সপ্তম অধ্যায়: জোট নিরপেক্ষ নীতি কী? জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য আলোচনা কর। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মূল্যায়ন করো।
জোট নিরপেক্ষ নীতি কী? জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য আলোচনা
প্রশ্ন:- জোট নিরপেক্ষ নীতি কী? জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য আলোচনা কর। (২০১৬) / জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মূল্যায়ন করো। (২০২০)
ভূমিকা :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে বিশ্ব রাজনীতির এক মেরুতে থাকে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ধনতান্ত্রিক জোট এবং অন্য মেরুতে থাকে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক জোট। কিন্তু এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশগুলি কোনো জোটের অন্তর্ভুক্ত হয় নি।
জোট নিরপেক্ষ নীতি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সােভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের কোনাে একটি জোটে যােগ না দিয়ে নিরপেক্ষ থাকার নীতিই হল জোটনিরপেক্ষ বা নিজোর্ট নীতি। এই জোটনিরপেক্ষ দেশগুলি নিজেদের স্বার্থে যে আন্দোলন গড়ে তােলে তার নাম নির্জোট আন্দোলন।
নেতৃত্ব
এই জোট নিরপেক্ষ নীতির উল্লেখযোগ্য নেতা হলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, মিশরের গামাল আবদেল নাসের, যুগােশ্লাভিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্শাল টিটো, ইন্দোনেশিয়ার ড. সুকর্ণ, ঘানার নক্রুমা প্রমুখ।
জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাবলী জোট নিরপেক্ষ নীতি বা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল।
(১) জাতীয় ঐতিহ্য রক্ষা
সুপ্রাচীন কাল থেকেই অহিংসা, শান্তি, সহমর্মিতা ও সহনশীলতার আদর্শে ভারত বিশ্বাসী। হিংসা- জর্জরিত পৃথিবীতে গৌতম বুদ্ধ ও সম্রাট অশােক -এর শান্তির বাণী ভারতবর্ষের সীমানা ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ক্ষমতার শীর্ষে উঠেও আকবর ও শিবাজি সহনশীলতার কথা প্রচার করেন। এই সুমহান আদর্শ ও জাতীয় ঐতিহ্য বহন করার উদ্যোগ থেকেই ভারত সরকার জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণে অগ্রসর হয়।
(২) রাজনৈতিক স্বতন্ত্রতা
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারত পুঁজিবাদ বা সাম্যবাদ কোনােটিকেই সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করেনি। কারণ, ভারত গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু নিজেই ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরােধী ছিলেন। নেহরু বলেছিলেন যে, বিশ্বের পক্ষে ও আমাদের পক্ষে যা ক্ষতিকর তা আমরা নির্দ্বিধায় নিন্দা করব।
(৩) আর্থসামাজিক উন্নতি
স্বাধীনতা লাভের ঠিক পরের মুহূর্ত থেকেই ভারত এক গভীরতর আর্থসামাজিক সংকটের মুখে পড়ে। দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা, বেকারত্ব, খাদ্যাভাব, কালােবাজারি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা – এইসব সমস্যার ফলে ভারতীয় অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়লে নেহরু স্বতন্ত্র আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণের দ্বারা আর্থসামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সচেষ্ট হন।
(৪) জাতীয় স্বার্থের সংরক্ষণ
জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে কোনাে দেশেরই পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয় না। তবে এই স্বার্থ সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু কখনােই উপেক্ষিত হতে পারে না। সাম্যবাদী বা ধনতন্ত্রবাদী কোনাে জোটের মধ্যে না গিয়ে নেহরু মিশ্র অর্থনীতি ও স্বাধীন বিদেশনীতি গ্রহণের দ্বারা জাতীয় স্বার্থের সংরক্ষণ চেয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন যে, “স্বাভাবিকভাবেই আমি ভারতের স্বার্থের দিকে লক্ষ রেখেছি, কারণ এটিই আমার প্রধান কর্তব্য”।
(৫) নিরপেক্ষতা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্যবাদী ও ধনতন্ত্রবাদী – এই দুই পরস্পরবিরােধী শক্তিজোটে বিভক্ত বিশ্ব যখন ঠান্ডা লড়াইয়ে মত্ত, তখন ভারত কোনাে জোটেই অংশগ্রহণ না করে নিরপেক্ষনীতি গ্রহণ করে।
(৬) তৃতীয় শক্তিজোটের নেতৃত্ব
যে সমস্ত দেশ ঠান্ডা লড়াইয়ের বাইরে থাকতে চাইছিল, কী আয়তন, কী জনসংখ্যা উভয় ব্যাপারেই ভারতের কাছে তারা ছিল নিতান্তই নগণ্য। সুতরাং নিজের নেতৃত্বে বিশ্বে একটা জোটনিরপেক্ষ গােষ্ঠী বা তৃতীয় শক্তিজোট গড়ে তােলার লক্ষ্যেও ভারত জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে।
জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের গুরুত্ব
