উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় ‘অর্থনীতির বিভিন্ন দিক’ থেকে ভারতে সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
ভারতে সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা
প্রশ্ন:- ভারতে সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য লেখো।
সূচনা :- প্রাচীন ভারতে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত অর্থাৎ ৩০০ খ্রিস্টাব্দ ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে সামন্ততন্ত্রের অস্তিত্ব ছিল। ড : রামশরণ শর্মা প্রাচীন ভারতের সামস্ততন্ত্রের উদ্ভব, বিকাশ ও অবক্ষয়কালকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন।তবে প্রাচীন যুগে ভারতে সামস্ততন্ত্রের অস্তিত্ব প্রকৃতই ছিল কি না তাই নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক আছে।
ভারতে সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য
যে সমস্ত ঐতিহাসিক প্রাচীন ভারতে সামস্ততন্ত্রের অস্তিত্ব ছিল বলে মনে করেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ড . ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, ড. রামশরণ শর্মা, ড. ডি. কোশাম্বী প্রমুখ। তাঁদের যুক্তিঅনুসারে ভারতের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য গুলি হল –
(১) কৃষকদের বদ্ধ জীবন
প্রাচীন যুগে কৃষককে ‘হালকর’, ‘বদ্ধ হল’ প্রভৃতি শব্দ দ্বারা চিহ্নিত করা হতো। এর থেকে কেউ কেউ বলতে চান যে জমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত হয়ে কৃষকেরা শুধু প্রভুর জমিতে শ্রমদানে বাধ্য হতো যা সামন্ততন্ত্রকেই সমর্থন করে।
(২) শিল্প-বাণিজ্যের অবনতি
বিভিন্ন পুরাণে বৈশ্যদের বাণিজ্যের পেশা ছেড়ে কৃষিকাজে নিযুক্ত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাছাড়া আদি মধ্যযুগে কৃষকেরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত উৎপাদন করতে আগ্রহী ছিল না।এই বিষয়গুলি শিল্প-বাণিজ্যের অবনতিই প্রকাশ করে।
(৩) অগ্রহার ব্যবস্থা
প্রাচীন কালে বিভিন্ন ধর্মস্থানে এবং ব্রাহ্মণদের ভূমিদান করার প্রথা প্রচলিত ছিল। এই দানপ্রথা অগ্রহার ব্যবস্থা নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থায় দান করা জমির উপর দানগ্রহীতা ব্যক্তিগত অধিকার লাভ করে। অন্যদিকে জমিদাতা রাজার বা রাষ্ট্রের মালিকানা হ্রাস পায়।
(৪) দাসপ্রথা
বৈদিক সাহিত্য, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, বিভিন্ন স্মৃতিশাস্ত্র ও অন্যান্য উপাদান থেকে প্রাচীন ভারতে দাসপ্রথার অস্তিত্বের কথা জানা যায়, যা সামন্ততন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।
সামন্ততন্ত্রের অস্তিত্বের বিপক্ষে
যেসব ঐতিহাসিক প্রাচীন ভারতে সামস্ততন্ত্রের অস্তিত্ব ছিল না বলে মনে করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ড. রণবীর চক্রবর্তী প্রমুখ। তাঁদেরযুক্তি গুলি হল –
- (১) ‘মণ্ডপিকা’ গুলিতে বাণিজ্যিক লেনদেনের এক সমৃদ্ধ ছবি দেখা যায়। সমকালীন লেখমালায় সার্থবাহ, বণিক ও শ্রেষ্ঠীদের পর্যাপ্ত উল্লেখ পাওয়া যায়।
- (২) সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বিশেষ সজীব ছিল।
- (৩) উত্তর ভারতের ‘মণ্ডপিকা’র ন্যায় দক্ষিণ ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল ‘নগরম’গুলি।এই সময় বণিক সংগঠন বিশেষ সক্রিয় ছিল।
সিদ্ধান্ত
পশ্চিম ইউরোপের সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোর মতো এত সুস্পষ্ট না হলেও প্রাচীন ভারতে সামন্ততান্ত্রিক ধাঁচের কিছু বৈশিষ্ট্য যে ছিল সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।আর এটাই প্রাচীন ভারতে সামস্ততন্ত্রের অস্তিত্বকে সন্দেহের আবর্তে ফেলেছে।
উপসংহার :- ভারতে প্রাচীন কালে গুপ্ত রাজাদের শাসনকালে এবং মধ্যযুগে দিল্লির সুলতানি শাসনকালে শাসন ব্যবস্থার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো লক্ষ্য করা যায়।