২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার বিকাশের ইতিহাস বা সুমেরীয় সভ্যতার বৈশিষ্ট্য

উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ‘আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতাসমূহ’ থেকে প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার বিকাশের ইতিহাস বা সুমেরীয় সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করা হল ।

প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার বিকাশের ইতিহাস বা সুমেরীয় সভ্যতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা

প্রশ্ন:- প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার বিকাশের ইতিহাস বা সুমেরীয় সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

ভূমিকা :- এশিয়া মহাদেশে পারস্য উপসাগরের উত্তরে অবস্থিত বর্তমান ইরাক দেশটি প্রাচীনকালে মেসোপটেমিয়া নামে পরিচিত ছিল। গ্রীক ভাষায় মেসোপটেমিয়া শব্দের অর্থ দুই নদীর মধ্যবর্তী দেশ। প্রাচীনকালে এখানকার টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নামে দুটি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে প্রাচীন সুউন্নত মেসোপটেমিয়া সভ্যতা গড়ে ওঠে।

সুমেরীয় সভ্যতা

পৃথিবীর প্রাচীনতম এই নদীমাতৃক সভ্যতার উত্তর অংশ আসিরিয়া ও দক্ষিণাংশ ব্যাবিলোনিয়া নামে পরিচিত। ব্যাবিলোনিয়ার উত্তরাংশের উঁচু অংশ আক্কাদ ও নিম্ন অংশ সুমের নামে পরিচিত ছিল। সুমেরকে কেন্দ্র করে প্রাচীনকালে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বলে একে সুমেরীয় সভ্যতাও বলা হয়।

আবিষ্কার

সুমেরীয় সভ্যতায় ছোটো ছোটো পাহাড়ের মতো উঁচু টিলা দেখা যায়। এগুলিকে টেল বলা হয় যাতে খননকার্য চালিয়ে প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। এই সব প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ থেকে এই অঞ্চলে উন্নত নগরকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক সভ্যতা বিকাশের প্রমাণ পাওয়া যায়।

প্রাচীনত্ব

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব চার হাজার অব্দে মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে সভ্যতার উন্মেষ ঘটে বলে অনুমান করা হয়। এখন থেকে ছয় হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার নিম্ন অংশ সুমেরে সর্বপ্রথম মানব সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এটি তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা।

নগর পরিকল্পনা

সুদূর অতীতে সুমেরীয় অঞ্চল ছিল জলাভূমি এবং জঙ্গলাকীর্ণ। পরবর্তীকালে এখানকার অধিবাসীরা এক উন্নত নগর সভ্যতা গড়ে তোলে। প্রতিটি নগরকে কেন্দ্র করে এক স্বয়ংসম্পূর্ণ নগররাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল। উর, উরক, লাগাস, বিশ, এরিডু, আজাদ প্রভৃতি শহরে খননকার্য চালিয়ে সুপ্রাচীন এই সভ্যতার নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা গেছে।

ঘরবাড়ি

সুমেরীয় সভ্যতার অধিকাংশ বাড়ি তৈরি হত পোড়া ইট অথবা রোদে শুকানো ইট দিয়ে। বড়ো অট্টালিকাগুলিতে গোম্বুজ ও খিলানের ব্যবহার করা হত। সুমেরবাসী একতলা এবং দোতলা উভয় ধরনের বাড়ি নির্মাণ করত।

রাস্তাঘাট

সুমেরের রাস্তাঘাটগুলি ছিল পরিচ্ছন্ন এবং ইট দিয়ে বাঁধানো। তবে অধিকাংশ রাস্তাই ছিল সরু। সিন্ধু সভ্যতার মতো উন্নত পপ্রণালী ব্যবস্থা সসুমেরীয় সভ্যতায় ছিল না।

শাসন পরিচালনা

সুমেরে যুদ্ধবাদী রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। রাজা এবং পুরোহিত শ্রেণি সুমেরীয় নগরের প্রশাসন পরিচালনা করত। অভিজাতদের নিয়ে তৈরি করা কাউন্সিলের হাতে রাজা প্রচুর ক্ষমতা দিয়েছিলেন।

