ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসার সম্পর্কে আলোচনা

দশম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়-সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা হতে ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

Table of Contents

ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসার সম্পর্কে আলোচনা

প্রশ্ন:- ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমিকা :- উনিশ শতকের শুরুতেও বাংলায় মেয়েদের লেখাপড়া শেখার বিশেষ সুযোগ ছিল না। তৎকালীন সমাজের নারীরা গৃহাভ্যন্তরেই দিনাতিপাত করত।

উইলিয়াম অ্যাডামের রিপোর্ট

বাংলা শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ে উইলিয়াম অ্যাডাম ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর রিপোর্টেলেখেন, “যখন হিন্দুরা বিশ্বাস করত যে শিক্ষা বালবিধবার পথ প্রশস্ত করবে, তখন হিন্দু ও মুসলমান উভয়েরই নারীদের শিক্ষিত করার ব্যাপারে অনীহা ছিল, কারণ তারা এর মধ্যে ‘নারীসুলভ ষড়যন্ত্রের’ আশঙ্কা করে।”

সীমিত শিক্ষার সুযোগ

উনিশ শতকের পূর্ব পর্যন্ত বাংলার অভিজাত পরিবারের কিছু মেয়ে কিছুটা দেশীয় শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিল। তবে একথা বলাই যায়, সাধারণ মেয়েদের মধ্যে শিক্ষাগ্রহণের তেমন সুযোগ ছিল না।

বিধিনিষেধ

নারীশিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ, বাল্যবিবাহ, পর্দাপ্রথা প্রভৃতি বিশেষ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ৮/১০ বছর বয়সেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত। ওই বয়সের মধ্যে কেউ কেউ বাপের বাড়িতে অক্ষরের সঙ্গে পরিচিত হত মাত্র।

নারী শিক্ষার প্রচলন

নানান প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে বাংলায় নারীশিক্ষার প্রচলন ঘটে।

মিশনারিদের ভূমিকা

ইউরোপ থেকে আগত খ্রিস্টান মিশনারিরা খ্রিস্টধর্মের প্রসারের উদ্দেশ্যে এদেশে নারীশিক্ষার প্রসারের কিছু কিছু উদ্যোগ নেয়। যেমন –

  • (১) বাংলার শ্রীরামপুরের খ্রিস্টান, মিশনারি উইলিয়াম কেরি, মার্শম্যান ও ওয়ার্ড-এর উদ্যোগে ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে ৪০ জন বালিকাকে নিয়ে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।
  • (২) লন্ডন মিশনারি সোসাইটির রবার্ট মে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে চুঁচুড়ায় একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
  • (৩) ব্যাপটিস্ট মিশনারিদের স্ত্রীদের উদ্যোগে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠান বাংলায় বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।

বিশিষ্ট নারীদের ভূমিকা

কয়েকজন বিশিষ্ট বিদেশিনি বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।যেমন –

  • (১) চার্চ মিশনারি সোসাইটি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ৩০টিরও বেশি বালিকা বিদ্যালয়ের দেখাশোনার উদ্দেশ্যে মিসেস কুক ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় আসেন।
  • (২) মেরি উইলসন, মেরি কার্পেন্টার প্রমুখ বাড়ি বাড়ি ঘুরে মেয়েদের পড়াশোনা শেখার আবেদন জানান। তাঁদের আবেদনে সাড়া দিয়ে অনেক বাড়িতে মা-মেয়ে একসঙ্গে পড়তে শুরু করেন। এছাড়া বহু বালিকা স্কুলে যেতে শুরু করে।
  • (৩) মেরি কার্পেন্টার বিদেশের নারীসংগঠন থেকে ভারতের নারীশিক্ষার জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। নারীশিক্ষার প্রসারে তাঁর উদ্যোগ এদেশের মনীষীদের উৎসাহিত করে।
  • (৪) অ্যানেট অ্যান্ড্রয়েড পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নারীশিক্ষার প্রসারে উল্লেখযোগ্য কাজ করেন।

বিদ্যাসাগরের ভূমিকা

বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান জেলায় একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নদিয়া, বর্ধমান, হুগলি ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এগুলিতে ১৩ হাজার ছাত্রী পড়াশোনা করত।

