২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

মোগল ও অটোমান সাম্রাজ্যের তুলনা

উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: সাম্রাজ্য: সংজ্ঞা, রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে পার্থক্য হতে মোগল ও অটোমান সাম্রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা কর।

মোগল ও অটোমান সাম্রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা

প্রশ্ন:- মোগল ও অটোমান সাম্রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা করো।

ভূমিকা :- বিশ্বের দুটি অন্যতম আধিপত্যশালী সাম্রাজ্য ছিল মোগল ও অটোমান সাম্রাজ্য। এই দুটি সাম্রাজ্যের মধ্যে নানান ক্ষেত্রে যেমন মিল লক্ষ্য করা যায় তেমনি অনেক অমিলও চোখে পড়ে।

দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে সাদৃশ্যসমূহ

মোগল ও অটোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে একাধিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।যেমন –

(১) বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র

মোগল সম্রাট বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাজবংশই পরবর্তী ৩২০ বছর দিল্লির সিংহাসন অলংকৃত করেছিল। সিংহাসনপ্রাপ্তি কখনও রক্তক্ষয়ের মধ্যে দিয়ে হয়েছে। কিন্তু পুরোটাই ছিল বংশানুক্রমিক। অপরদিকে ওসমানের হাত ধরে তুরস্ককে কেন্দ্র করে যেঅটোমান সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল তা ক্রমপরম্পরায় চলেছিল। কিছু ক্ষেত্রে বিচ্যুতি ঘটলেও সাম্রাজ্য বংশানুক্রমিক ভিত্তিতেই শাসিত হয়েছে।

(২) সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি

বাবর শুধুমাত্র মোগল রাজ বংশের সূচনাই করেননি, তিনি মালব, গাজীপুর, বারাণসী প্রভৃতি লাভ করেন। পরবর্তীকালে সকল মোগল শাসক বিশেষ করে ঔরঙ্গজেব সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি গ্রহণ করেন।অন্যদিকে অটোমান শাসকরা তুরস্কের গণ্ডী পেরিয়ে ভূমধ্যসাগরীয় ইউরোপে যেমনসাম্রাজ্য বিস্তার ঘটিয়েছিল তেমনি সমগ্র বলকান অঞ্চলওএই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

(৩) সামরিক শক্তি নির্ভর রাষ্ট্রব্যবস্থা

মোগল সম্রাটরা প্রথম থেকেই সুদক্ষ সামরিক বাহিনীতে বিশ্বাসী ছিলেন। সম্রাট বাবরের হাত ধরে যে সামরিক বাহিনী গড়ে উঠেছিল মহামতি আকবরের হাত ধরে তা পরিপূর্ণতা পায়। অপরদিকে অটোমান সাম্রাজ্যের মূল ভিত্তিই ছিল সামরিক শক্তি। ওসমানের হাত ধরে সামরিক বাহিনীর যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রথম মহম্মদ, সুলেমান ও চতুর্থ মুরাদের হাত ধরে তা পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল।

(৪) জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ

মোগল সম্রাট সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশিপ্রজাকল্যাণকামিএকাধিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মোগল শাসকরা জনগণের সার্বিক উন্নতির জন্য বাজার নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরি, ধর্মীয় পীঠস্থান স্থাপন, সভাগৃহপ্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একইভাবে অটোমান সাম্রাজ্যের শাসকেরাও জনকল্যাণকামী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁরা সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের পাশাপাশিরাস্তাঘাট তৈরি ও সেতুনির্মাণে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

(৫) ধর্মীয় সহিষ্ণুতা

ঔরঙ্গজেবকে বাদ দিলে সকল মোগল শাসক পরধর্ম সহিষ্ণুতা দেখিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে আকবরের সুল-ই-কুল প্রতিষ্ঠার কথা বলা যায়।অটোমান শাসকরা সুন্নি মুসলমান হলেও তারা সাম্রাজ্যের সর্বত্র বসবাসকারী অন্যান্য ধর্মের মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহিষ্ণু ছিলেন।