বিশ্ব ইতিহাসে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের গুরুত্ব ছিল অপরিহার্য। যেমন –
(১) নবলব্ধ স্বাধীনতা রক্ষা
জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন এশিয়া আফ্রিকার নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগােষ্ঠীর নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষা করে তাদের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের প্রয়াসকে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে।
(২) ভারসাম্য রক্ষা
দ্বিমেরুকরণ রাজনীতির মাঝে তৃতীয় বিশ্বের আবির্ভাব ঘটিয়ে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন বিশ্ব রাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(৩) শান্তিপ্রতিষ্ঠা
বর্ণবৈষম্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও আণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে এই আন্দোলন বিশ্বে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
(৪) জঙ্গি আগ্রাসন রােধ
এই আন্দোলন বিশ্বে সােভিয়েত-মার্কিন জঙ্গি আগ্রাসনকে যে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল তাতে সন্দেহ নেই। এটি ছিল জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের এক ব্যতিক্রমী সাফল্য।
(৫) তৃতীয় বিশ্বের আত্মর্যাদা প্রতিষ্ঠা
এই আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার আগে পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলিই বিশ্বরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করত। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্যই ছিল শেষ কথা। কিন্তু এই আন্দোলন তৃতীয় বিশ্বের সদ্য স্বাধীন, দরিদ্র ও অনুন্নত দেশ ও জাতিগুলিকে আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে।
জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে ভারতের ভূমিকা
ভারত শুধু জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রধান প্রবর্তকই নয়, সে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
(১) সামরিক জোট থেকে দূরত্ব
ভারত সর্বদা দুটি শক্তিশালী সামরিক জোট (পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক জোট এবং রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক জোট) থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।
(২) কোরীয় যুদ্ধে ভূমিকা
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে কোরীয় যুদ্ধের পর যুদ্ধবন্দি সংক্রান্ত যে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল তার সমাধানে ভারত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
(৩) ভিয়েতনামের যুদ্ধে ভূমিকা
ইন্দোচিন বা ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ভারত তার সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদ বিরোধী স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেছে।
(৪) মিশর আক্রমণ ও হাঙ্গেরির ঘটনার প্রতিবাদ
ভারত ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে মিশরের ওপর ফরাসি ও ইজরায়েলের আক্রমণের বিরোধিতা করেছে। ওই বছরই হাঙ্গেরির ঘটনার সময় ভারত সোভিয়েত রাশিয়ারও সমালোচনা করেছে।
(৫) চিনের জাতিপুঞ্জে স্থায়ী আসন লাভের জন্য সমর্থন
চিনের সঙ্গে মিত্রতা থাকার সময় এবং পরবর্তীকালে চিনের সঙ্গে সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে সম্পর্কের অবনতির সময়ও জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে চিনের স্থায়ী আসন লাভের বিষয়টিকে ভারত সমর্থন করেছে।
(৬) পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্কের চেষ্টা
ভারত তার প্রতিবেশী পাকিস্তান -এর সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করতে সর্বদা আগ্রহী। এবিষয়ে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের পরামর্শ গ্রহণ করতেও ভারত সর্বদাই আগ্রহী।
(৭) সাম্রাজ্যবাদ ও বৈষম্যমূলক নীতির বিরোধিতা
ভারত সর্বদা সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ এবং বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
উপসংহার:- জোট নিরপেক্ষ দেশগুলি ঠান্ডা লড়াই থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি ও সহাবস্থানের নীতি গ্ৰহণ করে।
This so hard. I can’t understand anything. This post is not helpful. 😮💨😮💨
This note is written in simple language not in hard language. You need the interpretation of this note by a teacher 🙏. I really sincerely thank because of providing such a simple written and informative note .
ধন্যবাদ
Really this is so hard 😥😥😰😰
Plz Contact Us 6294574633