উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় ‘সমাজের ঘটনা প্রবাহ’ থেকে রাজপুত জাতির উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা কর।
রাজপুত জাতির উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করো
প্রশ্ন:- রাজপুত জাতির উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করো।
সূচনা :- প্রাচীন ভারতে জাতি ব্যবস্থার প্রচলনের সূত্রে যে সকল জাতির উদ্ভব ঘটে সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল রাজপুত জাতি।আদি মধ্যযুগে ভারতে জাতি হিসেবে রাজপুতদের উত্থান সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে।
রাজপুত জাতির উৎপত্তি
রাজপুত জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে ঐতিহাসিকগবেষকদের মধ্যে তীব্র মত পার্থক্য আছে। যেমন –
(১) বাণভট্টের মত
রাজপুতরা দাবী করেন যে, তাঁরা বৈদিক যুগের উচ্চবংশীয় ক্ষত্রিয়দের বংশধর। হর্ষবর্ধনেরসভাকবি বাণভট্টের মতে, উচ্চ বংশীয় ক্ষত্রিয় সন্তানরাইরাজপুত নামে পরিচিত। তার মতে রাজপুতরা ছিলেন সূর্য বা চন্দ্রেরবংশজাত।
(২) অগ্নিকূল তত্ত্ব
কবি চাঁদ বরদাই তাঁর বিখ্যাত কাব্য ‘পৃথ্বীরাজ রাসো’ গ্রন্থে বলেছেন যে, বশিষ্ঠ মুনি মাউণ্ট আবু পাহাড়ে ১৪ দিন ধরে যজ্ঞ করে বীরের প্রার্থনা করেছিলেন। বশিষ্ঠ মুনির এই যজ্ঞের আগুন থেকেই রাজপুত জাতির উৎপত্তি হয়েছে বলে চাঁদ বরদাই উল্লেখ করেছেন।
(৩) জায়গীদারদের অবৈধ সন্তান
ডঃ ভিনসেন্ট স্মিথ রাজপুত শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ করে তাদের রাজপুতানার কোনো কোনো অঞ্চলের ক্ষত্রিয় সামন্ত বা জায়গীদারদের অবৈধ সন্তান বলে উল্লেখ করেছেন।
(৪) কর্ণেল টডের মত
ব্রিটিশ ঐতিহাসিক কর্ণেল টড তাঁর “Annals and antiquities of Rajasthan’ গ্রন্থে বলেছেন যে, শক, হুণ, কুষাণ, গুর্জর প্রভৃতি বৈদেশিক যোদ্ধা জাতির মানুষ ভারতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করে।কালক্রমে এই জাতিগুলি ভারতীয়দের সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হয়। এদের সন্তান-সন্ততিদের রাজপুত বলা হয়।
(৫) উইলিয়াম কুকের মত
রাজপুতগণ নিজেদের বৈদিক যুগের ক্ষত্রিয়দের বংশধর রূপে প্রমাণ করার জন্য রাজপুতদের মধ্যে দুটি বিখ্যাত পরিবারের সঙ্গে সূর্য ও চন্দ্রকে যুক্ত করেছিল। তার মতে বিদেশি জাতিগুলি থেকেই ভারতে রাজপুত জাতির উদ্ভব হয়েছে।
(৬) আর্য জাতি তত্ত্ব
ঐতিহাসিক গৌরীশঙ্কর হীরাচাঁদওঝা তাঁর ‘History of Rajputana’ গ্রন্থে বলেছেন যে, রাজপুতরা হল খাঁটি আর্য জাতির সন্তান। তার এই অভিমত অনেক নৃতত্ত্ববিদ পরীক্ষার ভিত্তিতে সমর্থন করেন।
(৭) মিশ্র জাতি
ডঃ ভিনসেন্ট স্মিথের মতে, রাজপুতগণ একটি মিশ্র জাতি। তিনি রাজপুতদের আর্যজাতির বংশধর বলে মনে করেন না। তার মতে রাজপুতরা সতীদাহ, জহরব্রত, সূর্য-আরাধনা প্রভৃতি আর্য রীতি গুলি পালন করত বলে অনেকে রাজপুতদের আর্য বলে ভুল করেন। তিনি রাজপুতদের একটি মিশ্র জাতি বলে উল্লেখ করেছেন।
(৮) রোমিলা থাপারের মত
অধ্যাপিকা রোমিলা থাপার ১৯৯৭ সালে এক গবেষণা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, রাজপুতরা কোথা থেকে এসেছিলেন তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সম্ভবত এরা বিদেশি।
মূল্যায়ন :- সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণ করে ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে, ভারতের শাসক ও যোদ্ধাগোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে ক্ষত্রিয় নামে পরিচিত ছিল, কোথাও তাদের রাজপুত বলা হয়নি।