(৬) শিল্পকলা,স্থাপত্য,ভাস্কর্য ও সাহিত্যে সাদৃশ্যতা

মোগল সম্রাটরা যেমন সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন তেমনি শিল্প ও সংস্কৃতিমনস্ক ছিলেন। ‘বাবরনামা’,’হুমায়ুননামা’, আকবরনামা’, ‘রামচরিতমানস’, চৈতন্যচরিতামৃত প্রভৃতি এই সময়েরই অমর সৃষ্টি। তাজমহল জামা মসজিদ, দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস প্রভৃতি অপূর্ব স্থাপত্যের নমুনা এই যুগে পাওয়া যায়। অটোমান তুর্কী শাসকরাও সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। শিল্পক্ষেত্রেও তাদের অভাবনীয় উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। সুলেমানীয় মসজিদ, সেলিনিয়া মসজিদ, রাজপ্রাসাদ, সেতু প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য শিল্প নিদর্শন।

দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে বৈসাদৃশ্য

মধ্যযুগের সাম্রাজ্য হিসেবে ভারতের মোগল সাম্রাজ্য এবং ইউরোপের অপমান সাম্রাজ্যের মধ্যে বেশ কিছু বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন –

(১) সাম্রাজ্যের বিশালতা

মোগল সম্রাটরা সাম্রাজ্যের সীমানা উত্তরোত্তর বাড়িয়ে নিয়ে গেলেও ভারতের অভ্যন্তরেই অনেকাংশ সবসময় তাঁদের অধীন ছিল না। কিন্তু অটোমান সাম্রাজ্যের আয়তন মোগল সাম্রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ইউরোপের অধিকাংশ, আফ্রিকা ও এশিয়ার অংশ নিয়ে আটোমান সাম্রাজ্য গঠিত ছিল।

(২) স্থায়িত্বকালের পার্থক্য

মোগল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে এবং পরবর্তী ৩২০ বছর দীর্ঘপথ অতিক্রম করে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের পদচ্যুতির মধ্যে দিয়ে এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। অন্যদিকে অটোমান সাম্রাজ্য ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে ওসমানের হাত ধরে পথ চলা শুরু করে ৬২২ বছর দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের নেতা কামাল পাশার কাছে ষষ্ঠ মহম্মদের পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে এই সাম্রাজ্যের অবসান হয়।

(৩) রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি

মোগল সম্রাটরা রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য শুধুমাত্র সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীল ছিলেন না। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে জনগণের মতামতকেও প্রাধান্য দিতেন। রাজবংশ বহির্ভূত ব্যক্তিদেরও তারা (টোডরমল, বীরবল, মানসিংহ) উচ্চ প্রশাসনিক পদ দিতেন। অপরদিকেঅটোমান শাসকরা সামরিক শক্তির উপর নির্ভর করেই রাষ্ট্রপরিচালনা করতেন।

(৪) যুদ্ধাভিযান

মোগল শাসকরা ভারতবর্ষের বাইরে খুব কমই অভিযান বা সাম্রাজ্য বিস্তারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। কিন্তু অটোমান সম্রাটরা তুরস্কের সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপ, এশিয়া এমনকি আফ্রিকাতেও অভিযান পরিচালনা করেছিলেন।

(৫) দাসব্যবস্থাগত পার্থক্য

মোগল সাম্রাজ্যে দাস প্রথার অস্তিত্ব কোনোভাবেই ছিল না। যারা ভূস্বামীদের অধীনে কাজ করত তারা প্রবল নিষ্ঠুরতার মধ্যে পড়েছে এমন নমুনা পাওয়া যায় না। অটোমান সাম্রাজ্যে দাসপ্রথার অস্তিত্ব প্রকট ছিল। এই কথা সেখানকার ধর্মীয় ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিল।

(৬) খলিফা পদবী ব্যবহারের বিষয়ে পার্থক্য

মোগল সম্রাটরা মুসলিম ধর্মাবলম্বী হলেও নিজেদের নামের সঙ্গে কখনোই খলিফা পদবী ব্যবহার করতেন না। কিন্তু অটোমান মুসলিম সুলতানরা নিজেদের নামের সঙ্গে খলিফা পদবী ব্যবহার করতেন।

উপসংহার :- ভারতে আকবরের মতো মোগল সম্রাট জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের প্রতি মহানুভবতা দেখিয়েছেন। একইভাবে অটোমানও সম্রাট সুলেমান ক্রীতদাস ও দরিদ্রদের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল ছিলেন।

Leave a Comment