বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়: প্রস্তর ও তাম্র-প্রস্তর যুগ থেকে ১০ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – কীভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আদিম মানুষ শিকারী খাদ্য সংগ্রাহক থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিণত হয় তা আলোচনা করা হল।
কীভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আদিম মানুষ শিকারী খাদ্য সংগ্রাহক থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিণত হয়
প্রশ্ন:- কীভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আদিম মানুষ শিকারী খাদ্য সংগ্রাহক থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিণত হয়?
উত্তর:- নব্য প্রস্তর যুগের আগে পর্যন্ত মানুষ বিভিন্ন হাতিয়ারের সাহায্যে তারা বন্য পশু শিকার করত এবং বনের ফলমূল, পাখির ডিম, নদীর মাছ প্রভৃতি সংগ্রহ করত। অর্থাৎ প্রথম দিকে আদিম মানুষ ছিল খাদ্যসংগ্রাহক। পুরুষ ও নারী উভয়েই খাদ্য সংগ্রহের কাজে নিযুক্ত থাকত।
হােমাে স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের আগে অনুন্নত মানুষ পাথর ও গাছের ডাল ছাড়া অন্য কোনাে হাতিয়ারের ব্যবহার জানত না। পরবর্তীকালে মানুষ পাথরের বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার তৈরি করতে শেখে এবং ক্রমে সেগুলি উন্নত হতে থাকে। আদিম যুগে পুরুষরা শিকারের কাজে অংশ নিত। তারা পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ারের সাহায্যে পশু শিকার করত এবং শিকার করে পশুর মাংস সংগ্রহ করত।
আদিম যুগের মানুষ দলবদ্ধভাবে শিকারে বের হত। এই ভাবে প্রাচীন কালে শিকারি মানুষদের নিয়ে গড়ে ওঠা দল বা সংগঠনটিকে ‘ক্ল্যান’ বলা হয়। রক্তের সম্পর্ক আছে এমন মানুষদের নিয়ে মূলত ক্ল্যান গঠিত হত। প্রতিটি মানবগােষ্ঠী নির্দিষ্ট এলাকায় শিকার করত। সেখানে অন্য গােষ্ঠীর শিকারের কোনো অধিকার থাকত না। তবে খুব বড়াে শিকার ধরার উদ্দেশ্যে কখনাে কখনাে কয়েকটি ক্ল্যান ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেত। তখন তাদের বলা হত ট্রাইব’।
শিকার করে আনা পশুর মাংস তারা সকলের মধ্যে ভাগ করে নিত। প্রথমে তারা আগুনের ব্যবহার জানত না বলে কাঁচা মাংস খেত। পরবর্তীতে আগুনের ব্যবহার শিখে তারা মাংস পুড়িয়ে খাওয়া শুরু করে। নারীরা নিকটবর্তী বনজঙ্গল থেকে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, শাকসবজি, পাখির ডিম প্রভৃতি সংগ্রহ করত। তারা পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার তৈরি করত এবং সন্তানের যত্ন নিত। খাদ্য রাখার প্রয়ােজনীয় মৃৎপাত্রগুলি মেয়েরাই তৈরি করত। এই ভাবে সুদূর অতীতে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে শ্রমবিভাজন গড়ে উঠেছিল।
প্রাগৈতিহাসিক যুগ-এ দীর্ঘকাল ধরে শিকারি আদিম মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আদিম মানুষ পশুর লােম, চামড়া ও হাড়ও সংগ্রহ করত। চামড়া ও লােম দিয়ে তারা পরিধেয় বস্ত্র, শীতবস্ত্র এবং পশুর হাড় ও শিং দিয়ে তারা বিভিন্ন হাতিয়ার তৈরি করতে শিখল।
নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ দলবদ্ধভাবে নদী বা জলাশয়ের ধারে বাসগৃহ নির্মাণ করতে শুরু করে। তাদের তৈরি বাসগৃহগুলি ছিল তিন ধরনের। বড়াে বড়াে পাথরের চাই দিয়ে কৃষিজমির ধারে তৈরি হত স্থলবসতি। দেওয়ালগুলি পাথর ছাড়া মাটি, কাঠ, পাথর, বাঁশ, চামড়া প্রভৃতি দিয়ে নির্মিত হত। হ্রদের জলের মধ্যে তৈরি করা হত হ্রদ বসতি। সুইজারল্যান্ডের নিউচ্যানেল হ্রদে এই ধরনের বসতি নির্মিত হয়েছিল বলে জানা যায়। প্রথম থেকেই মানুষ ছিল গুহাবাসী। তাই নতুন পাথরের যুগে এসেও মানুষ গুহায় বাস করার অভ্যাস একেবারে ত্যাগ করতে পারেনি।
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষেরা যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসতি জীবনে প্রবেশ ধীরে ধীরে আরও উন্নত রূপ লাভ করে। ক্রমে বসতির সংখ্যা বেড়ে ছােটো ছােটো গ্রাম গড়ে উঠতে শুরু করে।
মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনের কৌশল আবিষ্কার করলে শিকারের ওপরে তাদের নির্ভরতা ক্রমশ হ্রাস পেতে শুরু করে। এরপর থেকে খাদ্য সংগ্রাহক আদিম মানুষ ধীরে ধীরে খাদ্য উৎপাদকে পরিণত হয় এবং কৃষির প্রয়োজনেই তারা ক্রমে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিণত হয়।