সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ আলোচনা

দশম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় – প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করা হল।

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণগুলির আলোচনা

প্রশ্ন:- সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ গুলি আলোচনা কর।

ভূমিকা :- ছোটোনাগপুরের সাঁওতাল উপজাতি ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দে অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকার এবং তাদের সহযোগী জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে।

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ

সাঁওতাল বিদ্রোহ -এর বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন –

(১) রাজস্ব আরোপ

আদিবাসী সাঁওতালরা অরণ্য অঞ্চলের পতিত জমি উদ্ধার করে চাষবাস করে সেই জমিকে উর্বর করে তোলে। ব্রিটিশ শাসনকালে সরকার-নিযুক্ত জমিদাররা সেই জমির ওপর উচ্চহারে রাজস্ব ধার্য্য করলে সাঁওতাল কৃষকরা জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

(২) অন্যান্য কর

ভূমিরাজস্ব ছাড়াও সরকার, জমিদার প্রমুখ সাঁওতালদের ওপর বিভিন্ন ধরনের করের বোঝা চাপিয়ে দেয়। ফলে দরিদ্র সাঁওতালদের দুর্দশা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।

(৩) মহাজনদের শোষণ

সাঁওতালরা নগদে ভূমিরাজস্ব ও অন্যান্য কর পরিশোধ করতে গিয়ে মহাজনদের কাছ থেকে অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হত। পরবর্তীকালে ঋণের দায়ে তার জমি, ফসল, বলদ কেড়ে নেওয়া হত।

(৪) ব্যবসায়ীদের প্রতারণা

বহিরাগত ব্যবসায়ীরা কেনারাম নামক বাটখারা ব্যবহার করে সাঁওতালদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কেনার সময় এবং বেচারাম নামক বাটখারা ব্যবহার করে নিজেদের পণ্যগুলি সাঁওতালদের কাছে বিক্রির সময় ঠকাত।

(৫) রেলপথ নির্মাণ

সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলে রেলপথ নির্মাণের কাজে সাঁওতাল শ্রমিকদের নিয়োগ করে তাদের খুব কম মজুরি দেওয়া হত। তাছাড়া রেলের ঠিকাদার ও ইংরেজ কর্মচারীরা সাঁওতাল পরিবারগুলির ওপর নানাভাবে অত্যাচার করত।

(৬) সাঁওতাল অইন বাতিল

সরকার সাঁওতালদের নিজস্ব আইন ও বিচারপদ্ধতি বাতিল করে সাঁওতাল এলাকায় ইংরেজদের জটিল আইন ও বিচারব্যবস্থা চালু করে।

(৭) খ্রিস্টধর্ম প্রচার

খ্রিস্টান মিশনারিরা সাঁওতালদের ধর্মকে অবজ্ঞা করত এবং সুকৌশলে সাঁওতালদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করত।

(৮) নীলচাষ

নীলকর সাহেবরা সাঁওতাল কৃষকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের নীলচাষে বাধ্য করত।

উপসংহার :- বিভিন্ন ভাবে শোষণ ও নিপীড়নের ফলে সাঁওতাল উপজাতি বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তারা সিধু, কানু ও অন্যান্যদের নেতৃত্বে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূচনা করে।

Leave a Comment