কৃষি

সুমেরের অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি। কৃষিকাজের উদ্দেশ্যে তারা অরণ্য ও বন জঙ্গল পরিষ্কার করেছিল এবং নদীতে বাঁধ দিয়ে সেখান থেকে খাল কেটে কৃষিজমিতে জলসেচের ব্যবস্থা করেছিল। তাদের উৎপাদিত প্রধান ফসল ছিল গম ও যব। সুমেরীয় সভ্যতায় খেজুর গাছের গুরুত্বের কারণে খেজুর গাছকে তারা জীবনবৃক্ষ বলে অভিহিত করত। সুমেরীয়দের অপর একটি বিকল্প পেশা ছিল পশুপালন।

বাণিজ্য

সুমেরীয় সভ্যতায় প্রথমদিকে বিনিময়ের মাধ্যমে বাণিজ্য চললেও ক্রমে রূপার মুদ্রার প্রচলন ঘটে। জলপথে পালতোলা নৌকা করে বাণিজ্যিক পণ্য দেশের অভ্যন্তরে ঊর, ঊরক, লাগাস, আক্কাদ ইত্যাদি নগরের মধ্যে বাণিজ্য চলত। বৈদেশিক ক্ষেত্রে সিন্ধু, মিশর, পারস্য, সিরিয়া, আনাতোলিয়া, আফগানিস্তানের সাথে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল।

বন্যা প্রতিরোধ

দুই নদীতে দীর্ঘকাল পলি সঞ্চিত হয়ে নদীখাতের গভীরতা কমে গিয়ে প্রায়ই বন্যা হত। বন্যায় সুমেরীয়দের ঘরবাড়ি, জমির ফসল নষ্ট হত। তাই সুমেরীয়রা বাঁধ নির্মাণ করে বন্যার জল ধরে রেখে শুষ্ক মরশুমে তা জলসেচের কাজে ব্যাবহার করত।

ধর্মবিশ্বাস

সুমেরীয়রা সুউচ্চস্থানে যে মন্দির নির্মাণ করেছিল তাকে বলা হত জিগুরাত। সুমেরীয়রা অনেক দেবদেবীর আরাধনা করত।

চিত্রলিপি

সুমেরীয়রাই পৃথিবীতে সর্ব প্রথম লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করে। তাদের লিপির নাম কিউনিফর্ম লিপি।তারা কাদামাটির টালি তৈরি করে তাতে তিরের ফলার মতো কিছু দিয়ে লিখত এবং পরে টালিগুলিকে আগুনে পুড়িয়ে নিত। সুমেরীয়দের চিত্রলিপি প্রথমে ডান থেকে বামদিকে এবং পরে বাম থেকে ডানদিকে লেখার পদ্ধতি প্রচলিত হয়।

সাহিত্য ও শিল্প

প্রাচীন সুমেরে সাহিত্য ক্ষেত্রেও অগ্রগতি ঘটেছিল। তারা খ্রিস্টপূর্ব ২ হাজার অব্দের কাছাকাছি সময়ে পৃথিবীর প্রাচীতম সাহিত্য ও মহাকাব্য গিলগামেশ রচনা করেছিল। এছাড়া ধর্মকেন্দ্রিক ও রাজার জীবনকাহিনী নিয়েও সাহিত্য রচিত হত।

স্থাপত্য

সুমেরীয় সভ্যতার মানুষস্থাপত্য নির্মাণে যথেষ্ট মুনশিয়ানা দেখায়। তারা সাধারণ গৃহ নির্মাণের পাশাপাশি বিশালাকার অট্টালিকাও নির্মাণ করতে।

চিত্রকলা

সুমেরীয় সভ্যতায় বাড়ি ও মন্দিরের দেওয়ালে বিভিন্ন ধরনের চিত্র অঙ্কিত ছিল। চিত্রকলার মধ্যে প্রধান ছিল জীবজন্তু, গাছপালা প্রভৃতি।

শিল্প

সুমেরীয়রা বিভিন্ন শিল্পেদক্ষতা অর্জন করেছিল। এখানকার বস্ত্রশিল্প ও ধাতুশিল্প ছিল বেশ উন্নত। টেরাকোটা শিল্পেও তারা বিশেষ দক্ষ ছিল।

বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি

সুমেরীয় সভ্যতার মানুষ বিজ্ঞানের কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটিয়েছিল।তারা চাকার ব্যবহার, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যায় দক্ষ ছিল।

উপসংহার :- দীর্ঘকাল ধরে বিকাশ লাভ করার পর সুমেরীয় সভ্যতাও কালের নিয়মে একসময় পতনের দিকে এগিয়ে যায়। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব দুহাজার অদের পর এই সভ্যতার পতন ঘটে বলে মনে করা হয়।

Leave a Comment