স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা

উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস অষ্টম অধ্যায়: অব-উপনিবেশীকরণ হতে স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা আলোচনা করা হল। কে বেলুচিস্তানের কসাই নামে পরিচিত।

স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা আলোচনা

শ্রেণীদ্বাদশ
অধ্যায়অষ্টম অধ্যায়
Question Typeব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন
Marks8

প্রশ্ন:- স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা আলোচনা কর। (HS History Question Paper 2015)

অথবা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ দাও। এই যুদ্ধে ভারতের প্রভাব আলোচনা কর। (HS History Question Paper 2019)

সূচনা:- পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের বঞ্চনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মনে ক্ষোভ জমতে থাকে। আর তারই পরিণতি হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে।

পূর্ববঙ্গের প্রতি বঞ্চনা

পাকিস্তান সৃষ্টির তিন-চার বছর পর থেকে পূর্ব পাকিস্তান -এর বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তান তীব্র অর্থনৈতিক বৈষম্য চাপিয়ে দেয়। পাকিস্তানের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ করে পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করা হয়। তারা পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের দাবিদাওয়ার প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন ছিল। ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়।

ভাষা আন্দোলন

পূর্ব পাকিস্তানে ৯৮.১৬ শতাংশের বেশি এবং উভয় পাকিস্তান মিলে ৫৬.৪০ শতাংশের বেশি মানুষের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। অথচ পাকিস্তানের জনক মহম্মদ আলি জিন্না বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা করেন। পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনও মনে করেন যে, বাংলা হল হিন্দুদের ভাষা। এই পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষা রক্ষার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র আন্দোলন শুরু হয়।

সামরিক বৈষম্য

পাক সেনাবাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা অবহেলিত ছিল। পাক সরকার বাঙালিদের ভীতু জাতি বলে মনে করত। মাত্র ৫ শতাংশ বাঙালি সশস্ত্র বাহিনীতে ছিল। এদের অধিকাংশই আবার আদেশদানকারীর ন্যায় উচ্চপদে নিযুক্ত হতে পারেননি।

রাজনৈতিক বৈষম্য

পূর্ব পাকিস্তানের অপেক্ষা পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যা কম হলেও দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তান কুক্ষিগত করে রেখেছিল। পূর্ব পাকিস্তানের খাজা নাজিমুদ্দিন, মহম্মদ আলি বগুড়া, হােসেন শহীদ সুরাবর্দি প্রমুখ যখনই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তখনই পশ্চিম পাকিস্তানিরা কোনাে না কোনাে অজুহাতে তাদের পদচ্যুত করেছেন। জেনারেল আইয়ুব খাঁ ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে স্বৈরশাসন চালিয়ে পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক অধিকার বহুলাংশে কেড়ে নেন।

১৯৭০-এর নির্বাচন

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামি লিগ দল ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তারা সেখানকার ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসনে জয়লাভ করে এবং পাকিস্তানে সরকার গঠনের অধিকার পায়। কিন্তু ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তানের কোনাে ব্যক্তির হাতে পাকিস্তানের ক্ষমতা ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তা ছাড়া নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো অনৈতিকভাবে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষমতা লাভের বিরােধিতা করেন।

শেখ মুজিবরের নেতৃত্ব

সরকার গঠনে আওয়ামি লিগ ব্যর্থ হলে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। শেখ মুজিবরের ধর্মঘটের ডাকে গােটা পূর্ব পাকিস্তান অচল হয়ে পড়ে। মুজিবুর ২৫ মার্চ (১৯৭১ খ্রি.) ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের এক সভার ঐতিহাসিক ভাষণে ঘােষণা করেন যে, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তাঁর ভাষণে পূর্ববঙ্গের গােটা বাঙালি জাতির মধ্যে উন্মাদনার সৃষ্টি হয়।

গণহত্যা

বেলুচিস্তানের কসাই নামে পরিচিত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর করে ঢাকায় পাঠানাে হয়। পূর্ব পাকিস্তানে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ আনা হয়। ২৫ মার্চ রাতে পাক সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ব্যাপক হারে হত্যা করতে শুরু করে। এই হত্যা অভিযানের পােশাকি নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সার্চ লাইট’।

ভারতের যোগদান ও স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম

২৫ মার্চ মধ্যরাতে শেখ মুজিবুর গ্রেপ্তার হলেও আন্দোলন দমন করা যায়নি। স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ও মুক্তি বাহিনী ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতীয় সেনা পূর্ববঙ্গে মুক্তি বাহিনীকে সহায়তা শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই পাক বাহিনী বিপাকে পড়ে যায়। শেষপর্যন্ত পাক বাহিনীর প্রধান জেনারেল এ. এ. কে. নিয়াজি ভারত -এর সেনা বাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরােরার কাছে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেন এবং স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম হয়।

উপসংহার :- স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সুস্থিতি অধরাই থেকে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট আততায়ীর হাতে নিহত হন।

Leave a Comment