উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস, তৃতীয় অধ্যায়, ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি: নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য হতে ছোটো প্রশ্ন উত্তর (SAQ) Short Question Answer গুলি নিম্নে দেওয়া হল।
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস, তৃতীয় অধ্যায়, ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি: নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য হতে ছোটো প্রশ্ন উত্তর (SAQ)
১. সর্বপ্রথম কোন্ ইউরোপীয় নাবিক কবে জলপথে ভারতে আসেন?
উত্তর:- পোর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসেন। তিনি ভারতের পশ্চিম উপকূলে কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছোন।
২. এশিয়ার কোন্ দুটি দেশে ইউরোপীয়দের সর্বাধিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এখানে কোন শক্তির সর্বাধিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর:- এশিয়া মহাদেশের ভারত ও চিনে ইউরোপীয়দের সর্বাধিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এখানে সর্বাধিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটেন।
৩. মোগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের সময় ভারতে গড়ে ওঠা কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তির নাম লেখো।
উত্তর – মোগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের সময় ভারতে গড়ে ওঠা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক শক্তি ছিল বাংলা, হায়দ্রাবাদ, অযোধ্যা, মহীশূর, মারাঠা প্রভৃতি।
৪. মুর্শিদকুলি খাঁ কে ছিলেন?
উত্তর:- মুর্শিদকুলি খাঁ ছিলেন মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের বিশ্বস্ত অনুচর। তিনি ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার দেওয়ান এবং ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ও উড়িষ্যার সুবাদার বা নবাব নিযুক্ত হন।
৫. পোর্তুগিজরা ভারতের কোথায় বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে?
উত্তর:- পোর্তুগিজরা ভারতের কালিকট, কোচিন, গোয়া, দমন, দিউ, সলসেট, বেসিন, বোম্বাই, হুগলি প্রভৃতি স্থানে তাদের বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে।
৬. ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের কোথায় বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে?
উত্তর:- ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের সুরাট, আগ্রা, আহম্মদনগর, ব্রোচ, মাদ্রাজ, কলকাতা প্রভৃতি স্থানে তাদের বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে।
৭. ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কোথায় প্রথম ইংরেজ বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপিত হয়?
উত্তর:- ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে সুরাটে প্রথম ইংরেজ বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপিত হয়।
৮. স্যার টমাস রো কবে, কী উদ্দেশ্যে এবং ভারতের কোন সম্রাটের দরবারে হাজির হন?
উত্তর – ব্রিটিশ-রাজ প্রথম জেমসের দূত স্যার টমাস রো ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের দরবারে হাজির হন। তার উদ্দেশ্য ছিল জাহাঙ্গিরের কাছ থেকে কিছু বাণিজ্যিক সুযোগসুবিধা লাভ করা।
৯. ‘দস্তক’ কী?
উত্তর:- মোগল সম্রাট ফারুখশিয়ার ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অনুকূলে এক ‘ফরমান’ জারি করেন। এই ফরমান অনুসারে কোম্পানি বার্ষিক ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলায় বিনাশুল্কে বাণিজ্য ও অন্যান্য কিছু অধিকার পায়। এটি ফারুখশিয়ারের ফরমান বা ‘দস্তক’ নামে পরিচিত।
১০. সিরাজ-উদ্দৌলা কবে কলকাতা আক্রমণ ও ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দখল করেন?
উত্তর:- সিরাজ-উদদৌলা ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা আক্রমণ করে ২০ জুন ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দখল করেন।
১১. ‘অন্ধকূপ হত্যা’ কী?
উত্তর – হলওয়েল নামে জনৈক ইংরেজ কর্মচারী উল্লেখ করেছেন যে, সিরাজ-উদ্দদৌলা কর্তৃক কলকাতা আক্রমণের (১৭৫৬ খ্রি.) পরে তাঁর নির্দেশে কলকাতায় বন্দি ১৪৬ জন ইংরেজ সৈন্যকে ১৮ ফুট লম্বা ও ১৪ ফুট ১০ ইঞ্চি চওড়া একটি ছোটো ঘরে আটক রাখা হয়। এর ফলে ১২৩ জন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। এই ঘটনা ‘অন্ধকূপ হত্যা’ নামে পরিচিত।
১২. কলকাতা দখল করে সিরাজ-উদদৌলা কলকাতার কী নামকরণ করেন এবং তিনি কাকে সেখানকার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন?
উত্তর – কলকাতা দখল করে সিরাজ-উদ্দৌলা এর নতুন নামকরণ করেন ‘আলিনগর’ এবং তিনি সেখানকার শাসনকর্তা হিসেবে মানিকচাঁদকে নিযুক্ত করেন।
১৩. কবে, কাদের মধ্যে আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়? অথবা, আলিনগরের সন্ধি কত খ্রিস্টাব্দে কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর – ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলার নবাব সিরাজ-উদদৌলা ও কলকাতার ইংরেজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
১৪. আলিনগরের সন্ধির দ্বারা ইংরেজরা কী কী অধিকার লাভ করে?
উত্তর – আলিনগরের সন্ধির দ্বারা ইংরেজরা বিনাশুল্কে বাণিজ্য, কলকাতায় দুর্গ নির্মাণ ও নিজ নামাঙ্কিত মুদ্রা প্রচলনের অধিকার লাভ করে।
১৫. কবে, কাদের মধ্যে পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল?
উত্তর – ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন বাংলার নবাব সিরাজ-উদ্দৌলা এবং কলকাতার ইংরেজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল।
১৬. পলাশির যুদ্ধে উভয় পক্ষের প্রধান সেনাপতি কারা ছিলেন?
উত্তর – ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পলাশির যুদ্ধে সিরাজ-উদদৌলার বাহিনীর মিরজাফর এবং ইংরেজ বাহিনীর লর্ড ক্লাইভ প্রধান সেনাপতি ছিলেন।
১৭. ‘পলাশির লুণ্ঠন’ বলতে কী বোঝ? অথবা, ‘পলাশির লুণ্ঠন’ কী?
