২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

মধ্যযুগের উইরোপে গিল্ড প্রতিষ্ঠার কারণ আলোচনা করো ও গিল্ডের কাজগুলি লেখো

উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় ‘অর্থনীতির বিভিন্ন দিক’ থেকে মধ্যযুগের উইরোপে গিল্ড প্রতিষ্ঠার কারণ আলোচনা করো ও গিল্ডের কাজগুলি লেখো।

Table of Contents

মধ্যযুগের উইরোপে গিল্ড প্রতিষ্ঠার কারণ আলোচনা করো ও গিল্ডের কাজগুলি লেখো

প্রশ্ন:- মধ্যযুগের উইরোপে গিল্ড প্রতিষ্ঠার কারণ আলোচনা করো ও গিল্ডের কাজগুলি লেখো।

ভূমিকা :- মধ্যযুগে ইউরোপে বাণিজ্যের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয়গুলির বিকাশ ঘটেছিল। এই সময় বণিক, শিল্পী, কারিগর প্রমুখ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকায় নিজেদের গোষ্ঠী স্বার্থ সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে নিজেদের পৃথক পৃথক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা গিল্ড নামে পরিচিত।

গিল্ড প্রতিষ্ঠার কারণ

প্রথম গিল্ড প্রতিষ্ঠা করে বণিকরা। ইংল্যাণ্ডে প্রথম ব্যবসায়ীদের গিল্ড ও ইতালিতে প্রথম কারিগরদের গিল্ড গড়ে ওঠে। এই গিল্ড প্রতিষ্ঠার পেছনে বিভিন্ন কারণ পরিলক্ষিত হয়। যেমন –

(১) বেআইনি কর আদায় প্রতিরোধ

মধ্যযুগে সামন্ত প্রভুরা বণিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্ন ধরনের বে-আইনি কর আদায় করত। এই সব বেআইনি কর প্রতিরোধ করতে ব্যবসায়ীরা গিল্ডের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।

(২) অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি দূরকরা

ব্যবসা বাণিজ্যের অনিশ্চয়তা, ঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের গিল্ড গড়ে তুলেছিল।

(৩) রক্ষীবাহিনী তদারকি

পথে দস্যুদের আক্রমণ করতেবণিকরা যে রক্ষী বাহিনী নিয়োগ করত তার তদারকির প্রয়োজনে গিল্ডের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।

(৪) আধিপত্য বৃদ্ধি

গিল্ড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বণিকরা নগর ওবন্দরগুলিতে নিজেদের আধিপত্য বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল।

(৫) কাঁচামাল ও শ্রমিকের জোগান অব্যাহত রাখা

উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখতে কারখানায় কাঁচামাল ও শ্রমিকদের জোগান নিশ্চিত রাখতে গিল্ড প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

(৬) কারিগরদের স্বার্থ রক্ষা

বণিকরা যাতে কারিগরদের পণ্যের মূল্য বা শ্রমের মজুরি কম না দিতে পারে সেই উদ্দেশ্যে কারিগররা নিজেদের গিল্ড প্রতিষ্ঠা করেছিল।

(৭) নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোধ

কারিগরদের নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে গিল্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

(৮) ক্রেতা সুরক্ষা

অসাধু কারিগরদের হাত থেকে ক্রেতাদের রক্ষার উদ্দেশ্যে গিল্ড প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

গিল্ডের কাজ

মধ্যযুগে গড়ে ওঠা ইউরোপের বণিক ও কারিগরদের গিল্ডগুলি বিভিন্ন ধরনের কাজ করত।যেমন –

(১) বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা

গিল্ডগুলি নিজেদের সদস্যদের বাণিজ্যিক স্বার্থের দিকে সর্বদা নজর রাখত এবং বাণিজ্যে নিজেদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করত। সকল সদস্য যাতে সমান সুযোগ সুবিধা পায় সেদিকে গিল্ড নজর রাখত। অন্য অঞ্চলের বাসিন্দা বা কোনো গিল্ডের সদস্য নয় এমমন ব্যক্তিকে বাণিজ্য করার অধিকার কোনো গিল্ড দিত না।

(২) দুর্নীতি প্রতিরোধ

গিল্ডগুলি ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি রোধ করা এবং পণ্য দ্রব্যের সঠিক গুণগত মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করত। তারা ভেজাল দ্রব্য বিক্রয় প্রতিরোধ করার উদ্যোগ নিত।

(৩) নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোধ

পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি রোধ করা এবং পণ্যের মূল্য সুনির্দিষ্ট করে নিজেদের মধ্যে ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বন্ধ করার ক্ষেত্রে গিন্ডগুলি কাজ করত। গিল্ডগুলি নিজেদের সদস্য সংখ্যা সীমিত রেখে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বন্ধ করার চেষ্টা করত।

(৪) কারখানার কাজ তদারকি

কারখানায় নিয়মিত কাঁচামাল ও শ্রমিকের জোগান, শ্রমিকের কাজের সময়সীমা নির্ধারণ এবং কারখানায় কাজের সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়ে গিল্ডগুলি উদ্যোগ নিত।

(৫) বাণিজ্যের অগ্ৰগতিতে কাজ

পণ্য চলাচলের পথে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, পণ্য চলাচলে নজর রাখা প্রভৃতির মাধ্যমে গিল্ডগুলি বাণিজ্যের অগ্রগতিতে সহায়তা করত।

(৬) সদস্যদের সাহায্য করা

কোনো সদস্যের দারিদ্র্য, সম্পত্তি ধ্বংস হওয়া, ঋণের দায়ে পড়া বা কারারুদ্ধ হওয়া প্রভৃতিক্ষেত্রে গিল্ড তার সদস্যদের সহায়তা করত। সদস্যদের মধ্যে যেকোনো বিরোধের মীমাংসা করা এবং মৃত সদস্যদের পরিবারের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা প্রভৃতিও গিল্ডের অন্যতম কাজ ছিল।

(৭) জরিমানা ও শাস্তি প্রদান

গিল্ডের নিয়মকানুনগুলি ছিল আইনের মতোই মূল্যবান। এই নিয়মকানুনগুলি অমান্য করলে গিল্ড তার সদস্যদের জরিমানা ও শাস্তিদান করত।

(৮) প্রশাসনিক কাজ

গিল্ডগুলি শহরের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করত। শহরের বাসিন্দাদের স্বার্থরক্ষা, পণ্য শুল্ক আদায় ছাড়াও শহরের সেতু, প্রাচীর, ফটক, নর্দমা প্রভৃতি নির্মাণে এবং রক্ষণাবেক্ষণে তদারকি করা প্রভৃতি বিভিন্ন কাজ গিল্ডগুলি করত।

(৯) জনকল্যাণমূলক কাজ

গিল্ডের সদস্যদের আদায়ীকৃত চাঁদার অর্থে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, জনসাধারণের জন্য গৃহগুলির সংস্কার, হাসপাতাল ও অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি কাজ সম্পন্ন হত।

উপসংহার :- গিল্ডগুলি সামন্ত প্রভুদের সঙ্গে খাজনা, শুল্ক প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করত, ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির ব্যবস্থা করত, চার্চের নিয়ন্ত্রণমুক্ত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করত।

Leave a Comment