২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

প্রাচীন রোম ও প্রাচীন ভারতের দাস প্রথার তুলনামূলক আলোচনা

উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় ‘অর্থনীতির বিভিন্ন দিক’ থেকে প্রাচীন রোম ও প্রাচীন ভারতের দাস প্রথার তুলনামূলক আলোচনা কর।

প্রাচীন রোম ও প্রাচীন ভারতের দাস প্রথার তুলনামূলক আলোচনা কর

প্রশ্ন:- প্রাচীন রোম ও প্রাচীন ভারতের দাস প্রথার তুলনামূলক আলোচনা কর।

সূচনা :- প্রাচীন রােমান সভ্যতা ও প্রাচীন ভারতে দাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল। উভয় দেশের দাসপ্রথার মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও কিছু বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

প্রাচীন রােম ও প্রাচীন ভারতের দাস প্রথার সাদৃশ্য

প্রাচীন রােমান সাম্রাজ্যের দাসপ্রথা এবং প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার কিছু সাদৃশ্য বা মিল ছিল। যেমন –

  • (১) ক্রীতদাস বাজার:- প্রাচীন রােমে ক্রীতদাস ক্রয়বিক্রয়ের জন্য ক্রীতদাস বাজার গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন ভারতেও দিল্লি-সহ বিভিন্ন স্থানে ক্রীতদাস ক্রয়বিক্রয়ের জন্য ক্রীতদাস বাজার গড়ে উঠেছিল।
  • (২) প্রাচীন রােমে শত্রুপক্ষের যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হত। এছাড়া বিদেশ থেকে ক্রীতদাস সংগ্রহ করা হত।প্রাচীন ভারতেও পরাজিত শত্রুপক্ষের যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হত। তাছাড়া বিদেশ থেকেও ভারতে ক্রীতদাস আমদানি করা হত।
  • (৩) প্রাচীন রােমে ক্রীতদাসদের সন্তান-সন্ততিও জন্মসূত্রে ক্রীতদাসে পরিণত হত। একইভাবে প্রাচীন ভারতেও ক্রীতদাসদের সন্তান-সন্ততি জন্মসূত্রে ক্রীতদাসে পরিণত হত।
  • (৪) প্রাচীন রােমে ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর গৃহ, খামারবাড়ি, কৃষিক্ষেত্র, ব্যাবসা ও অন্যান্য যাবতীয় ক্ষেত্রের পরিশ্রমসাধ্য কাজগুলি সম্পাদন করত।প্রাচীন ভারতেও ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর গৃহ, খামারবাড়ি, কৃষিক্ষেত্র, ব্যাবসা ও অন্যান্য যাবতীয় ক্ষেত্রের পরিশ্রমসাধ্য কাজগুলি সম্পাদন করত।
  • (৫) প্রাচীন রােমে ক্রীতদাসরা পালানাের চেষ্টা করলে বা নির্দিষ্ট কাজ যথাসময়ে শেষ না করতে পারলে প্রভুরা ক্রীতদাসদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার চালাত। শারীরিক নির্যাতনের ফলে ক্রীতদাসের শরীরের নানা স্থানে সর্বদা ক্ষত হয়ে থাকত।প্রাচীন ভারতেও ক্রীতদাসদের ওপর তাদের প্রভুরা সীমাহীন নির্যাতন চালাত। পালানাের চেষ্টা, পর্যাপ্ত পরিশ্রম না করা প্রভৃতিই ছিল নির্যাতনের প্রধান কারণ।

প্রাচীন রােম ও প্রাচীন ভারতের দাস প্রথার বৈসাদৃশ্য

প্রাচীন রোম ও প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার কিছু সাদৃশ্য থাকলেও বৈসাদৃশ্য বা অমিল খুব বেশি। যেমন –

(১) প্রসার বা ব্যাপকতা

প্রাচীন ভারতের তুলনায় প্রাচীন রােমে দাসপ্রথার প্রসার বা ব্যাপকতা ছিল অনেকটাই বেশি। বস্তুত রােমের একটি বড়াে অংশের মানুষই ছিল ক্রীতদাস।প্রাচীন রােমের তুলনায় প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার প্রসার বা ব্যাপকতা ছিল অনেক কম।

(২) ক্রীতদাস নির্ভর অর্থনীতি

প্রাচীন রােমের প্রায় প্রতিটি ধনী ব্যক্তির অধীনেই কিছু সংখ্যক ক্রীতদাস থাকত। তারা ক্রীতদাসদের দিয়েই যাবতীয় কাজ করাত। এর ফলে রােমের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ক্রীতদাসদের শ্রম-নির্ভর হয়ে পড়ে।কিন্তু প্রাচীন ভারতে প্রতিটি ধনী ব্যক্তির অধীনে ক্রীতদাস থাকত না। কৃষি বা শিল্পের কাজে ব্যুক্ষেত্রে সাধারণ শ্রমিক ও মজুর নিযুক্ত হত। ফলে ভারতের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ক্রীতদাসদের শ্রম-নির্ভর হয়ে পড়েনি।

