২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ👇

👉Chat on WhatsApp

সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা কেন বলা হয়? হরপ্পা সভ্যতার বিশেষত্ব লেখ

উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ‘আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতাসমূহ’ থেকে সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা কেন বলা হয়? হরপ্পা সভ্যতার বিশেষত্ব লেখ

সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা কেন বলা হয়? হরপ্পা সভ্যতার বিশেষত্ব লেখ

প্রশ্ন:- সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা কেন বলা হয়? হরপ্পা সভ্যতার বিশেষত্ব লেখ।

ভূমিকা :- বিশ্বের সুপ্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে অন্যতম হল ভারতের সিন্ধু সভ্যতা। প্রায় ৫ হাজার বছরের প্রাচীন এই সভ্যতা সুমেরীয়, মেসোপটেমীয়, আসিরীয় প্রভৃতি সভ্যতার সমসাময়িক এবং উৎকর্ষতার বিচারেও বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতাগুলির থেকে কোনো অংশে কম নয়।

সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা বলার কারণ

সিন্ধু সভ্যতাকে ‘হরপ্পা সভ্যতা’ নামেও অভিহিত করা হয়। এর কারণগুলি হল –

(১) প্রথম আবিষ্কার

সিন্ধু সভ্যতায় দীর্ঘকাল ধরে খননকার্য চালিয়ে এই সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম হরপ্পায় খননকার্য চালিয়ে এই সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করা হয় বলে হরপ্পায় বিশেষ গুরুত্ব আছে।

(২) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র

বালুচিস্তান থেকে গুজরাটের সুবিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে সিন্ধু সভ্যতার ব্যাপ্তি। হরপ্পা, মহেন-জো-দারো, রোপার, লোথাল, কালিবঙ্গান, সুতকাজেনদোর, কোটদিজি, আলমগিরপুর-সহ অসংখ্য কেন্দ্রে এই সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু এই সব কেন্দ্রগুলির মধ্যে হরপ্পাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

(৩) সর্বাধিক বিস্তৃতি

হরপ্পা নগরীতে যে ধরনের সংস্কৃতি, কালানুক্রমিক ভৌগোলিক অগ্রগতি প্রভৃতির চিহ্ন প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে সেই ধরনের চিহ্নই পরবর্তীকালে এই সভ্যতার অন্যান্য কেন্দ্রগুলিতেও পাওয়া গেছে।

হরপ্পা সভ্যতার বিশেষত্ব

হরপ্পা সভ্যতা কত প্রাচীন, অর্থাৎ কবে এই সভ্যতার সূচনা ও অবলুপ্তি ঘটেছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে এই সভ্যতার কিছু বিশেষত্ব আছে। যেমন –

(১) রক্ষণশীলতা

হরপ্পা সভ্যতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে খননকার্যের ফলে মহেন-জো-দারোতে সাতটি ও হরপ্পায় আটটি স্তর পাওয়া গেছে। শতসহস্র বছর ধরে এই স্তরভিত্তিক জীবনযাত্রায় রক্ষণশীল মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। অধ্যাপক এ. এল. ব্যাসাম বলেছেন, “রক্ষণশীলতা বা ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা এই সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।”

(২) কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা

হরপ্পা সভ্যতার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড জুড়ে একই ধরনের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, পরিমাপ পদ্ধতি ইত্যাদি দেখে পন্ডিতদের অনুমান, এই অঞ্চলে এক শক্তিশালী কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।

(৩) জনগোষ্ঠী

পন্ডিতদের ধারণায় হরপ্পা সভ্যতার জনগোষ্ঠী ছিল মিশ্র প্রকৃতির। সিন্ধু উপত্যকায় প্রাপ্ত মানুষের কঙ্কাল ও করোটি পরীক্ষা করে প্রোটো-অস্ট্রালয়েড, মেডিটারেনিয়ান, মোঙ্গোলয়েড ও আল্লো-দিনারিক জনগোষ্ঠীর নমুনা পাওয়া গেছে।

(৪) উন্নত নগর পরিকল্পনা

উন্নত নগর পরিকল্পনা ছিল হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নগরের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে উন্নত নগর শৈলীর ছাপ স্পষ্ট। নগরের রাজপথগুলির দুদিকে ঢাকনা দেওয়া নর্দমা অর্থাৎ ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থা ছিল। নগরগুলিতে শস্যাগার ও স্নানাগারের অস্তিত্ব ছিল।

(৫) আধুনিকতা

হরপ্পা সভ্যতা বহু প্রাচীন হলেও এই সভ্যতায় বহু আধুনিক বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্ব ছিল। রাস্তায় গ্যাসের আলাে; আধুনিক যুগের মতাে মেয়েদের লিপস্টিক, নেলপলিশ, ভ্যানিটি ব্যাগের ব্যবহার; নাগরিকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রভৃতি বিষয়গুলি এই যুগের মানুষের আধুনিকতার পরিচয় দেয়।

উপসংহার :- হরপ্পা সভ্যতা প্রাচীন ভারত তথা বিশ্ব ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়। মৌলিকত্বে, অভিনবত্বে ও উৎকর্ষে এই সভ্যতা বিশ্বের যে কোনো প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে তুলনীয়।

Leave a Comment