উত্তর – পলাশির যুদ্ধে জয়লাভের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা থেকে অর্থ ও সম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার করেছিল। ইংরেজরা সোনা, রুপো বা অন্য কোনো পণ্যসামগ্রীর বিনিময়ে এই সম্পদের নির্গমন ঘটায়নি। তাই এই ঘটনাকে অনেকে লুন্ঠন বলে উল্লেখ। করেছেন। ব্রুকস অ্যাডামস আর্থিক নির্গমনের এই ঘটনাকে ‘পলাশির লুণ্ঠন’ বা ‘Plassey Plunder’ বলে অভিহিত করেছেন।
১৮. কবে, কাদের মধ্যে এলাহাবাদের প্রথম সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর – ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং অয্যোধার নবাব সুজা-উদদৌলার মধ্যে এলাহাবাদের প্রথম সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
১৯. কবে, কাদের মধ্যে এলাহাবাদের দ্বিতীয় সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর – ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং দিল্লির মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের মধ্যে এলাহাবাদের দ্বিতীয় সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
২০. কে, কবে ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হন?
উত্তর – লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হন।
২১. ওয়ারেন হেস্টিংসের কাউন্সিলের প্রথম চারজন সদস্য কারা ছিলেন?
উত্তর – ওয়ারেন হেস্টিংসের কাউন্সিলের প্রথম চারজন সদস্য ছিলেন ক্লেভারিং, মনসন, বারওয়েল এবং ফিলিপ ফ্রান্সিস।
২২. পিটের ভারত শাসন আইন বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিটের উদ্যোগে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অ্যাক্ট’ নামে একটি আইন পাস হয়। এটি ‘পিটের ভারত শাসন আইন’ নামে পরিচিত।
২৩. পিটের ভারত শাসন আইনের দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর – পিটের ভারত শাসন আইনের দ্বারা (i) ব্রিটিশ অর্থসচিব, একজন রাষ্ট্রসচিব ও মনোনীত প্রিভি কাউন্সিলের ৪ জন সদস্যকে নিয়ে ‘বোর্ড অব কন্ট্রোল’ গঠিত হয়। (ii) বোর্ড অব কন্ট্রোলের যাবতীয় নির্দেশ ভারতে কোম্পানির কাছে পাঠানোর দায়িত্ব প্রদানের উদ্দেশ্যে কোম্পানির ৩ জন ডিরেক্টরকে নিয়ে ‘সিক্রেট কমিটি’ গঠিত হয়।
২৪. পিটের ভারত শাসন আইনের দুটি ত্রুটি উল্লেখ করো।
উত্তর – পিটের ভারত শাসন আইনের দুটি ত্রুটি হল – (i) কোম্পানির শাসন পরিচালনার জন্য পূর্বেকার পরিচালক সভার অস্তিত্ব থাকলেও নতুন এই আইনের দ্বারা ‘বোর্ড অব কন্ট্রোল’ প্রতিষ্ঠিত হয়। (ii) বোর্ড অব কন্ট্রোলের নির্দেশগুলি ‘সিক্রেট কমিটি’র মাধ্যমে ভারতে আসতে প্রচুর সময় লাগত। ফলে গভর্নর-জেনারেল অধিকাংশ সময় নিজে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতেন।
২৫. পিটের ভারত শাসন আইনের দুটি গুরুত্ব উল্লেখ করো।
উত্তর – পিটের ভারত শাসন আইনের দুটি গুরুত্ব হল - (i) রেগুলেটিং আইনের ত্রুটিগুলিকে পিটের ভারত শাসন আইনে দূর করার চেষ্টা করা হয়। (ii) পিটের আইনের দ্বারা গভর্নর-জেনারেলের ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
২৬. কোন্ আইনের দ্বারা কলকাতা সুপ্রিমকোর্ট স্থাপিত হয়?
উত্তর – ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট অনুসারে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট স্থাপিত হয়।
২৭. ভারতের সুপ্রিমকোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি কে ছিলেন?
উত্তর – ভারতের সুপ্রিমকোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন এলিজা ইম্পে।
২৮. ব্রিটিশ ভারতে চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনগুলি কী?
উত্তর – ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যের সনদ নবীকরণের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতি ২০ বছর অন্তর মোট ৪টি আইন পাস করে। এগুলি চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন নামে পরিচিত।
২৯. ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট-এর দুটি ধারা উল্লেখ করো।
উত্তর – ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট-এর দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা হল – (i) ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের আধিকার আরও ২০ বছর বাড়ানো হয়। (ii) বোর্ড অব কন্ট্রোলের সদস্য সংখ্যা ৬ থেকে কমিয়ে ৫ জন করা হয়।
৩০. কোন চার্টার আইনে ভারত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার বন্ধ হয়ে যায়? অথবা, কোন চার্টার আইনে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অবসান ঘটে?
উত্তর – ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার আইন দ্বারা ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার বন্ধ হয়ে যায়।
৩১. ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট-এর দুটি ধারা উল্লেখ করো।
উত্তর – ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট-এর দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা হল – (i) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আরও ২০ বছরের জন্য ভারতে শাসন পরিচালনার অধিকার পায়। (ii) ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার লোপ করা হয় এবং যে-কোনো ইংরেজ বণিক ভারতে ব্যাবসা করার অধিকার পান।
৩২. ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট-এর দুটি ধারা উল্লেখ করো।
উত্তর – ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট-এর দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা হল – (i) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আরও ২০ বছরের জন্য ভারতে শাসন পরিচালনার অধিকার পায়। (ii) বাংলার গভর্নর-জেনারেল সেই সময় থেকে ‘ভারতের গভর্নর-জেনারেল’ বলে বিবেচিত হন।
৩৩. সর্বশেষ চার্টার আইন কবে প্রবর্তিত হয়?
উত্তর – সর্বশেষ চার্টার আইন প্রবর্তিত হয় ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে।
৩৪. ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট-এর দুটি ধারা উল্লেখ করো।
উত্তর – ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট-এর দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা হল – (i) অবাধ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে কোম্পানির আমলাদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। (ii) আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে বড়োলাটের অধীনে ১২ জন সদস্যবিশিষ্ট আইন পরিষদ গঠিত হয়।
৩৫. ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দুটি ধারা উল্লেখ করো।
উত্তর – ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা হল – (i) ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে। (ii) ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ সরকার অর্থাৎ ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়ার হাতে প্রদান করা হয়।
৩৬. ঔপনিবেশিক ভারতের নিরিখে ‘আইনের শাসন’ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ব্রিটিশ শাসকরা ঔপনিবেশিক ভারতে ‘আইনের শাসন’-এর ধারণার প্রবর্তন করেন। এর অর্থ ছিল যে, ব্রিটিশ প্রশাসন আইন মেনে শাসন পরিচালনা করবে।
৩৭. কোন আইনের দ্বারা ভারতে ‘ভাইসরয়’ পদের সৃষ্টি হয় এবং ভারতের প্রথম ভাইসরয় কে ছিলেন?
