২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

জিয়াউদ্দিন বরনির ফতােয়া-ই-জাহান্দারিতে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্বন্ধে ধারণা

উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় ‘রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসন যন্ত্র’ থেকে জিয়াউদ্দিন বরনির ফতােয়া-ই-জাহান্দারিতে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্বন্ধে ধারণা কী ছিল তা আলোচনা কর।

জিয়াউদ্দিন বরনির ফতােয়া-ই-জাহান্দারিতে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্বন্ধে ধারণা

প্রশ্ন:- জিয়াউদ্দিন বরনির ফতােয়া-ই-জাহান্দারিতে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্বন্ধে ধারণা কী ছিল?

ভূমিকা:- দিল্লির সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের সভাসদ ছিলেন জিয়াউদ্দিন বরনি। জিয়াউদ্দিন বরনি রচিত ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থে তিনি রাষ্ট্র এবং ও রাজতন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন।

(ক) রাজতন্ত্র

বরনি তার ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্ৰন্থে ইসলাম ও রাজতন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।যেমন –

(১) রাজতন্ত্রের রূপ

জিয়াউদ্দিন বরনি তাঁর ফতােয়া-ই-জাহন্দারি গ্রন্থে চরম রাজতন্ত্রকে সমর্থন করেছেন। তিনি রাজতন্ত্রকে একটি বংশানুক্রমিক প্রতিষ্ঠান বলে উল্লেখ করেছেন।তিনি রাজাকে সবধরনের বন্ধন থেকে মুক্ত চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী বলে ঘােষণা করেছেন। তার মতে, পারস্যের সম্রাট ইসলামের আদর্শ ভাবধারা রক্ষা করে চলেছে।পারস্যের রাজতন্ত্রের জাকজমক, বিলাস-বৈভব ও মর্যাদা সমগ্র ইসলামি জগতে শ্রদ্ধা লাভ করেছে।তাই দিল্লির সুলতানি সহ যে কোনো রাজতন্ত্রেরই উচিত পারস্যের রাজতন্ত্রকে অনুকরণ করা।

(২) কাউন্সিল গঠন

বরনির মতে, প্রশাসনিক কাজে সাহায্যের জন্য সুলতান একটি পরিষদবা কাউন্সিলগঠন ও তার সংস্কার করবেন। এই কাউন্সিল অর্থাৎ মজলিস-ই-খাস এমন ভাবে গঠন করতে হবে, যাতে রাজার পরিবর্তন ঘটলেও কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত নীতিগুলির কোনাে পরিবর্তননা হয়।

(৩) আইনের সংরক্ষণ

বরনির মতে, ইসলামিক রাজ্যগুলিতে কোরান অনুযায়ী শরিয়ত আইনই শেষ কথা। ইসলাম ধর্মমত অনুসারে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বারাষ্ট্রীয় জীবনের একমাত্র নিয়ন্ত্রক হলশরিয়তিবিধান। রাজা যেহেতু ঈশ্বরের প্রতিনিধি এবং খলিফার হয়ে শাসন সম্পাদন করেন, তাই শরিয়তি আইন ঠিকমতাে প্রযুক্ত হচ্ছে কিনা তা দেখা রাজার অন্যতম কর্তব্য।

(খ) রাষ্ট্রনীতি

ইতিহাসের বিষয়বস্তুর বিশ্লেষণ ও ইতিহাস দর্শন-চিন্তায় জিয়াউদ্দিন বরনি ছিলেন সুলতানি যুগের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক। তিনি ফতোয়া-ই-জাহান্দারী গ্রন্থে সুলতানি আমলের রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেমন –

(১) রাজকীয় মর্যাদা

বরনির মতে সীমাহীন মর্যাদা, আড়ম্বর ও গৌরব প্রকাশের মাধ্যমে রাজার ক্ষমতা সর্বাত্মক হতে পারে।রাজা সর্বদা তার বিপুল ক্ষমতা ও জাঁকজমকপূর্ণ মর্যাদার প্রকাশ করলে প্রজাদের অন্তর থেকে স্বাভাবিকভাবেই রাজার প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ ঘটবে।

(২) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা

প্লেটো ও অ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রনৈতিক ভাবনায় প্রভাবিত বরনি মনে করতেন রাজার প্রধান কর্তব্য হলন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ন্যায়বিচার বলতে সত্য, ন্যায় ও ধর্মের প্রতিষ্ঠা করাকে বুঝিয়েছেন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে আগত যাবতীয় বাধা রাজাকে অপসারিত করতে হবে। যাবতীয় অন্যায় ও অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে রাজা কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।

(৩) ইসলামের সুপ্রতিষ্ঠা

মুসলিম রাজার অন্যতম প্রধান কর্তব্য হল ইসলামের সুরক্ষাদান এবং তার প্রচার ও প্রসার ঘটানাে। রাজাদের স্মরণ রাখতে হবে যে তারা কেবলমাত্র খলিফা (ঈশ্বরের প্রতিনিধি)-দের অসমাপ্ত কাজগুলি সম্পাদন করেন। তাঁর শাসন যেহেতু ইসলাম অনুমােদিত, তাই নিষ্ঠা-সহ তিনি ইসলামি শরিয়তের বিধিবিধানগুলি অনুসরণ করবেন।

(৪) প্রজাসাধারণের কল্যাণসাধন

বরনির মতে, ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রজাদের কল্যাণসাধনে রাজাকে উদ্যোগী হতে হবে। প্রজাকল্যাণে ব্যর্থ হলে রাজা প্রজাদের আনুগত্য হারাবেন। রাজপথ তৈরি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ-সহ নানা জনকল্যাণমূলক কাজ রাজা করবেন। রাজা অমুসলিমদের নিরাপত্তা ও স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকার দেবেন।

(৫) সুলতানের ধর্মীয় কর্তব্য

ইসলামের আদর্শ সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য সুলতানের হাতে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব থাকা উচিত বলে বরনি উল্লেখ করেছেন।তার মতে মুসলিমদের মধ্যে ইসলামের আদর্শ ও ভাবধারা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে সুলতানের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন আছে।

উপসংহার :- জিয়াউদ্দিন বরনির ফতোয়া-ই-জাহান্দারী সুলতানি যুগের রাষ্ট্রনীতি ও শাসন নীতি বিষয়ক সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। অধ্যাপক ইরফান হাবিবের মতে বরনি ইতিহাসকে শুধু ঘটনার বিবরণের মধ্যে আবদ্ধ রাখেননি। ইতিহাসকে তিনি সমাজের দর্পণ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

Leave a Comment