(৩) সরকারের ভূমিকা

প্রাচীন রােমে সরকার ক্রীতদাস রাখার জন্য দাস মালিকদের কাছ থেকে কর আদায় করত। এর  বিনিময়ে সরকার ক্রীতদাস প্রথাকে মদত দিত।প্রাচীন ভারতে সরকার ক্রীতদাস রাখার জন্য দাস মালিকদের কাছ থেকে কর আদায় করত না। তাই সরকারি কাজের বাইরে ক্রীতদাস প্রথাকে মদত দেওয়ার প্রশ্ন ছিল না।

(৪) অধিকার বা সুবিধা

প্রাচীন রােমের ক্রীতদাসরা ছিল সম্পূর্ণরূপে পরাধীন। তারা সমাজ, রাষ্ট্র, আইনকানুন প্রভৃতি কোনাে ক্ষেত্রে কোনাে অধিকার বা সুবিধা পেত না।অন্যদিকে প্রাচীন ভারতের ক্রীতদাসরা রােমের ক্রীতদাসদের তুলনায় কিছুটা স্বাধীন ছিল। রাষ্ট্র, সমাজ, আইনকানুন প্রভৃতি বিষয়ে তারা কিছু কিছু অধিকার ভােগ করত।

(৫) প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি

প্রাচীন রােমে ক্রীতদাসরা ছিল তাদের প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি। প্রভুরা তাদের অধীনস্ত ক্রীতদাসদের বন্ধক, বিক্রি, এমনকি হত্যাও করতে পারত।কিন্তু প্রাচীন ভারতে ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলেও প্রভু ক্রীতদাসদের হত্যা করতে পারত না। তবে ক্রীতদাসদের বন্ধক বা বিক্রি করার অধিকার প্রভুদের ছিল।

(৬) সমৃদ্ধ অর্থনীতি

প্রাচীন রােমে ক্রীতদাসরা মদ, মাংস, তেল, বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীসহ নানান রপ্তানিপণ্য উৎপাদন করত। এইসব বাণিজ্যিক পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে রােমের যথেষ্ট অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এসেছিল। অন্যদিকে প্রাচীন ভারতেও ক্রীতদাসরা বিভিন্ন উৎপাদনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকত। তবে সমগ্র দেশের বিচারে এই উৎপাদন ছিল সামান্য। তাই এইসব পণ্য রপ্তানি করে রােমের মতাে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ভারতে আসেনি।

(৭) প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক

প্রাচীন রােমে মালিকদের সঙ্গে ক্রীতদাসদের সম্পর্ক ছিল প্রভু-ভূত্যের। সেখানকার ক্রীতদাসদের জীবন ছিল বদ্ধ। তাদের পালানো প্রতিরােধ করতে হাতে-পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে এবং গলায় ধাতব গলাবন্ধনী পরিয়ে রাখা হত। কিন্তু প্রাচীন ভারতে ক্রীতদাসদের জীবন প্রাচীন রোমের ক্রীতদাসদের মতাে এতটা বদ্ধ ছিল না। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ভারতের ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর কাছ থেকে পারিবারিক সদস্যের মতো ব্যবহার পেত।

(৮) গ্ল্যাডিয়েটরের লড়াই

প্রাচীন রােমে সাধারণ নাগরিকদের অবসর বিনােদনের উদ্দেশ্যে ক্রীতদাসদের গ্ল্যাডিয়েটরের লড়াই নামে এক নিষ্ঠুর অমানবিক খেলায় অংশ নিতে হত।অন্যদিকে প্রাচীন ভারতে ক্রীতদাসদের এরূপ কোনাে নিষ্ঠুর ও অমানবিক খেলায় অংশ নিয়ে সাধারণ দর্শকদের মনােরঞ্জন করতে হত না।

(৯) উৎসব অনুষ্ঠান

প্রাচীন রােমে কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে প্রভু ও তাদের অধীনস্ত ক্রীতদাসদের মধ্যে সহমর্মিতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে সতুরনালিয়া নামে উৎসব অনুষ্ঠিত হত।কিন্তু প্রাচীন ভারতে প্রভু ও তাদের অধীনস্ত দাসদের মধ্যে সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য এরূপ কোনাে উৎসব অনুষ্ঠিত হত না।

উপসংহার :- প্রাচীন ভারতে এবং প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে দাসপ্রথার অস্তিত্ব সর্বজনবিদিত।কিন্তু প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের মতো এত ব্যাপক ও মর্মান্তিক দাসপ্রথার অস্তিত্ব ভারতে কখনোই ছিল না।

Leave a Comment