গ্রিসে পেলোপনেসীয় যুদ্ধের কারণ আলোচনা প্রসঙ্গে অভ্যন্তরীণ পেলোপনেসীয় যুদ্ধ, এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে পেলোপনেসীয় যুদ্ধ, পেলোপনেসীয় যুদ্ধের কারণ এথেনিয় সাম্রাজ্যবাদ, পেলোপনেসীয় যুদ্ধের অন্যতম কারণ পেরিক্লিসের মেগারীয় ডিক্রি ও পেলোপনেসীয় যুদ্ধের একটি অন্যতম প্রধান কারণ অর্থনৈতিক স্বার্থের সংঘাত সম্পর্কে জানব।
431-404 খ্রিস্টপূর্বাব্দের পেলোপনেসীয় যুদ্ধের কারণ আলোচনা
বিষয় | ইতিহাস |
বিশ্ববিদ্যালয় | বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় |
আর্টস | বি.এ. জেনারেল |
সেমিস্টার | দ্বিতীয় |
প্রশ্ন | পেলোপনেসীয় যুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো। |
প্রশ্নমান | ১০ |
খ্রিস্টপূর্ব 431-404 অব্দে গ্রিস নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এই যুদ্ধ পেলোপনেসীয় যুদ্ধ নামে পরিচিত। 431 খ্রি. পূর্বাব্দে স্পার্টা এথেন্সকে আক্রমণ করলে পেলোপনেসীয় যুদ্ধ শুরু হয়। স্পার্টার অসাধারণ সামরিক শক্তির নিকট এথেন্স পরাজিত হয়। পরাজিত এথেনীয়দের যুদ্ধে বন্দী করে দাস হিসেবে বিক্রি করা হত। এথেন্স স্পার্টার অধীনস্ত হলে প্রাচীন গ্রিসে এথেন্সের মর্যাদা চিরতরে বিলুপ্ত হয়। এই পেলোপনেসীয় যুদ্ধের পশ্চাতে বেশ কিছু কারণ ছিল।
এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে যে অবস্থার প্রেক্ষিতে পেলোপনেসীয় যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল তাতে মৌলিক উপাদান হিসেবে এথেনিয় সাম্রাজ্যবাদকে দায়ী করা যায়। ঐতিহাসিক জে বি গ্রান্ডি মনে করেন, এথেন্সের সাম্রাজ্যবাদের ফলে ক্ষুদ্র গ্রিক পলিস রাষ্ট্রগুলি আত্মসমর্পণ করে। করিন্থ এথেন্সের কাছে ব্যবসা বাণিজ্য হারানোর আশঙ্কায় ভীত ছিল। করিন্থ ও স্পার্টা চেয়েছিল এথেনীয় আগ্রাসনকে চিরতরে প্রতিহত করতে। এর ফলে পেলোপনেসীয় যুদ্ধের সূচনা ঘটে।
খ্রি. পূ. পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গ্রিসে স্পার্টার নেতৃত্বে পেলোপনেসীয় লিগ এবং এথেন্সের নেতৃত্বে ডেলিয়ান লিগ নামে দুটি জোট গঠিত হয়। এই সময় এথেন্সের শক্তিশালী শাসক পেরিক্লিস এথেন্সের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তার নেতৃত্বে এথেন্স উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে ছিল। অপরদিকে স্পার্টা ছিল অনুন্নত সংস্কৃতির অধিকারী একটি রাষ্ট্র। এই বিপরীতমুখী সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে রাষ্ট্র দুটির মধ্যে সম্পর্ক ছিল বিদ্বেষ মূলক।
পেলোপনেসীয় লিগ এবং ডেলিয়ান লিগ উভয় জোটের প্রধান লক্ষ্য ছিল সমগ্র গ্রিস ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির ওপর আধিপত্য বিস্তার করা। এরই ধারাবাহিকতায় এথেন্স গ্রিসের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত পেলোপনেসীয় লিগের অন্তর্গত করিন্থ উপসাগরে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালায়। কারণ ইতালি ও সিসিলির সঙ্গে বাণিজ্যের এটাই ছিল প্রধান পথ। এথেন্সের এরকম কার্যকলাপে স্পার্টা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। স্বার্থের সংঘাত, আদর্শের দ্বন্দ্ব, সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব প্রভৃতির চূড়ান্ত পরিণতি হল পেলোপনেসীয় যুদ্ধ।
পেরিক্লিসের মেগারীয় ডিক্রি ছিল পেলোপনেসীয় যুদ্ধের অন্যতম কারণ। এথেন্সের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ছিল মেগারা। মেগারার বাণিজ্য ও সম্পদ সমৃদ্ধির আকাঙ্খা ছিল। এথেন্সের সাথে মেগারার বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। কিন্তু এথেন্স মেগারার সাথে হঠাৎ বাণিজ্যিক চুক্তি বাতিল করে দেয় এবং ঘোষণা করেন যে, এথেনীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে মেগারার কোনো জিনিস ঢুকতে পারবে না। মেগারা এতে স্বাভাবিকভাবে ক্ষুব্ধ হয় এবং এথেন্স-বিরোধী রাষ্ট্রসংঘে যোগ দেয়।
আমদানি কৃত খাদ্য শস্যের উপর এথেন্সকে নির্ভর করতে হত বলে এথেন্স বাণিজ্য পথের ওপর একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করতে চেয়েছিল। অপরদিকে করিন্থও বাণিজ্য পথে প্রাধান্য বিস্তার করতে চেয়েছিল। এই কারণে এথেন্স ও করিন্থ উভয়েই একে অপরের পতন চেয়েছিল। পেলোপনেসীয় যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল এথেন্সের বন্ধু রাষ্ট্রগুলির পুঞ্জিভূত বিক্ষোভ। এথেন্স তার অধিন্যস্ত রাষ্ট্রগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে কর আদায় করত। অভ্যন্তরীণ শাসন ব্যবস্থায় অযথা হস্তক্ষেপ করত। ফলে এথেন্সের বন্ধুর রাষ্ট্রগুলি অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং পেলোপনেসীয় যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়।
অর্থনৈতিক স্বার্থের সংঘাত পেলোপনেসীয় যুদ্ধের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। বাণিজ্যিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এথেন্স ইজিনা, মেগারা ও করিন্থ দখলের স্বপ্ন দেখত। বাণিজ্যিক ব্যাপারে করিন্থ ছিল এথেন্সের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই প্রধান প্রধান গ্রিক নগর রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংঘাত পেলোপনেসীয় যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।
(FAQ) পেলোপনেসীয় যুদ্ধের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১. পেলোপনেসীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয় কখন?
খ্রিস্টপূর্ব 431-404 অব্দে।
২. কাদের মধ্যে পেলোপনেসীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়?
প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্র এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে।
৩. পেলোপনেসীয় যুদ্ধের সময় এথেন্সের শাসক কে ছিলেন?
পেরিক্লিস।