দশম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় – প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে ভারতে ফরাজী ও ওয়াহাবী আন্দোলনের তুলনামূলক আলোচনা করা হল।
ভারতে ফরাজী ও ওয়াহাবী আন্দোলনের তুলনামূলক আলোচনা
প্রশ্ন:- ভারতে ফরাজী ও ওয়াহাবী আন্দোলনের তুলনামূলক আলোচনা কর।
ভূমিকা :- ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলায় হিন্দু জমিদার ও ব্রিটিশ শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে নিম্নবর্গীয় মুসলিম সমাজ একাধিক ধর্মীয় আন্দোলনে লিপ্ত হয়েছিল। এই ধর্মীয় আন্দোলনগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল ফরাজি এবং ওয়াহাবি বা তরিকা-ই-মহম্মদীয়া আন্দোলন।
সাদৃশ্য বা মিল
ওয়াহাবি ও ফরাজি আন্দোলনের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য বা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন –
(১) ভিত্তি
সূচনালগ্নে উভয় আন্দোলনের ভিত্তিই ছিল কোরান।
(২) ইসলাম ধর্মের সংস্কার আন্দোলন
উভয় আন্দোলনই ছিল মূলত ইসলাম ধর্মের সংস্কার আন্দোলন। ফলে নিচুতলার মুসলমানরা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়।
(৩) জমি ও নীলকর বিরোধী আন্দোলন
উভয় আন্দোলনই ক্রমশ জমিদার ও নীলকর বিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়।
(৪) বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কথা ভাবা হয়নি
উভয় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কথা চিন্তা করেন নি।
(৫) প্রজাস্বত্ব আইন পাস
উভয় আন্দোলনে সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে এবং কৃষকদের উন্নয়নকল্পে প্রজাস্বত্ব আইন প্রণয়ন করে জমিদার, নীলকর ও মহাজনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা করে।
বৈসাদৃশ্য বা অমিল
উভয় আন্দোলনের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য বা মিল থাকলেও বৈসাদৃশ্য বা অমিল কম নেই।
(১) বিস্তৃতির ক্ষেত্রে
বিস্তৃতির দিক থেকে ফরাজি আন্দোলন অপেক্ষা ওয়াহাবি আন্দোলন অনেক বেশি ব্যাপক ও বিস্তৃত ছিল।
(২) শুদ্ধিকরণের ক্ষেত্রে
ফরাজিরা কোরান বহির্ভূত উৎসব অনুষ্ঠান বর্জন করার নির্দেশ দিলেও ওয়াহাবিরা সেরকম কোনো কঠোর নির্দেশ দেননি।
(৩) স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে
১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে তিতুমীরের মৃত্যুর পর বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের অবসান ঘটে। অন্যদিকে দুদুমিয়ার মৃত্যুর পর তাদের উত্তরাধিকারীরা ধর্মীয় আন্দোলন রূপে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফরাজি আন্দোলনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।
স্বাধীনতার ধারণাপত্র ক্ষেত্রে
ফরাজি আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং একটি স্বশাসিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। অন্যদিকে ওয়াহাবিদের উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিকল্প একটি মুসলিম শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা ।
উপসংহার :- ওয়াহাবি ও ফরাজি আন্দোলনের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য থাকলেও এই দুই আন্দোলন মুসলিম ধর্মের সংস্কার সাধনের উদ্দেশ্যে শুরু হয় এবং উভয়েরই লক্ষ্য ছিল নিম্ন শ্রেণীর মানুষদের স্বার্থ রক্ষা করা।