২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

হরপ্পা সভ্যতার সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন

উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ‘আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতাসমূহ’ থেকে হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের পরিচয় দেওয়া হল ।

হরপ্পা সভ্যতার সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন

প্রশ্ন:- হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের পরিচয় দাও।

সূচনা :-  সিন্ধু নদের তীরে অবস্থিত সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা ছিল ভারত -এর প্রথম নগর সভ্যতা। হরপ্পার সিলমােহরে যে লিপি ব্যবহৃত হয়েছে তা আজও পাঠোদ্ধার হয়নি। তাই হরপ্পার সমাজ, অর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় নি।

হরপ্পাবাসীর সামাজিক জীবন

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার সমাজ ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক গুলি হল –

সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস

হরপ্লার সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির অবস্থান ছিল।

(১) ঐতিহাসিক দামােদর ধর্মানন্দ কোশাম্বীর মতে,

  • (a) প্রভাবশালী পুরােহিত ও শাসকগােষ্ঠী,
  • (b) বেতনভুক যােদ্ধা সম্প্রদায়,
  • (c) বণিক, কারিগর ও ভূস্বামীদের দল এবং
  • (d) চাষি, দরিদ্র শ্রমিক, ভৃত্য ও দাস এই চারশ্রেণির মানুষ নিয়ে গড়ে উঠেছিল হরপ্পা সভ্যতার সমাজব্যবস্থা।

(২) অধ্যাপক পুসলকর হরপ্পার জনসমাজকে চারভাগে ভাগ করেছেন। –

  • (a) শিক্ষিত সম্প্রদায়,
  • (b) যােদ্ধাশ্রেণি,
  • (c) বণিকশ্রেণি,
  • (d) করিগর ও শ্রমিক শ্রেণি।

সামাজিক অবস্থান

সিন্ধুর সমাজব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় শাসকগােষ্ঠীর অবস্থান ছিল বলে মনে করা হয়। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে শাসক এবং পুরােহিতদের অবস্থান ছিল সবার উপরে। সমাজের একবারে নীচু তলায় অবস্থান ছিল চর্মকার, চাষি, শ্রমিক, ভৃত্য ও দাসদের।

সমাজব্যবস্থার প্রকৃতি

সিন্ধু উপত্যকায় অসংখ্য নারীমূর্তির অস্তিত্ব দেখে ঐতিহাসিকদের অনুমান এখানে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। কিন্তু অপর একদল ঐতিহাসিক মনে করেন যে হরপ্পার সমাজব্যবস্থা ছিল পিতৃতান্ত্রিক। তাদের মতে, দূরপাল্লার বাণিজ্য, কৃষির প্রসার এবং ধাতব শিল্পের বিকাশের মধ্যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন দেখা যায়।

খাদ্য সামগ্রী

হরপ্পার অধিবাসীরা গম ও যবের তৈরি খাবার খেত। অল্পবিস্তর ধানের চাষ চালু থাকায় ভাতও তাদের খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়। তারা বিভিন্ন পশুর মাংস, দুধ, খেজুর প্রভৃতি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। সিন্ধু উপত্যকায় প্রচুর পরিমাণে আঙুর ও আনারস উৎপাদিত হত। সিন্ধু অঞ্চলে তামার বড়শির নিদর্শন মেলায় মনে করা হয় মাছ ও কচ্ছপের মাংস তাদের খাদ্য ছিল।

পােশাক-পরিচ্ছদ

হরপ্পাবাসীরা সুতি ও পশমের পােশাক পরত। তারা সাধারণত দুটি বস্ত্র খন্ড – একটি দেহের উধর্বাংশে অপরটি দেহের নিম্নাংশে পোশাক হিসেবে ব্যবহার করত।

অলংকার

হরপ্পার নারী, পুরুষ উভয়েই ধাতুর তৈরি অলংকার পরত। কানের দুল, চুরি, আংটি, মল, কোমরবন্ধ, মালা প্রভৃতি অলংকার হিসেবে ব্যবহার করত। তারা চোখে সুরমা টানতে জানত। নারীরা বিভিন্নভাবে চুল বাঁধতেও শিখেছিল। তারা চুলে হাতির দাঁতের তৈরি চিরুনি লাগিয়ে রাখত। পাখার মতাে দেখতে এক ধরনের অলংকার তারা মাথায় ব্যবহার করত।

সিল ও লিপি

সিন্ধু উপত্যকা জুড়ে তামা, ব্রোঞ্জ এবং পােড়ামাটির তৈরি প্রায় ২০০০ সিল আবিষ্কৃত হয়েছে। এই সিল গুলিতে এক ধরনের চিত্রলিপি খােদিত ছিল। এগুলির নাম হল সিন্ধু লিপি বা হরপ্পা লিপি। অনুমান করা হয় যে, এই লিপি ডানদিক থেকে বামদিকে পড়া হত। তবে এই লিপিগুলি এখনও পাঠোদ্ধার করা যায় নি।

বিনােদন

সিন্ধু উপত্যকায় মার্বেল পাথরের তৈরি এক‌ ধরনের বল ও পাশা আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ছিল সিন্ধুবাসীর খেলার সরঞ্জাম। প্রাপ্ত বেশ কিছু সিলমােহরে শিকারের দৃশ্য থেকে অনুমান করা হয় যে, তাদের বিনােদনের আর এক মাধ্যম ছিল শিকার করা। চিত্তবিনােদনের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে নাচ, গান, ষাঁড় ও পাখির লড়াই আয়ােজিত হত বলে অনুমান করা হয়।