উত্তর – ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দ্বারা ‘ভাইসরয়’ পদের সৃষ্টি হয় এবং ভারতের প্রথম ভাইসরয় ছিলেন লর্ড ক্যানিং।
৩৮. ‘কোড কর্নওয়ালিশ’ কী?
উত্তর – ভারতের বড়োলাট লর্ড কর্নওয়ালিশ এদেশে কোম্পানির কর্মচারীদের দুর্নীতি দমন ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন নীতি ও কর্মপদ্ধতির প্রবর্তন করেন। এই কর্মপদ্ধতি ‘কোড কর্নওয়ালিশ’ নামে পরিচিত।
৩৯. কে, কবে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর – ভারতের বড়োলাট লর্ড ওয়েলেসলি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
৪০. লর্ড ওয়েলেসলি কী উদ্দেশ্যে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর – ভারতে ইংরেজ প্রশাসকদের ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতি, সামাজিক রীতিনীতি প্রভৃতি বিষয়ে যথার্থ প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে লর্ড ওয়েলেসলি কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
৪১. ভারতবর্ষে আমলাতন্ত্রের জনক কে?
উত্তর – ভারতবর্ষে আমলাতন্ত্রের জনক হলেন কর্নওয়ালিশ।
৪২. প্রথম ভারতীয় আইসিএস (ICS)-এর নাম কী?
উত্তর – প্রথম ভারতীয় আইসিএস (ICS)-এর নাম সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৪৩. কবে, কার উদ্যোগে ভারতে নিয়মিত পুলিশ বাহিনী গড়ে ওঠে?
উত্তর – ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বড়োলাট লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংসের উদ্যোগে এদেশে নিয়মিত পুলিশ বাহিনী গড়ে ওঠে।
৪৪. কে, কবে ভারতে স্থায়ী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন?
উত্তর – ক্যাপটেন স্ট্রিঞ্জার লরেন্স ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয়দের নিয়ে এদেশে একটি স্থায়ী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন।
৪৫. ইংরেজরা কোন্ জাতিগুলিকে ‘যুদ্ধোপযোগী জাতি’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেনাবাহিনীর নিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়?
উত্তর – ইংরেজরা তাদের অনুগত উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পাঠান, পাঞ্জাবের জাঠ, উত্তর ভারতের রাজপুত, নেপালের গোরখা প্রভৃতিকে ‘যুদ্ধোপযোগী জাতি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়।
৪৬. ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতে কোন্ কোন্ ভূমি বন্দোবস্ত চালু করেন?
উত্তর – ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতে পাঁচসালা ও একসালা বন্দোবস্ত চালু করেন।
৪৭. রায়তওয়ারি ব্যবস্থার জনক কে?
উত্তর – টমাস মনরো ছিলেন রায়তওয়ারি ব্যবস্থার জনক।
৪৮. রায়তওয়ারি ও মহলওয়ারি বন্দোবস্ত কোথায় চালু হয়?
উত্তর – দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত এবং উত্তরপ্রদেশ, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পাঞ্জাব ও মধ্য ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে মহলওয়ারি বন্দোবস্ত চালু হয়।
৪৯. কোন্ ভূমিব্যবস্থা জমিদারদের জমির ওপর মালিকানা স্বত্ব দিয়েছিল?
উত্তর – চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত জমিদারদের জমির ওপর মালিকানা স্বত্ব দিয়েছিল।
৫০. রেজা খান ও সিতাব রায় কে ছিলেন?
উত্তর – ক্লাইভের আমলে মহম্মদ রেজা খান ছিলেন বাংলার এবং সিতাব রায় ছিলেন বিহার ও উড়িষ্যার ‘নায়েব দেওয়ান’ বা রাজস্ব আদায়কারী।
৫১. কে, কবে এবং কী উদ্দেশ্যে ‘ভ্রাম্যমাণ কমিটি’ গঠন করেন?
উত্তর – লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস তাঁর কাউন্সিলের চারজন সদস্যকে নিয়ে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ভ্রাম্যমাণ কমিটি গঠন করেন। ভ্রাম্যমান কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য ছিল রাজস্ব আদায় করা।
৫২. ইজারাদারি ব্যবস্থা কাকে বলে এবং কে এই ব্যবস্থার প্রচলন করেন?
উত্তর – ব্রিটিশ শাসনকালে রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে ভ্রাম্যমাণ কমিটি জেলায় জেলায় ঘুরে জমির বন্দোবস্ত দিত। যে জমিদার সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে রাজি হত ভ্রাম্যমাণ কমিটি তাকে জমির বন্দোবস্ত দিত, এটি ইজারাদারি ব্যবস্থা নামে পরিচিত। লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ইজারাদারি ব্যবস্থার প্রচলন করেন।
৫৩. কে, কোন্ কমিটি বাতিল করে কবে রাজস্ব বোর্ড গঠন করেন?
উত্তর – লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ভ্রাম্যমাণ কমিটি বাতিল করে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে রাজস্ব বোর্ড গঠন করেন।
৫৪. কে, কবে এবং কী উদ্দেশ্যে আমিনি কমিশন গঠন করেন?
উত্তর – বড়োলাট লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে আমিনি কমিশন গঠন করেন। আমিনি কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ছিল রাজস্ব-সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা।
৫৫. কে, কবে এবং কোথায় দশসালা বন্দোবস্ত চালু করেন?
উত্তর – বড়োলার্ট লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ও বিহারে এবং ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যায় দশসালা বন্দোবস্ত চালু করেন
৫৬. কে, কবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন?
উত্তর – লর্ড কর্নওয়ালিশ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ মার্চ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তন করেন।
৫৭. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর – চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তে বলা হয় যে, (i) জমিদার-তালুকদাররা বংশানুক্রমিকভাবে জমি ভোগদখল করতে পারবেন। (ii) জমিদার ইচ্ছামতো জমি দান, বিক্রি বা বন্ধক রাখতে পারবেন।
৫৮. সূর্যাস্ত আইন কী ছিল?
উত্তর – কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অন্যতম শর্ত ছিল সূর্যাস্ত আইন। এই আইনে বলা হয় বাংলা সালের হিসেবে বছরের শেষ দিনে সূর্যাস্ত হওয়ার আগেই জমিদাররা তাদের বকেয়া রাজস্ব জমা দিতে বাধ্য থাকবে, না হলে তাদের জমিদারি বাজেয়াপ্ত হবে।
৫৯. কর্নওয়ালিশের আগে কারা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান?
উত্তর – কর্নওয়ালিশের আগে আলেকজান্ডার ডাও, হেনরি পান্ডুলো, ড্যাক্রিস, টমাস ল, ফিলিপ ফ্রান্সিস প্রমুখ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান।
৬০. পত্তনিপ্রথা কী?
উত্তর – চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অধীনে জমিদাররা সময়মতো খাজনা আদায়ের জন্য তাদের জমির এক-একটি অংশ থেকে খাজনা আদায়ের জন্য অন্য কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ করতেন। একে পত্তনিপ্রথা বলে।
৬১. কোথায়, কাদের উদ্যোগে কবে রায়তওয়ারি ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়?
উত্তর – ভারতের দক্ষিণ (মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কিছু অঞ্চল বাদে) ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ক্যাপটেন আলেকজান্ডার রিড ও স্যার টমাস মনরো-র উদ্যোগে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে রায়তওয়ারি ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
৬২. রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – রায়তওয়ারি ব্যবস্থার দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল – (i) এই ব্যবস্থায় সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করার ফলে সরকার ও কৃষকদের মাঝে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল না। (ii) এই ব্যবস্থায় জমির সম্পূর্ণ মালিকানা ছিল সরকারের হাতে, কৃষকদের জমির ওপর কোনো অধিকার ছিল না।
৬৩. কবে, কোথায় মহলওয়ারি বন্দোবস্ত চালু হয়?
উত্তর – ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে গাঙ্গেয় উপত্যকা, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মধ্য ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলে মহলওয়ারি ব্যবস্থা চালু হয়।
৬৪. ভাইয়াচারি বন্দোবস্ত বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ব্রিটিশ সরকার ঊনবিংশ শতকে পাঞ্জাবে ভাইয়াচারি ব্যবস্থা চালু করে। এই ব্যবস্থা অনুসারে, রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব গ্রামেরই একজন ব্যক্তির হাতে প্রদান করা হত এবং গ্রামের প্রত্যেক চাষির ওপর পৃথক পৃথক ভাবে রাজস্ব ধার্য করা হত। এই ব্যবস্থায় কয়েক বছর পরপর রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানো হত।
৬৫. এজেন্সি ব্যবস্থা কাকে বলে?
উত্তর – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার বিভিন্ন কর্মচারীকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করে ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তাদের মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করত। এটি এজেন্সি ব্যবস্থা নামে পরিচিত।
৬৬. অষ্টাদশ শতকে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বস্ত্রশিল্প কেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর – অষ্টাদশ শতকে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বস্ত্রশিল্প কেন্দ্র ছিল বাংলা, বারাণসী, লক্ষ্ণৌ, আগ্রা, মুলতান, লাহোর, বুরহানপুর, সুরাট, ব্রোচ, আমেদাবাদ, ব্যাঙ্গালোর, মাদুরাই, বিশাখাপত্তনম প্রভৃতি।
৬৭. ঔপনিবেশিক ভারতের নিরিখে ‘সম্পদের বহির্গমন’ বলতে কী বোঝ? অথবা, ‘সম্পদের বহির্গমন’ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – পলাশির যুদ্ধ জয়ের পর কোম্পানি অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে বাংলা ও ভারতের অন্যান্য প্রান্ত থেকে কোনো প্রতিদান ছাড়াই বিপুল পরিমাণ অর্থ, বিভিন্ন পণ্য ও উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী ইংল্যান্ডে চালান করেছিল। এই ঘটনাটিই ঐতিহাসিক ও সমালোচকদের মতে সম্পদের নির্গমন ও অর্থনৈতিক নিষ্ক্রমণ নামে পরিচিত।
৬৮. অব-শিল্পায়ন কী? অথবা, অবশিল্পায়ন বলতে কী বোঝ? অথবা, অবশিল্পায়ন কাকে বলে?
উত্তর – ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের বাজারগুলি ইংল্যান্ডের শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত পণ্যে ছেয়ে গেলে দেশের চিরাচরিত কুটিরশিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। এই ঘটনা ‘অব-শিল্পায়ন’ নামে পরিচিত।
৬৯. ভারতে কবে রেলপথ প্রথম স্থাপিত হয়?
উত্তর – ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে রেলপথ প্রথম স্থাপিত হয়।
৭০. ভারতে প্রথম কারা রেলপথের প্রতিষ্ঠা করে?
উত্তর – বড়োলাট লর্ড ডালহৌসির (১৮৪৮-৫৬ খ্রি.) আমলে ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেল কোম্পানি’ ভারতে সর্বপ্রথম রেলপথের প্রতিষ্ঠা করে।
৭১. কে, কবে পাঞ্জাব জয় করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন?
উত্তর – ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড ডালহৌসি পাঞ্জাবকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
৭২. ভারতীয় রেলপথের জনক কাকে বলা হয়?
উত্তর – ডালহৌসিকে ভারতীয় রেলপথের জনক বলা হয়।
৭৩. ভারতে কবে, কোথায় প্রথম রেলযোগাযোেগ স্থাপিত হয়?
উত্তর – ভারতে লর্ড ডালহৌসির আমলে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত ২১ মাইল পথে রেলযোগাযোগ স্থাপিত হয়।
৭৪. ভারতের দ্বিতীয় রেলপথ কবে, কোথায় চালু ত হয়?
উত্তর – ভারতের দ্বিতীয় রেলপথ ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত চালু হয়।
৭৫. গ্যারান্টি ব্যবস্থা কাকে বলে?
উত্তর – ভারতে রেলপথ নির্মাণে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলিকে উৎসাহ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার তাদের বিনামূল্যে জমি দান, বার্ষিক বিনিয়োগের ওপর নির্দিষ্ট হারে সুদপ্রদান প্রভৃতি বিষয়ে গ্যারান্টি বা প্রতিশ্রুতি দেয়। এটি গ্যারান্টি ব্যবস্থা নামে পরিচিত।
৭৬. গ্যারান্টি ব্যবস্থার দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর – গ্যারান্টি ব্যবস্থায় বলা হয় যে, (i) সরকার কোম্পানিগুলিকে রেলপথ নির্মাণের জন্য বিনামূল্যে জমি দেবে। (ii) কোম্পানিগুলির বিনিয়োগ করা মূলধনের ওপর বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে সুদ দেবে।
৭৭. অ্যাকওয়ার্থ কমিটি গঠন হওয়ার পিছনে কারণ কী ছিল? অথবা, অ্যাকওয়ার্থ কমিটি কেন গঠিত হয়?
