আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব

দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায়: ইতিহাসের ধারণা হতে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব আলোচনা করা হল।

Table of Contents

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব

প্রশ্ন:- আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব কী?

ভূমিকা :- ভারতের আধুনিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি নথিপত্রের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এইসব নথিপত্রের মধ্যে সরকারি প্রতিবেদন, পুলিশ, গোয়েন্দা, সরকারি ইতিহাসের ধারণা, আধিকারিক প্রমুখের প্রতিবেদন, বিভিন্ন বিবরণ, চিঠিপত্র প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

সরকারি প্রতিবেদন

ব্রিটিশ সরকার যে বিভিন্ন বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের প্রতি গোপনে নজরদারি চালাত, সে বিষয়ে সমকালীন পুলিশ ও গোয়েন্দাদের বিভিন্ন প্রতিবেদন ও বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র থেকে বর্তমানে জানা সম্ভব হয়েছে।

কমিশনের রিপোর্ট

সরকার কর্তৃক নিযুক্ত বিভিন্ন কমিশনের রিপোর্ট থেকে তৎকালীন বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্যাদি পাওয়া যায়। যেমন – নীল কমিশনের (১৮৬০ খ্রি.) রিপোর্ট থেকে বাংলার চাষিদের ওপর নীলকরদের অত্যাচার এবং হান্টার কমিশনের (১৮৮২ খ্রি.) রিপোর্ট থেকে সমকালীন শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।

আন্দোলন দমনের নীতি

ব্রিটিশ সরকার কীভাবে ভারতীয়দের রাজনৈতিক আন্দোলনগুলি দুর্বল বা দমন করার চেষ্টা করত সে বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন আধিকারিকদের চিঠিপত্র থেকে জানা যায়। যেমন – সরকার গোপনে কংগ্রেসকে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়েছিল, বাঙালির রাজনৈতিক ঐক্য ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে কার্জন বঙ্গভঙ্গ করেছিলেন প্রভৃতি সম্পর্কে তথ্য সরকারি চিঠিপত্র থেকেই পাওয়া যায়।

ভারতীয়দের সংস্কার

সমকালীন ভারতীয়দের বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যাবলির প্রতি সরকারের মনোভাব যে মোটেই ভালো ছিল না তা জানার জন্য সরকারি নথিপত্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন – স্বামী বিবেকানন্দ -এর ভাবাদর্শ পাশ্চাত্যকে মুগ্ধ করলেও তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারত -এর সরকারি নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, বিবেকানন্দের রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও মিশনকে সরকার সুনজরে দেখেনি।

চিঠিপত্রের আদান-প্রদান

সরকারি ব্যবস্থায় চিঠিপত্র আদান-প্রদান করা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শাসনকর্তাদের চিঠিপত্রের ব্যাপক আদান-প্রদান ঘটত। যেমন, বাঙালিদের রাজনৈতিক ঐক্য ভাঙার জন্য লর্ড কার্জন যে চক্রান্ত করেছিলেন তা সরকারি চিঠিপত্র থেকেই জানা যায়।

সরকারি কর্মীর বিবরণ

ব্রিটিশ সরকারের কর্মচারীরা অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা নিজের চোখে দেখেছেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। এক্ষেত্রে ফরেস্টের বিবরণ থেকে মহাবিদ্রোহ এবং লর্ড কার্জনের স্বরাষ্ট্রসচিব হার্বাট রিজলের ব্যক্তিগত দিনলিপি থেকে ব্রিটিশ আমলের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়।

একমাত্র নির্ভরযোগ্যতা

কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি নথিপত্র ভারত ইতিহাসের একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।। যেমন – বর্তমান তথ্যাদির সহায়তায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র -এর অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা করা সম্ভব না হওয়ায় অনেকে একমাত্র সরকারি নথিপত্র প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

উপসংহার:- সরকারি নথিপত্র হল এমন একটি উপাদান, যা ইতিহাসের অনেক লুকোনো দিক প্রকাশ করে দিতে পারে। তাছাড়া শাসকের কার্যকলাপ জানার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হল এই সরকারি নথিপত্র।

সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

১.১. আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্য

(১.১.ক.) নতুন সামাজিক ইতিহাস

(১.১.খ.) খেলার ইতিহাস

(১.১.গ.) খাদ্যাভাসের ইতিহাস

(১.১.ঘ.) শিল্পচর্চার ইতিহাস (সংগীত, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র)

(১.১.ঙ.) পোশাক পরিচ্ছদের ইতিহাস

(১.১.চ.) যানবাহন যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস

(১.১.ছ.) দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস (ছবি আঁকা, ফোটোগ্রাফি)

(১.১.জ.) স্থাপত্যের ইতিহাস

(১.১.ঝ.) স্থানীয় ইতিহাস

(১.১.ঞ.) শহরের ইতিহাস

(১.১.ট.) সামরিক ইতিহাস

(১.১.ঠ.) পরিবেশের ইতিহাস

(১.১.ড.) বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস

(১.১.ঢ.) নারী ইতিহাস

এইসব ইতিহাসচর্চার ধারার মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ অতিসংক্ষিপ্ত আলোচনা করে ইতিহাসের বিভিন্ন দিকের ধারণা।(আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি)।

১.২. আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদান ব্যবহারের পদ্ধতি

(১.২.ক.) সরকারি নথিপত্র (পুলিশ/গোয়েন্দা/সরকারি আধিকারিকদের প্রতিবেদন/ বিবরণ/চিঠিপত্র)

(১.২.খ.) আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা {সত্তর বৎসর (বিপিনচন্দ্র পাল), জীবনস্মৃতি (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর), জীবনের ঝরাপাতা (সরলা দেবী চৌধুরাণী)}

(১.২.গ.) চিঠিপত্র {ইন্দিরা গান্ধিকে লেখা জওহরলাল নেহরুর চিঠি (Letters from a Father to His Daughter)}

(১.২.ঘ.) সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র (বঙ্গদর্শন এবং সোমপ্রকাশ)

টুকরো কথা

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় ফোটোগ্রাফের ব্যবহার। ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইনটারনেট ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা।

উপরের উপাদানগুলি ব্যবহারের পদ্ধতি বিষয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি)।

Leave a Comment