২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

ট্রুম্যান নীতি কী ? মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য

উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সপ্তম অধ্যায়: ঠান্ডা লড়াই হতে ট্রুম্যান নীতি কী ? মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কী ছিল ? এ নিয়ে আলোচনা করা হল।

Table of Contents

ট্রুম্যান নীতি কী ? মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য

প্রশ্ন:- ট্রুম্যান নীতি কী ? মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কী ছিল ? (২০১৭, ২০১৯)

ভূমিকা :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে স্নায়ু যুদ্ধের সূচনা হয় তার অন্যতম দুটি দিক হল ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা। এই দুটির উদ্যোক্তা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রুম্যান নীতি

মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান এই নীতির প্রবর্তক, তাই এর নাম ট্রুম্যান নীতি।

(১) পরিচিতি

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ মার্কিন সংসদের এক যৌথ অধিবেশনে ট্রুম্যান বলেন যে, এখন থেকে পৃথিবীর যে কোনাে স্থানে স্বাধীন জনগণ যদি সশস্ত্র সংখ্যালঘু অথবা বাইরের শক্তির আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টাকে প্রতিরােধ করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করাই হবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি। এই ঘােষণাই ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত। বলা বাহুল্য, ট্রুম্যান সশস্ত্র সংখ্যালঘু বলতে সাম্যবাদী বিদ্রোহীদের এবং বাইরের শক্তি বলতে সােভিয়েত ইউনিয়নকে বুঝিয়েছিলেন।

(২) পটভূমি

ট্রুম্যান নীতি ঘোষণার পিছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করেছিল। যেমন –

(i) চার্চিলের ফালটন বক্তৃতা

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত মিসৌরি প্রদেশের ফালটন শহরে এক ভাষণে সাম্যবাদের প্রসার রােধ করার লক্ষ্যে ইঙ্গ-মার্কিন যৌথ প্রতিরােধ গড়ে তােলার আহ্বান জানান।

(ii) কেন্নানের বেষ্টনী নীতি

মার্কিন বিদেশনীতির উপদেষ্টা জর্জ এফ. কেন্নান সােভিয়েত সম্প্রসারণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে এক প্রবন্ধ লিখে জানান, রুশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অহেতুক কোনাে যুদ্ধে না গিয়ে আমেরিকার উচিত হবে যে অঞ্চলে সােভিয়েত প্রভাব রয়েছে তাকে সীমাবদ্ধ রাখা।

(৩) উদ্দেশ্য

ট্রুম্যান নীতি ঘোষণার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল –

(i) রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে ইউরােপে ক্রমবর্ধমান সােভিয়েত বা সাম্যবাদী প্রভাব প্রতিহত করার জন্য প্রতিরােধমূলক রণকৌশল গ্রহণ।

(ii) অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য

ট্রুম্যান নীতি ঘােষণার অন্যতম লক্ষ্য ছিল অর্থসাহায্যের নামে অন্যান্য দেশকে অস্ত্র ও শিল্পজাত দ্রব্য বিক্রি করে বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটানাে।

(৪) মূল্যায়ণ

ট্রুম্যান নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে একদিকে যেমন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য লাভে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, অন্যদিকে তেমনি আন্তর্জাতিক সংকট বৃদ্ধি করেছিল।

(i) সক্রিয় বৈদেশিক নীতি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বৈদেশিক ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে নিষ্ক্রিয় ও উদাসীন নীতি নিয়ে চলত ট্রুম্যান নীতির দ্বারা এর পরিবর্তন ঘটে। এখন থেকে আমেরিকা বৈদেশিক বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সক্রিয় হস্তক্ষেপের নীতি নেয়।

(ii) ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা

ট্রুম্যান নীতির ফলে পৃথিবীতে আপাতত প্রত্যক্ষ যুদ্ধের অবসান হলেও আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট ও সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়।

(iii) বেষ্টনী নীতি

ট্রুম্যান নীতির দ্বারা সোভিয়েত রাশিয়ার প্রসার ও প্রভাবকে আমেরিকা সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করে। তাই এই নীতিকে ‘বেষ্টনী নীতি’ (Containment Policy) নামেও অভিহিত করা হয়।

(iv) গ্রিস ও তুরস্কে অর্থ সাহায্য

টুম্যান নীতির সিদ্ধান্ত অনুসারে গ্রিস ও তুরস্কে আমেরিকা ৪০ কোটি ডলার সাহায্য পাঠায়, যার দ্বারা গ্রিস ও তুরস্কে কমিউনিস্টদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

