২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

প্রাচীন মিশরে নেফারতিতি ও ক্লিওপেট্রার কার্যাবলির পরিচয় দাও

উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় ‘সমাজের ঘটনা প্রবাহ’ থেকে প্রাচীন মিশরে নেফারতিতি ও ক্লিওপেট্রার কার্যাবলির পরিচয় দাও।

প্রাচীন মিশরে নেফারতিতি ও ক্লিওপেট্রার কার্যাবলির পরিচয়

প্রশ্ন:- প্রাচীন মিশরে নেফারতিতি ও ক্লিওপেট্রার কার্যাবলির পরিচয় দাও।

ভূমিকা :- প্রাচীনকালে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা পুরুষের অধীনতা স্বীকার করে পারিবারিক ও গার্হস্থ্য কর্মে নিয়োজিত থেকে জীবন অতিবাহিত করত। তবে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে প্রাচীন মিশরের নেফাতিতি এবং ক্লিওপেট্রার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

নেফারতিতি

প্রাচীন মিশরের অন্যতম খ্যাতনামা মহিলা ছিলেন নেফারতিতি। তিনি ছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতকের মিশরীয় ফ্যারাও আখেনাটেন (Akhenaten) বা চতুর্থ আমেন হোটেপের অন্যতম প্রধানা পত্নী। তিনি মিশরের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।

নেফারতিতির কার্যাবলি

ফ্যারাও আখেনাটেন-এর রাজত্বকালে রানী নেফারতিতি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যে অংশগ্রহণ করেন।যেমন –

(১) প্রশাসনে অংশগ্রহণ

মিশরের প্রশাসন, রাজনীতি ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে নেফারতিতি তাঁর স্বামীর সহকারী হিসাবে যথেষ্ট দায়িত্ববান ছিলেন, যা সমকালীন মিশরের রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। তিনি ১৩৫৩ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ১৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত ফ্যারাও আখেনাটেনের সহকারী হিসাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন।

(২) শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা

ধর্মীয় ক্ষেত্রে একেশ্বরবাদী ধর্মীয় ভাবনার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে মিশরে প্রাচীনকালে ফ্যারাও আখেনাটেনের সময় যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল নেফারতিতি সেই অবস্থা থেকে মিশরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিলেন।

(৩) রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ

প্রশাসনে নেফারতিতি স্বামীর সঙ্গে সহাবস্থান করে মিশরের ধর্মীয় জীবন, রীতিনীতি, রাজকীয় পোশাক প্রভৃতি বিষয়ে যথেষ্ট পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রাচীন মিশরে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ ছাড়াও তিনি আখেন, থিবসহ বিভিন্ন নগরে বহু মন্দির নির্মাণ করেন। এছাড়া নেফারতিতির একটি অনন্য কৃতিত্ব ছিলআখেন নগরীতে রাজধানী স্থানান্তরে অন্যতম দায়িত্ব পালন।

রহস্যময় অন্তর্ধান

স্বামী অনোটেনের সঙ্গে সহকারী হিসাবে শাসন করলেও আখেনাটেনের রাজত্বের দ্বাদশ বর্ষে ইতিহাস থেকে নেফারতিতির নাম অদৃশ্য হয়ে যায়। এই সময় তাঁর মৃত্যু হয় নাকি অন্য কোনো ঘটনা ঘটে, তা সঠিকভাবে জানা যায় না। অনেকে মনে করেন যে, ১৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে স্বামীর মৃত্যুর পর নেফারতিতি স্বাধীনভাবে শাসন পরিচালনা করেছিলেন।

উপসংহার:- নেফারতিতি ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ নারী। তিনি ফ্যারাও আখেনাটেনকে সর্বদা তার নিয়ন্ত্রণে রাখতেন, মিশরের ঐতিহাসিক উপাদানে নেফারতিতির মূর্তি এবং চিত্র তাঁর স্বামী আখেনাটেনের চেয়ে বেশি সংখ্যায় পাওয়া যায়। এর থেকেই মিশরীয় প্রশাসনে তাঁর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যেতে পারে।

ক্লিওপেট্রা

মিশরের ইতিহাসে যে ক্লিওপেট্রার নাম সর্বাধিক প্রসিদ্ধতিনি হলেন মিশরের টলেমি বংশের শেষ শাসক সপ্তম ক্লিওপেট্রা। ক্লিওপেট্রা ৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বাদশ টলেমির কন্যা ক্লিওপেট্রা ছিলেন অসাধারণ বুদ্ধিমতী এবং উচ্চশিক্ষিতা নারী।

সিংহাসন লাভ

সুন্দরী অষ্টাদশী ক্লিওপেট্রা প্রথমদিকে তাঁর পিতার সহ শাসক হিসাবে শাসন করলেও পিতার মৃত্যুর পর তাঁর চেয়ে বয়সে আট বছরের ছোটো ভাই ত্রয়োদশ টলেমিকে বিবাহ করে মিশরে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এর কারণ হল, মিশরের প্রচলিত রীতি ছিলকোনো সঙ্গীর সঙ্গে যৌথভাবে দেশশাসন করতে হবে।

শাসন ক্ষমতা দখল

৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ক্লিওপেট্রা নিজ ভাই ও তাঁর স্বামী চতুর্দশ টলেমিকে হত্যা করে জুলিয়াস সিজারের ঔরসজাত সন্তান সিজারিয়ানকে সিংহাসনে বসিয়ে মিশরে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হন।

অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে সম্পূর্ণ পরাজয়

ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টনির মিলিত বাহিনী শীঘ্রই অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে রোমান শাসক অক্টাভিয়াস সিজারের মুখোমুখি হয়। ক্লিওপেট্রা অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে পরাজয়ের সম্মুখীন হয়ে সৈন্যদল নিয়ে পিছনে এলে অ্যান্টনিও সেনাদলকে ফেলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসেন। ফলে রোমান শাসক অক্টাভিয়াসের বাহিনী এই যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে জয়লাভ করে (৩১ খ্রিঃ পূঃ)।এর ফলে মিশরের স্বাধীনতা লুপ্ত হয় এবং মিশর রোমান সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয়।

আত্মহত্যা

এরপর অক্টাভিয়াস সিজার রানি ক্লিওপেট্রার দুই সন্তানকে হত্যা করেন এবং ক্লিওপেট্রাকে বিবাহ করতে চান। কিন্তু ক্লিওপেট্রা এই বিবাহে অসম্মত হন এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তিনি ৩০ খ্রিঃ পূর্বাব্দের ১২ আগস্ট স্বেচ্ছায় অ্যাসপ (কেউটে জাতীয়) নামে বিষাক্ত সাপের কামড় খেয়ে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন।

কৃতিত্ব

ক্লিওপেট্রা তার রাজত্বকালে নানা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। প্রাচীন যুগের একজন নারী হয়েও শাসন ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে তিনি পুরুষদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি অসীম সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দেন। মিশরের স্বাধীনতার রক্ষার জন্য তার অনুরাগ ও প্রয়াস ছিল সম্পূর্ণ আন্তরিক

উপসংহার :- ‘চেয়ে সবকিছু পাওয়া এবং চেয়ে কিছুই না পাওয়া’ – যদি দুটোই জীবনের চরম ট্র্যাজেডি হয়, তবে ক্লিওপেট্রা জীবন নাটকের রঙ্গমঞ্চে আজীবন সেই চরম ট্র্যাজেডির নায়িকা।উইলিয়াম শেক্সপিয়র রচিত কালজয়ী নাটক অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রা এবং জর্জ বার্নার্ড শ রচিত নাটক সিজার ক্লিওপেট্রা তাকে নিয়েই রচিত হয়েছে।

Leave a Comment