জাদুঘর কাকে বলে ? অতীত পুণর্গঠনে জাদুঘরের গুরুত্ব আলোচনা

উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায়: অতীত স্মরণ হতে জাদুঘর কাকে বলে ? অতীত পুণর্গঠনে জাদুঘরের গুরুত্ব আলোচনা করা হল।

জাদুঘর কাকে বলে ? অতীত পুণর্গঠনে জাদুঘরের গুরুত্ব আলোচনা

প্রশ্ন:- জাদুঘর কাকে বলে ? অতীত পুণর্গঠনে জাদুঘরের গুরুত্ব আলোচনা কর।

জাদুঘর

গ্রিক শব্দ ‘mouseion’ থেকে মিউজিয়াম শব্দটি এসেছে। মিউজিয়ামের বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে জাদুঘর বা সংগ্ৰহশালা কথাটি ব্যবহৃত হয়।

সাধারণ সংজ্ঞা

সাধারণ অর্থে জাদুঘর হল বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক উপাদানের সংগ্রহশালা। এখানে ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক, শিল্প-বিষয় প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ নমুনা সংরক্ষণ করে তা জনসাধারণের জন্য স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।

বাংলা আকাদেমির অভিমত

পশ্চিমবঙ্গ -এর ‘আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান’ অনুসারে ‘যে ঘরে নানা অত্যাশ্চর্য জিনিস বা প্রাচীন জিনিস সংরক্ষিত থাকে’ তাই হল জাদুঘর।

আইকম প্রদত্ত সংজ্ঞা

International Council of Muesums (ICOM) – এর মতে, ‘জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবা মূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দ লাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শ যোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিস পত্র সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে।

অতীত পুণর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত বিভিন্ন জাদুঘরের ভূমিকা ভিন্নমুখি হতে পারে। জাদুঘরের প্রধান উদ্দেশ্য ও ভূমিকা হল নিম্নরূপ।

সংগ্ৰহ

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক নিদর্শন বা নমুনা গুলি সংগ্ৰহ করে ইতিহাস রচনার দরজা উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে জাদুঘর অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে থাকে।

সংরক্ষণ

বর্তমানে জাদুঘর গুলিতে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক উপাদান সংরক্ষিত থাকে। যেমন – প্রাচীন মুদ্রা, লিপি, বিভিন্ন শিল্পকলা, প্রত্নতাত্ত্বিক বস্ত্র, আশ্চর্যজনক বস্তু, বিভিন্ন মডেল, চার্ট ইত্যাদি।

প্রতিকৃতি নির্মাণ

অতীতের যে সব নিদর্শন দুষ্প্রাপ্য কিন্তু মূল্যবান সেগুলির প্রতিকৃতি নির্মাণ করে জাদুঘর দর্শকদের সেই বস্তু সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে।

প্রদর্শন

জাদুঘর অতীতের দুর্লভ ঐতিহাসিক বস্তু সামগ্রী সাধারণ দর্শক, পাঠক, গবেষক প্রভৃতি সব ধরনের মানুষের প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়।

জনসচেতনতা বৃদ্ধি

জাদুঘরের অন্যতম উদ্দেশ্য বা কাজ হল ঐতিহাসিক নমুনা গুলির সাহায্যে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

গবেষণার কাজে সহায়তা

যে কোনো মানুষের সংগ্রহ করা ঐতিহাসিক নমুনা জাদুঘরে সংরক্ষিত হতে পারে। এই নমুনা গুলির প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে গবেষণার সুযোগ করে দেওয়া জাদুঘরের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য বা কাজ।

প্রকাশনার কাজ

জাদুঘরে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক নমুনা সম্পর্কে গবেষণালব্ধ তথ্য ও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশনার ব্যবস্থা হতে পারে।

জ্ঞানের প্রসার

জাদুঘরে সংরক্ষিত বস্তু গুলির পাশে দেওয়া তথ্য থেকে মানুষ সংরক্ষিত বিষটি সম্পর্কে সুষ্ঠু জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

প্রাণবন্ত ইতিহাস

অতীত ইতিহাসের বাস্তব অস্তিত্ব আছে জাদুঘরে । বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদানগুলির সাহায্যে জাদুঘর ইতিহাসকে প্রাণবন্ত করে তোলে।

আনন্দ দান

জাদুঘরে সাধারণ দর্শকদের সংখ্যাই বেশি হয়। তাদের কাছে জাদুঘর হল লঘু জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে কিছু আনন্দ লাভের স্থান।জাদুঘর বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেই আনন্দ দিয়ে থাকে।

পরিশেষে বলা যায় জাদুঘর হল অতীতের স্মৃতিচিহ্ন এবং বর্তমানের যোগসূত্র। তাই অতীত পুণর্গঠনের ক্ষেত্রে জাদুঘরের ভূমিকা অপরিসীম।

Leave a Comment