উত্তর – রেলপথের সম্প্রসারণ ও রেল প্রশাসন সংস্কারের উদ্দেশ্যে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে স্যার উইলিয়াম অ্যাকওয়ার্থের সভাপতিত্বে ‘অ্যাকওয়ার্থ কমিটি’ নিযুক্ত করা হয়। এই কমিটি রেলপথ উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রতি পাঁচ বছরে ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ, পৃথক বাজেট, সরকারি নিয়ন্ত্রণে রেলপথ নির্মাণ প্রভৃতি প্রস্তাব দেয়।
৭৮. ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের উদ্যোগে ভারতে কোন্ কোন্ শিল্পের বিকাশ ঘটে?
উত্তর – ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের উদ্যোগে ভারতে রেলপথ, সেচের যন্ত্রপাতি, সুতিবস্ত্র, চা, কফি, নীল, আখ, পাট, কয়লা, লৌহ-ইস্পাত, জাহাজ, ইঞ্জিনিয়ারিং, কাগজ, চামড়া, মদ, সিমেন্ট প্রভৃতি শিল্পের বিকাশ ঘটে।
৭৯. কবে, কোথায় বাউড়িয়া কটন মিল প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর – ১৮১৮ খ্রি. হাওড়ায় বাউড়িয়া কটন মিল প্রতিষ্ঠিত হয়।
৮০. ভারতে কে, কবে এবং কোথায় চা গাছের আবিষ্কার করেন?
উত্তর – ভারতে রবার্ট ব্রুস নামে জনৈক ইংরেজ ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে আসামের জঙ্গলে সর্বপ্রথম চা গাছ আবিষ্কার করেন।
৮১. কে, কবে ও কোথায় ভারতে প্রথম পাটকল প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জনৈক কর্মচারী জর্জ অকল্যান্ড ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার নিকটবর্তী রিষড়ায় ভারতের প্রথম পাটকল প্রতিষ্ঠা করেন।
৮২. কবে, কার উদ্যোগে ভারতে সর্বপ্রথম কাপড়ের কল প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর – ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে পারসি শিল্পপতি কাউয়াসজি সর্বপ্রথম একটি কাপড়ের কল প্রতিষ্ঠিত হয়।
৮৩. কে, কবে জামশেদপুরে কী নামে লৌহ-ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর – পারসি শিল্পপতি জামশেদজি টাটা ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে জামশেদপুরে ‘টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি’ (TISCO) নামে লৌহ-ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
৮৪. কে, কবে এবং কোথায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস’ প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর – বিখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্যের কারখানা ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস’ প্রতিষ্ঠা করেন।
৮৫. হিতবাদ বা উপযোগিতাবাদ কাকে বলে? অথবা, হিতবাদের মূলকথা কী?
উত্তর – হিতবাদী বা উপযোগিতাবাদী দর্শনের মৌলিক আদর্শ হল সর্বাধিক মানুষের সুখের বিধান, দুঃখমোচন এবং মঙ্গলসাধন। উপযোগবাদী মতাদর্শের উদ্ভাবক ছিলেন জেরেমি বেশ্বাম। উপযোগবাদের অন্যান্য প্রবক্তাগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জেমস মিল, জেমস মিলের পুত্র জন স্টুয়ার্ট মিল, জন অস্টিন প্রমুখ। তাঁদের মতে, যখন কোনো কাজের ফল কোনো ব্যক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বা ক্ষতি করে না, তখন সেটাকেই উপযোগিতাবাদ অনুসারী কর্মোদ্যোগ বলা হয়।
৮৬. জেমস মিল কে ছিলেন?
উত্তর – জেমস মিল (১৭৭৩-১৮৩৬ খ্রি.) ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ ঐতিহাসিক, রাষ্ট্রনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং দার্শনিক।
৮৭. জেমস মিল ভারতের ইতিহাসকে কয়টি যুগে বিভক্ত করেছেন ও কী কী?
উত্তর – জেমস মিল ভারতের ইতিহাসকে তিনটি যুগে বিভক্ত করেছেন – হিন্দু যুগ, মুসলিম যুগ ও ব্রিটিশ যুগ।
৮৮. উপযোগবাদের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য প্রবক্তার নাম লেখো।
উত্তর – উপযোগবাদের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য প্রবক্তা হলেন জেরেমি বেল্লাম, জেমস মিল, জন স্টুয়ার্ট মিল, জন অস্টিন প্রমুখ।
৮৯. মেকলে কে ছিলেন?
উত্তর – মেকলে ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক এবং হুইগ দলের নেতা।
৯০. বন্দিবাসের যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল এবং এই যুদ্ধে কোন্ সেনাপতির বাহিনী পরাজিত হয়?
উত্তর – বন্দিবাসের যুদ্ধ ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইংরেজ ও ফরাসি কর্তৃপক্ষের মধ্যে হয়েছিল। বন্দিবাসের যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি স্যার আয়ার কূটের বাহিনীর কাছে ফরাসি সেনাপতি কাউন্ট লালি-র বাহিনী পরাজিত হয়।
৯১. দাক্ষিণাত্য কর্ণাটকের যুদ্ধগুলিতে অংশগ্রহণকারী ইংরেজ ও ফরাসি শক্তির কয়েকজন সেনাপতির নাম লেখো।
উত্তর – দাক্ষিণাত্যে কর্ণাটকের যুদ্ধগুলিতে অংশগ্রহণকারী ইংরেজ সেনাপতি ছিলেন স্যান্ডার্স, আয়ার কূট, ফোর্ড, লরেন্স প্রমুখ এবং উল্লেখযোগ্য ফরাসি সেনাপতি ছিলেন ডুপ্লে, কাউন্ট লালি, বুসী প্রমুখ।
৯২. বিদারার যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল এবং এই যুদ্ধে কারা পরাজিত হয়?
উত্তর – বিদারার যুদ্ধ ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইংরেজ বাহিনী ও ওলন্দাজ বাহিনীর মধ্যে হয়েছিল। এই যুদ্ধে ওলন্দাজরা পরাজিত হয়।
৯৩. বক্সারের যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে সংঘটিত হয় এবং এই যুদ্ধে কারা জয়লাভ করে?
