পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য ও বিভিন্ন দেশে এর কী প্রভাব

উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সপ্তম অধ্যায়: ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগ হতে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল ? বিভিন্ন দেশে এর কী প্রভাব পড়েছিল?

পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত করণ, সাম্যবাদ বলতে কী বোঝো, পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত করণ pdf, সাম্যবাদ কী, পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত করণ প্রক্রিয়া, পূর্ব ইউরোপের শোকাহত জাতীয়তাবাদের কেন্দ্র

পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল? বিভিন্ন দেশে এর কী প্রভাব পড়েছিল?

শ্রেণীদ্বাদশ
অধ্যায়সপ্তম অধ্যায়
Question Typeব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন
Marks8

প্রশ্ন:- পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল? বিভিন্ন দেশে এর কী প্রভাব পড়েছিল? (HS History Question Paper 2018)

সূচনা :- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে পূর্ব ইউরােপ -এ সােভিয়েত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দেখা যায়। তবে এই পর্বে পূর্ব ইউরােপের যে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রসার ঘটেছিল তার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যাই হােক, এর মূল কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিল –

সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য

(১) সাম্যবাদের বিস্তার

পূর্ব ইউরােপের যুগােশ্লাভিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া, হাঙ্গেরি, রােমানিয়া, পােল্যান্ড ইত্যাদি দেশে সােভিয়েত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে রুশ সরকার সাম্যবাদের বিস্তার ঘটানাের উদ্যোগ নেয়। আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিপরীত দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদী আদর্শের বিস্তার শুরু হয়। মতাদর্শগত এই দ্বন্দ্বের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার জন্য সােভিয়েত নেতৃত্ব পূর্ব ইউরােপে সােভিয়েতীকরণের সিদ্ধান্ত নেয়।

(২) সাম্যবাদী জোটের শক্তিবৃদ্ধি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে একদিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি জোট বাঁধে। অপরদিকে সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী দেশগুলি জোটবদ্ধ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে মার্শাল পরিকল্পনা, টুম্যান নীতি প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্ৰহণের ফলে ভীত হয়ে সােভিয়েত রাশিয়া সাম্যবাদী জোটের শক্তি বৃদ্ধির জন্য পূর্ব ইউরােপের দেশগুলি দখল করার উদ্যোগ নেয়।

(৩) সােভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা ও আর্থিক সমৃদ্ধি

রুশ রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিন পূর্ব ইউরােপে একটি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তাণ্ডবলীলায় বিধ্বস্ত সােভিয়েত ইউনিয়নের অগ্রগতির জন্য নিরাপত্তা বজায় রাখার প্রয়ােজন দেখা দেয়। পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত সােভিয়েত অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ও সমৃদ্ধির জন্যই পূর্ব ইউরােপীয় দেশগুলির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দরকার হয়ে পড়ে।

(৪) সদ্য মুক্তি প্রাপ্ত দেশগুলিতে সমধর্মী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা

সােভিয়েত সেনাদল পূর্ব ইউরােপকে জার্মান আধিপত্য থেকে মুক্ত করতে পেরেছিল। তাই সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত দেশগুলিতে সােভিয়েত রাশিয়া সমধর্মী রাজনৈতিক কাঠামাে প্রবর্তনে আগ্রহী হয়।

(৫) বিশ্ব রাজনীতিতে সোভিয়েত শক্তি বৃদ্ধি

পূর্ব ইউরােপে সােভিয়েত প্রভাবাধীন কিছু রাষ্ট্র থাকলে বিশ্ব রাজনীতিতে সােভিয়েতের শক্তিবৃদ্ধি ঘটবে। এই আশায় পূর্ব ইউরোপে সােভিয়েতীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সােভিয়েতীকরণের প্রভাব

বিভিন্ন ক্ষেত্রে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতীকরণ নীতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যেমন –

(১) ঠান্ডা লড়াইয়ের তীব্রতা বৃদ্ধি

পূর্ব ইউরােপের দেশগুলিতে সােভিয়েতীকরণের প্রভাব হিসেবে ঠান্ডা লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়ে। বিশ্ব রাজনীতিতে নিজ নিজ কর্তৃত্ব ধরে রাখার জন্য দুই জোটের তরফ থেকে সামরিক জোট গড়ে তােলা শুরু হয়। ওই সমস্ত সামরিক জোট গঠন বিশ্বশান্তির পক্ষে মােটেই বাঞ্ছনীয় ছিল না।

(২) অ-কমিউনিস্ট শাসকদের উৎখাত

পূর্ব ইউরােপের দেশগুলিতে প্রথমে কমিউনিস্ট ও অকমিউনিস্টদের নিয়ে যৌথ মন্ত্রীসভা গঠন করা হয়। তারপরে অ-কমিউনিস্টদের উৎখাত করে কমিউনিস্টরা ক্ষমতার দখল নেয়। সবশেষে অকমিউনিস্ট সমস্ত সদস্যকে মন্ত্রীসভা থেকে তাড়িয়ে দিয়ে একচেটিয়া, একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

(৩) সােভিয়েত বিরােধিতা ও স্বাধীন চেতনা

পূর্ব ইউরােপের বিভিন্ন দেশে সােভিয়েত একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ শুরু হয়। এইসব দেশ থেকে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক বিকাশের পরিণতি হিসেবে পরবর্তীকালে অর্থাৎ সােভিয়েত ভাঙনের পর সমাজতন্ত্রবাদ -এর বিদায় ঘটে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বদলে জাতীয়তাবাদের পুনরুখান ঘটে।

(৪) স্বশাসন প্রতিষ্ঠা

পূর্ব ইউরােপের দেশগুলিতে সােভিয়েতীকরণের বিরুদ্ধে প্রকৃত স্বশাসনের দাবি ওঠে। গােমুলকার নেতৃত্বে পােল্যান্ডে, ইমরে নেগির নেতৃত্বে হাঙ্গেরিতে আলেকজান্ডার ডুবসেকের নেতৃত্বে চেকোশ্লোভাকিয়াতে, মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে যুগােশ্লাভিয়াতে সােভিয়েত-বিরােধী জাতীয় আন্দোলন চরমে পৌঁছােয়। এইভাবে সােভিয়েত নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শুরু হয়।

(৫) সােভিয়েত নিয়ন্ত্রণের অবসান

পূর্ব ইউরােপের দেশগুলিতে সােভিয়েতীকরণের মাধ্যমে সােভিয়েত রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আয়ু ছিল চার দশক।

উপসংহার :- পূর্ব ইউরােপে সােভিয়েতীকরণ ছিল কৃত্রিম, যান্ত্রিক, আরােপিত, ব্যক্তিকেন্দ্রিক, নিয়ন্ত্ৰণবাদী ও আমলাতান্ত্রিক কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা। সােভিয়েত রাষ্ট্রের তরফ থেকে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই কৃত্রিম শাসনব্যবস্থাকে কোনােরকমে টিকিয়ে রাখা হয়েছিল। তাই দেখা যায়, সােভিয়েত রাশিয়ার ভাঙনের পর এই কৃত্রিম ব্যবস্থা তাসের ঘরের মতাে ভেঙে পড়ে।


পূর্ব ইউরোপের দেশ, সোভিয়েত করণ প্রক্রিয়া, পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত করণ বলতে কী বোঝো, sovietization of eastern europe, মার্শাল পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য কি ছিল

Leave a Comment