছাড়া এথেনীয় গণতন্ত্র ঠিক আধুনিক গণতন্ত্রের দৃষ্টিতে প্রকৃত গণতন্ত্র ছিল না। এথেনীয় গণতন্ত্রের অন্যতম দিক ছিল বীরপূজা। পেরিক্লিস ছিলেন সেই বীর ব্যক্তিত্ব। এক্ষেত্রে স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্রই প্রকাশ পেয়েছে। এজন্য অনেকে এথেনীয় গণতন্ত্রকে ‘অবগুণ্ঠিত স্বৈরাচার’ বলেছেন।

পেরিক্লিস খ্রিস্ট পূর্ব ৪৫১ অব্দে আইন করে এথেনীয় নাগরিকদের সংখ্যা কমিয়ে আনার নীতি গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর এই ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা যায় না। কারণ যে অনুগত নাগরিকদের জন্য এথেন্স শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে সেই নাগরিকদের অস্বীকার করে তিনি ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রকে অসম্মান করেছেন। পেরিক্লিসের অন্য এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চূড়ান্ত রূপ হল রাষ্ট্রীয় কিছু ব্যয়ভার ধনীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া। নৌবাহিনীতে জাহাজ ও সমস্ত উপকরণ, ধর্মীয় ব্যাপারে ব্যয়ভার প্রদান, উৎসব অনুষ্ঠানে এই ব্যয় নগর শ্রেষ্ঠিদের উপর অর্পণ করে পেরিক্লিস রাষ্ট্রের ব্যয়ভার লাখবের চেষ্টা করেন। এতে নাগরিক জনতাও কিছুটা তুষ্ট হয়।

পেরিক্লিস গ্রীক নগর রাষ্ট্র ও গ্রীক স্বাধীনতার ধারণাকে বিনষ্ট করেছিলেন। এথেনীয় সাম্রাজ্যবাদ ও এথেনীয় গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য খোঁজা খুব মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রতিবেশী গ্রীক রাষ্ট্রগুলি এথেন্সকে প্রজাপীড়ক রাষ্ট্র বলেই মনে করত। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিছক একটি স্বৈরতান্ত্রিক আবরণে মোড়া ছিল। এথেন্সের নাগরিকরা যে সুযোগ সুবিধা ভোগ করত এথেনীয় সাম্রাজ্যের অন্যান্য প্রজারা ছিল তা থেকে বঞ্চিত। এথেন্স নিজ দেশে উদার ও প্রজাদরদী হলেও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি ছিল রক্ষণশীল ও সংকীর্ণ মনোভাবাপন্ন। তাই এক্ষেত্রে পেরিক্লিসের গণতন্ত্রকে পূর্ণ গণতন্ত্র বলা যায় না।

এথেনীয় গণতন্ত্রের নির্ভরশীলতা ছিল দাসশ্রমের উপর। অথচ দাসরা গণতান্ত্রিক সুযোগ সুবিধা থেকে ছিল সম্পূর্ণ বঞ্চিত। আবার নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয় নি। অথচ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সর্বসাধারণ ভোটাধিকার একটি বড় বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে ভোটদান থেকে বিরত রোম গণতন্ত্রকে অবমাননা করা হয়েছিল। এথেন্সে যে বিচার ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল তা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। অজ্ঞ উকিল ও বিচারকদের হাতে বিচার ব্যবস্থা অর্পিত ছিল। বিচারকরা তদানীন্তন আইন কানুন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। কাজেই বিচার ব্যবস্থায় ত্রুটি থেকেই যেতা এছাড়া এথেনীয় বিচারালয়গুলি বিচারের নামে সেখানকার নাগরিকদের উপর অত্যাচার চালাত।

পরিশেষে বলা যায় যে পেলোপনেসীয় যুদ্ধের পূর্বে যে গণতন্ত্র এথেন্সে ছিল তাকে সম্পূর্ণ গণতন্ত্র বলা যায় না। একথা সত্য যে পেরিক্লিস খাঁটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে অসমর্থ হন। তবু স্বীকার করতেই হয় যে এথেনীয় গণতন্ত্র ছিল পৃথিবীর প্রাচীনতম গণতন্ত্র। খ্রিস্ট পূর্ব পঞ্চম শতকে প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রকে যদি আমরা আজকের আধুনিক গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যের আলোকে বিচার করতে যাই তবে তা ঠিক হবে না। কারণ তখন রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশ ছিল প্রাথমিক স্তরে। রাজনীতি ভালো না মন্দ তার বিচার শক্তি ছিল ক্ষীণ, প্রতিনিধিত্বের ধারণা সম্পর্কে এথেনীয়রা ছিল অজ্ঞ। তবুও স্বীকার করতে দ্বিধা নেই সীমিত পরিসরের মাধ্যমে যে গণতন্ত্র এথেন্সে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা ছিল প্রশংসনীয়।

(FAQ) পেরিক্লিসের গণতন্ত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. পেরিক্লিস কে ছিলেন?

প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্র এথেন্সের মহান শাসক ছিলেন পেরিক্লিস।

২. পৃথিবীর প্রাচীনতম গণতন্ত্র কোনটি?

এথেনীয় গণতন্ত্র।

৩. এথেনীয় গণতন্ত্রের অন্যতম দিক কী ছিল?

বীরপূজা।

৪. খ্রিস্ট পূর্ব ৪৫১ অব্দে আইন করে এথেনীয় নাগরিকদের সংখ্যা কমিয়ে আনার নীতি গ্রহণ করেন কে?

পেরিক্লিস।

Leave a Comment