উত্তর – বক্সারের যুদ্ধ ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নবাব মিরকাশিম, অযোধ্যার নবাব সুজান উদদৌলা ও দিল্লির মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের মিলিত বাহিনীর এবং ইংরেজ বাহিনীর মধ্যে হয়েছিল। এই যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনী জয়লাভ করে।
৯৪. কবে, কাদের মধ্যে এলাহাবাদের প্রথম ও দ্বিতীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
উত্তর – এলাহাবাদের প্রথম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ্দৌলার মধ্যে। এলাহাবাদের দ্বিতীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও দিল্লির মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের মধ্যে।
৯৫. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ও বিহারের নায়েব-নাজিম পদে কাদের নিযুক্ত করে?
উত্তর – ইংরেজ কোম্পানি ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নায়েব-নাজিম পদে মহম্মদ রেজা খাঁ এবং বিহারের নায়েব-নাজিম পদে সিতাব রায়-কে নিযুক্ত করে।
৯৬. দেওয়ানি কথার অর্থ কী?
উত্তর – দেওয়ানি কথার অর্থ হল রাজস্ব আদায়ের অধিকার।
৯৭. ‘দ্বৈত শাসন’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলার দেওয়ানি লাভ করার পর নবাবের হাতে আইনত বাংলার শাসনভার থাকলেও প্রকৃত শাসনক্ষমতা কোম্পানির হাতে চলে যায়। ফলে বাংলায় একদিকে নবাবের এবং অন্যদিকে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, যা দ্বৈত শাসন নামে পরিচিত।
৯৮. কোন্ সময় পর্যন্ত বাংলায় দ্বৈত শাসন চলে এবং কবে, কার দ্বারা দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটে?
উত্তর – ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় দ্বৈত শাসন চলে। গভর্নর লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার যাবতীয় শাসনভার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে তুলে নিলে বাংলায় দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটে।
৯৯. মহীশূরের শাসক হায়দার আলি ও টিপু সুলতান এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে কয়টি যুদ্ধ হয় ও কী কী?
উত্তর – মহীশূরের শাসক হায়দার আলি ও টিপু সুলতান এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে ও চারটি যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। যথা- (i) প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৬৭-৬৯ খ্রি.), (ii) দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৮০-৮৪ খ্রি.), (iii) তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৯০-৯২ খ্রি.) ও (iv) চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৯৯ খ্রি.)।
১০০. কোন্ যুদ্ধের পর কবে এবং কাদের মধ্যে ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর – দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের পর ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে মহীশূরের শাসক টিপু সুলতান ও ইংরেজদের মধ্যে ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
১০১. শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় এবং এই সন্ধির দুটি প্রধান শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর – ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে মহীশূরের শাসক টিপু সুলতান এবং ইরেজদের মধ্যে শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল (i) টিপু সুলতান যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা এবং নিজ রাজ্যের অর্ধাংশ ইংরেজ, নিজাম ও মারাঠাদের ছেড়ে দেবেন। (ii) ক্ষতিপূরণের টাকার জামিন হিসেবে টিপু তাঁর দুই পুত্রকে ইংরেজদের হাতে তুলে দেবেন।
১০২. কোন্ যুদ্ধে টিপু সুলতান পরাজিত হন ও নিহত হন?
উত্তর – চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধে টিপু সুলতান পরাজিত ও নিহত হন।
১০৩. সুরাটের প্রথম সন্ধি কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর – সুরাটের প্রথম সন্ধি ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে রঘুনাথ রাও-এর সঙ্গে বোম্বাই-এর ইংরেজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
১০৪. ইংরেজ ও মারাঠাদের মধ্যে কয়টি যুদ্ধ হয়েছিল ও কী কী?
উত্তর – ইংরেজ ও মারাঠাদের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছিল। যথা – (i) প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (১৭৭৫-৮২ খ্রি.), (ii) দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (১৮০৩-০৫ খ্রি.), (iii) তৃতীয় ইঙ্গ- মারাঠা যুদ্ধ (১৮১৭-১৯ খ্রি.)।
১০৫. কবে, কাদের মধ্যে পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর – গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস মারাঠা পেশোয়ার সঙ্গে ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষর করেন।
১০৬. কবে, কাদের মধ্যে সলবাই-এর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় এবং এই সন্ধির দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর – ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ ও মারাঠাদের মধ্যে সলবাই-এর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধির দ্বারা (i) ইংরেজরা দ্বিতীয় মাধব রাওকে পেশোয়া বলে মেনে নেয়। (ii) রঘুনাথ রাওকে বার্ষিক ৩ লক্ষ টাকা বৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
১০৭. কবে এবং কাদের মধ্যে বেসিনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর – ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে মারাঠা পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও ও ইংরেজদের মধ্যে বেসিনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১০৮. বেসিনের সন্ধির দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর – বেসিনের সম্বির দ্বারা (i) পেশোয়া ইংরেজদের সঙ্গে ‘অধীনতামূলক মিত্রতা’ চুক্তিতে আবন্ধ হন। (ii)পেশোয়ার সুরক্ষার জন্য পুনায় ইংরেজ সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হয়।
১০৯. তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে মারাঠাদের পরাজয়ের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল উল্লেখ করো।
উত্তর – তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে মরাঠাদের পরাজয়ের দুটি ফল হল (ক) পেশোয়া বাজীরাও পদচ্যুত হন ও কোম্পানির বৃত্তিভোগীতে পরিণত হন। (খ) পেশোয়ার পদ বিলুপ্ত করে তাঁর রাজ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত হয়।
১১০. ভারতের ইতিহাসে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দকে জলবিভাজিকা বলা হয় কেন?
উত্তর – ব্রিটিশ ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পিয়ারের মতে, ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দ জলবিভাজিকা নামে পরিচিত। কারণ, সেই বছরে তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে জয়ী হয়ে ভারতে ব্রিটিশের আধিপত্য নতুন রূপ পায় অর্থাৎ, ভারতের বহু অঞ্চল ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়।
১১১. মহারাষ্ট্রের ম্যাকিয়াভেলি কাকে বলা হয়?
উত্তর – মহারাষ্ট্রের ম্যাকিয়াভেলি নানা ফড়নবিশকে বলা হয়।
১১২. ইংরেজ ও শিখ শক্তির মধ্যে কয়টি যুদ্ধ হয় ও কী কী?
উত্তর – ইংরেজ ও শিখদের মধ্যে দুটি যুদ্ধ হয় – প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ (১৮৪৫-৪৬ খ্রি.) এবং দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ (১৮৪৮-৪৯ খ্রি.)।
১১৩. লাহোরের সন্ধি কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়? এই সন্ধির দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর – লাহোরের সন্ধি ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের শিখ শক্তি ও ইংরেজদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
লাহোরের সন্ধির দুটি শর্ত হল (i) জলন্ধর-দোয়াব অঞ্চল এবং শতদ্রুর দক্ষিণাঞ্চল ইংরেজদের রাজ্যভুক্ত হয়। (ii) শিখরা ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেড় কোটি টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কাশ্মীর রাজ্যটি ইংরেজদের ছেড়ে দেয়।
১১৪. চিনে ‘নজরানা ব্যবস্থা’ বলতে কী বোঝায়? অথবা, ‘নজরানা’ পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর – কোনো বিদেশি দূত বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে চিন সম্রাটের সাক্ষাৎপ্রার্থী হলে প্রথমে তাকে চিন সম্রাটের প্রতি বশ্যতা স্বীকারের নিদর্শনস্বরূপ উপঢৌকন দিতে হত। এটি নজরানা পদ্ধতি নামে পরিচিত।
১১৫. কাও-তাও’ প্রথা কী?
উত্তর – কোনো বিদেশি দূত বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে চিন সম্রাটের সাক্ষাৎপ্রার্থী হলে প্রথমে তাকে চিন সম্রাটের প্রতি বশ্যতা স্বীকারের নিদর্শনস্বরূপ সম্রাটের সামনে ভূমি পর্যন্ত নত হতে হত। এটি ‘কাও-তাও’ প্রথা নামে পরিচিত।
১১৬. কোন্ ইউরোপীয় দেশ চিনের সঙ্গে প্রথম ব্যাবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল?
উত্তর – পোর্তুগাল চিনের সঙ্গে প্রথম ব্যাবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল।
১১৭. বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য চিনের কোন্ বন্দর দুটি সীমাবদ্ধ ছিল?
উত্তর – চিনের ক্যান্টন ও ম্যাকাও বন্দর দুটি বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল।
১১৮. তাইপিং বিদ্রোহ কবে ও কেন হয়? অথবা, তাইপিং বিদ্রোহ কবে এবং কোথায় হয়েছিল?
উত্তর – চিনে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে (১৮৫০-১৮৬৪ খ্রি.) মাঞ্জু সরকারের অপশাসন ও দুর্নীতির কারণে তাইপিং বিদ্রোহ হয়।
১১৯. ‘তাইপিং’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর:- ‘তাইপিং’ শব্দের অর্থ হল ‘মহান শান্তি’।
১২০. ইউরোপের প্রথম কোন্ নাবিক কবে চিনে পৌঁছোন?
উত্তর:- প্রথম পোর্তুগিজ নাবিক রাফয়েল পেরস্টেলো ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে চিনে পৌঁছোন।
১২১. ঔপনিবেশিক আমলে চিনের কোন্ কোন্ অঞ্চলে খনিজ সম্পদের বিপুল ভাণ্ডার ছিল?
উত্তর:- ঔপনিবেশিক আমলে চিনের মাঞ্চুরিয়া, বেজিং, সিন চিয়াং, সানজি, হেইলংজিয়াছ লিয়াওনিং, জিনিন, হেবেই, শানডং, ইউনান, কোয়াংসি, কোয়াং টুং প্রভৃতি স্থানে বিভিন্ন খনিজ সম্পদের বিপুল ভাণ্ডার ছিল।
১২২. চিনে কোন্ বছর আফিম আমদানি বন্ধ হয়?
উত্তর:- ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে চিনে আফিম আমদানি বন্ধ হয়।
১২৩. অসম চুক্তি কী?
উত্তর:- উনিশ শতক ও বিশ শতকের শুরুতে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া জাপান প্রভৃতি বহিরাগত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি চিনকে বিভিন্ন যুদ্ধে পরাজিত করে যুদ্ধের পর চিনের ওপর বিভিন্ন শোষণমূলক সন্ধি বা চুক্তি চাপিয়ে দেয়। এই চুক্তিগুলি সাধারণভাবে ‘অসম চুক্তি’ বা ‘বৈষম্যমূলক চুক্তি’ নামে পরিচিত।
১২৪. চিনের ওপর আরোপিত দুটি অসম চুক্তির উদাহরণ দাও।
উত্তর:- চিনের ওপর আরোপিত দুটি অসম চুক্তি হল ব্রিটেনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত নানকিং-এর চুক্তি (১৮৪২ খ্রি.) এবং জাপানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত শিমোনোসেকির সন্ধি (১৮৯৫ খ্রি.)।
১২৫. প্রথম অহিফেন যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল?
উত্তর:- প্রথম অহিফেন যুদ্ধ বা প্রথম ইঙ্গ-চিন যুদ্ধ ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটেন ও চিনের মধ্যে হয়েছিল।
১২৬. কাদের মধ্যে নানকিং-এর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
উত্তর:- ব্রিটেন ও চিনের মধ্যে নানকিং-এর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
১২৭. নানকিং-এর সন্ধির দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর:- নানকিং-এর সন্ধির প্রধান দুটি শর্ত ছিল (i) ক্যান্টন, সাংহাই, অ্যাময়, ফুচাও, নিংপো-চিনের এই পাঁচটি বন্দর ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্য ও বসবাসের জন্য খুলে দেওয়া হবে। (ii) উক্ত বন্দরগুলিতে ইউরোপীয়রা নিজ নিজ কনসাল নিয়োগের অধিকার পাবে।
১২৮. চিনের কোন্ বন্দরগুলি ‘চুক্তি বন্দর’ নামে পরিচিত ছিল?
উত্তর:- ক্যান্টন, সাংহাই, অ্যাময়, ফুচাও, নিংপো – চিনের এই পাঁচটি বন্দর ‘চুক্তি বন্দর’ নামে পরিচিত ছিল
১২৯. কে, কবে ও কাদের ওপর ওয়াংসিয়ার অসম চুক্তি আরোপ করে?
উত্তর:- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে চিনের ওপর ওয়াংঘিয়ার অসম চুক্তি আরোপ করে।
১৩০. কে, কবে ও কাদের ওপর হোয়ামপোয়ার অসম চুক্তি আরোপ করে?
উত্তর:- ফ্রান্স ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে চিনের ওপর হোয়ামপোয়ার অসম চুক্তি আরোপ করে।
১৩১. কবে, কারা, কাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অহিফেন যুদ্ধ ঘোষণা করে?
