সিলিলি অভিযানের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা

প্রাচীন গ্রিক নগররাষ্ট্র এথেন্সের সিলিলি অভিযানের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা প্রসঙ্গে এথেন্সের পক্ষে একটি অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধ সিসিলি অভিযান, সিলিলি অভিযানে এথেন্সের পরাজয়, সিলিলি অভিযানের ফলাফল বা গুরুত্ব হিসেবে এথেন্সের ভাবমূর্তি নষ্ট, সিলিলি অভিযানের ফলাফল বা গুরুত্ব হিসেবে এথেন্সের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি সম্পর্কে জানব।

এথেন্সের সিলিলি অভিযানের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা

বিষয়ইতিহাস
বিশ্ববিদ্যালয়বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়
আর্টসবি.এ. জেনারেল
সেমিস্টারদ্বিতীয়
প্রশ্নসিলিলি অভিযানের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা করো।
প্রশ্নমান১০
সিলিলি অভিযানের ফলাফল বা গুরুত্ব আলোচনা করো।

৪১৩ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর নিকিয়াসের নেতৃত্বে সিলিলি অভিযানে এথেন্সের সেনাবাহিনী চূড়ান্ত যুদ্ধে পারজিত হয়। এর ফলাফল বা গুরুত্ব ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। যেমন – 

প্রথমত, বহু ঐতিহাসিক সিসিলি অভিযানকে এথেন্সের পক্ষে একটি অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধ বলেছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক বিউরি এই মতের বিরোধিতা করে বলেন, এই পরিকল্পনাটি আদৌ অবাস্তব ছিল না এবং এটি এথেন্সের বাণিজ্যিক ও সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের ত্রুটির জন্য এথেন্সের পরাজয় ঘটে।

দ্বিতীয়ত, এথেন্সের সিসিলি অভিযানকে ইউরোপ-এর আধুনিক ইতিহাস-এ নেপোলিয়ন বোনাপার্ট-এর স্পেন অভিযান তথা উপদ্বীপের যুদ্ধ-এর সঙ্গে তুলনা করা যায়। এই যুদ্ধে নেপোলিয়নের বিশাল সেনাবাহিনী স্পেনের গেরিলা যুদ্ধের সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল এবং সারা ইউরোপে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তেমনি এথেন্সের বিশাল বাহিনী সাইরাকিউজের হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরাজিত হয় এবং সারা গ্রিস-এ এথেন্সের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

তৃতীয়ত, ঐতিহাসিক Holm-এর মতে পেলোপনেসীয় যুদ্ধ চলাকালে কিছু ক্ষুদ্র নগর রাষ্ট্রকে জয় করে এথেন্সের মনে যে বিশাল এথেনীয় সাম্রাজ্য গড়ে তোলার অলীক স্বপ্ন তৈরী হয়েছিল তা সিসিলি অভিযানে পরাজয়ের ফলে বিনষ্ট হয়েছিল। Holm-এর মতে “The dreams of worldwide sway in which the Athenians had indulged for a time, were gone for ever.”

চতুর্থত, তাৎক্ষণিক ফলাফল হিসাবে বলা যায়, এই যুদ্ধে পরাজিত এথেনীয় সৈন্যদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হয় এবং যুদ্ধবন্দীরা অবর্ণনীয় অত্যাচারের সম্মুখীন হয়। সমস্ত সেনাপতিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সিসিলি অভিযানের জন্য অর্থ, সৈন্য, যুদ্ধ জাহাজ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। খুব সামান্য অংশই এথেন্সে ফিরে আসতে পেরেছিল। এই প্রসঙ্গে Cambridge Ancient History গ্রন্থে বলা হয়েছে, “Their destruction was total in the fullest sense of the word, Ships, army everything was lost. Of the many that went forth few returned home.” 

পঞ্চমত, স্পার্টার উপর এই যুদ্ধের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর ফলে স্পার্টার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। তেমনি পরবর্তী সময়ে পেলোপনেসীয় যুদ্ধের সময়কালে নিরপেক্ষ নগররাষ্ট্রগুলি স্পার্টার পক্ষ গ্রহণ করতে থাকে, যা ভবিষ্যতে স্পার্টার সামরিক সাফল্যের কারণ হয়েছিল।

ষষ্ঠত, সিসিলির নগররাষ্ট্রগুলি স্বভাবতই এই যুদ্ধে জয় লাভ করে ব্যাপক আনন্দিত হয়েছিল। এর ফলে তারা যেমন নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রাখতে পেরেছিল তেমনি ইতালীয় নগররাষ্ট্রগুলির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার গুরুত্বও স্পষ্ট হয়েছিল। আর সাইরাকিউজ সিসিলিতে নিজের প্রাধান্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল।

সপ্তমত, এই অভিযানের সর্বাধিক প্রভাব পড়েছিল এথেন্সের উপর। এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে এথেন্সের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়। বহু জমিতে কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে যায়। কেননা ক্রীতদাস শত্রুপক্ষে চলে গিয়েছিল। তাছাড়া যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে পাঁচশত ব্যক্তির পরিষদের অযোগ্যতা প্রমাণিত হয়। এর পরিবর্তে মাত্র দশ জন ব্যক্তির একটি পরিষদ যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব পায়। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল এই যে, সিসিলি অভিযানে পরাজয় এথেন্সের সামরিক মর্যাদা হ্রাসের পাশাপাশি আর্থিক সংকটের সামনে দেশকে এনে দেয়। এর ফলে পেলোপনেসীয় যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এথেন্সের দুর্বলতা আরো বৃদ্ধি পায় যার চূড়ান্ত ফলাফল হল স্পার্টার হাতে এথেন্সের পরাজয়।

সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল এই যে, এথেন্সের পরাজয় লক্ষ্য করে গ্রিস ও ইতালির ছোট ছোট নগররাষ্ট্রগুলি এই সময়ে বিদ্রোহের প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। পারসিকরা পুনরায় গ্রিসের রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করে। ৪১২ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে কিয়স, কাইম, মিটিলিন প্রভৃতি নগররাষ্ট্রগুলি বিদ্রোহ শুরু করে। ডেলোস লীগের বহু দেশ এথেন্সের বিরোধিতায় এগিয়ে আসে। এর ফল পরবর্তীকালে এথেন্সের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক হয়েছিল।

(FAQ) সিলিলি অভিযানের ফলাফল বা গুরুত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. এথেন্সের সিলিলি অভিযানের সময়কাল কত?

৪১৩ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর।

২. কার নেতৃত্বে এথেন্স সিসিলি অভিযান করে?

নিকিয়াসের নেতৃত্বে।

৩. সিসিলি কোথায় অবস্থিত?

ইতালিতে।

Leave a Comment