উনিশ শতকে ব্রাহ্মসমাজের বিভাজন সম্পর্কে আলোচনা

দশম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়-সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা হতে উনিশ শতকে ব্রাহ্মসমাজের বিভাজন সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

উনিশ শতকে ব্রাহ্মসমাজের বিভাজন সম্পর্কে আলোচনা

প্রশ্ন:- উনিশ শতকে ব্রাহ্মসমাজের বিভাজন সম্পর্কে আলোচনা কর।

ভূমিকা:- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন ব্রাহ্মসমাজের প্রধান নেতা তখন যুবককেশবচন্দ্র সেন ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজে যোগদেন।

কেশবচন্দ্র সেনের উত্থান

কেশবচন্দ্র সেন তাঁর প্রতিভা ও দক্ষতার গুণে শীঘ্রই দেবেন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। দেবেন্দ্রনাথ ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে’ব্রহ্মানন্দ’ উপাধি দেন এবং ব্রাহ্মসমাজের আচার্য পদে নিয়োগ করেন।

মতভেদের সূত্রপাত

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে ব্রাহ্মসমাজে কেশবচন্দ্রের উত্থান ঘটলেও বিধবাবিবাহ, অসবর্ণ বিবাহ, ব্রাহ্ম আচার্যদের উপবীত ধারণ, বাংলায় মন্ত্রোচ্চারণ প্রভৃতি বিষয়কে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।

প্রথম ভাঙ্গন

দেবেন্দ্রনাথ ও কেশবচন্দ্রের মতানৈক্যের ফলে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজে ভাঙন দেখা দেয়। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র ও তার অনুগামীরা ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ নামে একটি পৃথক সংগঠন গড়ে তোলেন। দেবেন্দ্রনাথের নেতৃত্বাধীন মূল সংগঠনটি আদি ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিত হয়।

দ্বিতীয় ভাঙন

কেশবচন্দ্রের ইংরেজ-প্রীতি, অবতারবাদে বিশ্বাস, নারীস্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বিধা নিয়ে ব্রাহ্মসমাজে বিরোধ তৈরি হয়েছিল।ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজের নিয়ম ভেঙে কেশবচন্দ্র নিজের ১৪ বছরের নাবালিকা কন্যাকে কুচবিহারের মহারাজের সঙ্গে বিবাহ দেন। ফলে দ্বিতীয় বার ব্রাহ্মসমাজে ভাঙ্গন আসে।

সাধারণ ও নববিধান ব্রাহ্মসমাজ

শিবনাথ শাস্ত্রী, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, আনন্দমোহন বসু, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, দুর্গামোহন দাস প্রমুখ তরুণ কেশবচন্দ্রকে ত্যাগ করে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। আর কেশবচন্দ্রের নেতৃত্বাধীন সংগঠনটি নববিধান ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিত হয়।

উপসংহার:- হিন্দু সমাজ ও ধর্মসংস্কারে ব্রাহ্মসমাজ যে সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল তা ব্রাহ্মসমাজের বিভাজনের মধ্য দিয়ে ব্যাহত হয়।

Leave a Comment