অন্যান্য উদ্যোগ

১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা স্কুল সোসাইটি, ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে লেডিজ সোসাইটি ফর নেটিভ ফিমেল এডুকেশন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। ব্রাত্মসমাজ নারীশিক্ষার প্রসারে যথেষ্ট প্রচার চালায়। এছাড়া বিভিন্ন বিদেশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

সাফল্য

বিভিন্ন উদ্যোগে নারীশিক্ষার প্রসারের ফলে ১৮৫৪খ্রিস্টাব্দে বাংলায় বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮৮টি। রাসসুন্দরী দেবী নিজে নিজে লেখাপড়া শিখে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ‘আমার জীবন’ নামে নিজের আত্মজীবনী রচনা করেন। এটি হল বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম আত্মজীবনী। কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ও চন্দ্রমুখী বসু ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে বেথুন কলেজ থেকে প্রথম বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।

উপসংহার :- ব্রিটিশ আমলে বাংলায় নারীশিক্ষার যে অগ্রগতি ঘটে তা সমাজের পক্ষে অত্যন্ত শুভ হয়েছিল। নারীশিক্ষার প্রসারের ফলেই নারীদের মধ্য থেকে বাল্যবিবাহ, সতীদাহ প্রথা, বিধবাবিবাহ, দেবদাসী, প্রথা প্রভৃতি বিরোধিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়।

দশম শ্রেণীর ইতিহাস (দ্বিতীয় অধ্যায়) সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা হতে অন্যান্য সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

দশম শ্রেণী ইতিহাস সিলেবাস দ্বিতীয় অধ্যায়- সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা হতে সকল সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি দেওয়া হল।

২.১. উনিশ শতকের বাংলা সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্যে সমাজের প্রতিফলন

(২.১.ক.) বামাবোধিনী

(২.১.খ.) হিন্দু প্যাট্রিয়ট

(২.১.গ.) হুতোম প্যাঁচার নকশা

(২.১.ঘ.) নীলদর্পণ

(২.১.ঙ.) গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা

উপরিউক্ত আলোচনার নিরিখে এই প্রসঙ্গগুলির বিশেষ আলোচনা করতে হবে (আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি)।

২.২. উনিশ শতকের বাংলা শিক্ষাসংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

(২.২.ক.) প্রাচ্য শিক্ষা-পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব

(২.২.খ.) ইংরেজি শিক্ষার প্রসার

(২.২.গ.) নারী শিক্ষা ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

(২.২.ঘ.) পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ

(২.২.ঙ.) রাজা রামমোহন রায়

(২.২.চ.) রাজা রাধাকান্ত দেব

(২.২.ছ.) ডেভিড হেয়ার

(২.২.জ.) জন এলিয়ট ড্রিংক ওয়াটার বীটন বা বেথুন

(২.২.ঝ.) কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ

(২.২.ঞ.) চিকিৎসাবিদ্যার বিকাশ

(২.২.ট.) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষার বিকাশ

টুকরো কথা: মধুসূদন গুপ্ত

(আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি)

২.৩. উনিশ শতকের বাংলা-সমাজসংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

(২.৩.ক.) ব্রাহ্মসমাজসমূহের উদ্দোগ

(২.৩.খ.) সতীদাহপ্রথা বিরোধী আন্দোলন

(২.৩.গ.) নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী

(২.৩.ঘ.) বিধবাবিবাহ আন্দোলন

টুকরো কথা: হাজি মহম্মদ মহসীন

(আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি)

২.৪. উনিশ শতকের বাংলা-ধর্মসংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

(২.৪.ক.) ব্রাহ্ম আন্দোলন-বিবর্তন, বিভাজন, বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

(২.৪.খ.) রামকৃষ্ণের সর্বধর্মসমন্বয়’-এর আদর্শ

(২.৪.গ.) স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের অভিমুখ

(২.৪.ঘ.) নব্য বেদান্ত-বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

টুকরো কথা: 

লালন ফকির
বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী

(আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি)

২.৫. “বাংলার নবজাগরণ”-এর চরিত্র ও পর্যালোচনা,

উনিশ শতকের বাংলায় ‘নবজাগরণ’ ধারণার ব্যবহার বিষয়ক বিতর্ক

(আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি)।

Leave a Comment