(v) আন্তর্জাতিক সংকট

ডি. এফ. ফ্লেমিং বলেছেন যে, টুম্যান ঘোষণার ফলে এমন ধারণার সৃষ্টি হয় যে, এখন থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘চাপ’ ও ‘পালটা চাপ’ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হবে না। তিনি এই পরিস্থিতিকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে অভিহিত করেছেন।

মার্শাল পরিকল্পনা

মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জর্জ সি. মার্শাল এই পরিকল্পনার উদ্ভাবন করেন বলে এর নাম মার্শাল পরিকল্পনা।

(১) পরিচিতি

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্শাল তার ভাষণে বলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, হতাশা, বেকারত্ব-সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকটমােচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অর্থসাহায্য করবে। তিনি ট্রুম্যান নীতির উদ্দেশ্যকে সফল করতে একটি পরিকল্পনা পেশ করেন। ওই পরিকল্পনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত সমগ্র ইউরােপেই আর্থিক পুনরুজ্জীবনের কথা বলা হয়। এই উদ্দেশ্যে তিনি তার বক্তৃতায় European Recovery Programme বা ERP নামে এক কর্মসূচির কথা ঘােষণা করেন। এটিই মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত হয়।

(২) পটভূমি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলির অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু হয়ে পড়েছিল। এইসমস্ত দেশ আমেরিকার কাছ থেকে অর্থসাহায্য না পেলে স্বাভাবিকভাবেই সােভিয়েত রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়বে। তখন আর এইসমস্ত দেশকে সাম্যবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত করা যাবে না। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্শাল এই সত্যের পটভূমিকায় তাঁর পরিকল্পনার ঘোষণা করেন।

(৩) উদ্দেশ্য

সামগ্রিক ভাবে মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য গুলি হল –

(i) সােভিয়েত প্রভাবমুক্ত ইউরােপ গঠন

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরােপের দেশগুলিকে অর্থসাহায্য দিয়ে তাদের সােভিয়েত প্রভাব থেকে মুক্ত করা।

(ii) মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠা

অর্থসাহায্য গ্রহণকারী দেশগুলির অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও মার্কিন আধিপত্য কায়েম করা।

(iii) অর্থনৈতিক সংকট

যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কৃষিকাজ, শিল্প প্রভৃতি দারুণ ভাবে ব্যাহত হওয়ার ফলে অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হয়ে ওঠে।

(iv) বাণিজ্যের প্রসার

বিপুল পরিমাণ ঋণ দানের মাধ্যমে ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে ঐ অঞ্চলে মার্কিন বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোও ছিল মার্শাল পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য।

(৪) প্রয়ােগ

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে পশ্চিম জার্মানি-সহ পশ্চিম ইউরােপের ১৬টি দেশ মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। এইসমস্ত দেশ মিলিত হয়ে গঠন করেছিল OEEC (Organisation for European Economic Cooperation) বা ইউরােপীয় অর্থনৈতিক সহযােগিতা সংস্থা।

(৫) পরিকল্পনা গ্ৰহণকারী দেশ

মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল পশ্চিম জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, লুক্সেমবার্গ, ডেনমার্ক, গ্রিস, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যন্ড, ইটালি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পাের্তুগাল, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও তুরস্ক।

(৬) মার্শাল পরিকল্পনার গুরুত্ব

মার্শাল পরিকল্পনা যে উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়েছিল তা অনেকাংশে সফল হয়।

(i) ইউরোপের অর্থনৈতিক অগ্রগতি

মার্শাল পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থসাহায্য পেয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির ভঙ্গুর অর্থনীতির মন্দাভাব কেটে যায় এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আবার সক্রিয় ও সচল হয়ে ওঠে।

(ii) মার্কিন বাণিজ্যের প্রসার

মার্কিন অর্থসহায়তা পেয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটলে তারা আমেরিকা থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করে। ফলে মার্কিন বাণিজ্যের যথেষ্ট প্রসার ঘটে।

(iii) কমিউনিস্টদের প্রতিরোধ

মার্কিনি অর্থ- সহায়তায় পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি কমিউনিস্ট ভাবধারা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।

(iv) ঠাণ্ডা লড়াই

মার্শাল পরিকল্পনার ফলে ইউরোপীয় রাজনীতি ও অর্থনীতি পরস্পরবিরোধী সুস্পষ্ট দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কালে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়।

উপসংহার :- ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনার ফলে ইউরোপের বিধ্বস্ত দেশগুলির পুননির্মান শুরু হয়। পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্রব্যবস্থায় মার্কিন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কেরও অবনতি হয়।

6 thoughts on “ট্রুম্যান নীতি কী ? মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য”

Leave a Comment