গ্রিসের সাংস্কৃতিক জীবনে খেলাধুলার প্রভাব আলোচনা করো
১। গ্রিসের সাংস্কৃতিক জীবনে খেলাধুলার প্রভাব আলোচনা করো।
সুপ্রাচীন কাল থেকেই গ্রিসে খেলাধুলার প্রচলন ছিল। হোমারের মহাকাব্য ‘ইলিয়াড’ ও ‘ওডিসি’তে গ্ৰিকদের বিভিন্ন খেলাধুলার উল্লেখ ছিল। গ্রিক সমাজ জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিল খেলাধুলা। খেলাধুলা প্রাচীন গ্রিসকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল। গ্রিসের সাংস্কৃতিক জীবনে খেলাধুলার প্রভাব ছিল সুদুর প্রসারি।
অলিম্পিকে যোগদানকারী সুগঠিত ও সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী নগ্ন দেহী প্রতিযোগীদের দেখে গ্রিস ভাস্কর্যরা তাদের শিল্প কর্মে নতুন প্রেরণা লাভ করে। অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের দৈহিক সুষমা গ্রিক ভাস্কররা মূর্তি নির্মাণে অনুপ্রেরণা পেয়েছিল। অলিম্পিক প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে মৃত্তিকা শিল্প প্রতিযোগিতা, কাব্য প্রতিযোগিতা, স্থাপত্য, অঙ্কন, নাটক প্রতিযোগিতা প্রচলিত হয়। সংগীত ও বাদ্য যন্ত্রের প্রতিযোগিতাও শুরু হয়। বিজয়ীদের নামে অনেক কবিতা নাটক ও কাব্য রচিত হয়।
গ্রিসের সামরিক জীবনের ওপর খেলাধুলা গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। এথেন্স ও স্পার্টার হপলাইট বাহিনীর শক্তির উৎস অলিম্পিকের বর্ম পরিহিত দৌড় প্রতিযোগিতা থেকে উদ্ভুত। ম্যারাথনের যুদ্ধে পারসিক বাহিনী এথেনিয় বাহিনীর কাছে পরাস্ত হয়েছিল। রথের দৌড়, চর্ম বর্ম সহ দৌড়, অশ্বারোহনে লক্ষ্য ভেদ, কৃত্রিম বাধা অতিক্রম, জ্যাভেলিন নিক্ষেপ ইত্যাদি অনুশীলন গ্রিক সামরিক বাহিনীকে দুর্ধর্ষ করে তুলেছিল।
গ্রিক ক্রীড়াবিদগণ সুস্বাস্থ্যের সাধনা করত। সুন্দর ও সু-স্বাস্থ্য নতুন জীবনবোধের সৃষ্টি করে। যেখানে হতাশা, দুঃখ ও নৈরাশ্যের কোনো স্থান ছিল না। প্রত্যেক প্রতিযোগি একে অপরের সাথে ভাই ভাইয়ের মতো ব্যবহার করত। প্রতিযোগিতা উপলক্ষ্যে পারস্পরিক মেলামেশা ও সহযোগিতা ঐক্যের বাণী বহন করে এনেছিল।
খেলাধুলার মাধ্যমে গ্রিকরা সৌভ্রাতৃত্ব ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। তারা বিশ্বাস করত গ্রিক ক্রীড়াঙ্গনে প্রজ্জ্বলিত মশালের শিখা গ্রিক জাতির মিলনের পথকে প্রশস্ত করবে। খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে গ্রিক নগর রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্ব বোধ গড়ে ওঠে।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, খেলাধুলা গ্রিসের মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূর প্রসারি ভূমিকা পালন করেছিল। এই খেলাধুলা গ্রিসের সমাজ অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছিল।