উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় : চীন-সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া চীনের অর্থনৈতিক বিকাশ হতে নানকিং ও তিয়েনসিনের সন্ধির মূল শর্তগুলি আলোচনা করো।
নানকিং ও তিয়েনসিনের সন্ধির মূল শর্তগুলি আলোচনা
প্রশ্ন:- নানকিং ও তিয়েনসিনের সন্ধির মূল শর্তগুলি আলোচনা কর। (২০১৮)
নানকিং-এর সন্ধি
১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে আফিম ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চীন ও ইংল্যান্ডের মধ্যে বিরোধ বাধে।প্রথম আফিমের যুদ্ধে (১৮৩৯-৪২ খ্রি.) পরাজিত হয়ে চীন ব্রিটেনের সাথে নানকিং-এর অসম সন্ধি (২৯ আগস্ট ১৮৪২ খ্রি.) স্বাক্ষরে বাধ্য হয়।
সন্ধির শর্তাবলী
- (i) ক্যান্টন, সাংহাই, অ্যাময়, নিংগপো বন্দরগুলি ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্য ও বসবাসের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই বন্দরগুলি ‘চুক্তি বন্দর’ নামে পরিচিত।
- (ii) ‘চুক্তি বন্দর’ গুলিতে ইউরোপীয়রা নিজ নিজ কনসাল নিয়োগের অধিকার পায়।
- (iii) হংকং বন্দর চিরকালের জন্য ইংরেজদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
- (iv) কো হং প্রথা বাতিল হয়। চীনের সর্বত্র ইংরেজ বণিকদের পণ্য ক্রয়বিক্রয়ের অধিকার স্বীকৃত হয়।
- (v) ক্যান্টন বন্দরে আফিম ধ্বংস করার জন্য চীন সরকার ইংরেজদের ৬ মিলিয়ন, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১২ মিলিয়ন,’কো হং’ বণিকদের ঋণ পরিশোধের জন্য ৩ মিলিয়ন রোপ্য ডলার দিতে বাধ্য হয়।
- (vi) চীনে ব্রিটিশ আমদানি – রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫% শুল্ক ধার্য হয়।
ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক চীনের ওপর আরোপিত এই তীব্র অসম বা বৈষম্যমূলক চুক্তি চীনের সার্বভৌমত্বকে দারুণভাবে ব্যাহত করে।
তিয়েনসিনের সন্ধি
পিকিং – এ দূতাবাস নির্মাণ,ধর্ম প্রচারে স্বাধীনতা, শুল্ক ব্যবস্থা নিজেদের অনুকূলে রাখা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে চীনের সাথে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের দ্বিতীয় আফিমের যুদ্ধ (১৮৫৬-৫৮ খ্রি.) সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে চীন পরাজিত হলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স চীনের উপর তিয়েনসিনের অসম চুক্তি (১৮৫৮ খ্রি.) চাপিয়ে দেয়।
সন্ধির শর্তাবলী
- (i) চীন সরকার ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়।
- (ii) বিদেশি বণিকদের জন্য চীনের আরও ১১ টি বন্দর খুলে দেওয়া হয়।
- (iii) রাজধানী পিকিং – এ বিদেশি দূতাবাস স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
- (iv) বিদেশি বণিকদের সুবিধার্থে বাণিজ্য – শুল্ক হ্রাস করা হয়।
- (v) চীনে নির্দিষ্ট শুল্কের বিনিময়ে আফিমের ব্যবসা বৈধ বলে স্বীকৃত হয়।
- (vi) চীনের অভ্যন্তরে বিদেশি বণিকদের অতি রাষ্ট্রিক অধিকার স্বীকৃত হয়।
- (vii) ছাড়পত্রের মাধ্যমে বিদেশিরা চীনের অভ্যন্তরে অবাধ ভ্রমণের এবং খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকরা চীনে বসবাস ও ধর্মপ্রচারের অনুমতি পায়।