হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ

দশম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ‘সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা’ হতে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লেখো।

Table of Contents

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা সম্পর্কে প্রবন্ধ

প্রশ্ন:- হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লেখো।

ভূমিকা :- হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা ছিল উনিশ শতকের বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্র। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ জানুয়ারি এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি প্রথমে সাপ্তাহিক ছিল। কিন্তু পরে এটি দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। এই পত্রিকায় সমকালীন বাংলার সমাজজীবনের বিভিন্ন চিত্র সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।

হরিশচন্দ্রের সম্পাদনা

হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার জনপ্রিয়তা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। পত্রিকাটির প্রথম প্রবর্তক ও প্রথম স্বত্বাধিকারী মধুসূদন রায়ের চিঠি থেকে জানা যায় যে, হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮২৪-১৮৬১ খ্রি.)। হরিশচন্দ্র আড়াই বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে পত্রিকাটি পরিচালনা করেন। পরে তিনি মধুসূদন রায়ের কাছ থেকে পত্রিকাটির প্রেস ও কাগজের স্বত্ব কিনে নেন।

পত্রিকার অগ্রগতি

হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকাটি চালিয়ে প্রথম চার বছর প্রচুর আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। তা সত্ত্বেও তিনি এটিকে একটি আধুনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত করেন। তিনি বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফের মাধ্যমে বৈদেশিক সংবাদ সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন। ফলে স্বদেশের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদও এই পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। তাছাড়া ব্যাবসাবাণিজ্য, বাজারদর, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়েও পত্রিকাটিতে সংবাদ পরিবেশিত হত।

নির্ভীক সাংবাদিকতা

হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নির্ভীক সাংবাদিকতার ফলে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা প্রথম থেকেই ব্রিটিশ, নীলকর ও জমিদার বিরোধী পত্রিকায় পরিণত হয়। তিনি তাঁর পত্রিকায় প্রথম থেকেই তৎকালীন বাংলার সামাজিক শোষণ, দরিদ্রশ্রেণির ওপর সীমাহীন অত্যাচার, তাদের দুরবস্থা প্রভৃতির চিত্র তুলে ধরতে থাকেন। সাধারণ মানুষের ওপর সরকার ও পুলিশের অত্যাচার, বাংলার নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচার, মদ আমদানি, পুরুষের বহুবিবাহ প্রভৃতির বিরুদ্ধে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা সরব হয়।

শিক্ষিত শ্রেণির সচেতনতা

বাংলার দরিদ্র শ্রেণির ওপরসীমাহীন শোষণ ও অত্যাচারের ঘটনাবলির কথা হিন্দু প্যাট্রিয়টপত্রিকা থেকে কলকাতা-সহ বাংলার সমাজের শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত মানুষ জানতে পারে। হরিশচন্দ্র ভারতের সাম্রাজ্যবাদী শাসক লর্ড ডালহৌসির নগ্ন সাম্রাজ্যবিস্তারের নীতির তীব্র সমালোচনা করে দুঃসাহসের পরিচয় দেন। বিভিন্ন লোভনীয় সরকারি চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি সরকারের বিরোধিতা চালিয়ে যান।

নারী অধিকার

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা সমাজে নারীর মর্যাদাবৃদ্ধির জন্য ধারাবাহিক প্রচার চালায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহের প্রবর্তন করলে হরিশচন্দ্র তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে বিধবাবিবাহের সমর্থনে জনমত গড়ে তোলেন। নারীশিক্ষাকে সমর্থন করে এই পত্রিকায় ব্যাপক প্রচার চালানো হয়।

শিক্ষা

হরিশ্চন্দ্র বাংলা ভাষার প্রতি বিশেষ অনুরাগ দেখান। তিনিমাতৃভাষায় শিক্ষাদানের গুরুত্ব, বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বিভিন্ন বইপত্রের সমালোচনা প্রভৃতি নিয়মিতভাবে তাঁর পত্রিকায় প্রকাশ করেন। পত্রিকার সম্পাদকীয়তে নিয়মিত প্রাচীন বাংলা সাহিত্য থেকে উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়। সরকারি শিক্ষানীতির বিষয়েও এই পত্রিকায় বহু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

সীমাহীন পরিশ্রম

গ্রামবাংলার অত্যাচারিত নীলচাষিদের মধ্যেউদারহৃদয় হরিশচন্দ্রের কথা ছড়িয়ে পড়লে তারা সহায়তা লাভের উদ্দেশ্যে হরিশচন্দ্রের ভবানীপুরের বাড়িতে এসে হাজির হত। হরিশচন্দ্রও চাষিদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতেন এবং তাদের মঙ্গলের জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করতেন। চাষিদের সমস্যার বিবরণ শুনে তা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে দেওয়া, দরখাস্ত লিখে দেওয়া, প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হতে পরামর্শ দেওয়া প্রভৃতি কাজে তিনি দিনরাত পরিশ্রম করতেন।

উপসংহার :- সীমাহীন পরিশ্রম, স্ত্রী ও সন্তানদের মৃত্যুতে মানসিক অবসাদ প্রভৃতির ফলে অল্প বয়সেই তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। তা সত্ত্বেও হিন্দু প্যাট্রিয়ট-এর কাজ থেকে তিনি কোনোদিন ছুটি নেননি। অবশেষে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুন মাত্র ৩৭ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু ঘটে। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বাংলার নীলচাষিরা তাদের অভিভাবক হারান।

দশম শ্রেণীর ইতিহাস (দ্বিতীয় অধ্যায়) সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা হতে অন্যান্য সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

দশম শ্রেণী ইতিহাস সিলেবাস দ্বিতীয় অধ্যায়- সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা হতে সকল সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি দেওয়া হল।

২.১. উনিশ শতকের বাংলা সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্যে সমাজের প্রতিফলন

(২.১.ক.) বামাবোধিনী

(২.১.খ.) হিন্দু প্যাট্রিয়ট

(২.১.গ.) হুতোম প্যাঁচার নকশা

(২.১.ঘ.) নীলদর্পণ

(২.১.ঙ.) গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা

উপরিউক্ত আলোচনার নিরিখে এই প্রসঙ্গগুলির বিশেষ আলোচনা করতে হবে (আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি)।

২.২. উনিশ শতকের বাংলা শিক্ষাসংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

(২.২.ক.) প্রাচ্য শিক্ষা-পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব

(২.২.খ.) ইংরেজি শিক্ষার প্রসার

(২.২.গ.) নারী শিক্ষা ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

(২.২.ঘ.) পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ

(২.২.ঙ.) রাজা রামমোহন রায়

(২.২.চ.) রাজা রাধাকান্ত দেব

(২.২.ছ.) ডেভিড হেয়ার

(২.২.জ.) জন এলিয়ট ড্রিংক ওয়াটার বীটন বা বেথুন

(২.২.ঝ.) কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ

(২.২.ঞ.) চিকিৎসাবিদ্যার বিকাশ

(২.২.ট.) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষার বিকাশ

টুকরো কথা: মধুসূদন গুপ্ত

(আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি)

২.৩. উনিশ শতকের বাংলা-সমাজসংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

(২.৩.ক.) ব্রাহ্মসমাজসমূহের উদ্দোগ

(২.৩.খ.) সতীদাহপ্রথা বিরোধী আন্দোলন

(২.৩.গ.) নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী

(২.৩.ঘ.) বিধবাবিবাহ আন্দোলন

টুকরো কথা: হাজি মহম্মদ মহসীন

(আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি)

২.৪. উনিশ শতকের বাংলা-ধর্মসংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

(২.৪.ক.) ব্রাহ্ম আন্দোলন-বিবর্তন, বিভাজন, বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

(২.৪.খ.) রামকৃষ্ণের সর্বধর্মসমন্বয়’-এর আদর্শ

(২.৪.গ.) স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের অভিমুখ

(২.৪.ঘ.) নব্য বেদান্ত-বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

টুকরো কথা: 

লালন ফকির
বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী

(আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি)

২.৫. “বাংলার নবজাগরণ”-এর চরিত্র ও পর্যালোচনা,

উনিশ শতকের বাংলায় ‘নবজাগরণ’ ধারণার ব্যবহার বিষয়ক বিতর্ক

(আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক ছবি, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রভৃতি)।

Leave a Comment