হরপ্পা সভ্যতার অর্থনৈতিক জীবন

প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা মূলত কৃষি ও পশুপালন ভিত্তিক অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। তবে বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও বাণিজ্যও এই সভ্যতার অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছিল।

(১) পশুপালন

হরপ্পাবাসীদের অর্থনীতিতে পশুপালনের বিশেষ ভূমিকা ছিল। হরপ্পাবাসীদের গৃহপালিত পশু ছিল গােরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, শূকর ও উট। প্রয়ােজনে তারা গৃহপালিত পশুদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। এ ছাড়া গােরু ও মহিষকে তারা চাষে লাঙল টানার কাজে ব্যবহার করত।

(২) কৃষিকাজ

হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীদের প্রধান প্রধান কৃষিজাত ফসল ছিল গম, যব, তিল, মটর, রাই, বাদাম প্রভৃতি। এছাড়াও বাজরা, ধান, নানা ধরনের কলাই এবং কার্পাস চাষ হত বলে জানা যায়।

(৩) শিল্প

সিন্ধু সভ্যতায় ধাতুশিল্প, মৃৎশিল্প, অলংকারশিল্প ও বস্ত্রবয়নশিল্পের প্রচলন ছিল।

(ক) ধাতুশিল্প

হরপ্পায় তামা ও ব্রোঞ্জের বর্শা, কুঠার, বড়শি, করাত, ছুঁচ, দাঁড়িপাল্লা প্রভৃতি নিদর্শন পাওয়া গেছে। এখানে সােনার অলংকার নির্মাণশিল্পের প্রচলন ছিল। তবে লোহার কোনো চিহ্ন এখানে পাওয়া যায় নি।

(খ) মৃৎশিল্প

হরপ্পা সভ্যতার মৃৎশিল্পীরা পলিমাটি, বালি ও চুনের গুঁড়াে মিশিয়ে কলশি, জালা, থালা, পেয়ালা, ডেকচি, বয়াম প্রভৃতি নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও নানাপ্রকার খেলনা তৈরি করত।

(গ) বস্ত্রবয়নশিল্প

হরপ্পা সভ্যতা বস্ত্রবয়নে খুব উন্নত ছিল বলে জানা যায়।

  • (i) সিন্ধু উপত্যকার বসতি এলাকা থেকে পােড়ামাটি ও বিভিন্ন ধরনের বস্তুর মিশ্রণ দিয়ে তৈরি তকলি মিলছে। এই যন্ত্রের সাহায্যে হাত দিয়ে সুতাে কাটা হত বলে মনে করা হয়।
  • (ii) মহেনজোদাড়োয় প্রাপ্ত রঙিন কাপড়ের টুকরােটি এখনও পর্যন্ত বিশ্বের প্রাচীনতম সুতি কাপড়ের নিদর্শন।
  • (iii) সিন্ধু সভ্যতায় যে পুরােহিত রাজার পাথরের মূর্তিটি পাওয়া গেছে, তার পােশাকে ছুঁচ দিয়ে করা যে অলংকরণ বা নকশা দেখা যায়, তা উন্নত সূচিশিল্পের পরিচায়ক।

(৪) হরপ্পা সভ্যতার বাণিজ্য

হরপ্পা সভ্যতায় তিন ধরনের বাণিজ্যের প্রচলন ছিল বলে জানা যায়।

(ক) স্থানীয় বাণিজ্য

স্থানীয় বাণিজ্য চলত নিকটবর্তী একটি অঞ্চলের সঙ্গে অন্য একটি অঞ্চলের। পশুতে টানা গাড়ি, ভারবাহী বলদ ও জলযানের সাহায্যে পণ্যসামগ্রীর লেনদেন হত।

(খ) অভ্যন্তরীণ দূরপাল্লার বাণিজ্য

মূলত সিন্ধু নদ ধরেই দেশের মধ্যেকার দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে বাণিজ্য চলত। বণিকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে লােথাল, কালিবঙ্গান, ধােলাভিরা ছাড়াও সুদূর হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের সঙ্গেও বাণিজ্যিক যােগাযােগ গড়ে উঠেছিল।

(গ) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য

সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, মিশর, মেসােপটেমিয়া প্রভৃতি বাইরের দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য চলত।

হরপ্পা সভ্যতার আমদানি পণ্য

বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান থেকে সােনা, রুপা, সিসা, টিন ও দামি পাথর হরপ্পা সভ্যতায় আমদানি করা হত।

হরপ্পা সভ্যতার রপ্তানি পণ্য

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হত তুলাে, সুতি বস্ত্র, তামা ও হাতির দাঁতের তৈরি নানা ধরনের জিনিসপত্র। সিন্ধু সভ্যতার লােথাল বন্দরটি ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র।

উপসংহার :- হরপ্পা নগর সভ্যতার অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। গ্রামাঞ্চলে ব্যাপকহারে উৎপাদিত কৃষিজাত দ্রব্য নাগরিক জীবনযাত্রাকে সমৃদ্ধ করেছিল।

Leave a Comment