নতুন রাজতন্ত্র ও টমাস ক্রমওয়েলের অবদান

উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় ‘রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসন যন্ত্র’ থেকে নতুন রাজতন্ত্র ও টমাস ক্রমওয়েলের অবদান আলোচনা কর।

নতুন রাজতন্ত্র ও টমাস ক্রমওয়েলের অবদান আলোচনা

প্রশ্ন:- নতুন রাজতন্ত্র ও টমাস ক্রমওয়েলের অবদান আলোচনা কর।

সূচনা:- ইংল্যাণ্ডের রাজনৈতিক ইতিহাসে টমাস ক্রমওয়েল এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তাঁকে আধুনিক ইংল্যান্ড -এর রূপকার হিসাবে সম্মানিত করা হয়। ইংল্যাণ্ডের নব্যরাজতন্ত্রের রূপকার হিসাবে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন টমাস ক্রমওয়েল, তিনি ছিলেন ইংল্যাণ্ডের প্রথম মন্ত্রী যিনি যাজক সম্প্রদায়ের বিরোধিতা করেন। ইংল্যাণ্ডের ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে তার ভূমিকা চির স্মরণীয়।

নব্য রাজতন্ত্রের ধারা

ইংল্যাণ্ডের রাজা সপ্তম হেনরি প্রতিষ্ঠিত টিউডর রাজতন্ত্রকে ঐতিহাসিক জন রিচার্ড গ্রিন সর্বপ্রথম নব্য রাজতন্ত্র আখ্যা দেন। ঐতিহাসিক ডি. এল. কেয়ারের মতে, সপ্তম হেনরির রাজত্বকালে রাজার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্ষমতা অষ্টম হেনরির শাসনকাল পর্যন্ত বজায় থাকে। পরবর্তীতে রাজার মুখ্য সচিব ও উপদেষ্টা টমাস ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড এক আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি

ইংল্যান্ডের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে টমাস ক্রমওয়েল ‘Act of supremecy‘ ও ১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দে ‘Pilgrims of grace’ আইন পাশ করেন। এর ফলে রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাঁর নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি যাবতীয় ক্ষমতার ওপর হস্তক্ষেপ করে।

টিউডর বিপ্লব

টমাস ক্রমওয়েল এর আমলে ইংল্যান্ডে টিউডর বিপ্লব সংঘঠিত হয়। তার নেতৃত্বে ইংল্যাণ্ডে রোমান চার্চের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে জাতীয় চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। সমগ্র ইংল্যান্ডের ওপর জাতীয় সার্বভৌম প্রতিষ্ঠিত হয় যা ইংল্যাণ্ডের ইতিহাসে টিউডর বিপ্লব নামে খ্যাত।

সংসদীয় আইনের প্রাধান্য

তিনি সর্বপ্রথম সংসদীয় আইনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সংসদীয় আইনগুলিকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ঘটানোর চেষ্টা করেন। ফলে সংসদীয় আইনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

জাতীয় রাষ্ট্রের উত্থান

ক্রমওয়েল জাতীয় প্রশাসন গঠনের মাধ্যমে জাতীয় রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপট রচনা করেন। জাতীয় সার্বভৌমত্বের ধারণা চার্চের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, সংসদীয় আইনের প্রবর্তন, আর্থিক ও প্রশাসনিক বিভাগের পুনর্গঠন এই সমস্ত কিছুর সম্মিলিত প্রভাবে ইংল্যাণ্ড শীঘ্রই একটি জাতীয় রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

প্রি. ভি. কাউন্সিল গঠন

ইউরোপে ধর্ম সংস্কার আন্দোলন -এর আগে পর্যন্ত রাজা এবং তার কর্মচারীরা ছিল প্রশাসনিক প্রধান। কিন্তু ক্রমওয়েল এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে উনিশজন মন্ত্রীকে নিয়ে প্রি. ভি. কাউন্সিল গঠন করেন। ক্রমওয়েল রাজার একটি সচিবালয় গড়ে তোলেন এবং Principal Secretary পদ সৃষ্টি করে নিজে সেই আসনে বসেন।

স্থানীয় শাসনের পুনর্গঠন

জনগণের আন্দোলন মোকাবিলার জন্য ক্রমওয়েলের উদ্যোগে উত্তর ইংল্যান্ডের কাউন্সিলকে নতুনভাবে গঠন করা হয়। এই নব গঠিত কাউন্সিলকে প্রশাসনিক ও বিচার ক্ষমতা দান করা হয়। এই কাউন্সিলের সক্রিয় ভূমিকায় উত্তর ইংল্যাণ্ডে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসে। একইভাবে স্কটল্যান্ডের ওয়েলগ প্রদেশে এবং পশ্চিম ইংল্যান্ডে ক্রমওয়েল আর একটি কাউন্সিল গঠন করেন।

রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির উন্নয়ন

টমাস ক্রমওয়েল রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মান উন্নয়নের দিকেও নজর রেখেছিলেন। কারণ তাঁর মতে আর্থিক উন্নয়ন ছাড়া রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই কারণে তিনি চার্চের সমস্ত সম্পত্তিকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে পরিণত করেন যা ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক মানদণ্ডকে অনেকটা মজবুত করেছিল।

মূল্যায়ন

ইংল্যান্ডের আধুনিক শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর বিকাশে টমাস ক্রমওয়েলের অবদান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment