স্পার্টা নগর রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা

গ্রিসের স্পার্টা নগর রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা প্রসঙ্গে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নগর রাষ্ট্র স্পার্টা, স্পার্টায় রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, স্পার্টার কাউন্সিল বা গেরুসিয়া, স্পার্টার জনপ্রতিনিধিমূলক রাজনৈতিক সংস্থা ছিল অ্যাপেলা ও স্পার্টা নগররাষ্ট্রের ইফর বা পরিদর্শক শ্রেণী সম্পর্কে জানব।

প্রাচীন গ্রিসের স্পার্টা নগররাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা

বিষয়ইতিহাস
বিশ্ববিদ্যালয়বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়
আর্টসবি.এ. জেনারেল
সেমিস্টারদ্বিতীয়
প্রশ্নস্পার্টা নগর রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
প্রশ্নমান১০
স্পার্টা নগর রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

প্রাচীন গ্রিস-এর নগর রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল স্পার্টা। এই রাজ্যটি ছিল শৃঙ্খলাপরায়ণ ও যুদ্ধমোদী। এছাড়া স্পার্টা শিল্প-বাণিজ্যের প্রতি উদাসীন ছিল এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি ও উপনিবেশ বিস্তারের ক্ষেত্রেও তেমন আগ্রহ দেখায় নি। স্পার্টা নগর রাষ্ট্রের সংবিধান ছিল প্রাচীনপন্থী। তারা হোমার বর্ণিত সামাজিক জীবনধারাকে মেনে চলতে আগ্রহী ছিল। তাই তারা আদি যুগ থেকে রাষ্ট্র ব্যবস্থার কোনো প্রকার পরিবর্তন ঘটায় নি। স্পার্টাতে রাজতন্ত্রের শাসন বিরাজমান ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে অভিজাততন্ত্রও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতা লাভ করেছিল।

স্পার্টা নগররাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা প্রসঙ্গে বলা যায় যে, স্পার্টায় রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু ছিল। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় চারটি অংশ ছিল। যথা দুইজন রাজা, কাউন্সিল বা গেরুসিয়া, সভা-সমিতি বা অ্যাপেলা এবং ইফর বা মন্ত্রি। স্পার্টা নগররাষ্ট্রে দ্বৈত রাজতন্ত্র চালু ছিল। বংশানুক্রমিক ভাবে দুজন রাজা স্পার্টার সিংহাসনে বসতেন। স্পার্টার রাজারা ধর্মীয়, সামরিক ও বিচার বিষয়ক ক্ষমতা ভোগ করতেন। রাজা একাধারে ছিলেন প্রধান পুরোহিত ও প্রধান সেনাপতি। যুদ্ধ ঘোষণা করার অধিকারও রাজার ছিল এবং যুদ্ধের জন্য রাজা সমগ্র জাতির নিকট দায়ী থাকতেন। তবে রাজার ক্ষমতা ছিল সীমিত। তিনি অর্থনৈতিক ও বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে সীমিত অধিকার ভোগ করতেন।

স্পার্টার নগর রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার জন্য একটি কাউন্সিল বা গেরুসিয়া রাজাকে সাহায্য করত। ২৮ জন বয়স্ক ব্যক্তি এবং ২ জন রাজাকে নিয়ে এই গেরুসিয়া বা কাউন্সিল গঠিত হত। স্বাধীন পুরুষ নাগরিকেরা এদের নির্বাচন করতেন। প্রত্যেক মাসে এই কাউন্সিলের অধিবেশন বসত। গেরুসিয়ার সদস্যরা একাধারে আইন প্রণয়ন এবং বিচার সংক্রান্ত কাজে রাজাকে সাহায্য করতেন।

স্পার্টার জনপ্রতিনিধিমূলক রাজনৈতিক সংস্থা ছিল অ্যাপেলা। ৩০ বছরের বেশী বয়সের নাগরিকরা এর সদস্য হতে পারতেন। অ্যাপেলার সদস্যদের নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির মালিক হতে হত। এছাড়া তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হত। প্রতি মাসে একবার অ্যাপেলার অধিবেশন বসত। গেরুসিয়ার সদস্য, ইফর ও অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেটদের অ্যাপেলার সদস্যরা নির্বাচন করত। এছাড়াও অ্যাপেলা স্পার্টার নগররাষ্ট্রে বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার অধিকারী ছিল। যেমন – দুই রাজার সিংহাসনে আরোহণ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে রাজার উত্তরাধিকার নির্বাচন, যুদ্ধ বা শান্তি প্রতিষ্ঠা, বিদেশ নীতি নির্ধারণ করা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারী নিয়োগ করা প্রভৃতি। এদিক থেকে বিচার করলে বলা যায় স্পার্টার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উন্নত ছিল এবং অ্যাপেলা ছিল স্পার্টার সর্বভৌম শক্তির অধিকারী। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় রাজা, গেরুসিয়া, ইফর ও ম্যাজিস্ট্রেটরা অ্যাপেলার সিদ্ধান্ত বাতিল করার ক্ষেত্রে বিশেষ অধিকার পেয়েছিল।

স্পার্টা নগররাষ্ট্রের শাসনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল ইফর বা পরিদর্শক শ্রেণী। অনেকে এদের মন্ত্রি বলেছেন। স্পার্টায় পাঁচজন ইফর থাকতেন। স্পার্টার যে কোনো স্বাধীন নাগরিক ইফর সদস্য নির্বাচিত হতেন। এক বছরের জন্য এদের নির্বাচিত করা হত। স্পার্টার সমস্ত নাগরিক এদের নির্বাচন করত। এদের হাতে প্রচুর ক্ষমতা ছিল। এরা রাজার কার্যকলাপ পর্যালোচনা করত। যুদ্ধের সময় দুজন ইফর সবসময় রাজার কাছে থাকত। সামরিক অভিযান প্রেরণ করা বা সেনাবাহীনি বাছাই করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ এরা করত। এছাড়া বিদেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, প্রশাসনের মতো শৃঙ্খলা বজায় রাখা, নাগরিকদের জন্য নির্দিষ্ট বিধান দেওয়ার কাজ প্রভৃতির দায়িত্বও এদের উপর ছিল। বিচারের ক্ষেত্রে ইফররা দেওয়ানী মামলায় বিচারকের কাজ করত। এইভাবে দেখা যায় স্পার্টার নগররাষ্ট্রে রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ও গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলির সমন্বয় ঘটেছিল।

(FAQ) স্পার্টা নগর রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. স্পার্টায় কী ধরণের শাসন ব্যবস্থা চালু ছিল?

রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা।

২. স্পার্টার কাউন্সিলের নাম কী?

গেরুসিয়া।

৩. স্পার্টার জনপ্রতিনিধিমূলক রাজনৈতিক সংস্থার নাম কী?

অ্যাপেলা।

৪. স্পার্টা নগররাষ্ট্রের পরিদর্শক শ্রেণী কী নামে পরিচিত ছিল?

ইফর।

Leave a Comment