২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

চীনের উপর আরোপিত অসম চুক্তিগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা

উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: চীন- সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া চীনের অর্থনৈতিক বিকাশ হতে চীনের উপর আরোপিত অসম চুক্তিগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।

চীনের উপর আরোপিত অসম চুক্তিগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা

২. চীনের উপর আরোপিত অসম চুক্তিগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।  (২০১৬)

ভূমিকা :- পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলি (আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি) ১৮৩৯ – মধ্যে চীনকে বারবার পরাস্ত  করে যে শোষণ ও বৈষম্যমূলক চুক্তি চীনের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল তা অসম চুক্তি নামে পরিচিত। অনেকে এই অসম চুক্তি গুলিকে শতাব্দীব্যাপী অবমাননা বলে অভিহিত করেছেন। এই অসম চুক্তি গুলি হল নিম্নরূপ –

নানকিং-এর অসম চুক্তি

প্রথম আফিমের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চীন ব্রিটেনের সাথে নানকিং-এর অসম সন্ধি (১৮৪২ খ্রি.) স্বাক্ষরে বাধ্য হয়। এই সন্ধির দ্বারা –

  • (i) ক্যান্টন, সাংহাই, অ্যাময়, নিংগপো বন্দরগুলি  ইউরোপীয় বণিকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই বন্দরগুলি ‘চুক্তি বন্দর’ নামে পরিচিত।
  • (ii) হংকং বন্দর চিরকালের জন্য ইংরেজদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
  • (iii) কো হং প্রথা বাতিল হয়।
  • (iv) যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ চীন সরকার ১২ মিলিয়ন রোপ্য ডলার দিতে বাধ্য হয়।

বগ-এর অসম চুক্তি

১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার পুনরায় চীনের উপর আর একটি অসম চুক্তি চাপিয়ে দেয়, যা বগ-এর অসম চুক্তি নামে পরিচিত। এই অসম চুক্তি দ্বারা –

  • (i) ইংল্যান্ড চীনের উপর কিছু অতি রাষ্ট্রিক অধিকার লাভ করে।
  • (ii) চীনের ‘চুক্তি বন্দর‘ গুলি ব্রিটিশ আইন ও বিচার ব্যবস্থার অধীনে আসে।
  • (iii) চীন অন্য কোনো বিদেশি রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে যেসব সুযোগ সুবিধা দেবে সেগুলি ব্রিটেনকেও দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।

ওয়াংঘিয়ার অসম চুক্তি

১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল চীনের উপর ওয়াংঘিয়ার অসম চুক্তি চাপিয়ে দেয়। এই চুক্তির ফলে –

  • (i) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনে বিভিন্ন অতি রাষ্ট্রিক সুবিধা লাভ করে।
  • (ii) চীনের ‘চুক্তি বন্দর’ গুলিতে বসবাসকারী বিদেশিরা আইনগত, বিচারবিভাগীয়, পুলিশ সংক্রান্ত এবং কর সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাধীনতা লাভ করে।

হোয়ামপোয়ার অসম চুক্তি

ফ্রান্স বাণিজ্যিক সুবিধা লাভের জন্য ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে চীনের উপর হোয়ামপোয়ার অসম চুক্তি চাপিয়ে দেয়। এই অসম চুক্তি দ্বারা –

  • (i) ফরাসি বণিকদের জন্য নতুন পাঁচটি বন্দর খুলে দেওয়া হয়।
  • (ii) চীনে ফরাসি নাগরিকদের অতি রাষ্ট্রিক সুবিধা দেওয়া হয়।
  • (iii) চীন ও ফরাসি বণিকদের মধ্যে বাণিজ্য – শুল্ক নির্দিষ্ট হয়।

আইগুন-এর অসম চুক্তি

১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া চীনের উপর আইগুন-এর সন্ধি চাপিয়ে দেয়। এই সন্ধির দ্বারা –

