২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

রোমান সাম্রাজ্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা

উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: সাম্রাজ্য: সংজ্ঞা, রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে পার্থক্য হতে রোমান সাম্রাজ্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা কর।

রোমান সাম্রাজ্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা

প্রশ্ন:- রোমান সাম্রাজ্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা কর। (৪+৪)

ভূমিকা:- বিশ্বের ইতিহাসে রোমান সাম্রাজ্য এবং গুপ্ত সাম্রাজ্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দুটি সাম্রাজ্যের মধ্যে যেমন একাধিক সাদৃশ্য আছে, তেমনি বৈশাদৃশ্যও বর্তমান। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এই দুটি সাম্রাজ্যের অবদান অতুলনীয়।

রোমান সাম্রাজ্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের মধ্যে সাদৃশ্য

প্রাচীন ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্য ও রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য বর্তমান। যেমন –

(১) সাম্রাজ্যবিস্তার নীতি

রোমান সম্রাটগণ একাধিক সফল অভিযানের দ্বারা রোমান সাম্রাজ্য বিস্তারিত করেন। প্রাচীন ভারতের গুপ্ত সম্রাটগণও একের পর এক অঞ্চল নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করে সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য স্থাপন করেন।  

(২) সাম্রাজ্যবাদী শাসক

রোমান সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণে জুলিয়াস সিজার প্রমুখ যেমন ভূমিকা নেন ঠিক একইভাবে প্রাচীন ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণে চন্দ্রগুপ্ত, সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ।

(৩) সমাজব্যবস্থা

রোমের সমাজব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল শ্রেণিবিভাজন। সমাজে প্লেবিয়ান, প্যাট্রিসিয়ান এবং ক্রিতদাস – এই তিনটি শ্রেণির অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। গুপ্ত যুগের সমাজেও শ্রেণিবৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। সমাজে ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র – এই চারটি শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল। তবে এ যুগে নারীর মর্যাদা অনেকাংশে ক্ষুন্ন হয়েছিল।

(৪) সাহিত্যচর্চা

শিক্ষা ও সাহিত্যচর্চায় রোমানরা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল। তাঁরা লাতিন ভাষায় একাধিক সাহিত্য রচনা করতে শুরু করেন। ভার্জিল, টেসিয়াস, লিভি, প্রমুখের রচনাগুলি সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত। গুপ্ত শাসকরাও সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। এ যুগে মহাকবি কালিদাস, বিশাখদত্ত, হরিষেণ প্রমুখ অসাধারন কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন।

(৫) সুবর্ণযুগ

প্রাচীন ভারতীয় সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে কেবল গুপ্তযুগেই সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য গড়ে ওঠার পাশাপাশি বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটে। তাই গুপ্তযুগকে প্রাচীন ভারতে সুবর্ণযুগ বলে। ঠিক একইরকম বিশেষত্ব লক্ষ করা যায় ইউরোপের রোমান সাম্রাজ্যে।

রোমান সাম্রাজ্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের মধ্যে বৈসাদৃশ্য

রোমান সাম্রাজ্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের সাদৃশ্যের পাশাপাশি বৈসাদৃশ্যও বর্তমান। যেমন –

(১) সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি

রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত। অন্যদিকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি কেবল ভারতেই সীমাবদ্ধ ছিল।

(২) সাম্রাজ্যের রাজধানী

আয়তনে সর্ববৃহৎ রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল দু’টি – রোম এবং কনস্ট্যান্টিনোপল। অন্যদিকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল একটি। এই ছোটো সাম্রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য একটি রাজধানীই যথেষ্ট ছিল।

(৩) শাসন পরিকাঠামো

রোমান সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। কিন্তু পরবর্তীকালে প্রজাতন্ত্র বা অভিজাততান্ত্রিক ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছিল। কিন্তু গুপ্ত রাজারা প্রথম থেকেই বংশানুক্রমিকভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। শাসনকার্যে সুবিধার জন্য উপরিক, মহাদন্ডনায়ক, প্রভৃতি পদের অস্তিত্ব থাকলেও শাসন পরিকাঠামোর সর্বোচ্চে আসীন ছিলেন রাজা নিজেই।

(৪) স্থায়িত্বকাল

দীর্ঘস্থায়ী রোমান সাম্রাজ্য ৭৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়ে ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, প্রায় ৮০০ বছর স্থায়ী ছিল। অন্যদিকে গুপ্ত সাম্রাজ্য ২৭৫ খ্রীস্টাব্দে শুরু হয়ে ৫০০ মতান্তরে ৫৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, যা রোমান সাম্রাজ্যের তুলনায় খুবই নগণ্য।

(৫) দাসপ্রথা

দাস প্রথার উপর ভিত্তি করেই রোমান সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।  কৃষি, শিল্প, উৎপাদন সর্বক্ষেত্রেই দাসদের অবদান লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে গুপ্ত যুগে দাসপ্রথার অস্তিত্ব খুবই কম এবং কঠোরতা বর্জিত। অর্থনীতি কখনই দাসদের উপর নির্ভরশীল ছিল না।

উপসংহার

বিশ্ব ইতিহাসে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা হিসেবে গুপ্ত সাম্রাজ্য যেমন ইউরোপের ক্ষেত্রে তেমন রোমান সাম্রাজ্য একই স্থান অধিকার করে। দু’টি সভ্যতাই ছিল সমসাময়িক। উভয় সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রেই শাসকদলের দক্ষতা গুরুত্বের দাবিদার।

Leave a Comment