উত্তর:- ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেন চিনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অহিফেন যুদ্ধ ঘোষণা করে।
১৩২. কোন যুদ্ধের পর কবে, কাদের মধ্যে টিয়েনসিনের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
উত্তর:- দ্বিতীয় অহিফেন যুদ্ধের (১৮৫৬-৬০ খ্রি.) পর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে চিন এবং ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির মধ্যে টিয়েনসিনের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
১৩৩. টিয়েনসিনের সন্ধির দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর:- টিয়েনসিনের সন্ধির দ্বারা (i) চিন সরকার ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়। (ii) বিদেশি বণিকদের জন্য চিনের আরও ১১টি বন্দর খুলে দেওয়া হয়।
১৩৪. কোন যুদ্ধের পর শিমোনোসেকির সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর:- চিন-জাপান যুদ্ধের (১৮৯৪-৯৫ খ্রি.) পর শিমোনোসেকির সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
১৩৫. উন্মুক্ত দ্বার নীতি কী এবং কে এর প্রবক্তা? অথবা, উন্মুক্ত দ্বার নীতি কী? এর প্রবক্তা কে?
উত্তর:- ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিনে উন্মুক্ত দ্বার নীতি প্রয়োগের কথা ঘোষণা করেন। চিনের উন্মুক্ত বাণিজ্য নীতি সবদেশের জন্য সমান হওয়াই এই নীতির মূল কথা।
১৩৬. শিমোনোসেকির সন্ধির দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর:- শিমোনোসেকির সন্ধির দ্বারা (i) চিন কোরিয়াকে স্বাধীনতা দান করে। (ii) জাপানকে চিন ২৩০ মিলিয়ন টেল ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়।
১৩৭. চিনে বক্সার বিদ্রোহ কোন্ গুপ্ত সমিতির নেতৃত্বে শুরু হয়?
উত্তর:- আই-হো-চুয়ান নামক গুপ্ত সমিতির নেতৃত্বে চিনে বক্সার বিদ্রোহ শুরু হয়।
১৩৮. ‘বক্সার প্রোটোকল’ কবে সম্পাদিত হয়?
উত্তর:- ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ‘বক্সার প্রোটোকল’ সম্পাদিত হয়।
১৩৯. কাদের মধ্যে ‘বক্সার প্রোটোকল’ স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর:- চিনে বক্সার বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে ১১টি বিদেশি শক্তির মধ্যে ‘বক্সার প্রোটোকল’ স্বাক্ষরিত হয়।
১৪০. বক্সার প্রোটোকলের দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর:- বক্সার প্রোটোকলের দুটি উল্লেখযোগ্য শর্ত হল – (ক) বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত ১২ জন রাজপুরুষের প্রাণদণ্ড এবং শতাধিক রাজপুরুষকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়। (খ) চিনের ওপর বিরাট অঙ্কের ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপানো হয়।
১৪১. ‘ক্যান্টন বাণিজ্য’ বলতে কী বোঝায়? অথবা, ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা কী?
উত্তর:- বিদেশি বণিকদের কাছে চিনের সব বন্দর উন্মুক্ত ছিল না। চিনা আদালত ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে এক নির্দেশনামার দ্বারা শুধু ক্যান্টন বন্দরকেই বিদেশি বাণিজ্যের জন্য খুলে দেয়। এভাবে ক্যান্টন বন্দরকে কেন্দ্র করে চিনে বিদেশিদের এক-বন্দরকেন্দ্রিক যে বাণিজ্য প্রথার সূচনা হয় তা ‘ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা’ নামে পরিচিত।
১৪২. চিনের রুদ্ধদ্বার নীতি কী ছিল? অথবা, চিনের রুদ্ধদ্বার নীতি কী?
উত্তর:- ক্যান্টন বাণিজ্যে অংশগ্রহণকারী বিদেশি বণিকদের চিনা ফৌজদারি ও বাণিজ্যিক আইন মেনে চলতে হত এবং বাণিজ্যের মরশুম শেষে বন্দর ছেড়ে চলে যেতে হত। বণিকদের চিনা ভাষা ও আদবকায়দা শিক্ষা, বাণিজ্য কুঠিতে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রবেশ, দাসী নিয়োগ প্রভৃতি নিষিদ্ধ ছিল। চিনে বিদেশি বণিকদের প্রতি এই কঠোর নীতি ‘বুদ্ধদ্বার নীতি’ নামে পরিচিত।
১৪৩. বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে দৌত কাজের জন্য ব্রিটেন চিনে কাকে কাকে পাঠায়?
উত্তর:- বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে দৌত কাজের জন্য ব্রিটেন চার্লস ক্যাথকার্টের নেতৃত্বে ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে এক মিশন চিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং জর্জ ম্যাকার্টনির নেতৃত্বে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে একটি মিশন চিনে যায়।
১৪৪. কে চিনে মুক্তদ্বার নীতি প্রয়োগের কথা ঘোষণ করেন?
উত্তর:- মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিনে মুক্তদ্বার নীতি প্রয়োগের কথা ঘোষণা করেন।
১৪৫. কবে, কার নেতৃত্বে চিনে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় মিশন পৌঁছায়?
উত্তর:- ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে জর্জ ম্যাকার্টনির নেতৃত্বে চিনে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় মিশন পৌঁছায়।
১৪৬. ‘অ্যারো’ কী?
উত্তর:- চিনের অন্যতম একটি বাণিজ্যপোত হল ‘অ্যারো’।
১৪৭. ‘ওয়াংঘিয়া চুক্তি’ কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
উত্তর:- ‘ওয়াংঘিয়া চুক্তি’ ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
১৪৮. ‘বগ-এর চুক্তি’ কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
উত্তর:- ‘বগ-এর চুক্তি’ ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে, চিন ও ইংরেজদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
১৪৯. কো-হং কী?
উত্তর:- চিনে বণিক সম্প্রদায়ের অন্যতম হং বণিকগোষ্ঠী একটি বাণিজ্যিক নিগম প্রতিষ্ঠা করেন (১৭২০ খ্রি.)। এই বাণিজ্যিক নিগম হল কো-হং।
১৫০. চিনের যে পাঁচটি বন্দরে বিদেশিরা বাণিজ্যের অধিকার পায় সেগুলির নাম লেখো।
উত্তর:- চিনের যে পাঁচটি বন্দরে বিদেশিরা বাণিজ্যের অধিকার পায় সেগুলি হল ক্যান্টন, অ্যাময়, নিংপো, ফুচাও ও সাংহাই।