  • (i) চীনের উত্তরাংশের বেশ কিছু ভূখণ্ডে রাশিয়া নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
  • (ii) চীনের আমুর, উসুরি ও সংঘুয়াজিয়াং নদীতে একমাত্র রাশিয়া ও চীনের নৌ – চলাচল স্বীকৃত হয়।

তিয়েনসিনের অসম চুক্তি

দ্বিতীয় আফিমের যুদ্ধে চীন পরাজিত হলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স চীনের উপর তিয়েনসিনের অসম চুক্তি (১৮৫৮ খ্রি.) চাপিয়ে দেয়। এই অসম চুক্তি দ্বারা –

  • (i) চীন সরকার ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়।
  • (ii) বিদেশি বণিকদের জন্য চীনের আরও ১১ টি বন্দর খুলে দেওয়া হয়।
  • (iii) রাজধানী পিকিং – এ বিদেশি দূতাবাস স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
  • (iv) বিদেশি বণিকদের সুবিধার্থে বাণিজ্য – শুল্ক হ্রাস করা হয়।
  • (v) চীনে নির্দিষ্ট শুল্কের বিনিময়ে আফিমের ব্যবসা বৈধ বলে স্বীকৃত হয়।

পিকিং-এর অসম চুক্তি

১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স দুর্বল চীনকে পিকিং -এর সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য করে। এই অসম চুক্তি দ্বারা –

  • (i) তিয়েনসিন বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত হয়।
  • (ii) ব্রিটেন চীনের কওলুন উপদ্বীপ লাভ করে।

শিমোনোশেকির অসম চুক্তি

জাপানের হাতে চীন পরাজিত হয়ে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানের সাথে শিমোনোশেকির অপমানজনক সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এই অসম চুক্তি দ্বারা –

  • (i) কোরিয়াকে স্বাধীনতা দানে চীন বাধ্য হয়।
  • (ii) চীনের কাছ থেকে তাইওয়ান, পেস্কাডোরেস, লিয়াওটুং উপদ্বীপ ও পোট আর্থার লাভ করে।
  • (iii) জাপানকে চীন ২০০ মিলিয়ন কিউপিং টেইল ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়।
  • (iv) চীন তার বেশ কয়েকটি বন্দর জাপানের জন্য খুলে দিতে বাধ্য হয়।

বক্সার প্রোটোকল

চিং বা কিং বংশের শাসনকালে বিদেশি শক্তিগুলির শোষণ, নির্যাতন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে বক্সার বিদ্রোহ শুরু হয়। কিন্তু চীনে অবস্থিত বিদেশি শক্তিগুলির সম্মিলিত বাহিনী এই বিদ্রোহ দমন করে চীনকে বক্সার প্রোটোকল নামে একটি অসম চুক্তি স্বাক্ষরে (১৯০১ খ্রিস্টপূর্ব.) বাধ্য করে। এই প্রোটোকলের শর্ত অনুসারে –

  • (i) বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত ১২ জন রাজপুরুষের প্রাণদণ্ড হয়।
  • (ii) চীনের উপর বিরাট অঙ্কের ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপানো হয়।
  • (iii) বিদেশি দূতাবাস গুলি রক্ষার জন্য পিকিং – এ স্থায়ী বিদেশি সেনা মোতায়েন করা হয়।
  • (iv) পরবর্তী দুই বছরের জন্য চীনে অস্ত্র নির্মাণ ও আমদানি নিষিদ্ধ হয়।

উপসংহার :- এইভাবে বিভিন্ন সময়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলি চীনের উপর বিভিন্ন অসম চুক্তি চাপিয়ে দিয়ে চীনকে তরমুজের মতো ভাগ করে খেতে উদ্দ্যোগী হয়েছিল। ঐতিহাসিক হ্যারল্ড ভিনাক এই অবস্থাকে ‘চীনা তরমুজের খণ্ডীকরণ’ বলে অভিহিত করেছেন।

Leave a Comment